গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল
গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৬ জানুয়ারি ১৮৮৪ | (বয়স ৬১)
মাতৃশিক্ষায়তন | ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | জিনতত্ত্ব আবিষ্কার |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | জিনতত্ত্ব |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | বর্নোর সেন্ট টমাস মঠ |
গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল বা গ্রেগর জোহান মেন্ডেল (২০ জুলাই ১৮২২ – ৬ জানুয়ারী ১৮৮৪) ছিলেন একজন অস্ট্রিয়ার জীববিজ্ঞানী, ধর্মযাজক, আবহাওয়াবিদ ও গণিতজ্ঞ যার আবিষ্কারগুলি জেনেটিক্স ও বংশগতি বিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করেছিল, তাই তাকে প্রায়শই "জেনেটিক্সের জনক" বা "জিনতত্ত্ববিদ্যার জনক" বলে অভিহিত করা হয়। মেন্ডেল অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের (আজকের চেকোশ্লোভাকিয়ার অন্তর্ভুক্ত) হাইনিস নামক স্থানে এক জার্মান-ভাষী সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং আধুনিক বিজ্ঞানে জেনেটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে মরণোত্তর স্বীকৃতি লাভ করেন।[১] যদিও কৃষকরা সহস্রাব্দ ধরে জানত যে প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সংকরায়ন বা ক্রসব্রিডিং-এ কিছু কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যের পক্ষে হতে পারে, মেন্ডেল কর্তৃক তাঁর মটর গাছের পরীক্ষা ১৮৫৬ এবং ১৮৬৩ সালের মধ্যে পরিচালিত হয়, যা বংশগতির অনেক সূত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা এখন মেন্ডেলীয় বংশগতির সূত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[২][৩]
মেন্ডেল বিদ্যালয় শিক্ষার পর উচ্চশিক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে অধ্যয়ন শুরু করেন, কিন্তু আর্থিক কারণে তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি মাত্র একুশ বছর বয়সে ব্রানে (পূর্বে ব্রোনো) এক গির্জায় ধর্মযাজক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের জন্য যান এবং ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে পদার্থবিদ্যা, গনিত ও প্রকৃতিবিজ্ঞান অধ্যায়ন করেন। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রানে ফিরে আসেন ও একটি বিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা ও প্রকৃতিবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। মেন্ডেল বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পড়াশোনায় ততটা উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারেননি তথাপি এই সময়কালের অনুশীলন তাকে তাঁর পরবর্তীকালের গবেষণায় বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল।
মেন্ডেল মটর গাছের সাতটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করেছিলেন, যথাক্রমে: গাছের দৈর্ঘ্য, ফুলের রং, ফুলের অবস্থান, বীজের আকার, বীজপত্রের রং, শুঁটির আকার এবং কাঁচা শুঁটির রং। একটি উদাহরণ হিসাবে বীজের রং গ্রহণ করে মেন্ডেল দেখিয়েছিলেন যে, যখন একটি খাঁটি প্রজননকারী হলুদ বর্ণের মটর এবং একটি খাঁটি প্রজননকারী সবুজ বর্ণের মটরকে সংকরায়ন করা হয় তখন তাদের সন্তানরা সর্বদা হলুদ বর্ণের হয়। যাইহোক, পরবর্তী প্রজন্মে, সবুজ মটর ১টি সবুজ থেকে ৩টি হলুদের অনুপাতে পুনরায় আবির্ভূত হয়। এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা করার জন্য, মেন্ডেল নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যে "প্রকট" এবং "প্রছন্ন" শব্দগুলি ব্যবহার করেছিলেন। পূর্ববর্তী উদাহরণে, সবুজ বৈশিষ্ট্য, যা প্রথম অপত্য জনুর মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে বলে মনে হয়, এটি অপ্রত্যাশিত এবং হলুদের উপর প্রভাবশালী। তিনি ১৮৬৬ সালে তার কাজ প্রকাশ করেন, অদৃশ্য "ফ্যাক্টর"-এর ক্রিয়া প্রদর্শন করে - যাকে এখন জিন বলা হয় - অনুমানযোগ্যভাবে একটি জীবের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে।
মেন্ডেলের কাজের গভীর তাৎপর্য বিংশ শতকের (তিন দশকেরও বেশি পরে) তার সূত্রের পুনঃআবিষ্কারের আগ পর্যন্ত স্বীকৃত পাইনি। চ্যারম্যাক, ডি ভ্রিস এবং কোরেন্স স্বাধীনভাবে মেন্ডেলের বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান ১৯০০ সালে পর যাচাই করেন, যা জেনেটিক্সের আধুনিক যুগের সূচনা করেছিল।[৪][৫]
জীবনী
[সম্পাদনা]মেন্ডেল হাইনৎসেনডর্ফ বাই ওড্রাউ, সাইলেসিয়া, অস্ট্রিয় সাম্রাজ্যের (বর্তমান হিনচিৎসে, চেক প্রজাতন্ত্র) এক জার্মান গোষ্ঠীভুক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মাতা ছিলেন আন্টন ও রোজিনে মেন্ডেল এবং তার দুটি বোন ছিল। তারা মেন্ডেল পরিবারের মালিকানাধীন ১৩০ বছরের পুরোনো খামারে বসবাস করতেন (মেন্ডেল যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেটি এখন মেন্ডেলের প্রতি উৎসর্গকৃত একটি জাদুঘর)[৬] এবং সেখানেই কাজ করতেন। শৈশবে মেন্ডেল উদ্যানপালক হিসেবে কাজ করেন এবং মৌমাছিপালনবিদ্যা শেখেন, অতঃপর ওলোমোউৎস শহরে অবস্থিত ফিলোসফিকাল ইন্সটিটিউটে ১৮৪০-১৮৪৩ সাল পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তার পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক ফ্রিডরিখ ফ্রাঞ্জের পরামর্শ অনুযায়ী ১৮৪৩ সালে তিনি ব্রুনের সেন্ট টমাস মঠে যোগদান করেন। সন্ন্যাসী জীবনের প্রারম্ভে তিনি তার নামের পূর্বে গ্রেগর অংশটি যুক্ত করেন। ১৮৫১ সালে তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান এবং ১৮৫৩ সালে মূলতঃ পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে মঠে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি তার পড়াশোনার খরচ বহন করার জন্য আর্থিকভাবেও লড়াই করেছিলেন এবং তার বোন থেরেশিয়া তাকে তার যৌতুক দিয়েছিলেন। পরে তিনি তার তিন ছেলেকে সাহায্য করেছিলেন, যাদের মধ্যে দুইজন ডাক্তার হয়েছিলেন।[৭]
তিনি আংশিকভাবে একজন সন্ন্যাসী হয়েছিলেন কারণ এটি তাকে নিজের জন্য অর্থ প্রদান না করেই শিক্ষা অর্জন করতে সুবিধা দিয়েছিল।[৮] একজন সংগ্রামী কৃষকের পুত্র হিসাবে, সন্ন্যাস জীবন, তার কথায়, তাকে "জীবিকার উপায় সম্পর্কে চিরস্থায়ী উদ্বেগ" থেকে রক্ষা করেছিল।[৯] জোহান মেন্ডেলের জন্ম যখন, তিনি অর্ডার অফ সেন্ট অগাস্টিনে যোগ দেন, তখন তাকে গ্রেগর (চেক ভাষায় Řehoř)[১০] নাম দেওয়া হয়।[৯]
মেন্ডেল যখন দর্শন অনুষদে প্রবেশ করেন, তখন প্রাকৃতিক ইতিহাস ও কৃষি বিভাগের প্রধান ছিলেন জোহান কার্ল নেসলার, যিনি উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিশেষ করে ভেড়ার বংশগত বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। তার পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ফ্রেডরিখ ফ্রাঞ্জের সুপারিশের ভিত্তিতে,[১১] মেন্ডেল ব্রুনে (বর্তমানে ব্রনো, চেক প্রজাতন্ত্র) অগাস্টিনিয়ান সেন্ট থমাস অ্যাবেতে প্রবেশ করেন এবং পুরোহিত হিসেবে তার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। মেন্ডেল একটি বিকল্প হাই স্কুল শিক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৮৫০ সালে, তিনি একটি প্রত্যয়িত উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য তার পরীক্ষার তিনটি অংশের শেষ মৌখিক অংশে ব্যর্থ হন। ১৮৫১ সালে, তাকে অ্যাবট Cyril František Napp পৃষ্ঠপোষকতায় অধ্যয়নের জন্য ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। যাতে তিনি আরও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পেতে পারেন। ভিয়েনায় তার পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন খ্রিস্টান ডপলার।[১২] মেন্ডেল ১৮৫৩ সালে প্রধানত পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসাবে তার মঠে ফিরে আসেন। ১৮৫৬ সালে, তিনি একজন প্রত্যয়িত শিক্ষক হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন এবং আবার মৌখিক অংশে ব্যর্থ হন।[১৩]
গ্রেগর মেন্ডেল, যিনি কিনা পরবর্তীতে জিনতত্ত্বের জনক হিসেবে পরিচিত হবেন, তার শিক্ষক ও সহকর্মীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মঠের বাগানে গবেষণা শুরু করেন। ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৩ পর্যন্ত মেন্ডেল প্রায় ২৯,০০০ মটরশুঁটি (অর্থাৎ, Pisum sativum) চাষ ও পরীক্ষা করেন। এই পর্যবেক্ষণগুলো থেকে তিনি লক্ষ্য করেন প্রতি চারটিতে একটি গাছ বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন অ্যালিল বিশিষ্ট, দুটি সংকর এবং একটি বিশুদ্ধ প্রকট অ্যালিল বিশিষ্ট। তার এই গবেষণা দুটি সাধারণীকরণের সূচনা ঘটায়- পৃথকীকরণ সূত্র এবং স্বাধীনভাবে সঞ্চারণ সূত্র, যা কিনা পরবর্তীতে মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র নামে পরিচিত হয়।
মেন্ডেল উদ্ভিদ সংকরণের পরীক্ষা নামক তার নিবন্ধটি ১৮৬৫ সালে মোরাভিয়ায় ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি অফ ব্রুনেতে দু'বার উপস্থপন করেন। [১৪] তার গবেষণা নিবন্ধটি ছিল পরিসংখ্যান ভিত্তিক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তার কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন এবং পরবর্তী পয়ত্রিশ বছরে তা কেবলমাত্র তিনবার উদ্ধৃত হয়। (এখানে লক্ষ্যণীয় যে, মানুষের ক্রমবিকাশ বইয়ের লেখক জ্যাকব ব্রুনোস্কির মতে আরেক যুগান্তকারী বিজ্ঞানী ডারউইন অনবহিত ছিলেন।) সে সময়ে তার গবেষণা প্রবন্ধটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও বর্তমানে তা জিনতত্ত্বের ভিত্তিমূলক রচনায় পরিণত হয়েছে।
মটরশুঁটি নিয়ে গবেষণা সমাপ্ত করার পর মেন্ডেল প্রাণীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং এ ক্ষেত্রে তিনি মৌমাছি বেছে নেন। তিনি এর একটি হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেন (অত্যন্ত হিংস্র হবার কারণে যা পরবর্তীতে ধ্বংস করে ফেলা হয়), কিন্তু তিনি এদের বংশগতির কোন বিন্যাস খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন, কারণ রাণী মৌমাছির প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করা ছিল দুঃসাধ্য একটি কাজ। তিনি কিছু নতুন উদ্ভিদ প্রজাতির বর্ণনা প্রদান করেন, রীতি অনুযায়ী যাদের প্রজাতিক নামের শেষে তার নাম যুক্ত আছে।
১৮৬৮ সালে মঠপ্রধান হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্তির পর প্রশাসনিক কাজের চাপে তার গবেষণা কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরোপের বিষয়ে সরকারের সাথে তার মতানৈক্যের পর থেকে।
প্রথম প্রথম মেন্ডেলের কাজ স্বীকৃতি পায়নি এবং তার মৃত্যুর পূর্বে তা সর্বগ্রহণযোগ্যও হয়নি। তখন মানুষজন ভাবতো ডারউইনের প্যানজেনেসিসই বংশগতির জন্যে দায়ী।
মেন্ডেল ৬ জানুয়ারি,১৮৮৪ তে ক্রনিক নেফ্রাইটিসে ভুগে মারা যান। চেক সংগীতজ্ঞ লিও জানাচেক তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অর্গ্যান বাজিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর করসংক্রান্ত বিতর্কের অবসান করতে তার সকল নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলা হয়।[১৫]
অবদানসমূহ
[সম্পাদনা]উদ্ভিদ সংকরায়ন উপর পরীক্ষা
[সম্পাদনা]মেন্ডেল, "আধুনিক জেনেটিক্সের জনক" হিসাবে পরিচিত, তিনি তার মঠের ২ হেক্টর (৪.৯ একর) পরীক্ষামূলক বাগানকে উদ্ভিদের বৈচিত্র্য অধ্যয়ন করতে বেছে নিয়েছিলেন।[১৬]
মটর গাছের সাথে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, মেন্ডেল সাতটি বৈশিষ্ট্য অধ্যয়ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন যা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের থেকে স্বাধীনভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বলে মনে হয়: বীজের আকৃতি, ফুলের রং, বীজপত্রের রং, শুঁটির আকৃতি, পাকা শুঁটির রং, ফুলের অবস্থান এবং গাছের উচ্চতা। তিনি প্রথমে বীজের আকৃতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন, যা হয় কৌণিক বা গোলাকার। ১৮৫৬ এবং ১৮৬৩ সালের মধ্যে মেন্ডেল প্রায় ২৮,০০০ গাছের চাষ ও পরীক্ষা করেছিলেন, যার বেশিরভাগই ছিল মটর গাছ (পিসুম স্যাটিভাম )।[১৭][১৮][১৯] এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন বিভিন্ন জাতের একে অপরের সাথে ক্রস করা হয়েছিল (যেমন, ছোট গাছের দ্বারা নিষিক্ত লম্বা গাছপালা), দ্বিতীয় প্রজন্মে, চারটি মটর গাছের মধ্যে একটিতে বিশুদ্ধ বংশবিস্তারকারী বৈশিষ্ট্য ছিল, চারটির মধ্যে দুটি হাইব্রিড ছিল, এবং চারজনের মধ্যে একজন ছিল শুদ্ধ বংশের প্রভাবশালী। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাকে দুটি সাধারণীকরণ করতে পরিচালিত করে, পৃথকীকরণের সূত্র এবং স্বাধীন বিন্যাস সূত্র, যা পরবর্তীতে মেন্ডেলের উত্তরাধিকার সূত্র হিসাবে পরিচিত হয়।[২০]
মেন্ডেলের কাজের প্রাথমিক সংবর্ধনা
[সম্পাদনা]১৮৬৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এবং ৮ মার্চ মোরাভিয়ার ব্রনোর ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির দুটি সভায় মেন্ডেল তার গবেষণাপত্র Versuche über Pflanzenhybriden (" উদ্ভিদ সংকরায়নের পরীক্ষা") উপস্থাপন করেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় দ্বারা উপেক্ষা করা হয়েছিল। ১৮৬৬ সালে যখন মেন্ডেলের গবেষণাপত্রটি ব্রুনের Verhandlungen des naturforschenden Vereines-এ প্রকাশিত হয়েছিল,[২১] তখন এটিকে উত্তরাধিকারের পরিবর্তে সংকরকরণ সম্পর্কে দেখা হয়েছিল, খুব কম প্রভাব ছিল এবং পরবর্তী পঁয়ত্রিশ বছরে প্রায় তিনবার উদ্ধৃত করা হয়েছিল। তার গবেষণাপত্রটি সেই সময়ে সমালোচিত হয়েছিল, কিন্তু এখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে বিবেচিত হয়।[২২] উল্লেখযোগ্যভাবে, চার্লস ডারউইন মেন্ডেলের গবেষণাপত্র সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, এবং ধারণা করা হয় যে তিনি যদি এটি সম্পর্কে সচেতন হতেন তবে জেনেটিক্স যেভাবে বর্তমানে বিদ্যমান তা হয়তো আরও আগে ধরে নিতে পারত।[২৩][২৪] মেন্ডেলের বৈজ্ঞানিক জীবনী এইভাবে অস্পষ্ট, অত্যন্ত আসল উদ্ভাবকদের তাদের প্রাপ্য মনোযোগ পেতে ব্যর্থতার উদাহরণ প্রদান করে।[২৫] [২৬]
মেন্ডেলের কাজ পুনরুদ্ধার
[সম্পাদনা]বিংশ শতাব্দীর পূর্বে মেন্ডেলের কাজের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। ১৯০০ সালে হুগো দ্যা ভ্রিস, কার্ল করেন্স ও এরিক ভন চেমার্ক মেন্ডেলের সূত্র পুনরাবিষ্কার করেন। দ্রুত মেন্ডেলের ফলাফলের প্রতিলিপি তৈরি ও জিনগত সম্পর্ক হিসেব করা হয়। যদিও তত্ত্বটি বহু ক্ষেত্রেই তখনো প্রয়োগ করা সম্ভব ছিল না ,তবু উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা তত্ত্বটি লুফে নিলেন, কারণ এটি বংশগতির জিনগত ব্যাখ্যা প্রদান করে, যা পূর্বের ফিনোটাপিক তত্ত্বে অনুপস্থিত ছিল। এই পরবর্তী তত্ত্বটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুসারী ছিল কার্ল পিয়ারসন ও ডব্লু.এফ.আর. ওয়েল্ডনের জীবনপরিসংখ্যানবাদী দল, যা কিনা ফিনোটাইপিক বৈচিত্রের পরিসংখ্যানগত পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এই দলটির কঠোরতম সমালোচক ছিলেন উইলিয়াম বেটসন, যিনি প্রারম্ভিক পর্যায়ে মেন্ডেলের তত্ত্বের সফলতা নিয়ে সম্ভবতঃ সর্বাধিক পরিমাণ লেখালেখি করেছেন (জীনতত্ত্ব এবং এ সংক্রান্ত অনেক পরিভাষাই তার তৈরি করা)। জীবনপরিসংখ্যানবাদী ও মেন্ডেলবাদীদের এই দ্বন্দ্ব বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই শতক ধরে চলে, যখন জীবনপরিসংখ্যানবাদী গাণিতিক ও পরিসাংখ্যিক কড়াকড়ির দাবি করছিলেন আর মেন্ডেলবাদীরা জীববিজ্ঞানের গভীরতর উপলব্ধির দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত এ দুটি পদ্ধতিই একত্রিত হয়ে বিবর্তন জীববিজ্ঞানের আধুনিক সংশ্লেষের জন্ম হয়, যা ১৯১৮ সালে বিশেষত আর.এ.ফিশার কর্তৃক তৈরি হয়।
মেন্ডেলের পরীক্ষার ফলাফল পরবর্তীকালে বহু বিতর্কের জন্ম দেয়। [২৭][২৮] ফিশার F2 অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রজন্মের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখতে পান তা বরাবর ৩ অনুপাত ১ হওয়া অযুক্তিযুক্ত। [২৯] অল্প সংখ্যক বিজ্ঞানীই মেন্ডেলের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক অসততার অভিযোগ করা হয়নি - তার পরীক্ষাগুলোর পুনরাবৃত্তি করে দেখা যায় তা তার অনুমিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ - ফলাফলগুলো অনেকের কাছেই ঘোলাটে মনে হয়, যদিও বলা হয়ে থাকে এটি নিশ্চিতকরণ পক্ষপাতের উদাহরণ। হতে পারে তিনি তার প্রারম্ভিক পর্যায়ে স্বল্প সংখ্যক নমুনা নিয়ে করা পরীক্ষাতে প্রায় ৩ অনুপাত ১ অনুপাতটি লক্ষ্য করেছিলেন এবং পরে এমনভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন যেন তা একটি সঠিক পূর্ন সাংখ্যিক অনুপাত প্রদান করে। কখনো এমনো বলা হয় তিনি তার পরীক্ষাগুলোর ফলাফল সম্পাদনা করেছিলেন এবং তার বাছাই করা সাতটি বৈশিষ্ট্য সাতটি ভিন্ন ক্রমজোড়ে থাকার ব্যাপারটিও ছিল অস্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে যে সব জিন নিয়ে মেন্ডেল গবেষণা চালিয়েছিলেন সেগুলো চারটি লিংকেজ গ্রুপে ছিলো এবং কেবল একটি জিন-জোড়া (সম্ভাব্য ২১ টি হতে) স্বাধীন সঞ্চারণ থেকে বিচ্যুত হতে পারত, মেন্ডেলের গবেষণায় ঐ জিনটি ছিলো না।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল - অলোমোকের স্মৃতিফলক
-
গ্রেগর ইয়োহান মেন্ডেল, "মেন্ডেলের উত্তরাধিকার তত্ত্বের মূলনীতি: একটি প্রমাণ" এর প্রচ্ছদ
-
ব্রুনের সেন্ট টমাস অগাস্টিনিয়ান মঠ
-
Bust of Mendel at মেন্ডেল ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ব্রুনে, চেক প্রজাতন্ত্র
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Klein, Jan; Klein, Norman (২০১৩)। Solitude of a Humble Genius - Gregor Johann Mendel: Volume 1: Formative Years (ইংরেজি ভাষায়)। Springer Berlin Heidelberg। পৃষ্ঠা ৯১–১০৩। আইএসবিএন 978-3-642-35254-6। ওসিএলসি 857364787।
- ↑ Schacherer, Joseph (২০১৬)। "Beyond the simplicity of Mendelian inheritance" (ইংরেজি ভাষায়): 284–288। ডিওআই:10.1016/j.crvi.2016.04.006 । পিএমআইডি 27344551।
- ↑ Schacherer, Joseph (২০১৬)। "Beyond the simplicity of Mendelian inheritance"। Comptes Rendus Biologies। ৩৩৯ (৭–৮): ২৮৪–২৮৮। আইএসএসএন 1768-3238। ডিওআই:10.1016/j.crvi.2016.04.006। পিএমআইডি 27344551।
- ↑ Gayon, Jean (২০১৬)। "From Mendel to epigenetics: History of genetics"। Comptes Rendus Biologies। ৩৩৯ (৭–৮): ২২৫–২৩০। আইএসএসএন 1768-3238। ডিওআই:10.1016/j.crvi.2016.05.009। পিএমআইডি 27263362।
- ↑ Corcos, Alain F.; Monaghan, Floyd V. (১৯৯০)। "Mendel's work and its rediscovery: A new perspective"। Critical Reviews in Plant Sciences। ৯ (৩): ১৯৭–২১২। আইএসএসএন 0735-2689। ডিওআই:10.1080/07352689009382287।
- ↑ Mendel, Gregor; Corcos, Alain F.; Monaghan, Floyd V. (১৯৯৩)। Gregor Mendel's Experiments on Plant Hybrids: A Guided Study (ইংরেজি ভাষায়)। Rutgers University Press। আইএসবিএন 978-0-8135-1921-0।
- ↑ Eckert-Wagner, Silvia (২০০৪)। Mendel und seine Erben: eine Spurensuche (জার্মান ভাষায়)। BoD – Books on Demand। পৃষ্ঠা ১১৩। আইএসবিএন 978-3-8334-1706-1।
- ↑ Henig, Robin Marantz (২০০০)। The monk in the garden : the lost and found genius of Gregor Mendel, the father of genetics। Internet Archive। Boston : Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা ১৯–২১। আইএসবিএন 978-0-395-97765-1। ওসিএলসি 43648512।
- ↑ ক খ Iltis, Hugo (১৯৪৩)। "Gregor Mendel and His Work"। The Scientific Monthly। ৫৬ (৫): ৪১৪–৪২৩। আইএসএসএন 0096-3771।
- ↑ Funeral card in Czech (Brno, 6.
- ↑ Hasan, Heather (২০০৫)। Mendel and the Laws of Genetics (ইংরেজি ভাষায়)। Rosen Publishing Group। পৃষ্ঠা ১৮৪২। আইএসবিএন 978-1-4042-0309-9।
- ↑ Fisher, R. A. (১৯৩৩)। "Mathematics of Inheritance"। Nature (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩২ (৩৩৪৮): ১০১২–১০১২। আইএসএসএন 1476-4687। ডিওআই:10.1038/1321012a0।
- ↑ "Online Museum Exhibition"। The Masaryk University Mendel Museum। ২১ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১০।
- ↑ MENDEL। Brno University of Technology।
- ↑ Windle, B.C.A. (১৯১১)। "Mendel, Mendelism"। Catholic Encyclopedia। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০২। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ "Mendel's Experiments on Peas"। The Masaryk University Mendel Museum। ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ Magner, Lois N. (১৩ আগষ্ট ২০০২)। A History of the Life Sciences, Revised and Expanded (ইংরেজি ভাষায়)। CRC Press। পৃষ্ঠা ৩৮০। আইএসবিএন 978-0-203-91100-6।
- ↑ Gros, Franc̜ois (১৯৯২)। The gene civilization। Internet Archive। New York : McGraw Hill। পৃষ্ঠা ২৮। আইএসবিএন 978-0-07-024963-9।
- ↑ Moore, Randy (২০০১)। "The "Rediscovery" of Mendel's Work" (পিডিএফ): ১৩–২৪। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Butler, John M. (২০০৯)। Fundamentals of Forensic DNA Typing (ইংরেজি ভাষায়)। Academic Press। পৃষ্ঠা ৩৪–৫। আইএসবিএন 978-0-08-096176-7।
- ↑ MENDEL। Brno University of Technology।
- ↑ Galton, D. J. (২০১২)। "Did Mendel falsify his data?"। QJM: monthly journal of the Association of Physicians। ১০৫ (২): ২১৫–২১৬। আইএসএসএন 1460-2393। ডিওআই:10.1093/qjmed/hcr195। পিএমআইডি 22006558।
- ↑ Lorenzano, Pablo (২০১১)। "What would have happened if Darwin had known Mendel (or Mendel's work)?"। History and Philosophy of the Life Sciences। ৩৩ (১): ৩–৪৯। আইএসএসএন 0391-9714। পিএমআইডি 21789954।
- ↑ Liu, Yongsheng (২০০৫)। "Darwin and Mendel: who was the pioneer of genetics?"। Rivista Di Biologia। ৯৮ (২): ৩০৫–৩২২। আইএসএসএন 0035-6050। পিএমআইডি 16180199।
- ↑ Nissani, Moti (১৯৯৫)। "The Plight of the Obscure Innovator in Science: A Few Reflections on Campanario's Note"। Social Studies of Science (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ (১): ১৬৫–১৮৩। আইএসএসএন 0306-3127। ডিওআই:10.1177/030631295025001008।
- ↑ Nissani, M. (১৯৯৫)। "The Plight of the Obscure Innovator in Science": 165–83। ডিওআই:10.1177/030631295025001008।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Carlson
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Hartl, Daniel L. (2007 March)। "Mud Sticks: On the Alleged Falsification of Mendel's Data"। Genetics। 175 (3): 975–979। পিএমআইডি 17384156। সংগ্রহের তারিখ 2008-08-08।
[The] allegation of deliberate falsification can finally be put to rest, because on closer analysis it has proved to be unsupported by convincing evidence.
অজানা প্যারামিটার|day=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Fisher, Maggie; Fisher, Celia; Fisher, Anne; Fisher, Jane; Fisher, Rosie; Fisher, Andy; Fisher, Paul (২০২২-০৩-০৪)। "Marie Gwendoline Fisher"। BMJ: o513। আইএসএসএন 1756-1833। ডিওআই:10.1136/bmj.o513।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Mendel's Paper in English
- Mendel Museum of Genetics
- Biography, bibliography and access to digital sources in the Virtual Laboratory of the Max Planck Institute for the History of Science
- 1913 Catholic Encyclopedia entry, "Mendel, Mendelism"
- Online Mendelian Inheritence in Man
- Augustinian Abbey of St. Thomas at Brno
- A photographic tour of St. Thomas' Abbey, Brno, Czech Republic
- Johann Gregor Mendel: Why his discoveries were ignored for 35 (72) years (জার্মান)
- This has the basics of Mendel and is more appropriate in style for a GCSE student
- "Gregor Mendel (1822-1884)"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-২২।
- "Biography of Gregor Mendel"। ২০০৮-০১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-২২।
- "Gregor Mendel: Planting the Seeds of Genetics"। ২০০৭-১০-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-২২।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |