কাচ্চি বিরিয়ানি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কাচ্চি বিরিয়ানি
বাংলাদেশের একটি রেস্তোরাঁয় পরিবেশিত কাচ্চি বিরিয়ানি
প্রকারমূল খাবার
উৎপত্তিস্থলবাংলাদেশ
অঞ্চল বা রাজ্যঢাকা
প্রধান উপকরণচাল, মসলা, খাসির মাংস, আলু, টকদই ইত্যাদি[১]

কাচ্চি বিরিয়ানি এর উৎপত্তি ঢাকায় হলেও এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি প্রচলিত এক বিশেষ প্রকারের খাবার যা সুগন্ধি চাল, ঘি/তেল, গরম মশলা এবং কাঁচা মাংস মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মাধ্যমে প্রসারতা লাভ করে।[২]

নামকরণ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের একটি রেস্তোরাঁয় পরিবেশিত কাচ্চি বিরিয়ানি (বামে)

কাচ্চি বিরিয়ানির কাচ্চি শব্দটি এসেছে উর্দু কাচ্চা শব্দটি থেকে, যার বাংলা অর্থ কাঁচা। যেহেতু সুগন্ধি চালের সাথে মাংস সরাসরি রান্না করা হয়, তাই এর নাম হয়েছে কাচ্চি। এটি হিন্দি এবং উর্দুতেও একই নামে পরিচিত। সেদ্ধ ছাড়া খাসির মাংস টকদই দিয়ে মাখিয়ে তার উপর আলু আর চালের আস্তরণ দিয়ে রান্না করা হয় কাচ্চি বিরিয়ানি।[২]

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

কাচ্চি বিরিয়ানি ঢাকায় উৎপত্তি হয়েছে।বিরিয়ানির জন্ম মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানের লোকেদের পছন্দ ছিল লাল মাংস (খাসি/ভেড়ার মাংস)। এই লাল মাংস দিয়েই কাচ্চির প্রচলন শুরু করে শীতপ্রধাণ এই অঞ্চলের মানুষগুলি। চাল, মাখন, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ আর স্থানীয় মসলা জয়ফল সহযোগে একটি খাবার প্রস্তুত করতো তারা।[১] তৈমুরের শাসনের শেষ দিকে যখন সমরখন্দের বাড়বাড়ন্ত, তখনই সম্ভবত এই খাবারের প্রচলন হয়। ভারত উপমহাদেশে ১৬১০ সালে কাচ্চি বিরিয়ানির প্রচলন শুরু হয় যখন মুঘল সুবেদার এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঢাকায় প্রশাসন পরিচালনা করতে আগমণ করেন। তাদের বেশিরভাগ বর্তমান ভারতের লখনউ থেকে এসেছিলেন এবং তারা তাদের সাথে ব্যক্তিগত রাঁধুনি নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে অনেক সুবেদার ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে গেলেও কিছু রাঁধুনি ঢাকাতেই রয়ে যান এবং স্বল্প পরিসরে নিজস্ব দোকান প্রতিষ্ঠা করে কাচ্চি বিরিয়ানি খাবারটিকে ঢাকায় বাঁচিয়ে রেখে মোগলাই আহার ও আপ্যায়নের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে থাকেন। এটি ধীরে ধীরে ঢাকার স্থানীয় খাবারগুলোর পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং একটি অনন্য স্বাদ তৈরি করে, সাধারণ মানুষের মন জয় করে এবং আস্তে আস্তে তাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত অংশে পরিণত হয়।

প্রস্তুতপ্রণালী[সম্পাদনা]

থালায় পরিবেশিত ঘরে তৈরি কাচ্চি বিরিয়ানি।

উপকরণ[সম্পাদনা]

১ কেজি মাংস- (খাসি), লবণ- স্বাদমতো, দেড় টেবিল চামচ করে আদা বাটা ও রসুন বাটা, আধা কাপ টকদই, জর্দার রং বা জাফরান (পছন্দমতো), আধা চা চামচ দারুচিনি গুড়ো, আধা চা চামচ এলাচ গুড়ো, ৩/৪ টি লবঙ্গ, ১ চিমটি জয়ত্রী, ১/৮ চা চামচ জিরা গুড়ো, আস্ত দারুচিনি ২ খণ্ড, ১ চা চামচ চিনি, আধা চা চামচ গোলমরিচ গুড়ো, পেস্তা বাদাম- ১ মুঠো, ৩ টি তেজ পাতা, আলু (৪ খণ্ড করে কাটা)- ২ টি, পেঁয়াজ বেরেস্তা- পরিমাণ মতো, পোলাওয়ের (তুলশীমালা চাল, কালিজিরা চাল, চিনিগুড়া চাল ইত্যাদি) চাল- আধা কেজি (বাসমতী হলে ভালো হয়), লবণ- স্বাদমতো।[১]

প্রণালী[সম্পাদনা]

মাংস রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন কয়েক ঘণ্টা মাংস লবণে থাকার কারণে নরম হয়ে যাবে এবং সহজে সেদ্ধ হবে। এরপর ধুয়ে রান্না করবেন। এরপর দইয়ে দারুচিনি ও এলাচি গুড়ো, জর্দার রং মিশিয়ে দই মাংসে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর জয়ত্রী, গোলমরিচ, আদা-রসুন বাটাসহ বাকি সব মসলা মাংসে দিয়ে মাংস ভালো করে মেখে নিন। চাল পানিতে আলাদাভাবে সেদ্ধ করে নিন। পেঁয়াজ বেরেস্তা করে নিন ও সাথে আলুর টুকরাগুলো ভেজে নিন। এরপর মসলা মাখানো মাংস রান্নার পাত্রে ঢেলে সাজিয়ে নিন। তার ওপর ভাজা আলু ও পেঁয়াজ বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন। এবার মাংসের ওপরে সেদ্ধ চাল সমান করে বিছিয়ে নিন। পাত্রটি চুলায় বসিয়ে দিন এবং পাত্রের মুখে ঢাকনা দিয়ে চারপাশ আটা দিয়ে বন্ধ করে দিন যাতে ভাব বাইরে না বেড়িয়ে যেতে পারে। তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে কাচ্চি বিরিয়ানি। এরপর মুখের ঢাকনা খুলে একটি নাড়ুনি দিয়ে এক দুইবার হালকা ভাবে নেড়ে মাংসের সাথে চাল মিশিয়ে নিন। হালকা ভাবে নাড়বেন, তা না হলে চাল ভেঙে যাবে। তৈরি হয়ে গেলে পরিবেশন করুন 'কাচ্চি বিরিয়ানি'।[১]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "কাচ্চি বিরিয়ানি রেসিপি"। ১ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  2. "বিরিয়ানি: উপমহাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য"10minuteschool। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]