বাস্তবতা ও তত্ত্ব হিসেবে বিবর্তন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ফ্যাক্ট ও তত্ত্ব হিসেবে বিবর্তন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

অনেক বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের দার্শনিক বিবর্তনকে ফ্যাক্ট (সত্য বা বাস্তবতা) এবং থিওরি (তত্ত্ব) হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ১৯৮১ সালে এটি প্যালেওনোলজিস্ট স্টিফেন জে গোল্ডের একটি নিবন্ধের শিরোনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তিনি বৈজ্ঞানিক সত্য বলতে তথ্যকে (ডেটা) বুঝিয়েছেন; যা একদম চিরন্তন সত্য নয়, but "confirmed to such a degree that it would be perverse to withhold provisional assent." বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সত্যকে ব্যাখ্যা করার জন্য উৎকৃষ্ট প্রমাণ। বিবর্তনের সত্যতা এসেছে সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ, একই বংশোদ্ভূত ঐতিহাসিক প্রাণীর রেকর্ডের ত্রুটি এবং ফসিল রেকর্ডের পরিব্যপ্তি থেকে। [১]

“বিবর্তন”, “সত্য বা বাস্তবতা” এবং “তত্ত্ব” প্রতিটি শব্দের প্রসঙ্গানুসারে আলাদা অর্থ আছে। বিবর্তন বলতে বোঝায় সময়ের সাথে পরিবর্তন, যেরকমটা নক্ষত্রের বিবর্তন। জীববিজ্ঞানে এটি একই পূর্বপুরুষ থেকে কোনো বংশের জীবের পরিবর্তনকে নির্দেশ করে এবং প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সময়ের সাথে জিনের পরিবর্তনে বোঝায়। বিবর্তন বলতে কোনো তত্ত্বের ব্যাখ্যাও বুঝাতে পারে (যেমন চার্লস ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন), যা বিবর্তনের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে। একটি তত্ত্বকে ভালো তত্ত্ব বলা যেতে পারে যদি সেটা কোনো পর্যবেক্ষণের বিরাট শ্রেণিকে নির্ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে এবং ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণের একটি বিরাট শ্রেণিকে নির্ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। [২]

বিবর্তনের পক্ষে অনেক প্রমাণ জোগাড় এবং প্রমাণ চলমান রয়েছে। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের দার্শনিকের বিভিন্ন বক্তব্য বিবর্তনকে তত্ত্ব এবং সত্য হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে।

নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দ্বারা বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানের দার্শনিকদের কাছ থেকে সত্য এবং তত্ত্ব হিসাবে বিবর্তনের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য বর্ণিত হয়েছে

বিবর্তনকে "ঘটনা ও তত্ত্ব" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে; "সত্য, তত্ত্ব নয়"; "শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব, একটি সত্য নয়"; "তত্ত্বের সমষ্টি হিসেবে, সত্য নয়"; এবং "সত্য-তত্ত্ব কোনোটিই নয়।" এই বিবৃতিগুলোর মধ্যে মতবিরোধের ক্ষেত্রে মূল বিরোধের চেয়ে শব্দগুলোর অর্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিবর্তন[সম্পাদনা]

অক্ষের স্কেল: কোটি বছরছবিতে শব্দসমূহ ক্লিকযোগ্য
বামপ্রান্তে কমলা রঙে জানা তুষার যুগ চিহ্নিত।
আরও দেখুন: মানব সময়রেখাপ্রকৃতি সময়রেখা

জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক জেরি কোয়েন জৈবিক বিবর্তনকে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন:

পৃথিবীর জীবন ক্রমান্বয়ে এক আদিম প্রজাতির সাথে বিবর্তিত হয়েছিল— সম্ভবত একটি স্বপ্রতিরূপ-সৃষ্টিকারী অণু— যা প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন বছর আগে ছিল; এরপরে এটি সময়ের সাথে সাথে অনেকগুলি নতুন এবং বিচিত্র প্রজাতিতে বিভক্ত হয়েছিল; এবং বিবর্তনীয় পরিবর্তনের সর্বাধিক (তবে সমস্ত নয়) প্রক্রিয়াটি হলো প্রাকৃতিক নির্বাচন। [৩]

এটি প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান, জেনেটিক্স, ভূতত্ত্ব এবং জীবাশ্মবিজ্ঞান সহ আরো অনেক বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের সম্ভাবনা এবং ব্যাপ্তিকে প্রকাশ করে।

তবে বিবর্তনের মূল বিষয়টিকে সাধারণত কোনো জীবগোষ্ঠীর একটি প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্য বা জিনের ক্রমের পরিবর্তন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[৪] এটিকে বিবর্তনের প্রমাণ-জেনেটিক-সংজ্ঞা বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক নির্বাচন হচ্ছে বিবর্তন তত্ত্বের একাধিক পদ্ধতির মধ্যে একটি যা কীভাবে কোনো জীব ঐতিহাসিকভাবে পরিবর্তিত কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করে তা ব্যাখ্যা করে। ডারউইনের মৃত্যুর পরে ১৯০০ সালে মটরের মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার বংশগতি সম্পর্কে গ্রেগর মেন্ডেলের গবেষণায় বংশগতিবিদ্যার মূলনীতি পুনঃআবিষ্কৃত হয়। [৫] [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] জেনেটিক্স, মিউটেশন, প্যালিয়ন্টোলজি এবং বিকাশীয় জীববিজ্ঞানের পরবর্তী গবেষণা ডারউইনের মূল তত্ত্বের প্রয়োগযোগ্যতা এবং ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে।

ডগলাস জে ফুতুয়ামার মতে:

জৈবিক বিবর্তন সামান্য বা যথেষ্ট হতে পারে; এটি একটি জীবগোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন অ্যালিলের অনুপাতের সামান্য পরিবর্তন থেকে শুরু করে (যেমন রক্তের ধরণ নির্ধারণ করে ) পর্য়ায়ক্রমিক পরিবর্তন, যা প্রোটোলজ জীব থেকে শুরু করে শামুক, মৌমাছি, জিরাফ এবং ড্যানডিলিয়নে পরিণত হয়েছিল। [৬] [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]

বিস্তৃত অর্থে বিবর্তন শব্দটি নক্ষত্রের বিবর্তন থেকে শুরু করে ভাষার বিবর্তনের প্রক্রিয়াগুলিকে নির্দেশ করে। জীববিজ্ঞানে, অর্থটি আরও সুনির্দিষ্ট: বংশগতীয় পরিবর্তন যা একটি জীবগোষ্ঠীর বহু প্রজন্ম ধরে হতে থাকে। পৃথক জীব তাদের জীবদ্দশায় বিবর্তিত হয় না, তবে বংশগতির জিনগত পরিবর্তন জীবগোষ্ঠীতে কম বা বেশি থাকতে পারে। জীবের জীবদ্দশায় কোনও পরিবর্তন যা তাদের বংশধরদের দ্বারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয় না তা জৈবিক বিবর্তনের অংশ নয়। [৭]

কিথ স্টুয়ার্ট থমসনের মতে বিবর্তন শব্দটির কমপক্ষে তিনটি স্বতন্ত্র অর্থ রয়েছে:[৮]

  1. সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনের সাধারণ ধারণা।
  2. সমস্ত জীব সাধারণ বংশদ্ভুত প্রক্রিয়ায় পূর্বপুরুষদের পরিবর্তনের সাথে প্রাপ্ত।
  3. এই পরিবর্তন প্রক্রিয়ার কারণ বা পদ্ধতি বিবর্তনবাদী তত্ত্ব দ্বারা পরীক্ষা করা এবং ব্যাখ্যা করা যায়।

থমসন মন্তব্য করেছেন: "সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন একটি সত্য এবং সাধারণ পূর্বপুরুষদের বংশোদ্ভূতের বিষয়টি এমন একটি প্রশ্নাতীত যুক্তির উপর ভিত্তি করে যে আমরা এটাকে সত্য হিসাবে মনে করি। প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যাখ্যামূলক তত্ত্বের রূপরেখা হিসেবে কাজ করে” [৮]

জীববিজ্ঞানীরা এটিকে একটি বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবে ধরে নিয়েছেন যে আধুনিক জীবের মধ্যে বিবর্তন ঘটেছে যা অতীতের চেয়ে পৃথক, এবং এখনও জীব এবং তাদের বংশধরের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্যসহ বিবর্তন ঘটছে। দ্বিতীয়টির বড়ো সমর্থন হলো বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছেন যে সাধারণ বংশদ্ভুতের সত্যতা সৌরমন্ডলে সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ঘোরা উপলব্ধি মতোই, যদিও এই পরীক্ষাগুলো এখনও প্রাথমিক এবং এখনও প্রক্রিয়াধীন। বিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে একাধিক তত্ত্ব রয়েছে এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতি সম্পর্কে এখনও সক্রিয় মতবিরোধ রয়েছে। [৯]

বিবর্তন শব্দটির চতুর্থ অর্থ রয়েছে যা আজ জীববিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেন না । ১৮৫৭ সালে দার্শনিক হারবার্ট স্পেন্সার এটিকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন যে "একইজাতীয় থেকে ভিন্নজাতীয়তে পরিবর্তিত হওয়া।" তিনি দাবি করেছিলেন (ডারউইনের আগে) জৈব বিবর্তনের জন্য এটি "অবিসংবাদিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত" এবং নক্ষত্র ব্যবস্থা, ভূতত্ত্ব এবং মানব সমাজের বিবর্তনে প্রয়োগ করেছেন। [১০] এমনকি ১৮৬৫ সালে স্পেনসর বলেছিলেন যে তাঁর সংজ্ঞাটি অসম্পূর্ণ, [১১] তবে উইলিয়াম জেমস এবং অন্যদের সমালোচনার জন্য পরিত্যক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত এটি উনিশ শতক জুড়েই জনপ্রিয় ছিল। [১২] [১৩]

সত্যতা বা বাস্তবতা[সম্পাদনা]

সত্য বা সত্যতা শব্দটি বিজ্ঞানীরা প্রায়শই পরীক্ষামূলক বা অভিজ্ঞতামূলক তথ্য বা বস্তুবাচকভাবে যাচাইযোগ্য পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করতে ব্যবহার করেন। [১৪][১৫] "ফ্যাক্ট বা সত্য" কোনও তত্ত্বকে বোঝাতে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় যার পক্ষে অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ রয়েছে। [১৬]

সত্য বা ফ্যাক্ট একধরনের অনুমান যা প্রমাণের দ্বারা এত দৃঢ়ভাবে সমর্থিত যে আমরা এটি বাস্তব বলে ধরে নিই এবং বাস্তব হিসেবে ব্যবহার করি। — ডগলাস জে ফুতুমা [৬]

এ বিবেচনায় বিবর্তন যে সত্য বা ফ্যাক্ট এটা অখণ্ডনীয় প্রমাণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। প্রায়শই বলা হয়ে থাকে যে সূর্যের চারপাশের পৃথিবী ঘোরার মতোই এটা সত্য। [৬] [১৭] হারমান জোসেফ মুলারের “ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস উইথআউট ডারউইনিজম আর এনাফ” প্রবন্ধের নিচের উদ্ধৃতি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে।

ভাবনা, অনুমান, তত্ত্ব, নীতি এবং সত্যের মধ্যে কোন সূক্ষ্ম পার্থক্য নেই, তবে ধারণাটির সম্ভাবনার ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য থাকে। যখন আমরা কোনও জিনিসকে সত্য বলি, তার অর্থ হলো এর সম্ভাবনা অত্যধিক: এতটাই বেশি যে আমরা এটি সম্পর্কে আমাদের কোনো সন্দেহ থাকে না এবং সেটি মেনে নিই ।এখন সত্যের এরকম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একদম সঠিক বিষয় হচ্ছে বিব্তন একটি সত্য বা ফ্যাক্ট। [১৮]

জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি (মার্কিন) একটি অনুরূপ বিষয় উল্লেখ করে:

বিজ্ঞানীরা প্রায়শই পর্যবেক্ষণ বর্ণনা করতে "সত্য" শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে বিজ্ঞানীরা সত্যকে এমন কোনও কিছু বোঝাতে ব্যবহার করতে পারেন যা এতবার পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যে আরও পরীক্ষা করা বা প্রয়োগের প্রয়োজন থাকে না। এই অর্থে বিবর্তনের ঘটনাটি একটি সত্য। বংশগতীয় পরিবর্তন আদৌ হয় কি না সে প্রশ্ন বিজ্ঞানীরা আর করেন না, কারণ এর পক্ষে খুবই জোরালো প্রমাণ রয়েছে [১৯]

স্টিফেন জে গোল্ড আরও উল্লেখ করেছেন যে “ডারউইন সবসময় তাঁর দুটি দুর্দান্ত এবং আলাদা অবদানের মধ্যে পার্থক্যকে জোর দিয়েছিলেন: সত্য হিসেবে বিবর্তন এবং বিবর্তনের প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করার জন্য একটি তত্ত্বের প্রস্তাব দেয়া— প্রাকৃতিক নির্বাচন।” [২০] এই দুটি ধারণার মধ্যে প্রায়শই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীরা এখনও বিবর্তনের কোনো নির্দিষ্ট দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা বা প্রক্রিয়া প্রশ্ন নিয়ে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সত্য হলো বিবর্তন ঘটেছে, এবং এখনও ঘটছে, যা অবিসংবাদিত।

একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো বিবর্তন নির্ভরযোগ্যভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে না, কেননা এটি কয়েক লক্ষ বছর আগে ঘটেছিল এবং এই বিজ্ঞান তাই সত্যের উপরে নির্ভরশীল নয় (প্রাথমিক অর্থে)। তবে ডারউইন এবং তত্ত্বের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস এবং পরবর্তী সমস্ত জীববিজ্ঞানীই মূলত প্রাথমিকভাবে জীবিত প্রাণীর পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল ছিলেন; ডারউইন মূলত গৃহপালিত প্রাণীদের বংশবৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, যেখানে ওয়ালেস অ্যামাজন এবং মালয় দ্বীপপুঞ্জের জৈবভৌগলিক প্রজাতি থেকে শুরু করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, জনসংখ্যা বংশাণুবিজ্ঞান ছিল বিবর্তনের মূল আলোচ্য এবং সাম্প্রতিককালে ডিএনএ পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা এর আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞানের দার্শনিকরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে মুক্তমনা গবেষণাধর্মী সত্যতা একদমই সত্য কি না আমরা তা জানি না: এমনকি প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের ব্যাপারটি আমাদের অনুমান এবং ব্যবহৃত যন্ত্রের কারণে তা "অপ্রয়োজনীয় তত্ত্ব" হতে পারে। এই অর্থে সমস্ত সত্য অস্থায়ী। [৯][২১]

তত্ত্ব[সম্পাদনা]

"তত্ত্ব" শব্দের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা সাধারণ ব্যবহারের সংজ্ঞা থেকে পৃথক। স্থানীয়ভাবে "তত্ত্ব" বলতে বোঝায় অনুমাননির্ভর মত, সাধরন অনুমান, মতামত, অথবা একটি কাল্পনিক তথ্য যা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।

বিজ্ঞানে অবশ্য তত্ত্বের অর্থ আরও কঠোর। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলতে বোঝায় "প্রকৃতির এমন কিছু দৃষ্টিভঙ্গির একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা যা প্রমাণ, বৈজ্ঞানিক আইন, সূচনা এবং পরীক্ষিত অনুমানকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে পারে।" [২২] হাইপোথিসিস থেকে তত্ত্বের সূচনা হয়। তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে বারবার পরীক্ষা করে প্রমাণ সিদ্ধ করা হয় বা বিপরীতভাবে তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণ করার পরীক্ষা করা হয়। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের ক্ষেত্রে, ডারউইন ১৮৩৯ সালের দিকে অনুমান করেছিলেন এবং তিন বছর পরে ১৮৪২ সালে প্রথম খসড়া তৈরি করেছিলেন। তিনি তাঁর বহু বুদ্ধিমান বন্ধুদের সাথে এটি ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছিলেন এবং তার অন্যান্য লেখাগুলি এবং রচনার পটভূমিতে আরও গবেষণা করেছিলেন। কয়েকবছর উন্নয়ণের পরে, তিনি শেষ পর্যন্ত ১৮৬৯ সালে অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিসে তার প্রমাণ এবং তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। [২৩]

"বিবর্তন তত্ত্ব" আসলে তত্ত্বের একটি ধারা যা জীববিজ্ঞানের গবেষণা ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। ডারউইন তার মূল ব্যাখ্যায় পাঁচটি পৃথক তত্ত্ব প্রস্তাব করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে:

  1. এনাজেনেসিস
  2. ধীরে ধীরে পরিবর্তন
  3. প্রজাত্যায়ন
  4. প্রাকৃতিক নির্বাচন
  5. বংশান্তরকরণ ও নতুন প্রজাতির উদ্ভব [২৪]

ডারউইনের পর থেকে বিবর্তন এর আন্তঃসম্পর্কিত বিবৃতিগুলির একটি সু-সমর্থিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে যা প্রাকৃতির অসংখ্য পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করে। বিবর্তনীয় তত্ত্বগুলি জীবিত এবং জীবাশ্মের জীব সম্পর্কে পরীক্ষামূলক ভবিষ্যদ্বাণী এবং ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছে। [২৫] [২৬]

সাহিত্যে তত্ত্ব এবং সত্য হিসাবে বিবর্তন[সম্পাদনা]

সত্য হিসাবে বিবর্তন[সম্পাদনা]

  • আমেরিকান প্রাণিবিজ্ঞানী এবং পুরাতত্ত্ববিদ জর্জ গেলর্ড সিম্পসন বলেছিলেন যে "ডারউইন ... অবশেষে এবং অবশ্যই বিবর্তনকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।" [২৭]
  • হারমান জোসেফ মুলার লিখেছেন, "বিবর্তনের পক্ষে এত বিশাল, বিস্তৃত এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে যে কেউ যদি এখন এটির সত্যতা অপ্রমাণ করতে পারত তবে এই মহাবিশ্বের সুশৃঙ্খলতা সম্পর্কে আমার ধারণাটি এতটাই কম্পিত হতো যে আমাকে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কেও সন্দেহ হত। আপনি যদি চান তবে আমি আপনাকে বলব যে একটি নিখুঁত অর্থে বিবর্তন কোনও সত্য নয়, তাহলে তার চেয়ে বরং আপনি এই লেখাগুলো শুনছেন বা পড়ছেন তা কোন সত্য নয়" [১৮]
  • কেনেথ আর মিলার লিখেছেন, "বিবর্তন ততটুকু সত্য যতটুকু বিজ্ঞানে আমরা জানি" [২৮]
  • আর্নস্ট মেয়ার বলেছিলেন, "বিবর্তনের মূল তত্ত্বটি এতটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে যে বেশিরভাগ আধুনিক জীববিজ্ঞানীরা বিবর্তনকে কেবল একটি সত্য হিসাবে বিবেচনা করেন। বিবর্তন শব্দটি বাদে আমরা কীভাবে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত ভূতাত্ত্বিক স্তরের প্রাণীজ ও উদ্ভিদের ক্রমকে নির্ধারণ করতে পারি? এবং বিবর্তনীয় পরিবর্তন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জিনের পরিবর্তনের একটি সাধারণ সত্য।" [২৯]

সত্য এবং তত্ত্ব হিসাবে বিবর্তন[সম্পাদনা]

"ফ্যাক্ট বা সত্য" বলতে সাধারণত জীবের প্রজন্ম ধরে চলা পর্যবেক্ষণযোগ্য পরিবর্তন বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। আর "তত্ত্ব" শব্দটি এই পরিবর্তনের কারণ ব্যখ্যা করার জন্য:

  • ১৯৩০ সালে জীববিজ্ঞানী জুলিয়ান হাক্সলি বিস্তৃত ধারাবাহিক দ্য সায়েন্স অব লাইফের তৃতীয় বইয়ের শিরোনাম করেছিলেন, যা জীবাশ্মের রেকর্ড এবং উদ্ভিদ এবং প্রাণীর কাঠামোর প্রমাণ, বিবর্তনের অকাট্য সত্য। তিনি আরও বলেছেন "প্রাকৃতিক নির্বাচন ... শুধু তত্ত্ব নয়, একটি সত্য। কিন্তু এটি কি ... বিবর্তনের পুরো দর্শনীয়তার জন্য যথেষ্ট?... সেখানে আমরা অনুমানমূলক বিষয়ে, তত্ত্বগুলিতে আসি। [৩০] 1932 সালে, বইটির একটি অংশ বিবর্তন, সত্যতা এবং তত্ত্ব শিরোনামে পুনরায় প্রকাশিত হয়েছিল।
  • স্টিভেন জে গুল্ড লিখছেন, "... বিবর্তন একটি তত্ত্ব। এটি সত্য। আর তথ্য ও তত্ত্ব ভিন্ন জিনিস, নিশ্চিতভাবে ক্রমিক বৃদ্ধি হয় না। সত্য হচ্ছে পৃথিবীর তথ্য। তত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি সুগঠিত বিষয় যা সত্যকে ব্যাখ্যা করে। সত্য কখনও ফিকে হয় যায় না যখন বিজ্ঞানীরা এর অন্য তত্ত্ব দ্বারা এর ব্যাখ্যা করেন।। আইনস্টাইন এর মহাকর্ষ তত্ত্ব নিউটনের তত্ত্ব প্রতিস্থাপিত করে।এ কারণে কিন্তু আপেল বাতাসে ভেসে বেড়ায় না, মূল জিনিসটা একই। এবং মানুষ apelike পূর্বপুরুষদের থেকে বিবর্তিত—এটি ডারউইনের প্রস্তাবিত প্রক্রিয়া বা অন্য কোনও দ্বারা যা এখনও আবিষ্কৃত হয় নি।" [৩১]

সত্য হিসেবে বিবর্তন এবং তত্ত্ব নয়[সম্পাদনা]

প্রজন্ম ধরে চলা পরিবর্তনের দিকে গুরুত্ব দিয়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ বংশধর বিষয়ে কিছু ভাষ্যকার এর সমর্থনকারী প্রমাণের উপর জোর দিয়েছেন যে বিবর্তন একটি সত্য। এবং যুক্তি দিয়েছেন যে এখানে “তত্ত্ব” শব্দটি উপযুক্ত নয়:

  • রিচার্ড লিওন্টিন লিখেছিলেন, "বিবর্তন প্রক্রিয়াটির শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট করে বলা উচিত যে বিবর্তন তত্ত্ব নয়, সত্য । বিশেষত যারা সৃষ্টিবাদীদের ভুল ব্যাখ্যা জানে" [৩২]
  • রিচার্ড ডকিনস বলেছেন, "সমস্ত বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের সত্যতা নিয়ে একমত। এটি সত্য যে আমরা গরিলা, ক্যাঙ্গারু, স্টারফিশ এবং ব্যাকটেরিয়ার জ্ঞাতি ভাই। বিবর্তন সূর্যের উত্তাপের মতোই বাস্তব। এটি কোনও তত্ত্ব নয় এবং করুণার প্রয়োজনে দার্শনিকভাবে একে তত্ত্ব বলে বিভ্রান্ত করা বন্ধ করা উচিত। বিবর্তন একটি সত্য।" [৩৩]
  • নীল ক্যাম্পবেল তাঁর ১৯৯০ সালের জীববিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে লিখেছিলেন, "আজ প্রায় সমস্ত জীববিজ্ঞানী স্বীকৃতি দেন যে বিবর্তন একটি সত্য। জীবনের বিকাশের ব্যাখ্যার জন্য বিভিন্ন মডেল ছাড়া অন্য কোথাও বিবর্তন “তত্ত্ব” হিসেবে উপযুক্ত নয়... জীবনের বিকাশ সম্পর্কিত প্রশ্নে বিবর্তনের সত্যতার উপরে কোনো মতানৈক্য নেই এটা বোঝা দরকার। [৩৪]

বিবর্তন তত্ত্বের সমষ্টি হিসেবে, সত্য নয়[সম্পাদনা]

বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী কর্ক জে ফিৎজুঘ [৩৫] লিখেছেন যে প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান “সাবধানে এবং সঠিকভাবে” বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যখন বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান সৃষ্টিশীলবাদী এবং বুদ্ধিদীপ্ত ডিজাইনের প্রবক্তার প্রশ্নের মুখে থাকে। ফিৎজুঘ লিখেছেন যে যখন সত্যতা প্রকৃতিরই একটি ধরন, তত্ত্ব সেই ধরনগুলোর আন্তঃসম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে।

ফিৎজুঘ স্বীকৃতি দিয়েছেন যে "তত্ত্ব" বনাম "সত্য" বিতর্কটি আসলে শব্দার্থবিদ্যার মধ্যে একটি। তবুও তিনি দাবি করেন যে বিবর্তনকে "সত্য" হিসাবে উল্লেখ করা টেকনিক্যালি ভুল এবং বিজ্ঞানের ‘প্রাথমিক লক্ষ্য’ থেকে দূরে সরে যাওয়া, যা হচ্ছে তত্ত্ব ও হাইপোথিসিসের সমালোচনামূলক মূল্যায়নের মাধ্যমে ক্রমাগত জ্ঞানার্জন করা।" ফিজহুগ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে বিবর্তনের "নিশ্চয়তা" কোনও বিবর্তনীয় তত্ত্ব বা অনুমানকে সত্যের স্তরে উন্নীত করে না। [৩৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Gould, Stephen Jay (1981) "Evolution as Fact and Theory" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে Discover 2 (May): 34-37; Reprinted in Hen's Teeth and Horse's Toes New York: W. W. Norton, 1994, pp. 253-262.
  2. স্টিফেন ডব্লিউ. হকিং, অনুবাদক: সাখাওয়াত হোসেন "কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস" দি স্কাই পাবলিশার্স, ঢাকা (মুদ্রণ: ২০০৯), pp 20
  3. Coyne 2009
  4. Mayr 1982
  5. Wright 1984
  6. Futuyma 1998
  7. Moran, Laurence (১৯৯৩)। "What is Evolution?"TalkOrigins Archive। The TalkOrigins Foundation, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-১৯ 
  8. Thomson, Keith Stewart (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর ১৯৮২)। "Marginalia: The meanings of evolution": 529–531। জেস্টোর 27851662 
  9. Moran, Laurence (১৯৯৩)। "Evolution is a Fact and a Theory"TalkOrigins Archive। The TalkOrigins Foundation, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-১৯ 
  10. Spencer, Herbert (জানুয়ারি–এপ্রিল ১৮৫৭)। "Progress: its Law and Cause" (পিডিএফ)। New Series: 446। ওসিএলসি 26747836। ২০১৫-০১-১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-১৬ 
  11. Spencer 1865
  12. James 1911
  13. Brady, Michael (মার্চ ১২, ২০১১)। Evolutionary Opponents: William James and Herbert Spencer। এপ্রিল ৩, ২০১৬ তারিখে মূল (DOC) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১০  Paper presented at the 38th Annual Meeting.
  14. WordNet 
  15. Views of the National Park Service Glossary 
  16. Webster's Encyclopedic Unabridged Dictionary of the English Language (1996) gives a third meaning of the word "fact" as "(3) A truth known by actual experience or observation; something known to be true: ‘Scientists gather facts about plant growth.’"
  17. Dawkins, Richard; Coyne, Jerry (সেপ্টেম্বর ১, ২০০৫)। "One side can be wrong"The Guardian। London: Guardian Media Group। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-১৬ 
  18. Muller, Hermann Joseph (এপ্রিল ১৯৫৯)। "One Hundred Years Without Darwinism Are Enough": 304–305। ডিওআই:10.1111/j.1949-8594.1959.tb08235.x। ২০১৬-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-০৭  Reprinted in: Zetterberg 1983
  19. NAS 1999, p. 28
  20. Gould 1981, citing Darwin, Charles (১৮৭১)। The Descent of Man, and Selection in Relation to Sex। পৃষ্ঠা 152–153।  অজানা প্যারামিটার |শিরোনাম-সংযোগ= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) The book is available from The Complete Work of Charles Darwin Online. Retrieved 2015-01-17.
  21. Wilkins, John S. (১৯৯৭)। "Evolution and Philosophy: Is Evolution Science, and What Does 'Science' Mean?"TalkOrigins Archive। The TalkOrigins Foundation, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৭ 
  22. NAS 1999, p. 2
  23. van Wyhe, John (মে ২২, ২০০৭)। "Mind the gap: Did Darwin avoid publishing his theory for many years?": 177–205। ডিওআই:10.1098/rsnr.2006.0171। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-১৭ 
  24. Bock, Walter J. (মে ২০০৭)। "Explanations in evolutionary theory": 89–103। ডিওআই:10.1111/j.1439-0469.2007.00412.x 
  25. Fitzhugh, Kirk (জানুয়ারি ২০০৮)। "Fact, theory, test and evolution" (পিডিএফ): 109–113। ডিওআই:10.1111/j.1463-6409.2007.00308.x 
  26. Wilson 1998
  27. Robinson, Bruce A.। "Is the theory of evolution merely a 'theory'?"Religioustolerance.orgOntario Consultants on Religious Tolerance। ২০০০-১০-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১৮ 
  28. Miller 2007
  29. Mayr 1988
  30. Wells, Huxley এবং Wells 1931
  31. Gould 1981
  32. Lewontin, Richard C. (সেপ্টেম্বর ১৯৮১)। "Evolution/Creation Debate: A Time for Truth": 559। ডিওআই:10.1093/bioscience/31.8.559  Reprinted in: Zetterberg 1983
  33. Dawkins, Richard (ডিসেম্বর ২০০৫)। "The Illusion of Design": 35–37। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-১৯ 
  34. Campbell 1990
  35. "Recent Research by J. Kirk Fitzhugh, Ph.D."Polychaetous Annelids Research StudiesNatural History Museum of Los Angeles County। ২০১৬-০৪-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-১৪ 
  36. Fitzhugh, Kirk (২০০৭)। "Fact, theory, test and evolution": 071027215047001––। ডিওআই:10.1111/j.1463-6409.2007.00308.x