কাইপার বেষ্টনী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Known objects in the Kuiper belt beyond the orbit of Neptune. (Scale in AU; epoch as of January 2015.)
      Sun
      Jupiter trojans
      Giant planets: J · S · U · N
      Centaurs
      Kuiper belt
      Scattered disc
      Neptune trojans
Distances but not sizes are to scale
Source: Minor Planet Center, www.cfeps.net and others

কাইপার বেষ্টনী (ইংরেজি ভাষায় : Kuiper belt / Edgeworth–Kuiper belt )[১] হলো সৌরজগৎের মূল গ্রহসমূহের বহিঃস্থ রিং আকৃতির ( circumstellar disc) অঞ্চল । অঞ্চলটি সূর্য থেকে ৩০ মহাজাগতিক একক (অর্থাৎ নেপচুন গ্রহের কক্ষপথ) থেকে ৫০ মহাজাগতিক একক দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত।[২] এটি গ্রহাণু বেষ্টনীর মত, কিন্তু আকারে অনেক বড়: এটি গ্রহাণু বেষ্টনীর চেয়ে প্রায় ২০ গুণ প্রশস্ত এবং ২০-২০০ গুণ বেশি ভরবিশিষ্ট।[৩][৪] গ্রহাণু বেষ্টনীর মতই কাইপার বেষ্টনীটি মূলত ক্ষুদ্রাকৃতির বস্তু বা সৌরজগৎের সৃষ্টির সময়কার অবশিষ্টাংশ নিয়ে গঠিত। গ্রহাণু বেষ্টনীর বস্মূতুগুলো সাধারণত শিলা ও ধাতুর সমন্বয়ে গঠিত হলেও কাইপার বেষ্টনীর বস্তুগুলি মূলত হিমায়িত উদ্বায়ী পদার্থ (যাদেরকে "বরফ" নামে অভিহিত করা হয়), যেমন মিথেন, অ্যামোনিয়াপানি নিয়ে গঠিত।কাইপার বেষ্টনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত তিনটি বামন গ্রহ (প্লুটো , হাউমেয়া ও  মেকিমেকি) রয়েছে । ধারণা করা হয় যে, সৌরজগৎের কিছু উপগ্রহ ( যেমনঃ নেপচুন গ্রহের ট্রাইটন, শনি গ্রহের ফিবি ) এই অঞ্চল থেকেই উৎপত্তি  লাভ করেছে। [৫][৬]

ডাচ-আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরার্ড কাইপারের নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় 'কাইপার বেষ্টনী' । যদিও তিনি কাইপার বেষ্টনী সম্পর্কে ভবিষৎবাণী করেননি । ১৯৯২ সালে 1992 QB1 আবিষ্কৃত হয় । ১৯৩০ সালে প্লুটো আবিষ্কারের পর এটিই ছিল কাইপার বেল্টের প্রথম আবিষ্কৃত বস্তু । এর পরে প্রায় এক হাজারের মত "কাইপার বেষ্টনী বস্তু" আবিষ্কৃত হয়েছে এবং ধারণা করা হয় ১০০ কিলোমিটারের বেশি ব্যাসার্ধবিশিষ্ট এই ধরনের কাইপার বেষ্টনী বস্তুর সংখ্যা ১০০ হাজারেরও বেশি।[৭] প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে কাইপার বেষ্টনী পর্যায়বৃত্ত ধূমকেতুগুলির (periodic comet) একটি প্রধান আধার; এই ধূমকেতুগুলির কক্ষপথ ২০০ বছর বা তার কম সময়ের জন্য টিকে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের মাঝমাঝি থেকে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে কাইপার বেষ্টনীটি একটি গতিশীলরত স্থায়ী অঞ্চল এবং ধূমকেতুগুলির মূল উৎস হল সূর্য থেকে আরও দূরে অবস্থিত বিক্ষিপ্ত চাকতি (scattered disc) নামক একটি অঞ্চল যেটি ৪.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে নেপচুনের বাহ্যিক গতির কারণে গঠিত হয়েছিল ।[৮]  বিক্ষিপ্ত চাকতির এর বস্তুগুলো যেমনঃ এরিস এর কক্ষপথ এত উৎকেন্দ্রিক যে এটি সূর্য থেকে ১০০ মহাজাগতিক এককের মত দূরত্বও অতিক্রম করে । [[./Kuiper belt#cite_note-PlutoSize-10 [nb 1]]][nb ১]

কাইপার বেল্টকে তত্ত্বীয়ভাবে প্রমাণিত 'উর্ট মেঘের' সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয় ; যেটি আরও হাজার গুণ দূরবর্তী এবং প্রায় গোলাকৃতির । কাইপার বেল্ট, বিক্ষিপ্ত চাকতিউর্ট মেঘের বস্তুগুলোকে একত্রে নেপচুনোত্তর বস্তু (Trans-Neptunian objects) বলা হয় ।[১১]

প্লুটো কাইপার বেল্টের বৃহত্তম ও সবচেয়ে ভারী সদস্য এবং নেপচুনোত্তর বস্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ভরের দিক থেকে দ্বিতীয় ( প্রথম এরিস )।  আদিতে প্লুটোকে একটি গ্রহ হিসেবে গণ্য করা হলেও ২০০৬ সালে এটিকে একটি বামন গ্রহ হিসেবে পুনঃশ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে ।  গঠনগত দিক থেকে প্লুটোর সাথে কাইপার বেষ্টনীর অন্যান্য অনেক বস্তুর সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় । এর কক্ষপথের পর্যায়কালের বৈশিষ্ট্য 'প্লুটিনোস' ( Plutinos ) নামক এক শ্রেণির কাইপার বেষ্টনী বস্তুদের(KBO: Kuiper belt object ) সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ । প্লুটো ছাড়াও নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে আরও চারটি বামন গ্রহের সন্ধান মিলেছে। এগুলিকে প্লুটোর সম্মানে "প্লুটয়েড" (অর্থাৎ "প্লুটো-সদৃশ") নামে ডাকা হয়।

উল্লেখ্য যে, ২৪ আগস্ট ২০০৬ সালে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে প্লুটোর গ্রহত্ব বাতিল করে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৩০ সালে প্লুটো আবিষ্কারের পর অনেকে ধারণা করেন যে এটি একা নয় । বর্তমানে কাইপার বেষ্টনী নামে পরিচিত অঞ্চলটির অস্তিত্ব সম্পর্কে পূর্বে অনেক বিজ্ঞানীই অনুমান করেন । তবে ১৯৯২ সালেই প্রথম এই অঞ্চলটির অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় । কাইপার বেষ্টনী সম্পর্কে বহু বিজ্ঞানীই পূর্বানুমান করায় এটি সম্পর্কে কে প্রথম অনুমান করে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Kuiper belt – oxforddictionaries.com"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  2. Alan Stern; Colwell, Joshua E. (১৯৯৭)। "Collisional Erosion in the Primordial Edgeworth-Kuiper Belt and the Generation of the 30–50 AU Kuiper Gap"। The Astrophysical Journal490 (2): 879–882। ডিওআই:10.1086/304912বিবকোড:1997ApJ...490..879S 
  3. Audrey Delsanti & David Jewitt। "The Solar System Beyond The Planets" (পিডিএফ)Institute for Astronomy, University of Hawaii। সেপ্টেম্বর ২৫, ২০০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৯, ২০০৭ 
  4. Krasinsky, G. A.; Pitjeva, E. V.; Vasilyev, M. V.; Yagudina, E. I. (জুলাই ২০০২)। "Hidden Mass in the Asteroid Belt"। Icarus158 (1): 98–105। ডিওআই:10.1006/icar.2002.6837বিবকোড:2002Icar..158...98K 
  5. Johnson, Torrence V.; and Lunine, Jonathan I.; Saturn's moon Phoebe as a captured body from the outer Solar System, Nature, Vol. 435, pp. 69–71
  6. Craig B. Agnor & Douglas P. Hamilton (২০০৬)। "Neptune's capture of its moon Triton in a binary-planet gravitational encounter" (পিডিএফ)Nature। জুন ২১, ২০০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২০, ২০০৬ 
  7. NEW HORIZONS The PI's Perspective
  8. Levison, Harold F.; Donnes, Luke (২০০৭)। "Comet Populations and Cometary Dynamics"। Lucy Ann Adams McFadden; Paul Robert Weissman; Torrence V. Johnson। Encyclopedia of the Solar System (2nd সংস্করণ)। Amsterdam; Boston: Academic Press। পৃষ্ঠা 575–588। আইএসবিএন 0-12-088589-1 
  9. Weissman and Johnson, 2007, Encyclopedia of the solar system, footnote p. 584
  10. IAU: Minor Planet Center (জানুয়ারি ৩, ২০১১)। "List Of Centaurs and Scattered-Disk Objects"। Central Bureau for Astronomical Telegrams, Harvard-Smithsonian Center for Astrophysics। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৩, ২০১১ 
  11. Gérard FAURE (২০০৪)। "Description of the System of Asteroids as of May 20, 2004"। মে ২৯, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১, ২০০৭ 


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "nb" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="nb"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি