জিয়া উদ্দিন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুফাক্কিরে ইসলাম, আল্লামা

জিয়া উদ্দিন
উপদেষ্টা, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১৫ নভেম্বর ২০২০
সভাপতি, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১৫ জুন ২০১৮
পূর্বসূরীহুসাইন আহমদ বারকুটি
সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
৮ এপ্রিল ২০২০
পূর্বসূরীআব্দুল মোমিন ইমামবাড়ি
মহাপরিচালক, জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
২০১০
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম (1941-04-04) ৪ এপ্রিল ১৯৪১ (বয়স ৮৩)
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাবাংলাদেশি
সন্তান
পিতামাতা
  • মুকাদ্দাস আলী (পিতা)
  • খায়রুন্নেছা বেগম (মাতা)
জাতিসত্তাবাঙালি
যুগআধুনিক
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহহাদিস, ফিকহ, লেখালেখি, তাসাউফ, রাজনীতি, ইসলামি আন্দোলন, শিক্ষা
যেখানের শিক্ষার্থী
মুসলিম নেতা
যার দ্বারা প্রভাবিত
যাদের প্রভাবিত করেন

জিয়া উদ্দিন (জন্ম: ৪ এপ্রিল ১৯৪১) একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশআযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের সভাপতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা, জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের মহাপরিচালক ও আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে তিনি ‘নাজিম সাহেব হুজুর’ নামে পরিচিত। হেফাজত আন্দোলন, খতমে নবুয়ত আন্দোলন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বিরোধী আন্দোলন সহ প্রভৃতি আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মাদ্রাসার পরিচালক এবং কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক সংস্থার নেতৃস্থানীয় পদে রয়েছেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে ‘মুফাক্কিরে ইসলাম’ উপাধি দেওয়া হয়।

জন্ম ও বংশ[সম্পাদনা]

জিয়া উদ্দিন ১৯৪১ সালের ৪ এপ্রিল সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কাকরদিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুকাদ্দাস আলী কুরআনের হাফেজ ছিলেন ও মাতা খায়রুন্নেছা বেগম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। [১]

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

তিনি পরিবার ও গ্রামের মসজিদের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। তিন বছর পর ১৯৫৬ সালে মাথিউরা ঈদগাহ বাজার মাদ্রাসা ও পরের বছর দারুল উলুম দেউলগ্রাম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক শ্রেণি সমাপ্ত করেন। ১৯৬২ সালে গাছবাড়ি জামিউল উলুম মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পাশ করেন। পরের বছর একই মাদ্রাসা থেকে কুরআনের তাফসীরের উপর উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। [১]

কর্ম জীবন[সম্পাদনা]

শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। ১৯৬৭ সালে জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শিহাব উদ্দিন তার কর্মতৎপরতা দেখে দুই বছর পর তাকে শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব দেন। ২০১০ সালে তিনি এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। [১]

২০১৮ সালের ১৫ জুন তিনি আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাচিত হন।[২] পদাধিকারবলে তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ বোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য।[৩] এছাড়াও তিনি আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ড তানযীমুল মাদারিস সিলেটের প্রধান উপদেষ্টা ও মাদানিয়া কুরআন শিক্ষাবোর্ড, নুরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। [১]

তিনি জামিয়া কাসিমুল উলুম মেওয়া, জামিয়া হাতিমিয়া শিবগঞ্জ, বাহাদুরপুর জালালিয়া মাদ্রাসা, আকাখাজানা মহিলা টাইটেল মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার পরিচালক। আশ শিহাব পরিষদ, ইকরা ফাউন্ডেশন ইউকে, আল হিলাল ছাত্র সংসদ, আল কলম গবেষণা পরিষদ, চেতনা সাহিত্য পরিষদ, জাগরণ ইসলামী সাংস্কৃতিক পরিষদ, হিজবে এলাহী বিয়ানীবাজারসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক, সাহিত্যসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের তিনি উপদেষ্টা। [১]

২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এক কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তিনি উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।[৪][৫]

রাজনীতি[সম্পাদনা]

১৯৮০-এর দশকে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়ার বৃহত্তর সিলেট শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৭ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে তিনি জমিয়তের সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। পরপর তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহকারী মহাসচিব নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি সিলেট জেলা জমিয়তের সভাপতির দায়িত্ব পান। একই বছর কেন্দ্রীয় জমিয়তের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় জেলা জমিয়তের সভাপতি হন। ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তাকে পুনরায় সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ২০১৮ সালে তাকে তৃতীয়বারের মতো সিলেট জেলা জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল আব্দুল মোমিন ইমামবাড়ীর মৃত্যুর পর তিনি জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত হন। [১][৬][৭]

অবদান[সম্পাদনা]

তিনি অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে ধর্মীয় শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। দারুল উলুম হাটহাজারীতে অধ্যয়নকালে আইয়ুব খানের আমলে ‘মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামে বেরলভিদের সাথে এক সংঘর্ষে তিনি আহত হয়েছিলেন। আব্দুল কাইয়ুম তার সম্মানে আরবি কবিতা আবৃত্তি ও শাহ আহমদ শফী তার ত্যাগের মূল্যায়ন করে নিজ হাতে একটি চিঠি লিখেছিলেন। [১]

১৯৯০-এর দশকে তিনি বিয়ানীবাজারে ইসমতে আম্বিয়া ও খতমে নবুয়ত আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এসময় তার তত্ত্বাবধানে ইযহারে হকের উদ্যোগে বিয়ানীবাজারে খতমে নবুয়ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তসলিমা বিরোধী আন্দোলন, শাবিপ্রবির নামকরণের আন্দোলন, ফতোয়া বিরোধী রায়ের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দোলনে তিনি সিলেটে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। [১]

২০০৫ সালে ভারত সরকারের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে আগ্রাসন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি কর্তৃক আহুত টিপাইমুখ লংমার্চে তিনি সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর জমিয়তের ডাকা টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে রোডমার্চের আহবায়ক ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরুদ্ধে সিলেটে ‘কুরআনি আইন সংরক্ষণ কমিটি’র আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। ২০১৩ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধে শাহজালাল ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে সর্বদলীয় আন্দোলনে অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। [১]

২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সিলেট জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। হেফাজতের উদ্যোগে শানে রেসালাত সম্মেলন নামে সিলেটে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে তিনি মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতের লংমার্চে তিনি অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দেন। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৫ মের ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। [১]

২০১২ সালের ৯, ১০, ১১ ফেব্রুয়ারি আযাদ দ্বীনী এদারার তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক দস্তারবন্দী সম্মেলনে তিনি কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। [১]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট আশ শিহাব পরিষদের উদ্যোগে তার জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘মুফাক্কিরে ইসলাম’ নামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। [৮]
  • ২০১৭ সালের ১৬ মে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে তাকে নাগরিক সংর্বধনা দিয়ে সম্মানিত করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
  • ২০১৬ সালে শিক্ষকতায় কৃতিত্বের স্বীকৃত স্বরূপ তাকে এক অনলাইন সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। [১]

তাসাউফ[সম্পাদনা]

তিনি শায়খে ফুলবাড়ী খ্যাত আব্দুল মতিন চৌধুরীর কাছে আধ্যাত্মিক দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং মসজিদে নববীতে ইতিকাফ অবস্থায় আব্দুল মতিন স্বীয় খলীফা আব্দুস সবুরের মাধ্যমে তাকে খেলাফত প্রদান করেন। [১]

পরিবার[সম্পাদনা]

পারিবারিক জীবনে তিনি ১ ছেলে ও ৬ মেয়ের জনক। [১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ফরহাদ আহমদ, মাওলানা (১১ এপ্রিল ২০১৯)। "মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দিন দা.বা. এর কর্মময় জীবনালেখ্য"কওমিপিডিয়া 
  2. "এদারা পরিচিতি"দ্বীনী এদারা শিক্ষাবোর্ড। ২০১৯-০৪-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৫ 
  3. "আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্থায়ী কমিটি"হাইআতুল উলয়া শিক্ষাবোর্ড। ২০২০-০৯-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৫ 
  4. "হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেলেন যারা"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "'হেফাজত সরকার বিরোধী নয়, সরকার দলীয়ও নয়' | সারাদেশ"ইত্তেফাক। ২২ নভেম্বর ২০২০। 
  6. "বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন"www.ecs.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৫ 
  7. "আল্লামা শায়খআব্দুস শহিদ গলমুকাপনী( রহ) এর ইন্তেকালে কেন্দ্রীয় জমিয়তের শোক প্রকাশ"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৫ 
  8. "'মুফাক্কিরে ইসলাম' স্মারকের মোড়ক উন্মোচন ৮ আগস্ট"দৈনিক জালালাবাদ। ২০১৯-০৭-২০। ২০২১-১০-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৪ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]