আম কাঠলি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আম-কাঠলি (সিলেটি: ꠀꠝ ꠈꠣꠐꠟꠤ) হচ্ছে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে নানা প্রকার মৌসুমী ফল নিয়ে যাওয়ার একটি প্রথা, যা সিলেট অঞ্চলে বহুল প্রচলিত।[১] গ্রীষ্মের ফলমূল বাজারে আসার সাথেসাথে মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে সবধরনের ফল সহ খই, মুড়ি, মোয়া ইত্যাদি আরও হরেক পদের খাদ্যসামগ্রী মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে উৎসবের আমেজে পাঠানোর রীতিকে সিলেটি ভাষায় আম কাঠলি বলে।[২] বিত্তবানদের ক্ষেত্রে এটা আনন্দের হলেও হতদরিদ্র পরিবারের জন্য এটা একটা অসহনীয় বোঝা স্বরূপ।[৩] ফলে সামাজিকভাবে পারিবারিকমানসিক নির্যাতন থেকে মেয়েকে রক্ষা করার জন্য, মেয়ের পরিবার অথবা আত্বীয়স্বজন নিজে না খেয়েও মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আম কাঠলি পাঠাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন।[৪]

আয়োজন[সম্পাদনা]

অনেকে আম-কাঁঠলিকে কুসংস্কার হিসেবে আখ্যায়িত করলেও সামাজিক চাপে পড়ে, বাধ্য হয়েই মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে দেন মৌসুমী রসালো ফল। যারজন্যে আম-কাঁঠলি পৌঁছানোর আগে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে তারিখ জানিয়ে দেয়া হয়। সেখানেও চলে আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করার মহা আয়োজন।[৫] আম-কাঁঠলী প্রথা শুধু আম আর কাঁঠালে সীমাবন্ধ নয়, বরং এতে যোগ হয় আনারস, লিচু, আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতি, মাল্টা, লটকন, তরমুজ ও বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যসহ ভিন্ন স্বাদের পানীয় ইত্যাদি।[৬] পিতাপক্ষ মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যতো বেশি দিতে পারেন তিনি ততো প্রশংসিত হন।[৭] প্রথা অনুসারে মেয়ের বাড়িতে গাড়িভর্তি ফল পাঠাতে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ছেন অনেকেই। যার ফলে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মেয়ে। ভাঙছে অনেক সংসার। এমনকি ঘটছে হত্যার মতো ঘটনাও।[৮]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

ফুরির বাড়ি ইফতারি

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "'আম-কাঠলি'"দৈনিক প্রথম আলো। ১২ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানু ২০২২ 
  2. "যৌতুক প্রথা ও ইফতারি দান"। সিলেট এক্সপ্রেস। ১৩ মে ২০১৯। ৩০ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানু ২০২২ 
  3. "শ্বশুরবাড়ির ইফতারি সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার"। sylhetexpress.com। ১৭ মে ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানু ২০২২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "'ইফতারি আম-কাঠলি' কুসংস্কার প্রথা কেবল সিলেটে"। dibalok.com। ৩ মে ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানু ২০২২ 
  5. "সময় এখন আম-কাঁঠালের"মানবজমিন (পত্রিকা)। ১৪ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানু ২০২২ 
  6. "আম-কাঁঠলী প্রথা 'কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ'"দৈনিক সিলেটের ডাক। ২৪ মে ২০২১। ৩০ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানু ২০২২ 
  7. "সিলেটী কৃষ্টি ! সংশ্লিষ্টরা কি দেবেন একটু দৃষ্টি?"। দিবালোক। ১৫ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানু ২০২২ 
  8. "কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ অমানবিক প্রথা 'আম-কাঁঠালী'"দৈনিক নয়া দিগন্ত। ২৬ মে ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানু ২০২২