জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ হজরত শাহজালাল
![]() | |
প্রাক্তন নাম | মাদ্রাসায়ে তালিমুল কুরআন দরগাহে হজরত শাহজালাল রহ. |
---|---|
ধরন | কওমি মাদ্রাসা |
স্থাপিত | ৭ নভেম্বর ১৯৬১ |
প্রতিষ্ঠাতা | আরিফ বিল্লাহ আকবর আলী |
মূল প্রতিষ্ঠান | দারুল উলুম দেওবন্দ |
অধিভুক্তি | আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ |
ধর্মীয় অধিভুক্তি | ইসলাম |
আচার্য | মাওলানা মাশুক উদ্দীন বড়বাড়ি |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ৩৫ (২০২১) |
শিক্ষার্থী | ১০৭০ (২০২৪) |
অবস্থান | দরগাহ মহল্লা, সিলেট |
শিক্ষাঙ্গন | শহর |
সংক্ষিপ্ত নাম | দরগাহ মাদ্রাসা |
ওয়েবসাইট | jamiadorgah |
![]() |
জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হজরত শাহজালাল (রহ.) (সংক্ষেপে দরগাহ মাদ্রাসা সিলেট) সিলেটের শাহ জালালের দরগাহের প্বার্শে অবস্থিত একটি কওমি মাদ্রাসা। মুহাম্মদ শফি উসমানির পরামর্শক্রমে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতির আলোকে ১৯৬১ সালের ৭ নভেম্বর প্রখ্যাত আলেম আরিফ বিল্লাহ আকবর আলী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৪ সালের তথ্যানুসারে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা ১০৭০ জন, শিক্ষক ৩৫ ও কর্মচারী ২০। বর্তমান মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাশুক উদ্দীন (বড়বাড়ী হুজুর)
প্রেক্ষাপট
[সম্পাদনা]তৎকালীন শাহ জালালের দরগাহের পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম মাওলানা আকবর আলী নামাজের পর মুসল্লিদের নিয়মিত কুরআনের বাণী শুনাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানের মুফতিয়ে আজম মুহাম্মদ শফি উসমানি সিলেট আগমন করলে তিনি আকবর আলীকে একটি মক্তব বা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ ও প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আকবর আলী মাজারের দক্ষিণপার্শ্বে ১৯৬১ সালের ৭ নভেম্বর ‘মাদ্রাসায়ে তালিমুল কুরআন দরগাহে হজরত শাহজালাল রহ.’ নামে অত্র মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১][২][৩]
সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার সুপারেন্টেন্ড হাজি আরশাদ আলী ও তার ছাত্র দরগাহর প্রাক্তন মুতাওয়াল্লি এ.জেড. আব্দুল্লাহ ও দরগাহ মসজিদের প্রাক্তন ইমাম ছাঈদ আলী কাছারী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। আরশাদ আলীর সুপারিশে এ.জেড. আবদুল্লাহ মাদ্রাসার জায়গা করে দেন।[৪]
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল ‘মাদ্রাসায়ে তালিমুল কুরআন দরগাহে হজরত শাহজালাল রহ. সিলেট’। ১৯৭৫ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম কারী মুহাম্মদ তৈয়ব সিলেট আগমন করলে সকলের অনুরোধে তিনি মাদ্রাসার নাম রাখেন ‘মাদ্রাসায়ে কাসিমুল উলুম দরগাহে হজরত শাহজালাল রহ.’। এর আরও কিছুদিন পরে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হলে মাদ্রাসা শব্দের স্থলে ‘জামিয়া’ শব্দ সংযোজন করা হয়।
মৌলিক ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে যুগ চাহিদার আলোকে জামিয়াটি সুচারুরুপে একটি নীতির উপর সুশৃংখলভাবে যাতে পরিচালিত হয় এজন্য একটি রুপরেখা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। জামিয়া কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুরোধে উবায়দুল হক এ কাজটি সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৬৮ সালের ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর দুই দিন ব্যাপী গবেষণার মাধ্যমে একটি বিশেষ সুপারিশ মালা (পরামর্শ স্মারক) প্রণয়ন করেছিলেন, এখনো পযর্ন্ত সেই সুপারিশ মালার আলোকেই মাদ্রাসাটি পরিচালিত হচ্ছে।
শিক্ষা ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]মাদ্রাসাটির শিক্ষা ব্যবস্থা ৫টি স্তরে বিভক্ত:[৫][৬]
- মারহালায়ে ইবতেদাইয়্যাহ (প্রথমিক স্তর): ৫ বছর মেয়াদি এ স্তরে তাজবিদ সহ বিশুদ্ধভাবে কুরআন শিক্ষাদান, ইসলামের মৌলিক নীতি ও বিধিবিধান সহ যুগ-চাহিদার প্রেক্ষাপটে মাতৃভাষা লিখন ও পঠন এবং প্রারম্ভিক ইংরেজি, অংক, উর্দূ, ভূগোল, সমাজ ও বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে।
- মারহালায়ে মুতাওয়াসসিতাহ (নিম্ন মাধ্যমিক স্তর): ৪ বছর মেয়াদি এ স্তরে মাদ্রাসা বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী আরবি ও উর্দূ সাহিত্য সহ আরবি ব্যাকরণ তথা নাহু-সরফ ইত্যাদি বিষয় পাঠদান করা হয়। তাছাড়া আরবি সাহিত্য ও যুক্তিবিদ্যার প্রাথমিক কিতাবাদি, হানাফি ফিকাহ শাস্ত্রের মৌলিক গ্রন্থাবলি, সমকালীন চাহিদা অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের বাংলা, ইংরেজি, অংক, ইতিহাস, ভূগোল ও পৌরনীতি ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়।
- মারহালায়ে ছানাবিয়া (উচ্চ মাধ্যমিক স্তর): ৩ বছর মেয়াদি এ স্তরে আরবি ব্যাকরণ তথা নাহু-সরফের উচ্চ স্তরের কিতাবাদি, আরবি অলংকার শাস্ত্র তথা ইলমে বালাগাত, উচ্চমানের আরবি সাহিত্য, যুক্তিবিদ্যা, ফিকহ ও এর মূলনীতি তথা উসূলে ফিকহ, সংক্ষিপ্ত তাফসীর, ফরায়েজ শাস্ত্র ও ইসলামের ইতহাস ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
- মারহালায়ে ফযীলত (স্নাতক স্তর): ২ বছর মেয়াদি উক্ত স্তরে ইলমে তাফসির, ইলমে হাদিস, ইলমে ফিকহ ও আরবি সাহিত্যের উচুঁ স্তরের কিতাবাদি এবং ইসলামি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের দর্শন ও ইলমে কালাম বা আকাইদ শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ের উপর পাঠদান করা হয়।
- মারহালায়ে তাকমীল (স্নাতকোত্তর): এ স্তরে ইলমে হাদিসের সিহাহ সিত্তাহ সহ তহাবী শরীফ, শামায়েলে তিরমিযী, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ এর মত গুরুত্বপূর্ণ কিতাবগুলোর পাঠদান করা হয়।
- তাখাচ্ছুছাত ফিল ফিকহ ওয়াল ইফতা
স্নাতকোত্তরে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ যে সব ছাত্র উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তাদের জন্য এ জামিয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে চালু হয়েছে দুই বছর মেয়াদি এই গবেষণা কোর্স। এ কোর্সে অধ্যয়নরত ছাত্রদেরকে সমকালীন সমস্যা সমূহের কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ফতোয়া প্রদানে যোগ্য করে গড়ে তোলা হয়।
- হিফজ বিভাগ
জামিয়াটি সূচনালগ্ন থেকে কুরআন হেফজের উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সংলগ্ন ধূপাগুলে একটি স্বতন্ত্র হিফজ শাখাও চালু রয়েছে।
- গ্রন্থাগার
মাদ্রাসাটিতে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচিত দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থাদির বিপুল সংগ্রহ রয়েছে। প্রতি বছর শিক্ষাবর্ষের প্রারম্ভে শত শত ছাত্রের মাঝে বিপুল পরিমাণ পাঠ্যকিতাব বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। জামিয়ার গ্রন্থাগারে রয়েছে দুনিয়াজোড়া প্রাচ্য-প্রাচীন ও আধুনিককালের তাফসির গ্রন্থাবলি। বিপুলসংখ্যক হাদিস গ্রন্থাবলি, গবেষণাধর্মী বিশাল কলেবরের শত শত দূর্লভ ইসলামি আইন গ্রন্থাদি, যা কোনও কোনোটি ত্রিশ-চল্লিশ খণ্ডে সমাপ্ত। এছাড়াও যুগের চাহিদা পুরণ করার মতো রয়েছে পুস্তকের এক বিশাল ভাণ্ডার।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
[সম্পাদনা]- আরিফ বিল্লাহ আকবর আলী–– প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক মুহতামিম
- উবায়দুল হক –– সাবেক শায়খুল হাদিস
- মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি —সাবেক মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস
- মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া— সাবেক শিক্ষার্থী ও মুহতামিম
- মাশুক উদ্দীন–– সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান মুহতামিম
- শাহিনুর পাশা চৌধুরী—সাবেক শিক্ষার্থী
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- দেওবন্দি
- কওমি মাদ্রাসা
- দারুল উলুম দেওবন্দ
- আরিফ বিল্লাহ আকবর আলী
- মুহিব্বুল হক
- আবুল কালাম যাকারিয়া (মুফতি)
- আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া
- বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার তালিকা
চিত্র
[সম্পাদনা]![[[জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হজরত শাহজালাল]] সিলেটের দাওরায়ে হাদিসের ক্লাসরুম](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/f/fe/Dorgah_Madrasah%2C_Dawra_Hadith_classroom.jpg/220px-Dorgah_Madrasah%2C_Dawra_Hadith_classroom.jpg)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]উদ্ধৃতি
[সম্পাদনা]- ↑ গোলাম ছরোয়ার, মুহাম্মদ (নভেম্বর ২০১৩)। "বাংলা ভাষায় ফিকহ চর্চা (১৯৪৭-২০০৬): স্বরূপ ও বৈশিষ্ঠ্য বিচার"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ৩১৮। ২৭ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০২১।
- ↑ হুসাইন, বেলায়েত (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "সিলেট দরগাহ মাদ্রাসার ইতিহাস ও ঐতিহ্য"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ কিয়ামপুরী, জুনাঈদ (১০ মার্চ ২০১৬)। "ইতিহাস-ঐতিহ্যে বহমান জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহে হযরত শাহজালাল রাহ. সিলেট"। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন (কমাশিসা)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ নাঈম, মুনশী (২০২০-১২-০৩)। "সিলেটের প্রাচীন মসজিদ ও মাদরাসার সন্ধানে"। ফাতেহ২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "প্রাসঙ্গিক কথা"। জামিয়া দরগাহ। ২০১৯-১১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হযরত শাহজালাল রহ."। কওমিপিডিয়া। ১৬ মে ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- পুরি, নিখিল আর (১০ অক্টোবর ২০১৩)। "The curious case of Dargah Madrasa" [দরগাহ মাদ্রাসার কৌতূহলী ঘটনা]। ঢাকা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০২২।