আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসি (আরবি: آية الكرسي আয়াত আল-কুরসি[ক], অর্থ: "সিংহাসনের স্তবক") হচ্ছে কুরআনের দ্বিতীয় সূরা আল-বাকারার ২৫৫তম আয়াত (২:২৫৫)। এই আয়াতে সমগ্র মহাবিশ্বের উপর আল্লাহর পূর্ণ ক্ষমতা ঘোষণা করা হয়েছে এবং কীভাবে কোনো কিছু বা কাউকেই আল্লাহর সাথে তুলনীয় বলে গণ্য করা হয় না তা উদ্ধৃত করা হয়েছে।[১][২]
আয়াতটি ইসলামি বিশ্বে ব্যাপকভাবে পঠিত ও মুখস্থ করা হয়। ইসলামি পণ্ডিতগণ একে ‘কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত’ বলে দাবি করে থাকেন[৩] মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন যে, এটি পাঠ করলে অসংখ্য উপকার ও পুণ্য লাভ হয়। এছাড়াও দুষ্ট আত্মা বা জ্বিনকে দূর করতেও এই আয়াতটি ব্যবহৃত হয়।[৪]
মূলপাঠ ও অর্থ
[সম্পাদনা]আয়াতুল কুরসিতে ১০টি বাক্য রয়েছে।[৫]
মূলপাঠ (উচ্চারণসহ)
[সম্পাদনা]ٱللَّهُ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَیُّ ٱلۡقَیُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةࣱ وَلَا نَوۡمࣱۚ لَّهُۥ مَا فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَمَا فِی ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِی یَشۡفَعُ عِندَهُۥۤ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ أَیۡدِیهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا یُحِیطُونَ بِشَیۡءࣲ مِّنۡ عِلۡمِهِۦۤ إِلَّا بِمَا شَاۤءَۚ وَسِعَ كُرۡسِیُّهُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا یَـُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِیُّ ٱلۡعَظِیمُ ٢٥٥
- আসিম ইবন আবি আল-নাজুদ থেকে হাফস
ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ج
২৫৫ ’আল্-লাহু লা ’ইলাহা ’ইল্-লা হু(ওয়া)
ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ ج
’আল্-হাই-য়ু ল্-কাই-য়ুম্
لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ج
লা-তা’খুযুহু সিনাতুঁ ও্-ওয়ালা নাউম্(উঁ)
لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ قلے
লাহু-মা ফি স্-সামাওয়াতি ওয়ামা ফি ল্-’আর্দ্(ই)
مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ ج
মাঁং যাল্-লাযি ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহু ’ইল্লা বি’ইয্নিহ্(ই)
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ صلے
ইয়া‘লামু মা বাইনা ’আইদিহিম্ ওয়ামা খাল্ফাহুম্
وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ج
ওয়ালা ইউ হি-তুনা বিশা’ই ইমমিন্ ‘ইল্মিহি ’ইল্-লা বিমা শা’(আ)
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ صلے
ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ু-হু স্-সামাওয়াতি ওয়াল্’আর্দ্(আ)
وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَا ج
ওয়ালা ইয়া’উদুহু হিফ্যুহুমা
وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ ٢٥٥
ওয়াহুওয়া ল্-‘আলিই-ইয়ু ল্-‘আজিম(উ)
- নাফি‘ আল-মাদানি থেকে ওয়ারশ
اَ۬للَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ص
২৫৩ ’আল্-লাহু লা ’ইলাহা ’ইল্-লা হু(ওয়া)
اَ۬لۡحَىُّ اَ۬لۡقَيُّومُ ص٢٥٣
’আল্-হাই-য়ু ল্-কাই-য়ুম্(উ)
لَا تَاخُذُهُۥ سِنَةٌ وَلَا نَوۡمٌ ص
২৫৪ লা তাখুযুহু সিনাতুঁ ও্-ওয়ালা নাউম্(উঁ)
لَّهُۥ مَا فِى اِ۬لسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلَارۡضِ ص
লাহু মা ফি স্-সামাওয়াতি ওয়ামা ফি লার্দ্(ই)
مَن ذَا اَ۬لَّذِى يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦ ص
মাঁ যা ল্-লাযি ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহু ’ইল্লা বি’ইয্নিহ্(ই)
يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ ص
ইয়া‘লামু মা বাইনা ’আইদিহিম্ ওয়ামা খাল্ফাহুম্
وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ص
ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশা’ই ম্-মিন্ ‘ইল্মিহি ’ইল্-লা বিমা শা’(আ)
وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ اَ۬لسَّمَٰوَٰتِ وَٱلَارۡضَ ص
ওয়াসি‘আ কুর্সিই-ইয়ুহু স্-সামাওয়াতি ওয়ালার্দ্(আ)
وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَا ص
ওয়ালা ইয়া’উদুহু হিফ্যুহুমা
وَهُوَ اَ۬لۡعَلِىُّ اَ۬لۡعَظِيمُ ص٢٥٤
ওয়াহুওয়া ল্-‘আলিই-ইয়ু ল্-‘আযিম্(উ)
অর্থ
[সম্পাদনা]“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, [তিনি] চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী/সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না ও নিদ্রাও নয়। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে, সবকিছু তাঁরই। কে [আছে এমন] যে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তাঁদের সামনে কী আছে ও পিছনে কী আছে তিনি [তা] জানেন এবং তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁরা তাঁর (আল্লাহর) জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর কুরসি[খ] আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করেছে এবং সেগুলো সংরক্ষণ করতে তাঁর কষ্ট হয় না। এবং তিনিই সর্বোচ্চ ও সর্বমহান।”
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
[সম্পাদনা]এই আয়াতের প্রথমেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য বা ইবাদাতের যোগ্য কেউ নেই। এরপর আল্লাহর গুণাবলি বর্ণনা হয়েছে। اَلْـحَيُّ শব্দের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, তিনি সর্বদা জীবিত (চিরঞ্জীব)। قَيُّوْمُ শব্দের অর্থ দুটি অর্থ, একটি হচ্ছে চিরস্থায়ী, আরেকটি হচ্ছে, সবকিছুর ধারক, অর্থাৎ তিনি নিজে বিদ্যমান থেকে অন্যকেও বিদ্যমান রাখেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। অতঃপর বলা হয়েছে তাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না, অর্থাৎ মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রণ তাকে ক্লান্ত করে না। পরের অংশে বলা হয়েছে, আল্লাহ আকাশ এবং পৃথিবীর সবকিছুর মালিক এবং তিনি যা কিছু করেন তাতে কারও আপত্তি করার অধিকার নেই। তাঁর অনুমতি ছাড়া তার কাছে সুপারিশ করার ক্ষমতাও কারো নেই। বলা হয়েছে, আল্লাহ অগ্র-পশ্চাৎ যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনা সম্পর্কে অবগত। অগ্র-পশ্চাৎ বলতে এ অর্থ হতে পারে যে, তাঁদের জন্মের পূর্বের ও জন্মের পরের যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলি আল্লাহ জানেন। অথবা এই অর্থও হতে পারে যে, 'অগ্র' বলতে মানুষের কাছে প্রকাশ্য, আর 'পশ্চাৎ' বলতে বোঝানো হয়েছে যা অপ্রকাশ্য বা গোপন। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ জ্ঞান দান করেন সে শুধু ততটুকুই পায়। পরের অংশে বলা হয়েছে তাঁর কুরসি তথা সিংহাসন এতই বড় যে, তা সমগ্র আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। এ দুটি বৃহৎ সৃষ্টি এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁর জন্য সহজ। শেষ অংশে আল্লাহকে “সুউচ্চ সুমহান” বলা হয়েছে।[৬]
গুরুত্ব
[সম্পাদনা]হাদিস অনুসারে আয়াতুল কুরসিকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে গণ্য করা হয়।[৭][৮] আয়াতটিকে কুরআনের অন্যতম শক্তিশালী আয়াত হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ কেউ যখন এটি পাঠ করে, তখন সে আল্লাহর মাহাত্ম্য নিশ্চিত করে বলে বিশ্বাস করা হয়। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এই আয়াতটি পাঠ করবে সে জ্বিন ও শয়তানদের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকবে; এটি দৈনিক আদখার নামেও পরিচিত। জ্বিন ও শয়তান থেকে মুক্তি ও সুরক্ষার জন্য এটি ভূতের ঝাড়ফুঁকে ব্যবহৃত হয়।[৯] যেহেতু এটি বিশ্বাস করা হয় যে আয়াতটি আধ্যাত্মিক বা শারীরিক সুরক্ষা প্রদান করে, তাই প্রায়শই মুসলমানরা ভ্রমণে বের হওয়ার আগে ও ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি পাঠ করে।[১০][৭] আয়াতটি সারাদিনের জন্য খাবিস (জ্বিনদের দ্বারা যৌন নিপীড়ন) থেকে সুরক্ষা এবং বেঁচে থাকার জন্যও ব্যবহৃত হয়।[১১] প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতটি পাঠ করলে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে বলে বিশ্বাস করা হয়।[১২][১৩]
আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস
[সম্পাদনা]সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত
[সম্পাদনা]“ | উবাই ইবনে কাব থেকে বর্ণিত, নবি মুহাম্মদ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমার কাছে কুরআনে কোন আয়াতটি সর্বমহান?’ ইবনে কাব উত্তরে বললেন বলেছিলেন, ‘’আল্-লাহু লা ’ইলাহা ’ইল্-লা হু ওয়া ’আল্-হাই-য়ু ল্-কাই-য়ুম্...’ (আয়াতুল কুরসির প্রথমাংশ)। তারপর নবি মুহাম্মাদ নিজ হাত দ্বারা ইবনে কাবের বুকে [হালকা] আঘাত করে বলেন: ‘আবুল মুনযির (ইবনে কাব)! তোমার জ্ঞান আনন্দদায়ক হোক’।[১৪] | ” |
“ | ইবনুল আসকার মুক্ত দাস থেকে ইবনুল আসকার সূত্রে বর্ণিত, তিনি ইবনুল আসকাকে বলতে শুনেছেন, নবি মুহাম্মাদ মুহাজিরদের (হিজরত করে মক্কা থেকে যারা মদিনায় গিয়েছিলেন) আঙিনায় তাঁদের নিকট আসলেন। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করলো, কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ? নবি মুহাম্মাদ বলেন, ‘’আল্-লাহু লা ’ইলাহা ’ইল্-লা হু ওয়া ’আল্-হাই-য়ু ল্-কাই-য়ুম্...’ (আয়াতুল কুরসির প্রথমাংশ)।[১৫] | ” |
আল্লাহর মহান নাম সংবলিত আয়াত
[সম্পাদনা]“ | আসমা বিনতে ইয়াযিদ থেকে বর্ণিত, নবি মুহাম্মাদ বলেছেন, আল্লাহর মহান নামসমূহ এই দুই আয়াতের মধ্যে নিহিত আছে: (অনুবাদ) ‘আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী...’ (২:২৫৫) এবং ‘আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য...’ (২:১৬৩)।[১৬] | ” |
বিনা বাধায় জান্নাত লাভ
[সম্পাদনা]“ | আবু উমামাহ আল-বাহিলি থেকে বর্ণিত, নবি মুহাম্মাদ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তাঁর জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনোকিছু বাধা হবে না’।[১৭] | ” |
শয়তান ও অনিষ্ট বিতাড়ণকারী আয়াত
[সম্পাদনা]“ | আবু হুরায়রা একদিন দেখতে পেলেন একজন আগন্তুক সদকার (স্বেচ্ছায় দানকৃত অর্থ) অর্থ চুরি করছে তখন তিনি আগন্তুকের হাত ধরে বললেন, “আল্লাহর শপথ [করে বলছি], আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাবো।” তখন আগন্তুক বললো যে সে খুব অভাবী আর তাঁর অর্থ অনেক প্রয়োজন। তাই দয়া করে আবু হুরায়রা তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে মুহাম্মাদের কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞাসা করলেন “গতকাল তোমার অপরাধীকে কী করেছো?” আবু হুরায়রা তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। মুহাম্মাদ বললেন, “অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে।” পরদিন আবু হুরায়রা চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবারও চুরি করতে আসলো তখন তিনি তাকে আটক করলেন আর বললেন, “এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাবো।” এবারও সেই চোর বলে যে সে খুব অভাবী আর তাঁর অর্থের অনেক প্রয়োজন আর শপথ করে যে সে আর আসবে না। পরদিন আবারও মুহাম্মাদ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি বলেন, “আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারও আসবে।” পরদিনও আবার আবু হুরায়রা চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবারও চুরি করতে আসলো তখন তিনি তাকে আটক করলেন আর বললেন “এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে নিয়ে যাবো। তুমি বারবার শপথ করো আর চুরি করতে আসো।” চোর যখন দেখলো এবার তাঁকে সত্যিই মুহাম্মাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তখন সে বলে, “আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দিবো যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন।” আবু হুরায়রা সেটা জানতে চাইলে চোর বলে, “যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন যে তোমার সাথে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।” এটা শুনে আবু হুরায়রা তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন নবি মুহাম্মাদ আবারও অপরাধীর কথা জানতে চাইলে আবু হুরায়রা আগের রাতের কথা বললেন। তখন মুহাম্মাদ বললেন, “যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী, কিন্তু সে সত্য বলেছে। তুমি কি জানো সে কে?” আবু হুরায়রা বললেন, “না।” মুহাম্মাদ অতঃপর আবু হুরায়রাকে বললেন, “সে হচ্ছে শয়তান।” | ” |
“ | আবু আইয়ুব আনসারি থেকে বর্ণিত, তাঁর একটি তাক ছিল তাতে তিনি শুকনো খেজুর রাখতেন। কিন্তু শয়তান জ্বিন এসে রাতে তা নিয়ে যেতো। তিনি নবি মুহাম্মাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানালেন। মুহাম্মাদ বললেন, “যাও, এটিকে যখন দেখবে বলবে, বিসমিল্লাহ্, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে ডেকেছেন, চলো। আবু আইয়ুব এটিকে আটক করলেন। এটি তখন শপথ করলো যে পুনর্বার তা করবে না। ফলে তিনি এটিকে ছেড়ে দিলেন। অনন্তর তিনি মুহাম্মাদের কাছে এলেন। মুহাম্মাদ জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার বন্দী কী করলো?” আবু আইয়ুব বললেন যে সেই জ্বিন শপথ করে বললো যে পুনর্বার তা করবে না। অতঃপর মুহাম্মাদ বললেন, “সে মিথ্যা বলেছে। আর তাঁর অভ্যাসই হলো মিথ্যা বলা।” আবু আইয়ুব সেটিকে আরেকবার আটক করলেন এবারও সে শপথ করলো যে পুনর্বার আর আসবে না। ফলে তিনি এটিকে ছেড়ে দিলেন। অনন্তর মুহাম্মাদের কাছে এলেন। মুহাম্মাদ জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার বন্দী কী কাজ করলো?” আবু আইয়ুব বললেন যে জ্বিনটি আবার কসম করেছে সে আর করবে না। মুহাম্মাদ পুনরায় একই কথা বললেন যে তাঁর অভ্যাসই হলো মিথ্যা বলা। পরে আবু আইয়ুব আবার জ্বিনটিকে আটক করলেন এবং বললেন, “এবার তোমাকে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে না নিয়ে আর ছাড়বো না।” জ্বিনটি বললো, “আমি আপনাকে একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তা হলো আপনার ঘরে আয়াতুল কুরসি পড়বেন। তাহলে আপনার কাছে শয়তান বা অনিষ্টকর অন্য কিছু আসতে পারবে না।” অনন্তর তিনি মুহাম্মাদের কাছে এলেন এবং মুহাম্মাদ জিজ্ঞেস করলন, তোমার বন্দি কী করলো? জ্বিনটি আবু আইয়ুবকে যা বলেছিল সে সম্পর্কে মুহাম্মাদকে জানালেন। অতঃপর মুহাম্মাদ বললেন, “এবার সে সত্য বলেছে, যদিও সে মিথ্যাবাদী।”[১৯]) | ” |
“ | উবাই ইবনে কাব হতে বর্ণিত, তাঁর এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তাঁর খেজুর কমতে থাকতো। একরাতে সে পাহারা দেয়। হঠাৎ যুবকের মতো এক জন্তু দেখা গেলে, তিনি তাকে অভিবাদন জানালেন। সে অভিবাদনের উত্তর দেয়। ইবনে কাব জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কী? জিন না মানুষ?” সে বলে, “জ্বিন।” ইবনে কাব তাঁর হাত দেখতে চান। জ্বিন দাবি করা লোকটি তাঁর হাত দেয়। ইবনে কাবের মতে, তাঁর হাত ছিল কুকুরের হাতের মতো আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মতো। তিনি বলেন, “এটা জ্বিনের চেহারা।” জন্তুটি তথা জ্বিনটি বলে, “জ্বিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচেয়ে সাহসী।” ইবনে কাব জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার আসার কারণ কী?” সে বলে, “আমরা শুনেছি আপনি সদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সদকার খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি।” ইবনে কাব বলেন, “তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?” সে বলে, সূরা আল-বাকারার এই আয়াতটি – ‘’আল্-লাহু লা ’ইলাহা ’ইল্-লা হু ওয়া ’আল্-হাই-য়ু ল্-কাই-য়ুম্...’ (আয়াতুল কুরসির প্রথমাংশ), যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে।” সকাল হলে তিনি নবি মুহাম্মাদের কাছে আসেন এবং ঘটনার খবর দেন। মুহাম্মাদ বলেন, “সে সত্য বলেছে।” [২০][যাচাই প্রয়োজন] | ” |
“ | নবি মুহাম্মাদ বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান থেকে রক্ষা পাবে এবং যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে।”[২১] | ” |
আল্লাহর সবচেয়ে মহান সৃষ্টি
[সম্পাদনা]“ | মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল কর্তৃক বর্ণিত যে, হুমায়দাহ আল-বারিকী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বলেন, “আল্লাহ্ আকাশ ও পৃথিবীতে আয়তুল কুরসি অপেক্ষা মহান আর কিছু সৃষ্টি করেন নি।”
এর তাফসীরে সুফইয়ান বলেন, ‘আয়াতুল কুরসি হল আল্লাহর কালাম। আর আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহর সকল সৃষ্টি থেকে তাঁর কালাম তো মহান হবেই।’[২২] |
” |
কুরআন মুখস্থকরণে সাহায্যকারী আয়াত
[সম্পাদনা]“ | মুগীরা ইবনু সুবাঈ’ হতে বর্ণিত, যিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের সাথীদের একজন ছিলেন, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি [রাতে] ঘুমানোর সময় সূরা আল-বাকারার দশটি আয়াত পাঠ করবে, তবে সেই ব্যক্তি কুরআন ভুলে যাবে না [আয়াত দশটি হলো]: এর (সুরা আল-বাকারা) প্রথম চারটি আয়াত, আয়াতুল কুরসি ও এর পরবর্তী দুইটি আয়াত এবং শেষের তিনটি আয়াত।[২৩] | ” |
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
ইসলামি ক্যালিগ্রাফিতে আয়াতুল কুরসি
-
১৭ শতকে ভারতে খোদিত একটি পাথরের পেছনে আয়াতুল কুরসির বেশিরভাগ অংশ
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ আল-কুরসি হলো আল্লাহর একটি চেয়ার বা পাদদেশ এবং এটিকে আল-আরশের (সিংহাসন) সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়, যেটি আল-কুরসি থেকেও অসীম উচ্চ ও মহান।
- ↑ চেয়ার বা পাদদেশ। এটিকে আল-আরশের (সিংহাসন) সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়, যেটি আল-কুরসি থেকেও অসীম উচ্চ ও মহান।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Abdullah Yusuf Ali (১৯৮৩) [First published 1934]। The Holy Qur'ān: Text, Translation and Commentary। Brentwood, Maryland: Amana Corp.। পৃষ্ঠা 102–103।
- ↑ "Surah Heifer - 2:254"। quran.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৬।
- ↑ "আপনার জিজ্ঞাসা আয়াতুল কুরসি দিয়ে কি নামাজ পড়া যাবে?"। এনটিভি। ৩ মে ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Afzal, Sagheer. (২০১১)। The Reluctant Mullah.। London: Halban। আইএসবিএন 978-1-905559-27-5। ওসিএলসি 782868200।
- ↑ Tafsīr ibn Kathīr, al-Baqarah, tafsir verse 255 (Ayatul Kursi)
- ↑ কুরআনুল কারীম (অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর) (PDF)। কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স। পৃষ্ঠা ২৩০–২৩৩।
- ↑ ক খ Ephrat, Daphna; Wolper, Ethel Sara; Pinto, Paolo G. (২০২১)। Saintly Spheres and Islamic Landscapes: Emplacements of Spiritual Power across Time and Place (ইংরেজি ভাষায়) (Volume 147 সংস্করণ)। Brill publishers। পৃষ্ঠা 290। আইএসবিএন 978-90-04-44427-0। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ DAWUD, ABU (জানুয়ারি ২০০৮)। "Abu Dawood 1460"। The third correct tradition of the Prophetic Sunna (Sunan Abu Dawud) 1-5 VOL 2: سنن ابي داود 1/5 [انكليزي/عربي] ج2 (ইংরেজি ভাষায়)। Dar Al Kotob Al Ilmiyah دار الكتب العلمية। পৃষ্ঠা 152। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "Quran Tafsir Ibn Kathir - the Virtue of Ayat Al-Kursi"।
- ↑ সহিহ আল-বুখারি, হাদিস নং- ২৩১১
- ↑ সহিহ উত তারগিব: ১/৪১৮
- ↑ নাসাই কুবরা, হাদিস নং- ৯৯২৬; তাবারানি, হাদিস নং- ৬৫৩২, সহিহ উল জামে, হাদিস নং- ৮৪৮৪
- ↑ Wherry, E. M. (১৮৮২)। A Comprehensive Commentary on the Qurán: Comprising Sale's Translation & Preliminary Discourse, with Additional Notes & Emendations. Together with a Complete Index to the Text, Preliminary Discourse, & Notes, by the Rev. E.M. Wherry... (ইংরেজি ভাষায়) (Volume 1 সংস্করণ)। Cambridge, New York: R.S. Publishing House। পৃষ্ঠা 383। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ টেমপ্লেট:Ihadis (সহীহ)
- ↑ সুনান আবু দাউদ, ৪০০৩ (সহীহ)
- ↑ সুনান আদ-দারেমী, ৩৪২৮ (সহীহ)
- ↑ টেমপ্লেট:Ihadis (সহীহ)
- ↑ টেমপ্লেট:Ihadis (সহীহ)
- ↑ (সুনান তিরমিজী: ২৮৮০ (সহীহ)
- ↑ (সহিহুত তারগিব:১/৪১৮, জিয়াদ্দিন আল মাকদাসি ১২৬০, হাদিসুল মুখতার,সহীহ ইবনে হিব্বান ৭৯১, সিলসিলাতুস সহীহা ২৮৬১, আত তাবারানী ৫৪২ (হাসান/যঈফ)
- ↑ আল-হাকিম ১/৫৬২, আল তারগীব ওয়া আল তারহীব, ১/২৭৩ (সহীহ/যঈফ)
- ↑ সুনান তিরমিজী, ২৮৮৪ (সহীহ)
- ↑ সুনান আদ-দারেমী, ৩৪২৪ (হাসান)
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- তাফসীরে আহসানুল বয়ান। [# "(২:২৫৫) আল-বাকারা এর অনুবাদ ও তাফসীর"]
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। www.hadithbd.com।