জিঞ্জিরা গণহত্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা Salekin.sami36 (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৬:৩২, ২১ জুলাই ২০১৯ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (Minor solving)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

জিঞ্জিরা গণহত্যা একটি পরিকল্পিত সামরিক গণহত্যা যা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুর সময়ে সংঘটিত করে। ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল শুক্রবার ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত, বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিঞ্জিরা,কালিন্দি ও শুভাড্যা এই তিন ইউনিয়নব্যপী এই গণহত্যাটি সংঘটিত হয়।[১]

হত্যাকান্ডের বিবরণ

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময়ে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট এর পুর্বপরিকল্পিত গণহত্যার পর ঢাকা শহরের বেঁচে যাওয়া মানুষজন পালানোর স্থান ও প্রথম নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড়ে অবস্থিত জিঞ্জিরার দিকে যাত্রা করে। জিঞ্জিরা ও এর আশেপাশের এলাকাগুলো ছিল তখন প্রধানত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। তাই সেগুলো আগে থেকেই পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক চিহ্নিত ছিল। যখন ঢাকা থেকে পালিয়ে সবাই সেখানে জড় হতে থাকে, তখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সেখানে গণহত্যা চালানোর প্রস্তুতি নেয়।[২] তারা ১ এপ্রিল মধ্যরাতের পর থেকে অর্থাৎ ২ এপ্রিল ভোর থেকে জিঞ্জিরায় সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে এবং কেরানীগঞ্জকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে।[৩]

পাকিস্তানীরা ঐদিন গভীর রাতেই বুড়িগঙ্গার অন্য পাড়ের মিটফোর্ড হাসপাতাল দখল করে নেয় এবং হাসপাতাল সংলগ্ন মসজিদের ছাদ থেকে আনুমানিক ৫টায় ফ্লেয়ার ছুড়ে গণহত্যা শুরু করার জন্য সংকেত প্রদান করে।[৪] প্রায় আনুমানিক ভোর সাড়ে ৫ টা থেকে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে একটানা নয় ঘণ্টা চালিয়ে যায় এবং দুপুর ২.৩০ এ হত্যাযজ্ঞ শেষ করে। তারা ঘরবাড়িতে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। মান্দাইল ডাকের সড়কের সামনের পুকুরের পাড়ে পাকিস্তানী বাহিনী ষাট জন লোককে একসাথে লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে।[৩] এ গণহত্যায় আনুমানিক এক হাজার বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করে।[৫][৬]

পাকিস্তানী প্রচারযন্ত্রের মিথ্যা সংবাদ প্রচার

জিঞ্জিরা গণহত্যার পরের দিন, অর্থাৎ ৩ এপ্রিল ১৯৭১ পাকিস্তানী প্রচারযন্ত্র জিঞ্জিরা গণহত্যাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এবং দেশের অন্যান্য মানুষ ও বহির্বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য হত্যার সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে মিথ্যা খবর প্রচার করে। ৩ এপ্রিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সমর্থিত পত্রিকা মর্নিং নিউজের একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল এরকম,"Action against miscreants at Jinjira" অর্থাৎ "জিঞ্জিরায় দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন"।[৭]

আর তৎকালীন পিটিভি (পাকিস্তান টেলিভিশন) ঐ দিন ২ এপ্রিল রাতে খবর প্রচার করে, " বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড়ে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় আশ্রয় গ্রহণকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী দুস্কৃতিকারীদের কঠোর হাতে নির্মূল করা হয়েছে"।[৮]

তথ্যসূত্র

  1. নির্মলেন্দু গুণ (২০০৮)। আত্মকথা ১৯৭১। বাংলা প্রকাশ(পৃ ১৪৭)। isbn 984-300-000-500-9
  2. আত্মকথা ১৯৭১,নির্মলেন্দু গুণ,বাংলা প্রকাশ,২০০৮(পৃ ১৪৭-১৪৯)
  3. স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র,অষ্টম খন্ড(পৃ৩৭৬-৩৭৮)
  4. আত্মকথা ১৯৭১, নির্মলেন্দু গুণ, বাংলা প্রকাশ, ২০০৮ (পৃ ১৭৬-১৭৭)
  5. নির্মলেন্দু গুণ(২০০৮)।আত্মকথা ১৯৭১। বাংলা প্রকাশ(পৃ ১৭৩)। isbn 984-300-000-500-9
  6. দৈনিক বাংলা, ১৩ নভেম্বর ১৯৭২
  7. জাহানারা ইমাম। একাত্তরের দিনগুলি। সন্ধানী প্রকাশনী। আইএসবিএন 984-480-000-5 
  8. নির্মলেন্দু গুণ(২০০৮)।আত্মকথা ১৯৭১। বাংলা প্রকাশ(পৃ ১৮২)। isbn 984-300-000-500-9