মোহাম্মদ সিদ্দিক
মোহাম্মদ সিদ্দিক | |
---|---|
মৃত্যু | ২০০৫ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
মোহাম্মদ সিদ্দিক (জন্ম: অজানা, মৃত্যু: ২০০৫ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]মোহাম্মদ সিদ্দিকের জন্ম বরিশাল জেলায়। তার বাবার নাম গোলাম রহমান এবং মায়ের নাম উম্মে কুলসুম। তার স্ত্রীর নাম হাসিনা বেগম ও খাদিজা বেগম। তাঁদের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]মোহাম্মদ সিদ্দিক চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি এই রেজিমেন্টের বেশির ভাগ সদস্যকে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। কিছু সদস্য থাকেন সেনানিবাসে। তিনি সেনানিবাসে ছিলেন। ২৫ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে ক্যাপ্টেন এম এ মতিনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জেলার মাস্তাননগর ও মিরসরাইয়ে যুদ্ধ করেন। ২০ এপ্রিল মিরসরাইয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি আহত হন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ২২ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত লাতুমুড়া সীমান্ত এলাকার ওপারে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের দলনেতা লেফটেন্যান্ট হুমায়ুন কবির চৌধুরী রাতে খবর পেলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল চন্দ্রপুর-লাতুমুড়ার দিকে আসছে। খবর পেয়েই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওই দলকে অ্যামবুশের। মুক্তিযোদ্ধারা তার নির্দেশে দ্রুত প্রস্তুত হলেন। তিনটি উপদলে বিভক্ত তারা। একটি দলে থাকলেন মোহাম্মদ সিদ্দিক। পরদিন ভোর হওয়ার আগেই তারা সীমান্ত অতিক্রম করে অবস্থান নিলেন লাতুমুড়ার কাছে ইয়াকুবপুর-কুয়াপাইনা এবং খৈনলে। পাকিস্তানিরা পথে এক স্থানে রাত যাপন করে সকালে এসে উপস্থিত হলো মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাম্বুশ এলাকায়। ৫০ থেকে ১০০ গজের মধ্যে আসামাত্র গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। আকস্মিক আক্রমণে হকচকিত পাকিস্তানি সেনারা। তারা কল্পনাও করেনি এমন আক্রমণের। দিশেহারা হয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে গেল। আটজন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও তিনজন আহত হলো। পাকিস্তানি সেনারা পেছনে সংগঠিত হওয়ার পর পুনরায় অগ্রসর হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণ চালাল। মোহাম্মদ সিদ্দিক ও তার সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করলেন। তাঁদের বীরত্বে পাকিস্তানিদের অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল। এরপর সারা দিনই দুই পক্ষে গোলাগুলি চলল। সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে যায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল তাদের আক্রমণ করে বেশ ক্ষতিসাধন করে। পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে লাতুমুড়ার উত্তরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। পরদিন ২৪ জুন পাকিস্তানিরা যখন নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরিতে ব্যস্ত, তখন মোহাম্মদ সিদ্দিক ও তার সহযোদ্ধারা তাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালান। ওই আক্রমণে নিহত হয় আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দুজন আহত হন। চন্দ্রপুর-লাতুমুড়া অ্যাম্বুশে মোহাম্মদ সিদ্দিক যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। মূলত তাঁদের দলের হাতেই পাকিস্তানি সেনাদের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২২-০৬-২০১২"। ২০১৭-০৭-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।