তফসীরে নূরুল কোরআন
লেখক | আমিনুল ইসলাম |
---|---|
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
মুক্তির সংখ্যা | ৩০ খণ্ড |
ধরন | তাফসীর |
প্রকাশিত | ১৯৮১ — ১৯৯৮ |
প্রকাশক | আল বালাগ পাবলিকেশন্স |
মিডিয়া ধরন | শক্তমলাট |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১১,১০২ |
তাফসীরে নূরুল কুরআন আমিনুল ইসলাম কর্তৃক বাংলা ভাষায় রচিত একটি তাফসীর গ্রন্থ। এটিই বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ তাফসীর গ্রন্থ।[১][২] ৩০ খণ্ডে সমাপ্ত ১১,১০২ পৃষ্ঠায় রচিত এই তাফসীর গ্রন্থে ইসলামি জীবন ধারার সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত এমন প্রায় সাড়ে চার হাজার বিষয়ের আলোচনা স্থান পেয়েছে। এ গ্রন্থ রচনার কাজ ১৯৮১ সালে শুরু হয়। ১৭ বছর পর ১৯৯৮ সালে রচনার কাজ শেষ হয়। ১৯৮১ সাল থেকে মাসিক আল বালাগ পত্রিকায় খন্ডাকারে প্রকাশিত হতে থাকে।[৩]
প্রেক্ষাপট
[সম্পাদনা]লেখক গ্রন্থটি রচনার কারণ হিসেবে বলেছেন,
“ | পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে বিগত ১৪শ বছরের মধ্যে বাংলা ভাষায় কোন মৌলিক, প্রামাণ্য এবং বিস্তারিত তাফসীর গ্রন্থ আজও রচিত হয়নি। তখন থেকেই আমার মনের গোপনতম প্রকোষ্টে যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয় তা হল: বাংলা ভাষায় এমন একটি তাফসীর গ্রন্থ রচনা করা, যা হবে মৌলিক, প্রামাণ্য এবং বিস্তারিত, যা হবে অন্যান্য ভাষায় রচিত মূল্যবান তাফসীর গ্রন্থ সমূহের নিযার্স। এ উদ্দেশ্যে সর্ব প্রথম পবিত্র কুরআন তরজমায় হাত দেই। | ” |
গঠন ও উৎস
[সম্পাদনা]এই গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের শুরুতে ‘লেখকের আরজ’ নামে চার পৃষ্ঠার একটি আবেদন, সাত পৃষ্ঠার একটি সূচীপত্র, নয় পৃষ্ঠার একটি ভূমিকা সংযোজিত হয়েছে। অতঃপর ‘অবতরণিকা’ নামে লেখক পুনরায় ১৫৬ পৃষ্ঠা ব্যাপী একটি বৃহৎ ভূমিকার অবতারণা করেছেন। এই ‘অবতরণিকা’ অংশে তিনি কুরআন ও কুরআনের তাফসীরের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। তন্মধ্যে কুরআন সংকলনের ইতিহাস, কুরআন তিলাওয়াত করার নিয়ম, ফাযায়েলে কুরআন, কুরআনের তাফসীর প্রসঙ্গ, কুরআনে একই ঘটনা বারবার উল্লেখ করার কারণ, ওহী নাযিলের পদ্ধতি, কুরআনে বর্ণিত ফেরেস্তা, সাহাবা ও আম্বিয়াদের বিবরণ, প্রথম যুগের মুফাসসিরগণের পরিচিতি, উপমহাদেশে কুরআন, কুরআনে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বানী ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য। প্রতিটি খণ্ডের শুরুতে প্রথম খণ্ডের মতই তিনি ৩ থেকে ৭ বা ৮ পৃষ্ঠা ব্যাপী একটি ভূমিকা ও ৩ থেকে ৭ বা ৮ পৃষ্ঠা ব্যাপী একটি বিষয় সূচী প্রদান করেছেন।
অনুবাদ ও তাফসীরের পূর্বে বাংলায় প্রতিটি সূরার নাম, অবতীর্ণের স্থান, আয়াত ও রুকুর সংখ্যা, শানে নুযূল ও ফাযায়িলুল কুরআন ইত্যাদি আলোকপাত করেছেন। অতঃপর প্রতিটি সূরার আংশিক মূল আরবি, তৎনিচে ‘তরজমা’ আখ্যায় বঙ্গানুবাদ, অতঃপর ‘তাফসীরুল কুরআন’ আখ্যায় কুরআনের বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
এ তাফসীরে যে সমস্ত গ্রন্থকে উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তন্মধ্যে ‘জামিয়ুল বায়ান’, ‘মাফাতিহুল গায়িব’, ‘ইবনে কাসীর’, ‘আদ দুররুল মানসূর’, ‘তাফসীরে মাযহারী’, ‘খুলাসাতুত তাফাসীর’, ‘সাফওয়াতুত তাফাসীর’, ‘বয়ানুল কুরআন’, ‘তাফসীরে হাক্কানী’, ‘তাফসীরে মাজেদী’, ‘আল বাহরুল মুহীত’, ‘মাআরিফুল কুরআন’, ‘কাসাসুল কুরআন’, ‘তানবীরুল মিকইয়াস’ ও বুখারী-মুসলিমসহ হাদিসের অন্যান্য প্রামাণ্য গ্রন্থ উল্লেখ্যযোগ্য।
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]এই তাফসীর গ্রন্থের কতিপয় বৈশিষ্ট্য:
- কুরআনের কোন একটি অংশের ব্যাখ্যাকে অধিকতর স্পষ্ট করে বর্ণনা করার জন্য কুরআনের অন্য অংশের উদ্ধৃতি ব্যবহার করার উদাহরণ এ তাফসীরে ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়।
- এ তাফসীর গ্রন্থে হাদিসের যথেষ্ট পরিমান উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।
- বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখক নিজের মতামত উপস্থাপনের পাশাপাশি পূর্ববর্তী মনীষীগণের মতামতও উপস্থাপন করেছেন।
- কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ফিকহী মাসআলা-মাসাইল বর্ণনায় হানাফি মাজহাবের প্রাধান্য লক্ষণীয়।
- এ তাফসীরে অতীতের বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ সমূহের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন উদ্ধৃতি উপস্থাপন করা হয়েছে।
- বিভিন্ন আয়াতের তাফসীর করার সময় আধুনিক যুগের কতিপয় জিজ্ঞাসার জবাবও এ গ্রন্থে উপস্থাপন করা হয়েছে।
- তাফসীর বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখক প্রথমে পূর্বের আয়াতের সাথে বর্তমান তাফসীরকৃত আয়াতের ও পূর্বের সূরার সাথে বর্তমান তাফসীরকৃত সূরার যোগসূত্রের বর্ণনা দিয়েছেন।
- বিভিন্ন সূরার তাফসীরের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সূরার নাম করণের তাৎপর্য নিয়েও এ তাফসীরে আলোচনা করা হয়েছে।
- এ তাফসীরে বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখক অসংখ্য আরবি, উর্দু ও ফার্সি কবিতার চরণ উল্লেখ করেছেন।
- এ তাফসীরে নবীগণের নাম আলাদা-আলাদা ভাবে উল্লেখ করে তাদের আলোচনা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
- কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা বাস্তব জীবনে নানা রকম অভিজ্ঞতালব্ধ উপকারীতার বর্ণনা এ তাফসীরে ‘আমালুল কোরআন’ শিরোনামে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি এই তাফসীরেরই একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।
- কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখক প্রশ্ন উপস্থাপন করে তারপর নিজেই আবার জবাব প্রদান করে আয়াতের মূূলভাব অধিকতরভাবে স্পষ্ট করার প্রয়াস পেয়েছেন।
- এ তাফসীরে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘মাসায়েলুল কুরআন’ শিরোনাম দিয়ে আয়াতের আলোকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া তুলে ধরা হয়েছে। এটাও এই তাফসীরেরই একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
- এ তাফসীরটির ৩০ খণ্ডের প্রতিটি খণ্ডের শুরুতেই কয়েক পৃষ্ঠা ব্যাপী কিছু আলোচনা ‘ভূমিকা’ শিরোনামে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব ‘ভূমিকায় মুফাসসির এক-এক খণ্ডে এক এক ধরনের আলোচনা তুলে ধরেছেন।
- এ তাফসীরের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট হল, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাকে লেখক বিভিন্ন শিরোনামে নামকরণ করে তারপর ব্যাখ্যা করেছেন।
এ তাফসীর গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের শুরুতে তৃতীয় খলিফা ওসমান তার শাহাদাতের পূর্বে মূহুর্তে যে কুরআন শরীফ খানা তিলাওয়াত করছিলেন তার অংশ বিশেষের দুর্লভ একটি ফটোকপিও সংযোজিত হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার তাসখন্দ লাইব্রেরীতে এটি সংরক্ষিত আছে এবং লেখক এটি স্বচক্ষে দেখেছেন বলেও এ ফটোকপির ছবির নিচে তিনি উল্লেখ করেছেন। এ তাফসীরের ১ম খণ্ডের শুরুতে হরিণের চামড়ায় লিপিবদ্ধ প্রাচীনতম কুরআনের একটি অংশের ফটোকপিও সংযোজিত হয়েছে। এ তাফসীর গ্রন্থের অনুবাদ ও তাফসীরে সারল্যের ছোঁয়া ষ্পষ্ট।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ইসলাম, মিনহাজুল (২৭ মার্চ ২০১১)। "মাতৃভাষায় কুরআন চর্চা"। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-০৪।
- ↑ আব্দুল ওদূদ, মোহাম্মদ (২০০৯)। বাংলা ভাষায় কুরআন চর্চাঃ উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ। ঢাকা: আল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ একাডেমি। পৃষ্ঠা ৩৩৬–৩৪৬। আইএসবিএন 9843215302।
- ↑ আজাদ, আবুল কালাম (২০১৩)। বাংলা ভাষায় তাফসীর চর্চা : বিশেষত তফসীরে নূরুল কোরআন (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২৬০–৩৭১। ২১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০২১।