বিষয়বস্তুতে চলুন

নূরেজ্জামান ভুঁইয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নূরেজ্জামান ভুঁইয়া
জন্ম১লা জানুয়ারি ১৯০২
মৃত্যু১৩ নভেম্বর ১৯৬৯
ভুঁইয়া বাড়ি, রূপসা গ্রাম, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, বাংলাদেশ
মৃত্যুর কারণউচ্চ রক্তচাপ
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত
 পাকিস্তান
পরিচিতির কারণরাজনীতিবিদ,
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক,
শিক্ষক
রাজনৈতিক দলযুক্তফ্রন্ট
সন্তানচার ছেলে দুই মেয়ে
পিতা-মাতাপিতা : ফজর আলী

নূরেজ্জামান ভুঁইয়া (১ জানুয়ারি ১৯০২ - ১৩ নভেম্বর ১৯৬৯) ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের একজন রাজনীতিবিদ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক ও শিক্ষক। নিজ উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। তার উদ্যোগে বর্তমান ফরিদগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৎকালীন সময়ে স্থাপিত হয়।[]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

নূরেজ্জামান ভুঁইয়া বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ফজর আলী। []

শিক্ষা জীবন

[সম্পাদনা]

তিনি নিজ এলাকা থেকে ১৯১৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে কলকাতা লর্ড রিপন কলেজ থেকে ১৯১৭ সালে আই,এ পাশ করেন এবং একই কলেজ থেকে বি,এ পাশ করেন। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে তা আর শেষ করতে পারেননি। তিনিই ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তি। []

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

তিনি রাজনীতি এবং শিক্ষকতার মাধ্যমেই তার কর্মজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি যুক্তফ্রন্টের হয়ে রাজনীতি করেছেন নিজ গ্রাম রূপসা উচ্চ বিদ্যালয়ে, শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী উচ্চ বিদ্যালয়, দামোর্দদী উচ্চ বিদ্যালয় ও আমিরবাজ উচ্চ বিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার স্বনামধন্য এ.আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়কে তিনি বাই লেটারে উত্তীর্ণ করেন এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানে পনের বছর প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[]

রাজনৈতিক জীবন

[সম্পাদনা]

তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতির জন্য পড়ালেখা পর্যন্ত পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ১৯২১ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এইসময় তিনি ভারতীয় মহাদেশের অনেক নেতৃবৃন্দের সংস্পর্শে আসেন। আন্দোলনের সূত্র ধরে তিনি ভারতীয় মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করেন। তিনি মাওলানা শওকত আলি, মাওলানা মুহাম্মদ আলিচিত্তরঞ্জন দাশ এইরকম অনেক নেতার সাথে তিনি ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য সহযোদ্ধা হিসাবে কাজ করেন। তিনি রাজনৈতিক কারণে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত ভারতের কলকাতা বৈঠকখানা রোডে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে তিনি ইন্ডিয়া কংগ্রেসে রাজনীতি করেন। তার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা দেখে ব্রিটিশ সরকার তাকে অবিভক্ত ভারতের পূর্ব অঞ্চলের কোল কন্ট্রোলার ও ডেপুটি মাজিস্ট্রেটের চাকুরি করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তিনি এই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এছাড়াও একটি বিদেশী কোম্পানির লোভনীয় চাকুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কেননা সেখানে চাকুরি করতে গেলে রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় হতে পারবেননা, সেই কারণে। ব্রিটিশ শাসনামলে লাকসাম, চাঁদপুর ও মতলব এলাকার আসনে ১৯৩৭ সালে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৪৬ সালে লেজেসলেটিভ এসেমলির সদস্যপদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, আবদুল হামিদ খান ভাসানীহোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর অনুরোধে তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে নিজ প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে তাদের মনোনীত প্রার্থীকে সাপোর্ট করেন। এইসময় রূপসা গ্রামে হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আগমন করেন। তিনি তাদের সাথে নির্বাচনের সময় বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দেন। []

সমাজসেবা মূলক কাজ

[সম্পাদনা]

তিনি রাজনীতি করার পাশাপাশি একজন সমাজসেবকও ছিলেন। মূলত তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য কাজ করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তার বড় অবদান হচ্ছে ফরিদগঞ্জের স্বনামধন্য এ.আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়কে বিভিন্ন দিক দিয়ে উত্তীর্ণ করা। এই বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠটি তার পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছিল। []

সম্মাননা

[সম্পাদনা]

ফরিদগঞ্জে তার এবং ফরিদগঞ্জের আরো দুই কৃতিত্বপূর্ণ সন্তানের স্মৃতিস্বরূপ একটি ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। তিনিসহ ফরিদগঞ্জের আরো দুইজন কৃতিত্বপূর্ণ সন্তানের মুখের আদলে তৈরি করা হয় এই ভাস্কর্যটি। যার নাম ওনুয়া স্মৃতি ভাস্কর্য[]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

নূরেজ্জামান ভুঁইয়া চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামে নিজ বাড়ি ভুঁইয়া বাড়িতে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬৯ সালের ১৩ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। []

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "প্রখ্যাত ব্যক্তি - ফরিদগঞ্জ উপজেলা তথ্যবাতায়ন"। ৪ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৮