মজনু শাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মজনু শাহ বা ফকির মজনু শাহ বোরহান (মৃত্যু ১৭৮৭[১]) ছিলেন বর্তমান ভারতের অন্তর্গত উত্তর প্রদেশের একজন মাদারিয়া ফকির বা সুফি সাধু। তিনি ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কিছু পন্ডিতের মতে এই বিদ্রোহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম যুদ্ধের অন্যতম। তিনি তার দল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।[২]

জীবন[সম্পাদনা]

মজনু শাহ মাদারিয়া তরিকার একজন ফকির ছিলেন। সৈয়দ বদিউদ্দিন কুতুবউল শাহ মাদার এই তরিকার প্রতিষ্ঠাতা। কানপুরের নিকট মাকানপুরে শাহ মাদারের মাজারে তার কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল। ১৭৭১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরে লেফটেন্যান্ট ফেলথামের নেতৃত্বাধীন সিপাহীদের সাথে তার প্রথম সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ অসফল ছিল। এরপর তিনি বগুড়ার মহাস্থানগড়ের খানকায় চলে যান। ১৭৭৩ সালের শীতের সময় মজনু শাহ ও তার ফকিরদের দল রাজশাহীতে পুনরায় দেখা দেয়। তারা সন্ন্যাসীদের একটি দলের সাথে যোগ দেয়। ১৭৭৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিপাহীদের চারটি কোম্পানির সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। কোম্পানির সেনাবাহিনী পুনরায় তাদের হামলা প্রতিহত করে।[১]

উধুয়ানালার যুদ্ধ (১৭৬১) ও বক্সারের যুদ্ধে (১৭৬৪) মজনু শাহ বৃহৎ সংখ্যক মুসলিম ফকির ও হিন্দু সন্ন্যাসীকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে একত্রিত করেন। ইতিপূর্বে ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নবাবের কাছ থেকে ক্ষমতা হস্তগত করে।

দিনাজপুরবগুড়া জেলা তার কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল।[৩] তিনি জনগণকে স্বাধীনতা, ধর্ম ও ঐক্যের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

অপর একটি সূত্র মতে অথ্যাৎ মজনু শাহ্ এর অধস্তন ৬ষ্ঠ পুরুষ হায়দার আলী চৌধুরী তার মতেফকির মজনু শাহ্ এর প্রকৃত নাম নূর উদ্দীন মোঃ বাকের জং। তিনি মুঘল বংশীয় একজন শাহজাদা। তার কন্যা লালবিবি ছিলেন মুঘল সম্রাট ২য় শাহ্ বাহাদুর শাহ এর মাতা। আরেক পক্ষদাবি করেন ১৭৮৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি পাঁচশত সৈন্যসহ বগুড়া জেলা থেকে পূর্বদিকে যাত্রা করার পথে কালেশ্বর নামক স্থানে ইংরেজ বাহিনীর সম্মুখীন হন। এই যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হলে তার অনুচরেরা রাজশাহী ও মালদহ জেলা অতিক্রম করে বিহারের সীমান্তে যায়। মাখনপুর নামে এক পল্লিতে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের এই নায়কের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে।[৪]

তার মৃত্যুর পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র মুশা শাহ ফকিরদের নেতৃত্ব দেন এবং মাস্কেট ও রকেটের সাহায্যে আক্রমণ পরিচালনা করেন। ১৭৯২ সালে এক লড়াইয়ের সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ray, Rajat Kumar (1986). Colonial Penetration and the Initial Resistance: The Mughal Ruling Class, the English East India and the Struggle for Bengal 1756-1800, in The Indian Historical Review, Vol.XII, No.1-2, New Delhi: Indian Council for Historical Research, pp.70-3
  2. মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান (২০১২)। "মজনু শাহ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. Lorenzen, David N. (১৯৭৮)। "Warrior Ascetics in Indian History"Journal of the American Oriental Society98 (1): 61। ডিওআই:10.2307/600151 
  4. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৫৩১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  • Muhammad Abu Talib, Majnu Shah

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]