সুফি মিজানুর রহমান
সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
মাতৃশিক্ষায়তন | সরকারি তোলারাম কলেজ |
প্রতিষ্ঠান | পিএইচপি ফ্যামিলি |
দাম্পত্য সঙ্গী | তাহামিনা রহমান |
সন্তান | ৮ |
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার | একুশে পদক (২০২০) |
সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান (জন্ম ১২ মার্চ ১৯৪৩) একজন বাংলাদেশি শিল্পপতি এবং সমাজসেবক। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে।[১]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]মিজানুর রহমান ১৯৪৩ সালের ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের কাঞ্চন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তাঁর পিতার নাম সুফি মুহাম্মদ দায়েম উদ্দিন এবং মাতা রাহাতুন নেসা।[৩] স্থানীয় ভারত চন্দ্র বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৩ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তোলারাম কলেজ থেকে বি.কম ডিগ্রি লাভ করেন।[২] কলেজটি সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল।[২] পরে তিনি ব্যাংকিং বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।[৩]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]মিজানুর রহমান কর্মজীবনের শুরুতে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে নারায়ণগঞ্জের জালাল জুট ভ্যালি কোম্পানিতে ১০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন।[২] ১৯৬৫ সালে তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের (বর্তমান সোনালী ব্যাংক লিমিটেড) চট্টগ্রামের লালদীঘি শাখায় জুনিয়র ক্লার্ক হিসেবে যোগদান করেন।[৪] ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় ৮০০ টাকা বেতনে তৎকালীন ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের (বর্তমান পূবালী ব্যাংক লিমিটেড) বৈদেশিক বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন।[২]
পিএইচপি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর মিজানুর রহমান ব্যাংকের চাকুরি ছেড়ে ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।[২] প্রথমে পণ্য আমদানি করে দেশীয় বাজারে বিক্রির মাধ্যমে কাজ শুরু করলেও পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে পুরনো জাহাজের আসবাবপত্র বিক্রি করা হতো। ১৯৮২ সালে রি-রোলিং মিল এবং ১৯৮৪ সালে ‘মংলা ইঞ্জিনিয়ার্স ওয়ার্কস’ নামে দেশের প্রথম বিলেট তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।[৪] ১৯৮৬ সালে ঢাকাতে ‘পিএইচপি রানী মার্কা ঢেউটিন’ নামে একটি ঢেউটিন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আরো বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা শুরু করেন।[২] পরবর্তীতে তিনি সকল প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের অধীনে নিয়ে আসেন। বর্তমানে গ্রুপটির অধীনে ২৯টির বেশি কোম্পানি রয়েছে।[৪][৫]
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]মিজানুর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে তাহামিনা রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৬] এই দম্পতির ৭ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। ২০০০ সালে তিনি রোটারী ইন্টারন্যাশনালে যোগদান করেন। ২০১৬ থেকে ২০১৭ মেয়াদে তিনি রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮২ বাংলাদেশের গভর্নর ছিলেন।[৬] তিনি রোটারী ইন্টারন্যাশনালের ‘আর্চ ক্লাম্প সোসাইটি মেম্বার’।[৬] তিনি এবং তার স্ত্রী রোটারীতে একমাত্র ‘কাপল আর্চ ক্লাম্প সোসাইটি মেম্বার’।[৬] এছাড়াও তিনি দেশে গজলের সংস্কৃতিকে বা সুফিবাদকে উৎসাহিত করতে ভূমিকা পালন করেন।[৫]
মিজানুর রহমান শিক্ষাখাত উন্নয়নসহ সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।[৭][৮] বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তার অবদান রয়েছে।[২] বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সস প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা পালন করেন।[৫] এছাড়াও ঢাকার কাঞ্চননগর গ্রামে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।[২]
সম্মাননা
[সম্পাদনা]- দ্য ডেইলি স্টার অ্যান্ড ডিএইচএল বেস্ট বিজনেস অ্যাওয়ার্ড (২০০৩)[২]
- ব্যাংক বীমা অ্যাওয়ার্ড (২০০৭)[২]
- ব্যাংক বীমা অর্থনীতি অ্যাওয়ার্ড (২০০৯, ২০১১)[২]
- বাংলাদেশে ইন্দোনেশিয়ার অনারারি কনসাল (২০১৮)[৭]
- একুশে পদক (২০২০)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "একুশে পদক পাচ্ছেন কিংবদন্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. সায়েবা"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ "সুফি মিজানুর রহমান ও পিএইচপি পরিবার"। ইত্তেফাক। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ "চেয়ারম্যান"। পিএইচপি ফ্যামেলি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ "ব্যাংকার-থেকে-গ্রুপ-অব-কোম্পানির-মালিক"। একুশে টিভি। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ গ "ব্যতিক্রমী সুফি মিজানুর রহমান"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ "সুফি মিজান রোটারী গভর্নর নির্বাচিত"। বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ "PHP Group chairman made honourary consul of Indonesia"। theindependentbd। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "The art of giving"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।