বিষয়বস্তুতে চলুন

খানজাদা বেগম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খানজাদা বেগম
তিমুরীয় রাজকন্যা
পাদশাহ বেগম
আনু. ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের কুন্দুজে খানজাদা বেগম ও বাবরের পুনর্মিলনকে বাবরনামা চিত্রিত করেছে
শায়বানি সাম্রাজ্যের পট্টরাজ্ঞী
কার্যকাল১৫০১ – ১৫১০
জন্মআনু. ১৪৭৮
আন্দিজান, ফারগানা, উজবেকিস্তান
মৃত্যুসেপ্টেম্বর ১৫৪৫ (বয়স ৬৬–৬৭)
কান্দাহার, আফগানিস্তান
দাম্পত্য সঙ্গীশায়বানি খান
সৈয়দ হাদা
মাহদি খাজা
বংশধরখুররাম শাহ
রাজবংশতিমুর পরিবার (জন্মসূত্রে)
পিতাউমর শেখ মির্জা
মাতাকুতলুগ নিগার খানম
ধর্মসুন্নি ইসলাম

খানজাদা বেগম (আনু. ১৪৭৮ - ১৫৪৫) ছিলেন একজন তিমুরীয় রাজকন্যা ও ফারগানার আমির দ্বিতীয় উমর শেখ মির্জার জ্যেষ্ঠ কন্যা। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের বড় বোনও ছিলেন। তিনি ও তাঁর ভাই সারাজীবন একে অপরের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত ছিলেন, এটি ছিলো এমন একটি সময়কাল যেখানে পরিবারটি মধ্য এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র ও অখ্যাত রাজ্য শাসন করা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি বড় অংশ শাসন করার জন্য অগ্রসর হয়েছিলো। বাবর তাঁর বোনকে পাদশাহ বেগম নামক সম্মানজনক উপাধি দিয়েছিলেন ও তাঁর মৃত্যুর পর তিনি প্রকৃতপক্ষে তাঁর সাম্রাজ্যের প্রথম মহিলা ছিলেন।

তাঁর ভাইয়ের স্মৃতিকথা বাবরনামা খানজাদা বেগমকে সবসময় স্নেহ ও শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করেছে। তাঁর ভাগ্নী গুলবদন বেগমের দ্বারা হুমায়ুন-নামা-এ প্রায়শই তাকে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি তাঁর খালাকে 'প্রিয়তম মহিলা' (ওরফে জনম) বলে ডাকেন। অনেক উপলক্ষ বর্ণনা করা হয়েছে যেখানে তিনি তার আত্মীয় ও আরও বিশেষভাবে তার ভাগ্নের মধ্যে রাজনৈতিক অসুবিধার সময় হস্তক্ষেপ করেছিলেন।

পরিবার ও বংশ

[সম্পাদনা]

খানজাদা বেগমের আনু. ১৪৭৮ সালে ফারগানার আন্দিজানে উমর শেখ মির্জা এবং তার প্রথম স্ত্রী ও প্রধান সহধর্মিণী কুতলুগ নিগার খানমের জ্যেষ্ঠ কন্যা হিসেবে মোগুলিস্তানের রাজকুমারী হিসেবে জন্ম নেন।[] তার ছোট ভাই বাবর ১৪৮৩ সালে তার জন্মের পাঁচ বছর পরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও এর প্রথম সম্রাট হন।[]

খানজাদার পিতামহ ছিলেন তৈমুরি সাম্রাজ্যের আবু সা'ইদ মির্জা, অন্যদিকে তার মাতামহ ছিলেন মোগুলিস্তানের মহান খান ইউনুস খান। খানজাদা এইভাবে তার মাতৃপক্ষ থেকে চেঙ্গিজ খানের ও তার পৈতৃক দিক থেকে তৈমুরের বংশধর ছিলেন।

বিবাহ

[সম্পাদনা]

শায়বানি খান উজবেক

[সম্পাদনা]
উজবেকদের খান শায়বানি খান উজবেক

১৫০০-০১ সালে খানজাদার ভাই, বাবর ও উজবেকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সবচেয়ে বেশি ছিলো। ছয় মাস ধরে শায়বানি খান উজবেক বাবরকে সমরকন্দে অবরুদ্ধ করেন। খানজাদা ও বাবরের শক্তিশালী আত্মীয়দের কেউ বাবরকে সাহায্য পাঠাননি, যেমন তাদের চাচা বৃহত্তর খোরাসানের শাসক সুলতান হোসেন মির্জা বায়কারা[] এই সময় শায়বানি খান বাবরকে একটি বার্তা পাঠান ও প্রস্তাব করেন যে বাবর যদি তার বোন খানজাদা বেগমকে তার সাথে বিয়ে দেয় তবে তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী মৈত্রী হবে। খানজাদার ভাগ্নি গুলবদন বেগমের মতে "যেকোনভাবে এটি করা দরকার ছিল, তিনি বেগমকে খানের কাছে দিয়েছিলেন ও নিজেই (সমরকন্দ থেকে) বেরিয়ে এসেছিলেন ... এই দুর্দশার মধ্যে, নিরস্ত্র, এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে তিনি বাদাকশানের দেশ... ও কাবুল চলে যান।"[]

১৫০০ সালে বাবরনামা অনুসারে খানজাদার ভাই বাবরকে মুহাম্মদ শায়বানি খানের পাঁচ মাস অবরোধের পর সমরকন্দ ত্যাগ করতে হয়েছিলো, এই সময়ে খানজাদা শায়বানি খানের কাছে (যুদ্ধবন্দীদের অংশ হিসেবে) থাকেন।[] আকবরনামা অনুসারে হেনরি বেভারিজ লিখেছেন যে, শায়বানি-নামা অনুসারে শায়বানি খানের সাথে খানজাদার বিয়ে ছিলো একটি প্রেমের সন্ধি। তিনি এই সম্ভাবনারও প্রস্তাব করেন যে "বাবর পুরো পরিস্থিতি উল্লেখ করেননি ও তার [খানজাদা] রেখে যাওয়া শায়বানির সাথে বাবরের চুক্তির একটি অংশ ছিলো।"[]

১৫০০ সালের জুলাই মাসে খানজাদার খালা মেহের নিগার খানম শায়বানি খানের দ্বারা বন্দী হন ও 'লুটের অংশ হিসেবে' তাকে জোরপূর্বক বিয়ে করেন। শায়বানি তার তিমুরীয় ভাগ্নি খানজাদা বেগমকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলে তিনি তালাকপ্রাপ্ত হন, কারণ খালা ও ভাতিজি উভয়ের জন্য একই পুরুষের সাথে বিবাহ করা ইসলামে বেআইনি।[]

তাদের বিয়ের পর খানজাদা ও শায়বানির কোন সন্তান হয়নি, খানজাদার গর্ভবতী হওয়ার খবর ছিলো কেবল একটি গুজব ও খানজাদা শায়বানিকে দেখিয়েছিলেন যে তিনি তাকে ভালবাসেন কিন্তু বাস্তবতা ছিলো ভিন্ন যেহেতু তিনি তার ভাইয়ের পাশে ছিলেন,[] শায়বানি পরে খানজাদাকে তালাক দেন কারণ সে বিতর্কিত বিষয়ে তার ভাইয়ের দিকে ঝুঁকেছিলো।[]

মাহদি খাজা

[সম্পাদনা]

১৫১১ সালে কুন্দুজে প্রথম শাহ ইসমাইলের সাথে (যিনি মার্ভের যুদ্ধে শায়বানিকে পরাজিত করেছিলেন) সৈন্যদের পাহারায় তেত্রিশ বছর বয়সে খানজাদা বাবরের কাছে ফিরে আসেন। খানজাদার সাথে শাহ ইসমাইলের একজন দূত এসে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেন ও কিছু শর্তে সামরিক সাহায্য বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন। বিনিময়ে বাবর ওয়াইস খান মির্জাকে উপহারসহ শাহ ইসমাইলের দরবারে পাঠান।[]

অজানা তারিখে মুহাম্মদ মাহদি খাজার সাথে খানজাদার দ্বিতীয় বিবাহ হয়। এ্যানেট বেভারিজ বলেছেন যে সম্ভবনা আছে যে তার প্রত্যাবর্তনের পরে খুব দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বিয়ে হয়েছিলো। এটা সম্ভব যে বাবরের সাথে মাহদির যোগদান ও খানজাদার সাথে তার বিবাহ ১৫০৯-১৫১৯ এর দশকে সংঘটিত হয়েছিলো, যার কোন নথি অবশিষ্ট থাকতে পারে না। মাহদি ১৫১৯ সালে বাবরের সাথে ছিলেন ও তাদের সাথে থাকার ব্যাপারটি পরবর্তীতে প্রায়শই উল্লেখ করা হয়েছে।[]

সন্তানাদি

[সম্পাদনা]

শায়বানির সাথে থাকাকালে ছেলে জন্মদানের পর খানজাদার দৃশ্যত কোনো সন্তান হয়নি। তিনি মাহদির ছোট বোন সুলতানাম বেগমের দায়িত্ব নেন যখন তার বয়স ছিলো দুই বছর। খানজাদা সুলতানামকে এমনভাবে ভালোবাসতেন যেন সে তার নিজের মেয়ে।[] তিনি তার ননদকে তার ভাগ্নে রাজপুত্র হিন্দাল মির্জার স্ত্রী হওয়ার জন্য লালন-পালন করেছিলেন। হিন্দাল মির্জা দিলদার বেগম ও বাবরের কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন।[১০]

সুলতানাম ও হিন্দাল ১৫৩৭ সালে বিয়ে করেন এবং খানজাদা বেগম তাদের বিয়ের ভোজের আয়োজন করেন। অগণিত সরকারি ও রাজকীয় অতিথিদের পাশাপাশি উচ্চ-পদস্থ দরবারের আমিরদের অংশগ্রহণে 'রহস্যময় উৎসব' নামে পরিচিত এই ভোজটি ছিলো একটি দুর্দান্ত ব্যাপার। গুলবদন বেগম বলেন, বাবরের অন্য কোনো সন্তানের জন্য এই ধরনের বিয়ের ভোজ এর আগে আয়োজন করা হয়নি। মাহদি খাজা তার ভগ্নিপতি হিন্দালকে বিপুল পরিমাণ যৌতুক প্রদান করেন ও খানজাদা বেগমও জমকালো উপহার দেন।[১১]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

খানজাদা বেগম তার ভাগ্নে হুমায়ুনের সাথে কান্দাহার থেকে তার ছোট সৎ ভাই কামরান মির্জার সাথে দেখা করতে যাওয়ার পথে ১৫৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাবাল-চকে মারা যান।[১২] তিনি তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন এবং চতুর্থ দিনে তার মৃত্যু হয়। ডাক্তারের চিকিৎসাতেও কোন লাভ হয়নি। প্রথমে তার লাশ কাবাল-চকে দাফন করা হয়, কিন্তু তিন মাস পরে তার লাশ কাবুলে আনা হয় ও তার ভাইয়ের দাফনের স্থান বাবরের বাগানে রাখা হয়।[১২]

পূর্বপুরুষ

[সম্পাদনা]

জনপ্রিয় সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

২৭ আগস্ট, ২০২১-এ হটস্টারে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য এম্পায়ার ওয়েব ধারাবাহিকে খানজাদা বেগম চরিত্রে দ্রষ্টি ধামি অভিনয় করেন।[২০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Babur; edited (২০০২)। The Baburnama : Memoirs of Babur, prince and emperor (Modern Library pbk. সংস্করণ)। Modern Library। পৃষ্ঠা 11আইএসবিএন 9780375761379 
  2. Qassem, Dr Ahmad Shayeq (২০১৩)। Afghanistan's Political Stability: A Dream Unrealised (ইংরেজি ভাষায়)। Ashgate Publishing, Ltd.। পৃষ্ঠা 21। আইএসবিএন 9781409499428 
  3. Lal, Ruby (২০০৫)। Domesticity and Power in the Early Mughal World। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 130আইএসবিএন 0521850223 
  4. Zahir Uddin Muhammad Babur (২০০৬)। Babur Nama : Journal of Emperor Babur। translated from the Turkish by Annette Susannah Beveridge; abridged, edited and introduced by Dilip Hiro (1.publ. সংস্করণ)। Penguin Books। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 9780144001491 
  5. Balabanlilar, Lisa (২০১২)। Imperial Identity in the Mughal Empire : Memory and Dynastic Politics in Early Modern South and Central Asia। I.B. Tauris। পৃষ্ঠা 22। আইএসবিএন 9781848857261 
  6. Abul Fazl (১৯৭৭)। Volume 1 of The Akbar Nāma of Abu-l-Fazl: History of the Reign of Akbar Including an Account of His Predecessors, Abū al-Faz̤l ibn Mubārak। Ess Ess Publications। পৃষ্ঠা 222। 
  7. Emperor Babur (২০০৬)। Babur Nama: Journal of Emperor Babur। Penguin Books। পৃষ্ঠা 198। আইএসবিএন 9780144001491 
  8. Gulbadan, p. 251
  9. Gulbadan, p. 126
  10. Gulbadan, p. 127
  11. Gulbadan, p. 128
  12. Gulbadan, p. 175
  13. Edward James Rapson, Sir Wolseley Haig, Sir Richard Burn, The Cambridge History of India Vol.IV (1937), p. 3
  14. B. S. Chandrababu, L. Thilagavathi, Woman, Her History and Her Struggle for Emancipation (2009), p. 201
  15. Rama Shanker Avasthy, The Mughal Emperor Humayun (1967), p. 25
  16. John E Woods, The Timurid dynasty (1990), p. 35
  17. Morris Rossabi (২৮ নভেম্বর ২০১৪)। From Yuan to Modern China and Mongolia: The Writings of Morris Rossabi। BRILL। পৃষ্ঠা 48। আইএসবিএন 978-90-04-28529-3 
  18. Mirza Muhammad Haidar Dughlat, Sir E. Denison Ross, N. Elilias, A History of the Moghuls of Central Asia: The Tarikh-i-Rashidi (2008), p. 65
  19. Ruby Lal, Domesticity and Power in the Early Mughal World (2005), p. 107
  20. "Dia Mirza, Shabana Azmi And Ronit Roy To Be Part Of TV Series Moghuls. Details Inside"NDTV.com 

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]