বৃহস্পতি গ্রহের বলয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বৃহস্পতির বলয় সমষ্টির একটি রূপরেখা। এই রূপরেখায় উক্ত বলয়ের চারটি অংশ দেখা যাচ্ছে। সহজে বোঝানোর জন্য মেটিস ও অ্যাড্রাস্টিয়া বলয় দু’টিকে একক কক্ষপথে প্রদর্শিত হয়েছে।

বৃহস্পতির বলয় (ইংরেজি: Rings of Jupiter) বা বার্হস্পত্য বলয় মণ্ডল (ইংরেজি: Jovian ring system) হল বৃহস্পতি গ্রহের একটি বলয় মণ্ডল। শনিইউরেনাস গ্রহের বলয় মণ্ডলের পর আবিষ্কৃত এটি সৌর জগতের তৃতীয় গ্রহীয় বলয়। ১৯৭৯ সালে ভয়েজার ১ স্পেস প্রোব কর্তৃক এই বলয়টি প্রথম আবিষ্কৃত হয়[১] এবং ১৯৯০-এর দশকে গ্যালিলিও অরবিটার কর্তৃক এটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরীক্ষণ করা হয়।[২] বেশ কয়েক বছর ধরে এই বলয়টিকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপপৃথিবী থেকেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।[৩] ভূপৃষ্ঠ থেকে এই বলয়টিকে পর্যবেক্ষণ করতে প্রাপ্তিসাধ্য বৃহত্তম টেলিস্কোপগুলি দরকার হয়।[৪]

বার্হস্পত্য বলয় মণ্ডল হল একটি অস্পষ্ট গ্রহীয় বলয় মণ্ডল। এটি মূলত ধূলিকণা দ্বারা গঠিত।[১][৫] এটির প্রধান উপাদান চারটি: "জ্যোতিশ্চক্র বলয়" বা "হ্যালো রিং" নামে পরিচিত কণার একটি পুরু আভ্যন্তরীণ টরাস; তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী ধরনের পাতলা একটি "প্রধান বলয়"; এবং দু’টি প্রশস্ত, পুরু ও অস্পষ্ট বহিঃস্থ "লূতাতন্তু বলয়" বা "গসামার রিং"। শেষোক্ত বলয় দু’টির নামকরণ করা হয়েছে যে দু’টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের উপাদানে সেগুলি গঠিত, তাদের নামানুসারে: আমালথিয়াথিবি[৬]

প্রধান ও জ্যোতিশ্চক্র বলয় দু’টি উচ্চ—ক্ষমতাসম্পন্ন অভিঘাতের ফলে প্রাকৃতিক উপগ্রহ মেটিস, অ্যাড্রাস্টিয়া ও অন্যান্য অপর্যবেক্ষিত মূল বস্তুখণ্ড থেকে নিঃসৃত ধূলিকণা দ্বারা গঠিত।[২] ২০০৭ সালের মার্চ মাসে নিউ হোরাইজনস মহাকাশযান থেকে গৃহীত উচ্চ-রেজল্যুশনের ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছে প্রধান বলয়ের একটি সমৃদ্ধ সূক্ষ্ম আকৃতি বিদ্যমান।[৭]

দৃশ্যমান ও প্রায়-অবলোহিত আলোয় বলয়গুলিকে লালচে রঙের দেখায়। শুধুমাত্র জ্যোতিশ্চক্র বলয়টি অস্পষ্ট বা নীল রঙের দেখায়।[৩] বলয়ে ধূলিকণার আকার ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের। তবে জ্যোতিশ্চক্র বলয় ছাড়া সব ক’টি বলয়ে প্রায় ১৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসার্ধ-বিশিষ্ট অ-গোলকাকার বস্তুগুলি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় প্রস্থচ্ছেদ ভাগে।[৮] জ্যোতিশ্চক্র বলয়ে সম্ভবত সাবমাইক্রোমিটার ধূলিকণার প্রাধান্য। বলয় মণ্ডলের সামগ্রিক ভর (অনির্ণীত মূল বস্তুখণ্ড সহ) সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। তবে এটির মাত্রা ১০১১ থেকে ১০১৬  কিলোগ্রামের মধ্যবর্তী।[৯] বলয় মণ্ডলের বয়সও অজ্ঞাত; তবে বৃহস্পতি গঠিত হওয়ার সময় থেকেই সম্ভবত এই বলয় মণ্ডলের অস্তিত্ব রয়েছে।[৯]

হিমালিয়ার কক্ষপথে সম্ভবত একটি বলয় ছিল। বলয় সৃষ্টির একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এই যে, একটি ছোটো প্রাকৃতিক উপগ্রহের সঙ্গে হিমালিয়ার সংঘাত ঘটে এবং সেই সংঘর্ষের ফলে হিমালিয়া থেকে বস্তুখণ্ড ছিটকে বেরিয়ে যায়।[১০]

আবিষ্কার ও গঠন[সম্পাদনা]

শনিইউরেনাস গ্রহের বলয় মণ্ডলের পর আবিষ্কৃত বৃহস্পতির বলয় সৌর জগতের তৃতীয় গ্রহীয় বলয়। ১৯৭৯ সালে ভয়েজার ১ স্পেস প্রোব কর্তৃক এই বলয়টি প্রথম আবিষ্কৃত হয়।[১] এটির প্রধান উপাদান চারটি: "জ্যোতিশ্চক্র বলয়" বা "হ্যালো রিং" নামে পরিচিত কণার একটি পুরু আভ্যন্তরীণ টরাস; তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী ধরনের পাতলা একটি "প্রধান বলয়"; এবং দু’টি প্রশস্ত, পুরু ও অস্পষ্ট বহিঃস্থ "লূতাতন্তু বলয়" বা "গসামার রিং"। শেষোক্ত বলয় দু’টির নামকরণ করা হয়েছে যে দু’টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের উপাদানে সেগুলি গঠিত, তাদের নামানুসারে: আমালথিয়াথিবি[৬] বার্হস্পত্য বলয়গুলির যে সব প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির কথা জানা গিয়েছে, সেগুলি সারণি আকারে দেওয়া হল:[২][৫][৬][৮]

নাম ব্যাসার্ধ (কিলোমিটার) প্রস্থ (কিলোমিটার) ঘনত্ব (কিলোমিটার) দৃশ্যগত গভীরতা[ক] (in τ) ধূলিকণার ভগ্নাংশ ভর (কিলোগ্রাম) টীকা
জ্যোতিশ্চক্র বলয় ৯২০০০২২৫০০ ৩০৫০০ ১২৫০০ ~1 × ১০−৬ ১০০%  —
প্রধান বলয় ২২৫০০২৯০০০ ৬৫০০ 30–300 5.9 × ১০−৬ ~২৫% ১০– ১০ (ধূলিকণা)
১০১১– ১০১৬ (বৃহৎ কণা)
অ্যাড্রাস্টেয়া কর্তৃক পরিবেষ্টিত
অ্যামালথিয়া লূতাতন্তু বলয় ২৯০০০৮২০০০ ৫৩০০০ ২০০০ ~২ × ১০−৭ ১০০% ১০– ১০ অ্যামালথিয়ার সঙ্গে যুক্ত
থিবি লূতাতন্তু বলয় ২৯০০০২৬০০০ ৯৭০০০ ৮৪০০ ~৩ × ১০−৮ ১০০% ১০– ১০ থিবির সঙ্গে যুক্ত। থিবির কক্ষপথের বাইরেও প্রসারিত।

চিত্রাবলি[সম্পাদনা]

গ্যালিলিও মহাকাশযান থেকে গৃহীত বলয় মণ্ডলের ছবি
২০১৬ সালের ২৭ অগস্ট জুনো মহাকাশযানের ভিতর থেকে গৃহীত বলয় মণ্ডলের ছবি

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. স্বাভাবিক দৃশ্যগত গভীরতা হল বলয়ের কণাগুলির সামগ্রিক প্রস্থচ্ছেদ ও বলয়ের বর্গক্ষেত্র এলাকার অনুপাত।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Smith, B. A.; Soderblom, L. A.; Johnson, T. V.; ও অন্যান্য (১৯৭৯)। "The Jupiter System through the Eyes of Voyager 1"। Science204 (4396): 951–957, 960–972। ডিওআই:10.1126/science.204.4396.951পিএমআইডি 17800430বিবকোড:1979Sci...204..951S 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Ockert-Bell1999 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Meier1999 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; dePater1999 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. Showalter, M. R.; Burns, J. A.; Cuzzi, J. N. (১৯৮৭)। "Jupiter's Ring System: New Results on Structure and Particle Properties"। Icarus69 (3): 458–498। ডিওআই:10.1016/0019-1035(87)90018-2বিবকোড:1987Icar...69..458S 
  6. Esposito, L. W. (২০০২)। "Planetary rings"Reports on Progress in Physics65 (12): 1741–1783। ডিওআই:10.1088/0034-4885/65/12/201বিবকোড:2002RPPh...65.1741E। ১৬ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  7. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Morring2007 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Throop2004 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Burns2004 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. "Lunar marriage may have given Jupiter a ring", New Scientist, March 20, 2010, p. 16.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:বৃহস্পতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ