মহম্মদ জামান কিয়ানী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৯৪০ এর দশকে মহম্মদ জামান কিয়ানী

মেজর জেনারেল মহম্মদ জামান কিয়ানী (১লা অক্টোবর ১৯১০ – ৪ঠা জুন ১৯৮১) ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। পরে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগদান করেন এবং তার সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন।

প্রথম জীবন[সম্পাদনা]

বিচারপতি মহম্মদ ইউসুফ সরাফের মতানুযায়ী, জামান কিয়ানী কাশ্মীরের ইসলামাবাদ (অনন্তনাগ)এর মানুষ ছিলেন।[১]

যৌবনে তিনি ছিলেন একজন উৎসাহী হকি খেলোয়াড়। কায়ানি ১৯৩১ সালে দেরাদুনের ভারতীয় সামরিক একাডেমীতে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি কলকাতার অলিম্পিক হকি খেলোয়াড় বাছাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইচ্ছা নিয়ে একাডেমীর প্রবেশিক পরীক্ষায় বসেছিলেন।[২] তিনি, ১৯৩৫ সালে, ভারতীয় সামরিক একাডেমী থেকে সবচেয়ে অসাধারণ ক্যাডেটের জন্য সোর্ড অফ অনার এবং সোনার মেডেল জিতেছিলেন। ১৯৩৫ সালের ১৫ই জুলাই, বিশেষ তালিকায় তাকে দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট পদ দেওয়া হয় এবং ১০ই আগস্ট ১৯৩৫ সালে তিনি হালকা পদাতিক বাহিনীর দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নের সাথে সংযুক্ত হন।[৩] ১৪ই জানুয়ারী ১৯৩৬ সালে তিনি ১৪তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটেলিয়নে দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসাবে যোগ দেন এবং ৪ঠা মে ১৯৩৬ সালে লেফটেন্যান্ট হিসাবে তার পদোন্নতি হয়।[৪]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৪১ সালের মার্চ মাসে ১৪ তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটেলিয়নকে মালয়ে পাঠানো হয় এবং তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মালয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি যুদ্ধ বন্দী হিসাবে গ্রেপ্তার হন। পরে, ১৯৪২ সালে, আজাদ হিন্দ ফৌজ (আইএনএ) গঠন হলে তিনি এতে যোগদান করেন। ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এর পুনরুজ্জীবনের সময় তাকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ সরকার ঘোষণার পর, কিয়ানী প্রথম বিভাগের কমান্ডার নিযুক্ত হন, এবং পরবর্তীতে তিনি সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন।[৫] আগে এই পদে ছিলেন লেফটেনান্ট কর্ণেল জে.কে.ভোঁশলে[৬] রেঙ্গুন পতনের সময়, কিয়ানী আজাদ হিন্দ ফৌজ এবং আজাদ হিন্দ সরকারের নেতৃত্ব দেন এবং, সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে, পদযাত্রা করে ব্যাংকক পৌঁছন।[৫]

২৫শে আগস্ট ১৯৪৫ সালে কিয়ানী সিঙ্গাপুরে ব্রিটিশ ৫ম বিভাগের কাছে, তার সৈন্যবাহিনীকে নিয়ে, আইএনএ কমান্ডার হিসাবে আত্মসমর্পণ করেন।[৭] তাকে ব্রিটিশ ভারতে ফেরত পাঠানো হয় এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত অন্তরীণ করে রাখা হয়। এরপর তাকে কর্মচ্যুত করে সেনাবাহিনী থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।[৮]

প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পরে পাকিস্তানের জন্ম হলে কিয়ানী রাওয়ালপিন্ডিতে চলে যান।

১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান এবং পাঞ্জাবের মন্ত্রী শৌকত হায়াত খান, জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজার সরকারকে উৎখাত করার জন্য পাকিস্তানের প্রচেষ্টার দক্ষিণ বিভাগের দায়িত্ব তাকে দেন। জেনারেল কিয়ানী গুজরাতে একটি সাধারণ সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন, জিএইচকিউ আজাদ। এখান থেকে কিয়ানীর বাহিনী কাশ্মীরে সীমান্তে অভিযান চালায় এবং তিনি পুঞ্চে আজাদ বিদ্রোহীদের চালনা করেন। ব্রিগেডিয়ার হাবিবুর রহমান তার বাহিনী প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তী জীবন[সম্পাদনা]

কিয়ানী পরে গিলগিতে পাকিস্তান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিনিধি নিযুক্ত হন।[৮] রাওয়ালপিন্ডিতে অবসর গ্রহণকালে তিনি তার স্মৃতিকথা লিখেছিলেন। সেটি তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল:

  • কায়ানি, এম. জেড. (১৯৯৪), ইন্ডিয়াজ ফ্রীডম স্ট্রাগল অ্যান্ড দ্য গ্রেট আই এন এ - মেমোয়ারস অফ মেজর জেনারেল মহম্মদ জামান কিয়ানী ভূমিকা লিখেছিলেন শিশির কুমার বসু, রিলায়েন্স পাবলিশিং হাউস, নিউ দিল্লী।, আইএসবিএন 81-85972-04-4 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Saraf, Kashmiris Fight for Freedom, Volume 2 2015, পৃ. 147।
  2. Bose 2006, পৃ. 142।
  3. April 1936 Indian Army List
  4. October 1939 Indian Army List
  5. ও Bose 2006, পৃ. 141
  6. ও Mercado 2002, পৃ. 78
  7. Bose 2006, পৃ. 143।
  8. Bose 2006, পৃ. 144।

সূত্রসমূহ[সম্পাদনা]

  • Bose, Sugata (২০০৯), A Hundred Horizons: The Indian Ocean in the Age of Global Empire, Harvard University Press, আইএসবিএন 978-0-674-02857-9 
  • Mercado, Stephen C. (২০০২), The Shadow Warriors of Nakano: A History of the Imperial Japanese Army's elite intelligence school., Brassey's., আইএসবিএন 1-57488-538-3 
  • Saraf, Muhammad Yusuf (২০১৫) [first published 1979 by Ferozsons], Kashmiris Fight for Freedom, Volume 2, Mirpur: National Institute Kashmir Studies 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]