সিরিয়ায় মানবাধিকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আন্তর্জাতিকভাবে সিরিয়ায় মানবাধিকারের দিকটি কিছুটা খারাপ হিসেবেই গণ্য করা হয়।[১][২] ১৯৬৩ সাল থেকে ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সিরিয়ায়একটি জরুরি অবস্থা জারি ছিল, যার ফলে সশস্ত্র বাহিনী তাদের ইচ্ছেমতো গ্রেপ্তার ও আটক করতে পারত।[২]

মানবাধিকারের ইতিহাস[সম্পাদনা]

ফরাসী শাসন (১৯২০–১৯৪৬)[সম্পাদনা]

১৯২৫-১৯২৭ সালের সিরিয়ান গ্রেট রিভোল্টের সময় মারযেহ স্কোয়ারে তিনজন বিদ্রোহীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়

১৯২০-এর দশক থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত সিরিয়া এবং লেবাননে ফরাসীরা শাসন করেছে।[৩]

সিরিয়ার গ্রেট রিভোল্টের সময় ফরাসি সেনাবাহিনী দামেস্ক ও এর গ্রামাঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।[৪] এসময় তারা ৭,০০০ বিদ্রোহীদের মেরে ফেলে এবং আরো ১০০,০০০ নিরপরাধ মানুষকে ঘরছাড়া করে। ১৯২৬ সালে, দামেস্কের মিলিটারি কোর্ট কারণ দর্শানো ছাড়াই ৩৫৫ জন সিরীয়কে মৃত্যুদন্ড দেয়।[৫] আবসান্তিয়াতে শতাধিক সিরীয়কে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়, এমনকি কঠোর পরিশ্রমের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডও দেয়া হয়।

১৯৪৮ এর পরবর্তী সময়[সম্পাদনা]

সিরিয়ায় ইহুদীরা অনেক আগ থেকেই বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। বিশেষ করে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল সৃষ্টির পর থেকে। ১৯৪৮ সালে, ইহুদীরা দেশত্যাগ করতে পারত না এবং তাদের কোন সম্পদ বিক্রয় করতে পারত না। ১৯৫৩ সালে, সকল ইহুদীদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়। ১৯৫৪ সালে, ইহুদীরা অস্থায়ীভাবে দেশের বাইরে যেতে পারত কিন্তু তাদের সকল সম্পদ সরকারের কাছে জমা দিয়ে যেতে হত। ১৯৬৪ সালের মার্চে, ইহুদীরা তাদের বাসস্থান থেকে ৫ কিলোমিটার (৩ মা)-এর বেশি দূর যেতে পারত না।[৬] ইহুদীরা সরকার বা ব্যাংকে কোন চাকুরি করতে পারত না এবং গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তাদের দেওয়া হত না। এমনকি তারা কোন সম্পদ কিনতে পারত না। যদিও ইহুদীরা দেশের বাইরে যেতে পারত না, তার বিশেষ শর্তে বাণিজ্যিক ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বাইরে যেতে পারত। এই শর্তগুলোর মধ্যে একটি হল, যদি কোন ইহুদী বাইরের দেশে যাওয়ার অনুমতি পায় সরকারের কাছে তাকে ৩০০-১০০০ ডলারের জামানত রেখে যেতে হবে। আরেকটি হল, তাদের পরিবারের সদস্যদের জব্দ করে রাখা হতো যেন তারা আবার ফিরে আসে।[৭][৮]

২০১৭ সালের এপ্রিলে, ইউএস নেভি সিরিয়ার একটি এয়ার বেসের বিপক্ষে মিসাইল আক্রমণ করে[৯] এবং এটি সিরিয়ার নিরপরাধ মানুষের ওপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়।[১০]

বিচার পদ্ধতি[সম্পাদনা]

সিরিয়াতে লাগামহীনভাবে গ্রেপ্তার করা, পক্ষপাতদুষ্ট বিচার এবং দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে আটক রাখার একটি বিস্তৃত ইতিহাস রয়েছে। হাজার হাজার রাজনৈতিক কারণে কারাদন্ডে দন্ডিতরা এখনো আটক রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নিষিদ্ধ দুটি রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকমিউনিস্ট পার্টির সদস্য।[১১] ২০০০ সালের জুন পর্যন্ত, রাষ্ট্রপতি আল-আসাদ দীর্ঘদিন ধরে আটক থাকা ৭০০ জন রাজনৈতিক আসামীদের মুক্ত করে দেন। যদিও ৪০০০ রাজনৈতিক আসামী তখনও কারাবন্দী ছিল।[১১] তাদের ঠিক কি কারণে আটক করে রাখা হয়েছে বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোন কারণ দর্শায়নি।[১১] ১৯৮০-এর দশকে এবং ১৯৯০-এর দশকে প্রায় ১৭,০০০ লেবাননের নাগরিক এবং ফিলিস্তিনের নাগরিক গুম হয়ে যায়। মনে করা হয়, সিরিয়াতে তাদের কারাবন্দী করা হয়েছে। যদিও সিরিয়ার সরকার কোন দায় স্বীকার করেনি।[১১] ২০০৯ সালে, প্রায় কয়েক শত মানুষকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দী করা হয়। মনে করা হয়, আটককৃত মানুষদের মধ্যে ১৭ জনকে মিলিটারি পুলিশ মেরে ফেলেছে।[২] এছাড়া, নিয়মিতভাবে, সিরিয়াতে মানবাধিকার কর্মীদের নজরে রাখা হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে কারাবন্দীও করা হয়।[২][১১][১২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. World Report 2010 Human Rights Watch World Report 2010, pg. 555.
  2. "সিরিয়ার এমনেস্টি ইন্ট্যারন্যাশনাল রিপোর্ট"। ৭ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৮ 
  3. League of Nations Official Journal, Vol 3, August 1922, p1013
  4. Provence, Michael (২০০৫)। "The Spread of Rebellion"। The Great Syrian Revolt: And the Rise of Arab Nationalism। University of Texas Press। পৃষ্ঠা 87–107। 
  5. Christoph Schumann (৩১ অক্টোবর ২০০৮)। Liberal Thought in the Eastern Mediterranean: Late 19th Century Until the 1960s। Brill। পৃষ্ঠা 70–71। আইএসবিএন 9004165487। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৩ 
  6. https://www.jewishvirtuallibrary.org/jews-of-syria
  7. "Jews in Islamic Countries: Syria" 
  8. Congressional Record, V. 146, Part 10, July 10 to July 17, 2000
  9. Griffin, Jennifer (৬ এপ্রিল ২০১৭)। "US launches missiles into Syria in response to chemical weapons attack"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৭ 
  10. "Deadly nerve agent sarin used in Syria attack, Turkish Health Ministry says"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৭ 
  11. We took their fingernails out with pliers and we made them eat them. We made them suck their own blood off the floor': Inside Syria's '27 torture centres'"
  12. see also "Human Rights Watch 2006 Report"Human Rights Watch। ১৫ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৮ 

বাইরের সংযোগ[সম্পাদনা]