কার্ল রিটার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কার্ল রিটার (১৭৭৯-১৮৫৯)

কার্ল রিটার (৭ আগস্ট, ১৭৭৯ – ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৯) একজন প্রখ্যাত জার্মান ভূগোলবিদআলেকজান্ডার ফন হুমবোল্‌ড্‌টের সাথে সাথে তাকেও আধুনিক মানবীয় ভূগোলের অন্যতম স্থপতি হিসেবে গণ্য করা হয়। [১] তিনি ১৮২৫ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনেকে তাকে "আরাম কেদারার ভূগোলবিদ" বলে সম্বোধন করে থাকেন।

জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

আধুনিক ভূগোলের স্থপতি কার্ল রিটার (Carl Ritter) 7 আগস্ট 1779 সালে তৎকালীন প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের কুইডলিনবার্গে জন্ম গ্রহণ করেন। কার্ল রিটার 1825 সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক হিসাবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন। তাকে আলেকজান্ডার ভন হামবোল্টের সাথে আধুনিক ভূগোলের জনক হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করা হয়। কার্ল রিটার 28 সেপ্টেম্বর 1859 সালে বার্লিন শহরে মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র দুই বছর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে আর্থিক অনটনের কারণে তার শিক্ষা গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়নি। পাঁচ বছর বয়সে তিনি স্থানীয় Schnepfenthal Salzmann School ভর্তি হন। সেখানে বিখ্যাত সুইস শিক্ষাবিদ Johann Heinrich Pestalozzi এর কাছে শিক্ষা লাভ করেন। তিনি মূলত জার্মান দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ Johann Gottfried von Herder এর মানুষ ও পরিবেশের মিথোষ্ক্রিয়ার ধারণার উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াত্বক নিয়মে শিক্ষাদান করতেন। ফলে Pestalozzi শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের চেয়ে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে শিক্ষা দিতেন। এই শিক্ষা তাকে প্রকৃতির উপর আগ্রহী করে তুলেছিল এবং পরবর্তী জীবনের ভিত তৈরী করেছিল। স্কুল শিক্ষা শেষে তিনি ফ্রাঙ্কফুটের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা Bethmann Hollweg সাথে পরিচিত হন। Hollweg তার সন্তানদের গৃহ শিক্ষকতার বিনিময়ে কার্ল রিটারের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার ব্যয়ভার বহন করেন। তিনি University of Halle দুই বছর পড়াশোনা করেন। এখানে তিনি ইতিহাসে অধ্যায়নের পাশাপাশি ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে 1798 সালে ফ্রাঙ্কফুট শহরে চলে আসেন এবং পরবর্তী 14 বছর Hollweg সন্তানদের গৃহ শিক্ষকতা করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। ছাত্রদের সাথে ইতলী ও সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করেন। 1814 – 1819 সাল পর্যন্ত সময়কালে তিনি ছাত্রদের সঙ্গে Göttingen অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি ভূগোলের উপর বিস্তারিত অধ্যায়ন করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

কার্ল রিটার 1819 সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে ইতিহাসের অধ্যাপক হন এবং 1821 সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Berlin) ইতিহাস বিষয়ে অধ্যাপনার জন্য নিযুক্ত হন। তিনি সেখান থেকে 1821 সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। 1925 সালে তাকে Professor Extraordinarius হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি পার্শ্ববর্তী একটি মিলিটারী কলেজে পাঠদান করতেন। তিনি আফ্রিকা অভিযানে আগ্রহী ছিলেন। এজন্য তিনি Royal Geographical Society –র মত বিভিন্ন ব্রিটিশ সংগঠনের সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন। তিনি জার্মানীতে দাস ও বর্ণবাদ বিরোধী প্রচার- প্রচারণায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। বিখ্যাত জার্মান অভিযাত্রী হেনরিখ বার্থ (Heinrich Barth)-এর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষক ছিলেন। হেনরিখ বার্থ উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণ করেন। তিনি ট্রান্স সাহারা অঞ্চলের কৃতদাস ব্যবসা বন্ধের চুক্তিতে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে মধ্যস্থতা করেন।

ভূগোলে অবদান[সম্পাদনা]

১..তিনি ভৌগোলিক আলোচনায় মানবিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ২..ভূগোলে আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেন। অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগটি হল—ক|| প্রথম ক্রম= পৃথিবী

          খ|| দ্বিতীয় ক্রম= মহাদেশীয় একক 
          গ|| তৃতীয় ক্রম= ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী এক একটি    
                                           মহাদেশের অংশ বিশেষ। 
          ঘ|| চতুর্থ ক্রম= স্থানীয় অভিঞ্জতার ভিত্তিতে 
                                      ক্ষুদ্রতম  আঞ্চলিক একক।   
৩.. নিয়ন্ত্রণবাদ ও সম্ভাবনাবাদের মধ্যে সার্থক সমন্নয়। 

৪.. অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্যের সংশ্লেষের মাধ্যমে ভূগোলকে অভিজ্ঞতালব্ধ বিজ্ঞান হিসাবে প্রতিষ্ঠা তিনি করেন।।

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Carl Ritter | German geographer | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-১০