মণিপুরী (জাতি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মণিপুরি জনগণ
মোট জনসংখ্যা
১,৮০০,০০০+[১] (২০১১)
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
 ভারত১,৭৬০,৯১৩[২]
          মনিপুর১,৫২২,১৩২[৩]
          আসাম১৬৮,১২৭[৪]
          ত্রিপুরা২৩,৭৭৯[৫]
          নাগাল্যান্ড৯,৫১১[৬]
          মেঘালয়৪,৪৫১[৭]
          অন্ধ্রপ্রদেশ২,৮৩৫[৮]
          মিজোরাম2,242[৯]
 মায়ানমার২৫,০০০[১০]
 বাংলাদেশ১৫,০০০[১]
ভাষা
মৈতৈ মণিপুরি ভাষা
ধর্ম
সংখ্যাগরিষ্ঠ:
হিন্দুধর্ম
সংখ্যালঘু:
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
পাঙাল), নাগা, কুকি, জো

মণিপুরি জাতি ভারতবাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নাম।[১১] এদের আদি নিবাস ভারতের মণিপুর রাজ্যে। মণিপুরিদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। ভারতের মণিপুর, আসাম, ও ত্রিপুরা রাজ্যের ও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় এবং মায়ানমারে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোক বাস করে।[১][১২][১০]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

লৌহ যুগ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যে মণিপুরি ইতিহাস সম্পর্কে লিখিত রেকর্ড আকারে সামান্য নথিপত্র বিদ্যমান। অধিবাসীদের জাতিগত-ভাষাগত পটভূমি সহ এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ইতিহাস অনেকাংশে অজানা।[১৩][১৪][১৫]

ক্যালেন্ডার[সম্পাদনা]

মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী পঞ্জিকা মণিপুরী পঞ্জিকা (মৈতৈ : ꯃꯅꯤꯄꯨꯔꯤ ꯊꯥꯄꯥꯂꯣꯟ) বা কঙলৈপাক পঞ্জিকা (মৈতৈ : ꯀꯪꯂꯩꯄꯥꯛ ꯊꯥꯄꯥꯂꯣꯟ) বা মলিয়া ফম্বালচা কুমশিং (মৈতৈ : ꯃꯂꯤꯌꯥꯐꯝ ꯄꯥꯜꯆꯥ ꯀꯨꯝꯁꯤꯡ) নামে পরিচিত, যার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মতো ১২ মাস এবং ৭ দিনের সপ্তাহ রয়েছে।[১৬]।মনিপুরী ৭ দিনের নাম যথাক্রমে ১.নোঙমাইজিং (রবিবার) ২. নিংথৌকাব (সোমবার) ৩.লৈপাকপোকপা (মঙ্গলবার) ৪.য়ুমশাকৈশা (বুধবার) ৫.শগোলশেন (বৃহস্পতিবার) ৬.ঈরাই (শুক্রবার) ৭.থাংজ (শনিবার)। মনিপুরী রা মাস কে থা বলে। মনিপুরী ১২ মাসের নাম যথাক্রমে ১.শজিবু ২.কালেন ৩.ইঙা ৪. ইঙেন ৫.থাওয়ান ৬.লাংবন ৭.মেরা ৮.হিয়াঙ্গৈ ৯.পোইনু ১০.ওয়াকচিঙ ১১.ফাইরেল ১২.লমতা।এরা বছরকে চহী বলে।মণিপুরীদের নিজস্ব গণনা রীতি রয়েছে। যথাক্রমে .ফুন (শূন্য) .অমা (এক) .অনি (দুই) .অহুম (তিন) .মরি (চার) .মঙা (পাঁচ) .তরুক (ছয়),.তরেত (সাত) .নিপাল (আট) . মাপল (নয়) .তরা (দশ)। এরা ২০ কে কুন,৩০ কে কুন্থ্রা,৪০ কে নিফু,৫০ কে য়াঙ্খৈ, ৬০ কে হুম্ফু,৭০ কে হুম্ফু তরা,৮০ কে মর্ফু,৯০ কে মর্ফু তরা, ১০০ কে চা অমা রুপে নিজস্ব গণনা রীতিতে সকল কিছু গুণে থাকেন। ১০০০ হচ্ছে লিশিঙ অমা।

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স
মণিপুরী ছেলেরা বাদ্যযন্ত্র শিক্ষায় ব্যস্ত
মণিপুরী বাদ্যযন্ত্র শিক্ষক

মণিপুরীদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী। মণিপুরী সংস্কৃতির উজ্জ্বলতম দিক হলো মণিপুরী নৃত্য যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

মণিপুরীদের মধ্যে ঋতুভিত্তিক আচার অনুষ্ঠান বেশি। বছরের শুরুতে হয় মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের বিষু এবং মৈতৈদের চৈরাউবা উৎসবআষাঢ় মাসে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা ও কাঙ উৎসবের সময় প্রতিরাত্রে মণিপুরী উপাসনালয় ও মণ্ডপগুলোতে বৈষ্ণব কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ নাচ ও গানের তালে পরিবেশন করা হয়।

মণিপুরী নৃত্যশৈলীতে রাসলীলা

কার্তিক মাসে মাসব্যাপী চলে ধর্মীয় নানান গ্রন্থের পঠন-শ্রবণ। এরপর আসে মণিপুরীদের বৃহত্তম উৎসব রাসপূর্ণিমা। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র প্রবর্তিত শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলানুকরণ বা রাসপূর্ণিমা নামের মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে প্রায় দেড়শত বছর ধরে (আনুমানিক ১৮৪৩ খ্রি: থেকে) পালিত হয়ে আসছে। কার্ত্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে দূরদূরান্তের লক্ষ লক্ষ ভক্ত-দর্শক সিলেটের মৌলবীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামণ্ডপের এই বিশাল ও বর্ণাঢ্য উৎসবের আকর্ষণে ছুটে আসেন।

বসন্তে দোলপূর্ণিমায় মণিপুরীরা আবির উৎসবে মেতে উঠে। এসময় পালাকীর্তনের জনপ্রিয় ধারা "হোলি" পরিবেশনের মাধ্যমে মণিপুরী তরুণ তরুণীরা ঘরে ঘরে ভিক্ষা সংগ্রহ করে। এছাড়া খরার সময় বৃষ্টি কামনা করে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী বৃষ্টি ডাকার গান পরিবেশন করে থাকে।

ঐতিহ্যবাহী বিবাহের পোশাক

থিয়েটার এবং সিনেমা[সম্পাদনা]

প্রথম মণিপুরী চলচ্চিত্র, মতমগী মণিপুর , ৯ এপ্রিল ১৯৭২ সালে মুক্তি পায়।  পাওখুম আমা (১৯৮৩) হল মণিপুরের প্রথম পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের রঙিন ফিচার ফিল্ম (একটি ফিচার ফিল্মের অ্যাকাডেমির সংজ্ঞা অনুসারে)  এবং এটি ছিল পরিচালনা করেছেন অরিবম শ্যাম শর্মা । Lammei (২০০২) হল প্রথম মণিপুরি ভিডিও ফিল্ম যেটি একটি থিয়েটারে বাণিজ্যিক প্রদর্শনী হয়েছে।  ভিডিও ফিল্ম নির্মাণের গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে মণিপুর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি প্রসারিত হয় এবং প্রতি বছর প্রায় ৪০-৫০টি চলচ্চিত্র তৈরি হয়।

ধর্ম ও উৎসব[সম্পাদনা]

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, অধিকাংশ মণিপুরী হিন্দুধর্ম অনুসারী। কিছু মণিপুরী হিন্দুধর্মের সনামাহী ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। পাশাপাশি ইসলাম ও খ্রীস্টধর্ম পালন করে আসছে।[১৭] বিভিন্ন ধরনের উৎসব যা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এবং তাদের দ্বারা অত্যন্ত আনন্দের সাথে পালিত হয় সেগুলি হল রাসলীলা , জন্মাষ্টমী , হোলি , লাই হারাওবা , চৈরাওবা(নববর্ষ), য়াওশঙ,থাবল চোংবা, রথযাত্রা , দীপাবলি , রাম নবমী

রন্ধনপ্রণালী[সম্পাদনা]

ভাত, শাকসবজি এবং মাছ মেইটিসদের প্রধান খাদ্য। যদিও মাংসও খাওয়া হয় তবে ঐতিহ্যবাহী মেইতি খাবারে মাংস কখনই আমিষ জাতীয় খাবারে ব্যবহার করা হয় না। ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক সমাবেশে মাছ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, ঈল ইত্যাদি একমাত্র আমিষ-ভেজ ব্যবহার করা হয় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেইটিস এটি অনুসরণ করে যেখানে মাংস রান্না করা হয় এবং খাওয়া হলে বাড়ির বাইরে খাওয়া হয়। ভাত হল মেইটেই খাবারের প্রধান কার্বোহাইড্রেট উৎস যা সবজি, মাছ, মিঠা পানির শামুক, কাঁকড়া, ঝিনুক, ঈল ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। মণিপুরি সারেং (ওয়াল্লাগো আট্টু) মাছের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রজাতির মধ্যে বা সাধারণত হেলিকপ্টার ক্যাটফিশ, ইলিশ (ইলিশ টেনুয়ালোসা ) নামে পরিচিত। মিঠা পানির শামুক ( পিলা (গ্যাস্ট্রোপড)) এবং ভোজ্য ঝিনুক একটি উপাদেয় হিসাবে বিবেচিত হয়। শাকসবজি হয় স্ট্যু (কাংসোই) হিসাবে তৈরি করা হয় কম তেল দিয়ে/কোন তেল ভাজাতে ব্যবহার করা হয় না, অথবা তৈলাক্ত মশলাদার সাইড ডিশ (কাংঘো) তৈরি করতে বিভিন্ন যোগ মশলা দিয়ে সরাসরি তেলে ভাজা হয়। ভাজা/ধূমপান করা এবং রোদে শুকানো মাছ বা ভাজা তাজা মাছ সাধারণত বিশেষ স্বাদ দেওয়ার জন্য বেশিরভাগ স্টু এবং তরকারিতে যোগ করা হয়। এই অঞ্চলে খাওয়া শাকসবজি, ভেষজ এবং ফলগুলি দক্ষিণ-পূর্ব/পূর্ব/মধ্য এশীয়, সাইবেরিয়ান, আর্কটিক, পলিনেশিয়ান এবং মাইক্রোনেশিয়ান খাবার যেমন মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইনুইট, ইত্যাদির মতো।), কুল্যান্ট্রো (আওয়া ফাদিগম), চুন বেসিল (মায়াংটন), ফিশওয়ার্ট (টোকিংখোক) এবং আরও অনেকগুলি, যা উত্তর ভারতে চাষ করা হয় না। Meitei রান্নার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির মধ্যে একটি হল Ngari (গাঁজানো মাছ)।সিংজু (এক ধরনের সালাদ), মোরোক মেটপা (মরিচের চাটনি), ইরোম্বা (মরিচের সাথে সেদ্ধ এবং ভেজে রাখা সবজি)। বিভিন্ন ধরনের গাঁজানো বাঁশের অঙ্কুর (সোইবাম) পাশাপাশি তাজা বাঁশের অঙ্কুর (উশোই/শোইডন), এবং গাঁজানো সয়া বিন (হাওয়াইজার)ও মেইতেই রান্নার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করে। সমস্ত খাবার পাশে কিছু তাজা সুগন্ধযুক্ত ভেষজ দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

প্রতিদিনের একটি সাধারণ মেইতে খাবারে থাকবে ভাত, সবজি বা মাছের তরকারি, একটি চটকদার সাইড ডিশ (হয় মোরোক মেটপা বা ইরোম্বা ভেষজ সহ), একটি চাম্পুট (একটি স্টিমড/সিদ্ধ সবজি যার সামান্য চিনি, যেমন, গাজর, কুমড়া বা শসার টুকরো। বা চিনি ছাড়া বাষ্প/সিদ্ধ সরিষার সবুজ ডালপালা ইত্যাদি), এবং কাংঘো।

জীবিকা[সম্পাদনা]

মণিপুরীরা প্রধানত কৃষিজীবী যেখানে ধান তাদের প্রধান ফসল। তবে তারা আম, লেবু, আনারস, কমলা, পেয়ারা এবং অন্যান্য ফলও জন্মায়। মাছ ধরাও মেইতেই সাধারণ যেটি হয় একটি পেশা বা শখ হতে পারে। খাদ্য সামগ্রী, টেক্সটাইল এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাকের বিক্রেতা হিসাবে মহিলারা স্থানীয় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে।[১৮]

খেলাধুলা[সম্পাদনা]

ঐতিহ্যবাহী মেইতেই খেলাগুলি এখনও বিদ্যমান, কিছু এমনকি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

কিছু ক্রীড়া নিম্নরূপ উল্লেখ করা মূল্যবান:

  • কাং শান্নবা
  • লিকোন শান্নবা : এটি মনিপুরীদের অন্যতম প্রধান খেলা।এটি সারাবছর জুড়ে খেলে থাকেন মনিপুরীরা।তবে বর্তমানে নববর্ষে খেলা হয়।
  • শগোল কাংজৈ : এটি আধুনিক পোলোর প্রাচীনতম রূপ যা মণিপুরে এর উৎপত্তিস্থল । গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস (1992) অনুসারে , "পোলোর উৎপত্তি ভারতের মণিপুর রাজ্যে, সি. 3100 CE থেকে পাওয়া যায় যখন এটি 'সাগোল কাংজেই ' হিসাবে খেলা হত"।
  • মুকনা কাং-জৈ : এটি মেইতেই কুস্তির একটি রূপ। এটি খেলাধুলার সবচেয়ে পুরুষালি ফর্ম হিসাবে বিবেচিত হয়।
  • খং কাংজৈ : এটি মেইতেই হকির একটি রূপ।
  • মুকনা কংজেই কুস্তির একটি অনন্য রূপ যা মেইটিসদের মধ্যে জনপ্রিয়।
  • ওলাওবি (উও-লাওবি)
  • আরামবাই হুনবা (ডার্ট অস্ত্র নিক্ষেপ)

রাজাদের শাসনামলে ব্রিটিশরা মণিপুর উপত্যকায় এলে তারা পশ্চিমে পোলো প্রবর্তন করে। স্থানীয়ভাবে একে সাগোল কাংজেই বলা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে খেলাটি মেইটিসের দেবতারা যুদ্ধের অনুশীলন হিসাবে খেলেছিলেন।

  • য়ুবি-লাকপি হল একটি ঐতিহ্যবাহী পূর্ণ যোগাযোগের খেলা যা মেইটিস একটি নারকেল ব্যবহার করে খেলে, যার রাগবির সাথে কিছু উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে। যুবি লাকপির আক্ষরিক অর্থ "নারকেল ছিনতাই"। নারকেলকে পিচ্ছিল করার জন্য গ্রীস করা হয়। মণিপুরের সব খেলার মতোই খেলার নিয়ম আছে। এটি সবুজ ঘাসে খেলা হয়। নারকেল একটি বলের উদ্দেশ্য পূরণ করে এবং খেলা শুরুর আগে রাজা, প্রধান অতিথি বা বিচারকদের কাছে দেওয়া হয়। লক্ষ্য হল গ্রীস করা নারকেলটি বহন করার সময় দৌড়ানো এবং শারীরিকভাবে গোল লাইনের উপর দিয়ে অতিক্রম করা, যখন অন্য দলটি এই জাতীয় যেকোন প্রচেষ্টাকে মোকাবেলা করে এবং বাধা দেয় সেইসাথে নারকেলটি দখল করে নিজে থেকে গোল করার চেষ্টা করে।
  • হিয়াং তানাবা (হাই ইয়াংবা তানাবা) একটি ঐতিহ্যবাহী নৌকা রোয়িং রেস এবং পানাসের উৎসব।

ভাষা[সম্পাদনা]

মণিপুরী জনগোষ্ঠীর ভাষায় প্রসার অসীম

  • মৈতৈ

মণিপুরী মৈতৈ ভাষাকে তিব্বতি-বর্মী উপ-পরিবারের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মনিপুরী মহারাষ্ট্রী-সৌরসেনী ভাষাশ্রেণীর আবার কেউ কেউ একে ইন্দো-মঙ্গোলয়েড উপশ্রেণীর তালিকাভুক্ত করা সমীচীন মনে করেন। শব্দভাণ্ডারের দিক থেকে মণিপুরী মৈতৈ ভাষাতেব্যবহৃত হয় এমন শব্দসংখ্যা চার হাজারেরও বেশি।

১৮৮৯ সনে প্রকাশিত ভারতবর্ষের ভাষা শ্রেণিবিভাগের প্রধান ভিত্তি স্যার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সনের Linguistic Survey of India-তে মৈতৈ মণিপুরী ভাষাকে মণিপুরের অন্যতম ভাষা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৯]মনিপুরী ভাষা ভারতে স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের স্কুলগুলোতে ইন্ডিয়ান সরকার [মণিপুরী]মৈতৈ মণিপুরী ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। মণিপুরি (মৈতৈ) ভাষা ভারতের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং মণিপুর রাজ্যের রাজ্যভাষা।[২০] মণিপুর রাজ্যে মণিপুরী মৈতৈ ভাষায় স্নাতকোত্তর ও পি,এইচ,ডি পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে, মণিপুরীরা নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপে নিজের ভাষায় কথা বলে। নৃতাত্ত্বিক মণিপুরীরা তাদের আদি মণিপুরী ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষায় শিক্ষিত হয়।[২১] কারণ বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে মনিপুরী ভাষায় পাঠদান কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্র থেকে প্রতি সপ্তাহে "মণিপুরী অনুষ্ঠান" শিরোনামে পর্যায়ক্রমে বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয় এবং এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচার এখনো অব্যাহত রয়েছে।

মণিপুরী সাহিত্য[সম্পাদনা]

সূর্যদেবতার উদ্দেশ্যে রচিত গীতিকবিতা ঔগ্রী মণিপুরী মৈতৈ সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন, যা খ্রিস্টীয় ৩৩ অব্দে রচিত। এছাড়া অনেক প্রেমগীতি ও লোকগাথা মণিপুরী মৈতৈ সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। মণিপুরি (মৈতৈ) সাহিত্যের লিখিত অস্তিত্ব পাওয়া যায় খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী থেকেখাম্বাথৈবীর প্রেমকাহিনী(১৫০০-১৬০০) মণিপুরী লোকসাহিত্যর অমূল্য সম্পদ। উনিশ শতকের মধ্যভাগে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক এজেন্ট কর্নেল ম্যাককুলক তার Valley of Manipur and Hill Tribes গ্রন্থে ইংরেজি, মৈতৈ ভাষার তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত অভিধান প্রণয়ন করেন।

অভিবাসী[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে মণিপুরী জাতির অভিবাসন[সম্পাদনা]

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্ত সংঘটিত বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের শিকার হয়ে এবং যুদ্ধজনিত কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের অধিবাসীরা দেশত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় গ্রহণ করে। পার্শ্ববর্তী আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলায়, ত্রিপুরা রাজ্যে, পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে এবং বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মণিপুরী অভিবাসন ঘটে। বার্মা-মণিপুর যুদ্ধের সময় (১৮১৯-১৮২৫) তৎকালীন মণিপুরের রাজা চৌরজিৎ সিংহ, তার দুই ভাই মারজিৎ সিংহ ও গম্ভীর সিংহসহ সিলেটে আশ্রয়গ্রহণ করেন। যুদ্ধ শেষে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকেই স্বদেশে ফিরে যায়, কিন্তু বহু মণিপুরী তাদের নতুন স্থানে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়। বাংলাদেশে আসা মণিপুরীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, ময়মনসিংহের দুর্গাপুর, ঢাকার মণিপুরী পাড়া এবং প্রধানত বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসতি গড়ে তোলে। [২২]

বর্তমানে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া,জুড়ী,বড়লেখায়, সিলেটের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও সুনামগঞ্জহবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে মণিপুরী জনগোষ্ঠীর লোক বাস করে।

মায়ানমার (বার্মা)[সম্পাদনা]

১৮৫৫ সালের জলরঙে বার্মিজ রয়্যাল সার্ভিসে ক্যাথে ঘোড়সওয়ারের

মায়ানমারে মেইটিস সম্প্রদায়ের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর বাসস্থান, যাদেরকে বার্মিজ ভাষায় কাথে বলা হয়[২৩] মায়ানমারের অন্যান্য হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপরীতে, মেইটি অন্যান্য বার্মিজ জাতিগোষ্ঠীর সাথে দৈহিক চেহারার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা তাদের বার্মিজ সমাজে একীভূতকরণ এবং একীকরণকে ত্বরান্বিত করেছে।[২৩] ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে, বার্মিজ মেইটিসদের সংখ্যা প্রায় ৪০,০০০ ছিল, তাদের এক তৃতীয়াংশ মান্দালেতে বসবাস করত।[২৪] তা বর্তমানে আনুমানিক ২৫,০০০ জন।[২৫] মেইটিসরা উত্তরে মিটকিনার নিকটবর্তী গ্রাম, হোমলিন, কালেওয়া, দেশের কেন্দ্রে এবং দক্ষিণে ইয়াঙ্গুন সহ সারা দেশে পুনর্বাসিত হয়েছে।[২৪] তারা মিয়ানমারে এখনো হিন্দুধর্ম পালন করে চলেছে।[২৬]

ভানুবিল কৃষক-প্রজা আন্দোলন[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ শাসনামলে মণিপুরী কৃষকদের সংগ্রামের ইতিহাস সর্বজনবিদিত। ১৯৪৩ সনে জমিদারী ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমার ভানুগাছ পরগনার ভানুবিল মৌজার নয়টি গ্রামের মণিপুরি সম্প্রদায়ের কৃষকরা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মণিপুরী সম্প্রদায়[সম্পাদনা]

১৯৭১ সনে মণিপুরী জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। এই সম্প্রদায়ের অসংখ্য তরুণ মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেন। মণিপুরী মহিলা ও গৃহবধুরাও নানানভাবে মুক্তিবাহিনীমিত্রবাহিনীর সদস্যদের সাহায্য সহযোগিতা করেন।

বিশিষ্ট মণিপুরী[সম্পাদনা]

বিদ্বান


বাংলাদেশী মনিপুরী সাহিত্যিক ও কবি তালিক

বিদ্দান[সম্পাদনা]

বিনোদন[সম্পাদনা]

ক্রিয়া[সম্পাদনা]

রাজনীতিবিদ[সম্পাদনা]

সামরিক[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Meitei"Ethnologue (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  2. "Languages Specified in the Eight Schedule (Scheduled Languages)" (পিডিএফ)census.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০Listed as Manipuri in the 2011 Indian census 
  3. "C-16 Population By Mother Tongue - Manipur"census.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  4. "C-16 Population By Mother Tongue - Assam"census.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  5. "C-16 Population By Mother Tongue - Tripura"census.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. "C-16 Population By Mother Tongue - Nagaland"census.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  7. "C-16 Population By Mother Tongue - Meghalaya"census.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  8. "C-16 Population By Mother Tongue - Arunachal Pradesh"census.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২১ 
  9. "C-16 Population By Mother Tongue - Mizoram"census.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  10. Sunil, Oinam (২০১৫-০৭-১৪)। "Manipuris in Mandalay see ray of hope in Modi"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  11. Samson, Kamei (২০১৯)। "Theorising Social Fear in the Context of Collective Actions in Manipur"Journal of Northeast Indian Cultures4 (2): 12–43। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০২০ P.20: "historically, academically and conventionally Manipuri prominently refers to the Meetei people." P.24: "For the Meeteis, Manipuris comprise Meeteis, Lois, Kukis, Nagas and Pangal."
  12. "Festivals in Meghalaya, Fairs and Festivals of Meghalaya"Travelhot.in। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৮ 
  13. Parratt (2005), pp. 2,13.
  14. Brandt (2017), pp. 122.
  15. Sebastian (2019), pp. 55.
  16. "Names of 12 months of Kangleipak concepts and significances"e-pao.net। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  17. "'Inclusion of Sanamahi religion in minority is being reviewed' : 27th aug11 ~ E-Pao! Headlines"www.e-pao.net। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  18. Winston, Robert, সম্পাদক (২০০৪)। Human: The Definitive Visual Guide। New York: Dorling Kindersley। পৃষ্ঠা 441। আইএসবিএন 0-7566-0520-2 
  19. Linguistic Survey of India, 1891. Compiled by Sir G. A. Grierson, Vol V, page 419
  20. "Eight Schedule of the Constitution of India" (পিডিএফ)Mha.nic.in। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  21. "Bangladesh: Situation and treatment of Hindu Manipuri ethnic minority, including women; ability of women, particularly Manipuri women, to relocate and access housing and employment within Bangladesh (2006-October 2013)"Refworld। Canada: Immigration and Refugee Board of Canada। ৯ অক্টোবর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  22. বাংলাপিডিয়া, প্রকাশকঃ বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা, ২০০০, পৃষ্ঠা ৪৬৮
  23. Nongthombam, Jiten (১ জুলাই ২০১১)। "The Meitei Diaspora in Myanmar"Diaspora Studies4 (2): 155–167। আইএসএসএন 0973-9572ডিওআই:10.1080/09739572.2011.10597359 (নিষ্ক্রিয় ৩১ জুলাই ২০২২)। 
  24. Sanajaoba, Naorem (১৯৮৮)। Manipur, Past and Present: The Heritage and Ordeals of a Civilization (ইংরেজি ভাষায়)। Mittal Publications। আইএসবিএন 978-81-7099-853-2 
  25. Sunil, Oinam (২০১৫-০৭-১৪)। "Manipuris in Mandalay see ray of hope in Modi"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  26. "စစ်ကိုင်းမြို့တွင် ကသည်းမယ်တော်ကြီးချိုးရေတော်သုံးပွဲကျင်းပ" [Three festivals of Kathe Maedaw Gyi Cho Ye Taw held in Sagaing]। Eleven Broadcasting। ১৩ জুন ২০১৯। ২১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • মৌলভীবাজার জেলার জনজীবন/ অধ্যক্ষ রসময় মোহান্ত, ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ৮৭
  • আরণ্য জনপদে/ আবদুস সাত্তার, পৃষ্ঠা ২৯৭
  • মণিপুরী জাতিসত্তা বিতর্ক: একটি নিরপেক্ষ পাঠ / অসীম কুমার সিংহ, ২০০১ সিলেট,
  • রিপোর্ট: জাতীয় আদিবাসী গোলটেবিল বৈঠক / ডিসেম্বর ১৮-২০,১৯৯৭ ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩২
  • পুর্ব্ববঙ্গ ও আসাম/ শ্রী কৃষ্ণমোহন ধর, ১৯০৯ , পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭
  • নানকার বিদ্রোহ / অজয় ভট্টাচার্য ,১৯৭৭
  • ভানুবিল কৃষক প্রজা আন্দোলন বারোহ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজ / অধ্যাপক রণজিৎ সিংহ, ১৯৮৫

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]