নেছারউদ্দীন আহমদ
শাহ্ সূফী, কুতুবুল আলম আল্লামা নেছারুদ্দীন আহমদ | |
---|---|
![]() | |
প্রতিষ্ঠাতা পীর, ছারছিনা দরবার শরীফ | |
কাজের মেয়াদ ১৮৯০ – ১৯৫২ | |
পূর্বসূরী | পদ সৃষ্টি |
উত্তরসূরী | আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৮৭৩ গ্রাম: ছারছিনা, জেলা:পিরোজপুর, বিভাগ:বরিশাল। |
মৃত্যু | ৩১ জানুয়ারি, ১৯৫২ |
সমাধিস্থল | দরবার শরীফ, পিরোজপুর জেলা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ছাহেরা খাতুন |
পিতা | হাজী সদরুদ্দীন |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | হুগলি মাদ্রাসা মাদ্রাসা-ই আলিয়া, কলকাতা |
ধর্ম | ইসলাম |
আল্লামা নেছারুদ্দীন আহমদ (১৮৭৩-১৯৫২) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব, ধর্ম প্রচারক, পীর ছিলেন।[১] তিনি ফুরফুরা শরীফের পীর আবু বকর সিদ্দিকীর খলিফা ছিলেন।[২]তিনি পিরোজপুরের ছারছিনা গ্রামে বাংলাদেশের অন্যতম ইসলামী বিদ্যাপীঠ ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।[৩] এছাড়াও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন।[৪] বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে তিনি ব্যাপক অবদান রেখেছেন।
জন্ম ও বাল্যকাল[সম্পাদনা]
অবিভক্ত বাংলার অন্তর্গত তৎকালীন সময়ের বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ নামক স্থানের ছারছিনা গ্রামে (বর্তমানে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানা) জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম হাজী সদরুদ্দীন, তার দাদার নাম জহির উদ্দিন।
শৈশব কাল[সম্পাদনা]
শৈশব থেকেই নেছারুদ্দীন আহমদ রহ. ছিলেন গম্ভীর ও চিন্তাশীল প্রকৃতির, তিনি ছোটবেলা থেকেই খেলা-ধুলা পছন্দ করতেন না। তিনি নিজ গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সরল, সুবোধ ও ধর্মভীরু হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন।
বাল্যকালেই বিবাহ ও পিতৃবিয়োগ[সম্পাদনা]
নেছারুদ্দীনের বয়স যখন ১২ বছর, তখন তার পিতা হাজী সদরুদ্দীন মক্কায় হজে যেতে চান, এবং হজ্বে যাওয়ার পূর্বে একমাত্র ছেলেকে বিবাহ দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নেছারুদ্দীনকে ১৮৮৮ সালে প্রতিবেশী দলীলউদ্দীন সিকদারের কন্যা ছাহেরা খাতুনের সাথে বিবাহ দেন। এবং হাজী সদরুদ্দীন মক্কা শরীফেই মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার দাদা জহির উদ্দিন জীবিত ছিলেন। এরপরে নেছারউদ্দীন মায়ের পরিচর্যাতে বড় হতে থাকেন। পরবর্তী জীবনে ১৯০৫ সালে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার কুশলা গ্রামের আব্দুল ওয়াফী চৌধুরীর কন্যাকে বিয়ে করেন।
শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]
পড়াশোনার জন্য তার মা তাকে মাদারীপুর শহরে পাঠান। উল্লেখ্য যে, তখন গোটা বরিশাল জেলায় একটি মাদরাসাও ছিল না। তিনি মাদারীপুরের নিকটেই মাদারীপুর প্রাথমিক ইসলামিয়া মাদরাসায় প্রাথমিক পড়া শেষ করেন, এবং এই মাদ্রাসা থেকেই দাখিল পাশ করেন। এরপর নেছারউদ্দীন আহমদ ঢাকার হাম্মাদিয়া মাদরাসায় আলিম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর তিনি কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় সম্ভবত ফাজিল বা কামিল শেষ করেছিলেন। এরপর তিনি হুগলি মাদ্রাসায় ভর্তি হন, এবং এখানেই লেখাপড়া শেষ করেন।[৫]
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
খিলাফাত লাভ[সম্পাদনা]
তিনি শিক্ষাজীবনে হুগলি মাদ্রাসায় পড়ার সময় তৎকালীন ইসলামি আধ্যাত্মিক চিন্তাবিদ ও শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ফুরফুরা শরিফের পীর আল্লামা মোহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিকীর সাক্ষাত লাভ করেন। তখন ১৮৯৫ সালে নেছারুদ্দীন আহমদ তার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন। তিনি ধীরে ধীরে মোহাম্মাদ আবু বকর সিদ্দীকি পীরের আস্থা অর্জন করেন এবং পরবর্তী খেলাফত তিনিই অর্জন করেন।
মক্কা শরীফ গমন[সম্পাদনা]
তিনি খিলাফাত লাভের পর নিজ এলাকা নেছারাবাদ ফিরে আসেন। তিনি মক্কা শরীফে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, কিন্তু এর মধ্যে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। রোগ মুক্তির পর তিনি মক্কা শরীফে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করেন। পরিবর্তীতে ১৯০১ সালে পরিবারের সকলকে সঙ্গে নিয়ে জাহাজ যোগে হজ্ব পালন করার জন্য মক্কা শরীফ গমন করেন। মক্কা শরীফে অবস্থানকালেই তার স্ত্রী ছাহেরা খাতুন ও বড় পুত্র শাহ মোহাম্মদ মুজাহার মৃত্যুবরণ করেন। নেছারুদ্দীন আহমদ হজ্ব পালন শেষে দেশে ফিরে নিজ পীর আবু বকর সিদ্দিকীর নিকটে চলে যান।
ইসলামের অবদান[সম্পাদনা]
নেছারউদ্দীন তার এলাকার মানুষের নিকট সন্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইসলামী মাদ্রাসা, খানকাহ শরীফ, ইসলামী জালছা প্রতিষ্ঠানসব বহু কিছু প্রতিষ্ঠা করেছেন। দ্বীন প্রচারের জন্য তিনি ১৯০৫ সালে গোলপাতার কুতুবখানা নির্মাণ করেন। ১৯১৩ সালে তিনি কেরাতিয়া মাদ্রাসা বা মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৫ সালে এই মাদ্রাসার নাম হয়, ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসা, যা পিরোজপুর জেলায় অবস্থিত। নেছারউদ্দীন তার সম্পত্তি ১৯৩৪ সালে মাদ্রাসার জন্য ওয়াকফ করে দেন। এই মাদ্রাসাই পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে শেরে বাংলার চেষ্টায় কলকাতার বাইরে প্রথম টাইটেল ক্লাস খোলার অনুমতি পায়।[৬]
তিনি ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান দাবির প্রেক্ষিতে কলকাতা মোহাম্মদ আলী পার্কে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত ওলামা কনফারেন্সের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে সিলেট রেফারেন্ডামে কাজ করার জন্য তার বড় ছেলে মাওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ এর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি টিম প্রেরণ করেন, তাদের মধ্যে আযিযুর রহমান নেছারাবাদী ছিলেন। পাকিস্তানের ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য ছারছিনাতে সর্বদলীয় ওলামা কনফারেন্স করে ২২ দফা রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়।
তার চলা-ফেরা, কথা-বার্তা পোষাক, আমল-আখলাক প্রভৃতি বিষয় উক্ত অঞ্চলের মানুষের উপর প্রভাব ফেলেছিলো, তিনি সবসময় ইসলামী গোমরাহ, ধর্মীয় কুসংস্কার, স্থানীয় কোন্দল প্রভৃতি দূরকরণের চেষ্টা করতেন।
প্রকাশনা[সম্পাদনা]
মানুষের মাঝে ইলমে দ্বীনের প্রচারের পাশাপাশি লেখালেখির কাজও করেন। তিনি কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ সকল বইসমুহ তিনি মাস্টার এমদাদ আলীসহ কতিপয় ব্যাক্তির সহায়তায় লিখেছেন।
- তরিকুল ইসলাম (বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ফতোয়ার কিতাব )
- ফুরফুরা পীর সাহেবের অছিয়তনামা
- পাক্ষিক তাবলীগ (ইসলামী পত্রিকা)
- মোছলেম রতদার
- ফুরফুরা পীর সাহেবের অছিয়তনামা
- তালিমে মারেফাত
- তাহকীকে বর্জখ
- খেলাফত আন্দোলন পদ্ধতি
- সমাজ উন্নতি
- মাওলানার উক্তি খন্ডন
- ছোবহে ছাদেক
- রদ্দে বদগুমান
- দাড়ি গোঁফ সমস্যা ও হক কথা
- নুরুন হেদায়েত ও বেদাত ফকিরের ধোকা ভঞ্জন
- ফতোয়ায়ে ছিদ্দিকীয়া
- নারী ও পর্দা
- জুমার অকাট্য দলীল প্রভৃতি
মৃত্যু[সম্পাদনা]
১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন। তবে কেউ কেউ বলেন ১৯৫২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারে মৃত্যু বরণ করেন, সেইদিন মাঘ মাসের ১৬ তারিখ ছিলো। তার মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৮৭ বছর। তাকে ছারছিনার মসজিদের উত্তর পাশে দাফন করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীরে কামেল শাহ সূফী নেছারুদ্দীন আহমদ (র:) এর জীবনী"। শিক্ষক বাতায়ন।
- ↑ "নেছারউদ্দীন আহমদ (রহ.), শাহ সূফী, (শর্শিনার পির সাহেব) - Barisalpedia"। www.barisalpedia.net.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৪।
- ↑ "আল্লামা নেছারুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহির জীবন ও কর্ম"। jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৪।
- ↑ বরিশাল বিভাগের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড), সিরাজ উদ্দীন আহমেদ। ঢাকা, ২০১৫: ভাস্কর প্রকাশনী।
- ↑ Chandpur Times। "চাঁদপুর জেলা ছাত্র হিযবুল্লাহ সম্মেলন সম্পন্ন"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ইসলামী আদর্শ বিস্তারে ছারছীনার মরহুম পীর ছাহেবদ্বয়ের অবদান অবিস্মরণীয়-ছারছীনার পীর ছাহেব"। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৪।