বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী
বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী | |
---|---|
জন্ম | ১৯২৭ |
মৃত্যু | ১৫ এপ্রিল ২০২২ (বয়স ৯৪) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | (১৯২৭- ১৯৪৭) (ব্রিটিশ ভারত) (১৯৪৭-২০২২) (ভারত) |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ |
পেশা | স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিজ্ঞান ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন |
পরিচিতির কারণ | ইন্সটিটিউট অফ রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন |
পুরস্কার | লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার |
বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী ( ১৯২৭ - ১৫ এপ্রিল ২০২২) [১]ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যিনি দেশে কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন তথা নলজাতক শিশু গবেষণা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। কলকাতা মহানগরের বিধাননগরে ইন্সটিটিউট অফ রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। সাত দশকের কর্মজীবনে চার সহস্রাধিক আইভিএফ পদ্ধতিতে নিঃসন্তান দম্পতিকে সন্তানলাভে সাহায্য করেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]বৈদ্যনাথ চক্রবর্তীর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। [২] তিনি পিতামাতার নয় সন্তানের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। পিতা রেলওয়ের সিগন্যালম্যান ছিলেন এবং তার বদলির চাকরির জন্য বিভিন্ন স্থানে গেলে বৈদ্যনাথকে বর্তমানের ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে রেখে যান। [৩]
সেখানকার বিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় ছাত্র বৈদ্যনাথ কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাশ করেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বৃত্তি লাভ করে তিনি কলকাতার আশুতোষ কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি তৎকালীন বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিজ্ঞান বিষয়ে সর্বোচ্চ স্থান নিয়ে স্নাতক হন। পরে তিনি স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে ইংল্যান্ডে যান এবং শিক্ষা সমাপনান্তে তিনি রয়্যাল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টের সদস্য হন। [২] [৩] আর্থিক সঙ্কটে ইংল্যান্ড হতে দেশে ফিরতে পারছিলেন না। তাই ফেরার অর্থ সংগ্রহের জন্য তাকে কিছুদিন সেখানকার এক হাসপাতালে কাজ করতে হয়। [৩]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]পরে দেশে ফিরে ডা. বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী এনআরএস মেডিকেল কলেজে অনুষদের সদস্য হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন তথা আইভিএফ পদ্ধতিতে ভারতে সর্বপ্রথম এবং বিশ্বে দ্বিতীয় নল-জাত শিশু দুর্গার স্রষ্টা চিকিৎসা বিজ্ঞানী সুভাষ মুখার্জির সম্পর্কে আসেন। ডা. চক্রবর্তী সুভাষ মুখার্জির সঙ্গে কৃত্রিম প্রজননের ওষুধ সম্পর্কিত নানা বিষয়ে সহযোগিতা করেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ডা. মুখোপাধ্যায়ের আত্মহননের পর দুজনের গবেষণা সংক্রান্ত কাজ ডা. চক্রবর্তী চালিয়ে যান।
তিনি কলকাতায় আইভিএফ পরীক্ষাগার স্থাপনে সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার সহ অন্যান্য চিকিৎসকেদর সাহায্য করেন। পরে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেওয়ার পর তিনি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সল্টলেকে স্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অফ রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন। [২] তার প্রতিষ্ঠিত এই ইনস্টিটিউট অগণিত নিঃসন্তান দম্পতিকে সন্তানলাভে সাহায্য করেছে। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী এই ইনস্টিটিউট বছরে প্রায় তিন হাজার দম্পতিকে সহায়তা প্রদান করে। আগামীদিনে তার অনুপস্থিতিতে আইভিএফ পদ্ধতিতে চিকিৎসা ও গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে তিনি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দেই তার প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউটটি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) কে দান করে দেন। [৪] ডা. চক্রবর্তীর অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে- ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং একাধিক অসফল আইভিএফ মহিলাদের জন্য ব্যয়বহুল ডিম্বস্ফোটন ইন্ডাকশন প্রোটোকলের উন্নয়ন। তিনি বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে জেনেটিক যোগসূত্র, বন্ধ্যাত্বের ভূমিকা এবং এন্ডোমেট্রিওসিস এবং পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়াল গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও গবেষণা করেন।
এর আগে, ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময় ভারতে "কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি ক্লিনিকগুলির স্বীকৃতি, তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় নির্দেশিকা"র খসড়া তৈরি হয়েছিল। সাত দশকের কর্মজীবনে, ডা. চক্রবর্তী চার হাজারেরও বেশি আইভিএফ পদ্ধতি সম্পাদন করেন এবং দেশে আইভিএফ এবং কৃত্রিম প্রজনন গবেষণা ও চিকিৎসার অগ্রদূত হিসাবে বিবেচিত হন। [৩] তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের তিনি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার পান। [২]
পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান
[সম্পাদনা]ইংল্যান্ড হতে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর দেশে ফিরে তিনি মহিলা চিকিৎসক মঞ্জুশ্রীকে বিবাহ করেন। তাদের দুটি সন্তান। [৩] ডা. চক্রবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটের অনুরাগী ছিলেন।[৩] কৃত্রিম উপায়ে প্রজননের কিংবদন্তি চিকিৎসক ডা.বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। ২০২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন হাসপাতালের চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরেন।[৫]তারপর ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ সেরিব্রাল স্ট্রোক ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানেই ১৫ এপ্রিল সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[১][২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "প্রয়াত ভারতে টেস্ট টিউব বেবি গবেষণার পথিকৃৎ চিকিত্সক বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৪।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Yengkhom, Sumati (১৬ এপ্রিল ২০২২)। "IVF pioneer Baidyanath Chakravarty dies in Kolkata"। The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Father of 4000 test tube babies"। www.telegraphindia.com। ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২২।
- ↑ "কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নিজের প্রতিষ্ঠান দিলেন বৈদ্যনাথ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৪।
- ↑ "প্রয়াত কৃত্রিম উপায়ে প্রজননের ধন্বন্তরি ডাক্তার বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০৪।