আইউব আলী খান
আইউব আলী খান | |
---|---|
জন্ম | আনুমানিক ১৯০৩ |
মৃত্যু | ১ অক্টোবর ১৯৯১ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক |
রাজনৈতিক দল | যুক্তফ্রন্ট |
সন্তান | তিন ছেলে তিন মেয়ে |
পিতা-মাতা | পিতা : উমেদ আলী খান |
আইউব আলী খান (জানুয়ারি ১৯০৩ - ১ অক্টোবর ১৯৯১) ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের একজন রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক। নিজ ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া ও সাহেবগঞ্জ গ্রাম উন্নয়নে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। [১]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]আইউব আলী খান বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল উমেদ আলী খান। [১]
শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯২০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে বরিশাল জেলার ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯২২ সালে আই,এ পাশ করেন। [১]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]তিনি তার প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। তিনি সেখানে ১৯২৩ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি তার এলাকায় গৃদকালিন্দিয়াতে ১৯২৬ সালে গৃদকালিন্দিয়া এম.ই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে নিজেই উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কুমিল্লা সেসন জোট কোর্টের ৩০ বছর পর্যন্ত স্পেশাল জুরার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। [১]
রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা]তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল যুক্তফ্রন্টের হয়ে রাজনীতি করেন। এছাড়াও তিনি তৎকালীন জমিদারদের সাথে ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়ে কয়েকবার প্রেসিডেন্ট এবং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। [১]
সমাজসেবা মূলক কাজ
[সম্পাদনা]তিনি মূলত ছিলেন একজন সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। তার অবদানে ফরিদগঞ্জ উপজেলার স্বনামধন্য গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা ফরিদগঞ্জের একটি স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ। ১৯২৬ সালে গৃদকালিন্দিয়া এম.ই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৪৮ সালে নিমণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা মূলত মেয়েদের শিক্ষার উন্নতির জন্য করেছেন। তিনি তার এবং তার আত্মীয়স্বজনের জায়গার উপর এই বিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠা করেন। আত্মীয়স্বজনের জায়গায় এগুলো করাতে তিনি অনেক সমস্যায় পড়েন। যার ফলে তিনি দুই মাস আত্মগোপনে ছিলেন। পরে আবশ্যক অনেক চেষ্টার পরে সরকারীভাবে আত্মীয়স্বজনের জায়গার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেন। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় এবং বিশাল মাঠ মিলে প্রায় ৫.৯০ একর জমি রয়েছে। এই তিনটি বিদ্যালয় একত্রে মিলে আইউব আলী খান কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। এছাড়াও তিনি তার প্রতিষ্ঠিত স্কুল প্রতিষ্ঠানের পাশেই ১৯৩৩ সালে গৃদকালিন্দিয়া বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। গৃদকালিন্দিয়া বাজার প্রতিষ্ঠা করতে তিনি এবং তার বড় ভাইয়ের জায়গা দান করেন এবং উক্ত বাজারে ১৯৪৩ সালে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পোস্ট অফিস, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যাংক ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সারাজীবন মানুষের কল্যাণে নিজের অর্থ সম্পত্তি দান করে গেছেন। ছেলেমেয়েদের জন্য তেমন কিছু রেখে যাননি। শেষ জীবনে অর্থের অভাবে অনেক কষ্টে দিন কাটান। এমনকি অর্থের অভাবে সুচিকিৎসাও করাতে পারেননি।[১]
বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান
[সম্পাদনা]তিনি প্রথমত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের একজন লড়াকু সৈনিক এবং দ্বিতীয়ত তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। যার ফলস্বরূপ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা তার ঘরবাড়ি জালিয়ে দেয়।[১]
সম্মাননা
[সম্পাদনা]ফরিদগঞ্জে তার এবং ফরিদগঞ্জের আরো কৃতিত্বপূর্ণ দুই সন্তান ওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান এবং নূরেজ্জামান ভুঁইয়ার স্মৃতিস্বরূপ একটি ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। তিনিসহ ফরিদগঞ্জের ঐ দুইজন কৃতিত্বপূর্ণ সন্তানের মুখের আদলে তৈরি করা হয় এই ভাস্কর্যটি। যার নাম ওনুয়া স্মৃতি ভাস্কর্য। [১]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]আইউব আলী খান ১৯৯১ সালে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।[১]