জাম্ববতী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জাম্ববতী ও কৃষ্ণের বিবাহ

জাম্ববতী (সংস্কৃত: जाम्बवती, আইএএসটি: Jāmbavatī) সংস্কৃত ভাষায় রচিত ভাগবত পুরাণে বর্ণিত একটি চরিত্র ৷ ইনি ভাল্লুক রাজা জাম্ববানের কন্যা ও শ্রীকৃষ্ণের প্রধান অষ্টপত্নীর একতম ৷[১] ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ[২]

বিবাহ[সম্পাদনা]

একবার সূর্যদেব দ্বারকার বিশিষ্ট নাগরিক বৃষ্ণি বংশীয় সত্রাজিতের ভ্রাতা প্রসেনকে স্যমন্তক মণি উপহার প্রদান করেন। তখন সত্রাজিৎ সকল দ্বারকাবাসীগণকে সেই মণি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান। দ্বারকাধীশ শ্রীকৃষ্ণও সেই মণির কথা শ্রবণ করে কৌতূহলী হয়ে সেই মণি দর্শন করতে সত্রাজিতের গৃহে আগমন করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যখন সত্রাজিতের কাছে স্যমন্তক মণি দেখতে চাইলেন তখন সত্রাজিৎ তাঁকে সন্দেহ করলেন এবং ভাবলেন যে বাসুদেব তার মণিটির কথা শুনে প্রলুব্ধ হয়েছেন এবং সেটি অপহরণ করার অসদুদ্দেশ্য নিয়েই মণিটি দেখতে চেয়েছেন। তিনি স্যমন্তক মণিটি তাঁকে দেখালেন বটে কিন্তু মনে মনে শ্রীকৃষ্ণের নামে কলঙ্ক রটানোর পরিকল্পনা করলেন। গোপিনীবল্লভ শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাড়ি থেকে প্রস্থান করা মাত্রই তিনি তার ভাই প্রসেনকে স্যমন্তক মণিটি দিয়ে তাকে আত্মগোপন করে থাকতে বললেন। এরপর তিনি সমগ্র দ্বারকায় প্রচার করে দিলেন যে স্যমন্তক মনিটি অপহৃত হয়েছে এবং দ্বারকেশ্বর দেবকীনন্দন মণিটি দেখে চলে যাওয়ার পরেই মণিটি অদৃশ্য হয়েছে। এইকথা শ্রবণমাত্র শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ঘটনার প্রকৃত সত্যতানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হলেন। তিনি এক দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে গুহামধ্যে দেখলেন যে প্রসেন এক সিংহ কর্তৃক নিহত হয়েছেন এবং সম্ভবত সেই সিংহই মণিটি অপহরণ করেছে। এরপর বহু অন্বেষণের পর শ্রীকৃষ্ণ ভল্লুকরাজ জাম্ববানের কাছে স্যমন্তক মণির সন্ধান পেলেন। শ্রীকৃষ্ণ মণিটি তার কাছে প্রার্থনা করলে জাম্ববান তা দিতে অস্বীকৃত হলেন। জাম্ববান বললেন যে যদি যাদবশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ তাকে মল্লযুদ্ধে পরাস্ত করতে পারেন তবেই তিনি মণিটি তাঁকে দিয়ে দেবেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ সেই শর্তে সম্মত হলেন এবং বললেন যে যদি জাম্ববান মল্লযুদ্ধে তাঁর কাছে পরাভব স্বীকার করেন তবে স্যমন্তক মণির সাথে সাথে তিনি জাম্ববানের পরমাসুন্দরী কন্যা জাম্ববতীকেও ভার্যারূপে গ্রহণ করবেন। যথানিয়মে মল্লযুদ্ধ আরম্ভ হল। জাম্ববান বীর হলেও মহাবলবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে অতি সহজেই পরাভূত হলেন। শ্রীকৃষ্ণের শৌর্যে এবং পৌরুষে মুগ্ধ হয়ে জাম্ববান সুপ্রসন্ন চিত্তে তার কন্যা জাম্ববতীকে বাসুদেবের হস্তে সমর্পণ করলেন। এরপর স্যমন্তক মণি এবং জাম্ববতীকে নিয়ে যদুকুলপতি দ্বারকায় প্রত্যাগমন করলেন।[৩]

সন্তান[সম্পাদনা]

অন্যান্য রমণীগণের ন্যায় শ্রীকৃষ্ণ জাম্ববতীরও একাধিকবার গর্ভাধান করেন ও দশটি পুত্রসন্তান লাভ করেন৷ এঁরা হলেন শাম্ব, সুমিত্র, পুরুজিৎ, সত্যজিৎ, সহস্রজিৎ, বিজয়, চিত্রকেতু, বসুমান, দ্রাবিড় এবং ক্রতু। এদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ্য সন্তান শাম্বের নাম বিশেষ ঊল্লেখযোগ্য ৷ শাম্বকে নিয়ে রচিত কালকূটের বিখ্যাত ঊপন্যাস "শাম্ব" বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে৷

পরলোক গমন[সম্পাদনা]

কৃষ্ণের তিরোধান ও যদুবংশের ধ্বংসের পর জাম্ববতী,রুক্মিণী এবং আরও কয়েকজন পত্নী শ্রীকৃষ্ণের বিরহে অন্তর্ধান করেছিলেন। [৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. পৌরাণিক অভিধান, সুধীরচন্দ্র সরকার
  2. শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ
  3. "স্যমন্তক"- শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
  4. http://www.sacred-texts.com/hin/m16/m16007.htm

আরও দেখুন[সম্পাদনা]