রাঙা মানিকজোড়
রাঙা মানিকজোড় | |
---|---|
![]() | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Ciconiiformes |
পরিবার: | Ciconiidae |
গণ: | Mycteria |
প্রজাতি: | M. leucocephala |
দ্বিপদী নাম | |
Mycteria leucocephala (Pennant, 1769) | |
![]() | |
প্রতিশব্দ | |
Tantalus leucocephalus |
রাঙা মানিকজোড় (বৈজ্ঞানিক নাম: Mycteria leucocephala) (ইংরেজি: Painted Stork), রঙ্গিলা বক বা সোনাজঙ্ঘা Ciconiidae (সিকোনিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Mycteria (মাইকটেরিয়া) গণের এক প্রজাতির বড় আকারের জলচর পাখি।[২][৩] মানিকজোড় জাতীয় পাখিদের মধ্যে এরাই সবথেকে সুন্দর। পাখিটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয়। এছাড়া সিঙ্গাপুরে পাখিটি অবমুক্ত করা হয়েছে। রাঙা মানিকজোড়ের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ধলামাথা পেটরা পাখি (গ্রিক mukter = পেটরা, leukoklephalos = সাদামাথা)।[৩] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১৯ লাখ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৪] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. ২০০৪ সালে এ প্রজাতিটিকে Near Threatened বা প্রায়-বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩] সারা বিশ্বে পূর্ণবয়স্ক রাঙা মানিকজোড়ের সংখ্যা ১০,০০০-১৭,০০০টি।[৪] এরা একপ্রজাতিক, অর্থাৎ কোন উপপ্রজাতি নেই।
বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

একসময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশে সচরাচর রাঙা মানিকজোড় দেখা যেত। পাকিস্তানে এরা খুব কম সংখ্যায় রয়েছে। এদের বিচরণ কেবল সিন্ধু উপত্যকায় সীমাবদ্ধ। গ্রীষ্মকালে নেপালের তেরাই অঞ্চলে এদের দেখা যায়। ভারতে এদের সচরাচর দেখা যায়। এককালে বাংলাদেশে এরা খুব ভাল অবস্থায় ছিল, বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় ক্বচিৎ দেখা যায়। শ্রীলঙ্কায় শুষ্ক মৌসুমে এদের দেখা যায় না। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও লাওস একসময় প্রচুর রাঙা মানিকজোড়ে আবাস ও প্রজননস্থল ছিল। বর্তমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট দল বা দু'একটি রাঙা মানিকজোড় দেখা যায়। কম্বোডিয়ায় ৪,০০০-৫,০০০ জোড়া রাঙা মানিকজোড় সংরক্ষিত স্থানে সীমাবদ্ধ রয়েছে। মালয়েশিয়ায় এরা অনিয়মিত। সিঙ্গাপুরে এদের অবমুক্ত করা হয়েছে। চীন থেকে এরা সম্ভবত বিলুপ্ত হয়ে গেছে।[১][৪]
বিবরণ[সম্পাদনা]
রাঙা মানিকজোড় বেশ বড়সড় সাদা জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৯৩ সেন্টিমিটার, ডানা ৫০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২৬.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ১৬ সেন্টিমিটার ও পা ২৪.৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৩ কেজি।[৩] প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মুখ পালকহীন ও চামড়া কমলা-হলুদ। এ চামড়া প্রজনন মৌসুমে লালচে রঙ ধারণ করে। ঘাড়, গলা ও পিঠ সাদা। দেহতলও সাদা, কেবল বুকে আড়াআড়ি কালো ডোরা থাকে। ডানার প্রান্ত-পালক ও মধ্য-পালক কালো। ডানার কালো পালক-ঢাকনিতে সাদা ডোরা দেখা যায়। লেজের পালক টকটকে লাল বা গোলাপি। কিছু কালচে পালকও থাকে। চোখের রঙ খড়-হলুদ। লম্বা ঠোঁটের গোড়া কমলা-হলুদ। নিম্নমুখী ঠোঁটের আগা পাটকিলে। পা ও পায়ের পাতা মেটে বাদামি থেকে লালচে। স্ত্রী ও পুরুষ মানিকজোড় দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি মলিন সাদা। মাথা, ঘাড় ও ডানার ভেতরের পালক-ঢাকনি বাদামি।[৩]
স্বভাব[সম্পাদনা]
রাঙা মানিকজোড় নদীর পাড়, জলমগ্ন মাঠ, হ্রদ, কাদাচর, লবন চাষের জমিতে ও নদীর মোহনায় বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় কিংবা ছোট দলে থাকে। অগভীর পানিতে হেঁটে ঠোঁট খুলে কাদায় ঢুকিয়ে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। ঠোঁটে মাছ বা অন্যান্য খাবারের অস্তিত্ব টের পেলেই এরা সাথে সাথে ঠোঁট বন্ধ করে ফেলে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, চিংড়ি, কাঁকড়া, জলজ পোকামাকড় ও ছোট সরীসৃপ। পানির ধারে এরা প্রায়ই একপায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে বিশ্রাম করে।[৩] ওড়ার সময় প্রলম্বিত পা ও গলা কিছুটা নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে। বৃত্তাকারে ধীরলয়ে ওড়ে, ক্রমে ওপরে উঠে যায়। গলায় তেমন শব্দ নেই। ভয় পেলে, উত্তেজিত হলে, আনন্দিত হলে বা বিপদে পড়লে দু'ঠোঁটে বাড়ি মেরে ঠক ঠক শব্দ তোলে।
প্রজনন ও সন্তান প্রতিপালন[সম্পাদনা]
জুলাই থেকে অক্টোবর মাস এদের প্রজনন ঋতু। পুরুষ মানিকজোড় নেচে নেচে, লাফিয়ে সঙ্গিনীর মন জয় করার চেষ্টা করে। পুর্বরাগে এরা নিচু স্বরে গোঙানোর মত শব্দ করে ডাকে। উঁচু গাছে বা পানির নিকটবর্তী গাছে বিশাল বাসা করে। কাঠি-কুঠি, শুকনো, সরু ডালপালা সাজিয়ে মাচার মত বাসা বানায়। পুরুষ মানিকজোড় বাসার বেশিরভাগ উপকরণ জোগাড় করে, স্ত্রী মানিকজোড় বাসা বানায়। বাসার মাঝখানের নিচু জায়গায় জলজ উদ্ভিদের পাতা, কচুরিপানার শুকনো শিকড়, শুকনো জলজ শ্যাওলা ইত্যাদি দিয়ে গদির মত বানায়। এক গাছে বা পাশাপাশি একাধিক গাছে অনেকগুলো পাখি মিলে কলোনি করে বাসা করে। এসব কলোনিতে পানকৌড়ি ও অন্যান্য বকও বাসা করে। বাসা বাঁধতে এরা তাড়াহুড়ো করে না; সেজন্য বাসা বানাতে ৭-১৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়।[৫]
এরা ডিম পাড়ে বিরতি দিয়ে । ১০-১২ দিন ধরে এরা ৩-৫টি ডিম পাড়ে। সে কারণে ছানাও ফোটে বিরতি দিয়ে। ডিমগুলো বাদামি লম্বা দাগযুক্ত অনুজ্জ্বল সাদা। ডিমের মাপ ৭.০ × ৪.৯ সেমি।[৩] মা-বাবা দু'জনেই ডিমে তা দেয়। ২৮-৩২ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ছানরা উড়তে পারে ৫৫-৬৫ দিনে। সদ্যোজাত ছানাদের রঙ তুলোট সাদা। বাবা-মা অর্ধেক হজম হওয়া খাবার সন্তানদের সামনে উগরে দেয়। ছানারা তাই খায়।[৫]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ Mycteria leucocephala, The IUCN Red List of Threatened Species এ রাঙা মানিকজোড় বিষয়ক পাতা।
- ↑ রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ২১০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৩০১।
- ↑ ক খ গ Mycteria leucocephala, BirdLife International এ রাঙা মানিকজোড় বিষয়ক পাতা।
- ↑ ক খ শরীফ খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: দিব্যপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ২৩৫–২৪৩। আইএসবিএন 9844833310।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে রাঙা মানিকজোড় সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- Mycteria leucocephala, Oriental Bird Images-এ রাঙা মানিকজোড়ের আরও আলোকচিত্র।
- Mycteria leucocephala, ARKive.