লখনৌতির কাজী খান্দান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লখনৌতির কাজী খান্দান
দেশশাহী বাংলা
বর্তমান অঞ্চললখনৌতি
ব্যুৎপত্তিকাজী
উৎপত্তির স্থানবলখ
প্রতিষ্ঠিতপঞ্চদশ শতাব্দী
প্রতিষ্ঠাতাতাজউদ্দীন নহবী
সদস্যশাহ মনঝন
ঐতিহ্যশত্তারী তরিকা

লখনৌতির কাজী খান্দান একটি মধ্যযুগীয় বাঙ্গালী মুসলিম খান্দান যারা বাংলার রাজধানী লখনৌতিতে বসবাস করত।[১] খান্দানটি পঞ্চদশ শতকে তাজুদ্দিন নহবী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং অসংখ্য প্রভাবশালী কাজী এবং আলেম তৈরি করেছে। শাহ মনঝনের বংশধররা পরবর্তীতে গুজরাত ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যে চলে যায়।[২]

সদস্যরা[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিক শহর লখনৌতি, যা বর্তমানে বাংলাদেশের নবাবগঞ্জে, ছিল বাংলার ত​ৎকালীন রাজধানী।

কাজী খান্দান তাজুদ্দিন নহবীর বংশধর, যার পূর্বপুরুষ শেখ মাহমুদ কোরেশী এশকী রন্দপোশ আরব বংশের ছিলেন। লখনৌতিতে বসতি স্থাপনের আগে, খান্দানটি বলখে অবস্থিত ছিল যা বর্তমান আফগানিস্তানে। বাংলায় বলা হয় যে তারা চিশতী তরিকার নূর কুতুব আলমের খান্দানের রূহানী উত্তরসূরি হয়েছিলেন।[৩]

তাজুদ্দিন নহবী[সম্পাদনা]

তাজুদ্দিন নহবী বলখী লখনৌতবী ছিলেন পঞ্চদশ শতকের একজন আলেমে দ্বীন, কাজী এবং আরবি ভাষার ব্যাকরণবিদআব্দুল হাই লখনবীর মতে, তিনি তার সময়ে ব্যাকরণ এবং আরবি ভাষার ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় পণ্ডিতদের একজন ছিলেন।[৪] তিনি তৈমূরী সাম্রাজ্যের বলখ অঞ্চলে একটি সুন্নি মুসলিম খান্দানে জন্মগ্রহণ করেন,, যেখানে তিনি বড় হন। তিনি আল-নহবী (' ব্যাকরণবিদ ') এবং খোলাসতে ওলামা (' ওলামাদের সারমর্ম') দ্বারা খ্যাতি লাভ করেছিলেন, এবং বলখে তার একটি বিখ্যাত খানকাহ ছিল।[৫] কথিত আছে যে, জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহীম শাহ শরকীর (র. 1402-1440) ওলামা-পৃষ্ঠপোষকতার কথা শুনে তিনি বলখ ত্যাগ করেন। যাইহোক, তাজুদ্দিন সেখানে বসবাস করার পরিবর্তে প্রতিবেশী বাংলা সালতানাতে বসতি স্থাপন করেন। তিনি লখনৌতিতে অনেক ছাত্রকে উপকৃত করেছিলেন এবং খান্দান সেখানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

শাহ মনঝন[সম্পাদনা]

শাহ মনঝন লখনৌতবী (মৃত: রবিউল আউয়াল 1001 হি / 1592 খ্রী) ছিলেন ষোড়শ শতকের একজন বিশিষ্ট সুফি এবং শত্তারী তরিকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব।[৬] তাঁর বাবা আব্দুল্লাহ এবং দাদা খ​য়রুদ্দীন ছিলেন তাজুদ্দিন নহবীর সরাসরি বংশধর। তার মায়ের দিক থেকে শাহ মনঝন ছিলেন দিল্লির কাজী সমাউদ্দীন দেহলেবীর বংশধর। শাহ মনঝন লখনৌতিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং বড় হন, এবং প্রাথমিকভাবে শেখ আহমদী সাহেবের অধীনে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি দীর্ঘকাল শায়খ তাজুদ্দিন হোসেনী বোখারীর মুরিদ হন। তিনি তার বেশিরভাগ সময় লখনৌতিতে ইসলাম শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেন।[৪] তাজুদ্দিন হোসেনী বোখারী অবশেষে শাহ মনঝনকে গুজরাতের সুফি ওস্তাদ মহম্মদ গৌছ শত্তারীর মুরীদ হওয়ার নির্দেশ দেন। শের শাহ সুরি কর্তৃক মালব বিজয়ের পর, শাহ মনঝন সেখানে চলে যান যেখানে তিনি নতুন বিজিত শহর রায়সেনের ধর্মীয় প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন।[৭] রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, তিনি পরে সরঙ্গপুরে স্থানান্তরিত হন, আশনাহ গ্রামে বসতি স্থাপন করে, যেখানে তিনি বেশ কিছু রচনা লিখেছিলেন এবং সম্রাট আকবর কর্তৃক গৃহীত হন।[৮] তার ছেলে, উসমান লখনৌতবী, ফিকাহ এবং আরবি ভাষার একজন নেতৃস্থানীয় আলেমও ছিলেন। [৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Hanif, N. (২০০০)। Biographical Encyclopaedia of Sufis: South Asia। Prabhat Kumar Sharma। পৃষ্ঠা 234। আইএসবিএন 9788176250870 
  2. "منجهن بن عبد الله بن خير الدين اللكهنوتوي"Tarajm (আরবি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২২ 
  3. Ahmed, Farooqui Salma (২০১১)। "Sufi Thought"। A Comprehensive History of Medieval India: Twelfth to the Mid-eighteenth CenturyPearson India Education Services। পৃষ্ঠা 211। আইএসবিএন 9788131732021 
  4. al-Lucknawi (1999).
  5. Rizvi, Saiyid Athar Abbas (১৯৭৮)। A History of Sufism in India: From sixteenth century to modern century। Munshiram Manoharlal। পৃষ্ঠা 434–435। আইএসবিএন 9788121500388 
  6. Rizvi, Saiyid Athar Abbas (১৯৬৫)। Muslim Revivalist Movements in Northern India in the Sixteenth and Seventeenth CenturiesAgra University। পৃষ্ঠা 64। 
  7. Alam, Muzaffar (২০২১)। The Mughals and the Sufis: Islam and Political Imagination in India, 1500–1750State University of New York Pressআইএসবিএন 9781438484907 
  8. Abdul Hafeez, Mohammed (২০২০)। Biography of Shah Mohammed Ghouse Gwaliori। পৃষ্ঠা 159–160। 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • লখনবী, আব্দুল হাই (১৯৯৯)। নুজহতে খওয়াতের (আরবি ভাষায়)। দার ইবনে হাজম।