রশিদ উদ্দিন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাউল

রশিদ উদ্দিন
জন্ম২১ জানুয়ারি, ১৮৮৯
মৃত্যু১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৪
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
পরিচিতির কারণবাউল সাধক
উল্লেখযোগ্য কর্ম
মালজোড়ার প্রবক্তা
পিতা-মাতা
  • মশ্রব উদ্দিন (পিতা)
  • ফজর বানু (মাতা)
আত্মীয়মল্লিক উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন

রশিদ উদ্দিন (২১ জানুয়ারি ১৮৮৯ - ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪) নেত্রকোণা জেলায় জন্ম নেওয়া একজন বাউল সাধক। তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে ১৯৯৯ সালে ২৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

রশিদ উদ্দিন ১৮৮৯ সালের ২১ শে জানুয়ারি নেত্রকোণা পৌরসভাধীন বাহিরচাপড়া গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা কুস্তিগির হিসেবে গৌরীপুরের জমিদারের নিকট থেকে বাড়িসহ একখন্ড লাখেরাজ কৃষিজমি প্রাপ্ত হন। এ জমির উপর তৈরি বাড়িতে রশিদ উদ্দিনের পিতা মরহুম মশ্রব উদ্দিন তার তিন ছেলে মল্লিক উদ্দিন, রশিদ উদ্দিন এবং নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে গড়ে তুলেন এক ছোট্ট সংসার। বড় ছেলে মল্লিক উদ্দিন এন্ট্রাস পাস করে নেত্রকোণার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কেরাণির চাকুরি গ্রহণ করেন।

রশিদ উদ্দিনের কবর

জীবন ও সঙ্গীত[সম্পাদনা]

বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন আত্মভোলা। তাই বড়ভাইয়ের নিকট বাল্যশিক্ষা পাঠ ছাড়া কোনো বিদ্যালয়ে তার লেখাপড়া হয়নি। রশিদ উদ্দিন ১৫/১৬ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী পুখুরিয়া গ্রামের টাকনা মিস্ত্রির সান্নিধ্যে এসে একটু একটু করে একতারা বাজিয়ে বাউলগান শিখতে শুরু করেন। তখন বাহিরচাপড়া গ্রামে কৃষ্ণলীলা গান শুরু হয়। রশিদ উদ্দিন কৃষ্ণের অভিনয় করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী বাংলা বেতাটিসহ সর্বত্র কবিগানের ব্যাপক প্রসার ছিল। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, দোলপূজাসহ হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে কবিগান ছিল এ অঞ্চলে এক বিশেষ আকর্ষণ। পাশাপাশি টিপু পাগলের নেতৃত্বে ১৮২৭ সনে পরিচালিত ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার পর ল্যাংটা ফকিরদের জলসা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। তখন বাহিরচাপড়া গ্রামে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থেকে এক ল্যাংটা পীরের আগমন ঘটে। ১৯০৯ সনে রশিদ উদ্দিন এ ল্যাংটা শাহের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজ বাড়িতে হালকা-জিকিরের জলসায় মেতে ওঠেন। বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন তাঁর বড় ছেলে আরশাদ উদ্দিনের দুই বছর বয়সে তাকে মৃত্যুশয্যায় রেখে হঠাৎ একরাতে গৃহত্যাগ করেন। গৃহত্যাগী হয়ে তিনি প্রথমে আসেন তাঁর ওস্তাদ কটিয়াদির ল্যাংটা শাহের আখড়ায়। সেখান থেকে তিনি ল্যাংটা শাহকে সাথে নিয়ে চলে যান আসামের লাউরের পাহাড়ে। এক বছর সেখানে অবস্থানের পর চলে আসেন সিলেটের শাহ পরানের মাজারে।

Sclupture of baul Roshid Uddin by Okhil Paul with Supported by Enamul Haque Palash

মাজারে ভ্রমণ রশিদ উদ্দিনের আধ্যাত্মিক সাধনা ও বাউলতত্ত্বের চর্চায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। প্রভূত আত্মিক উৎকর্ষ ও তত্ত্বজ্ঞান লাভের পর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। তখন তিনি ভাত খাওয়া ছেড়ে দেন এবং দুই বছর শুধু দুধ ও রুটি খেয়ে থাকেন। এই সময় তিনি দিনে দুইবার নামাজ পড়তেন, ফজরের ও মাগরিবের নামাজ। পরিধান করতেন সবুজ রঙের পানজাবি ও লুঙ্গি। তাঁর স্ত্রীর মতে গরুর মাংস ছিল রশিদ উদ্দিনের প্রিয় খাবার। তার সাথে কাঁচামরিচ খেতে পছন্দ করতেন। পড়াশোনা করতেন পুরাতন পুঁথি, বই, মনীষীদের জীবনী, কোরআন-হাদিস, বেদ-মহাভারতসহ নানা ধরনের ধর্মগ্রন্থ। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এ সময়ে তিনি বাড়ির সামনের পুকুরপাড়ে এবং পিছনে কামরাঙা গাছের তলায় সারাদিন আধ্যাত্মিক বিষয়ে বয়ান দিতেন। সেইসাথে চলত গান ও হালকা-জিকির।"[১]

সঙ্গীত তালিকা[সম্পাদনা]

  • "আমার সোয়া চান পাখি"
  • "এই বিশ্ব হইতেছে দৃশ্য"
  • "যারে যা প্রাণের পাখি, প্রেমের দেশে যারে উড়ে"
  • "মানুষ একটা কলের গাড়ি"
  • "মানুষ ধর, মানুষ ভজ"
  • "শুন দাদা মহাশয়"
  • "হাতে নিয়া গুড্ডির নাটাই, খেলিতেছে আলেক সাই"
  • এই যে দুনিয়া কিসেরো লাগিয়া, এত জতনে বানাইয়াছেন সাঁই

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মোঃ গোলাম মোস্তফা সম্পাদিত, মুখবন্ধ, রশিদ গীতিকা ঝিঙেফুল, ঢাকা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ১৫-১৬