দময়ন্তী বেশরা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দময়ন্তী বেশরা
জন্ম
ধিগিজ

দময়ন্তী বেশরা হলেন একজন সাঁওতালি লেখিকা এবং কবি। সাঁওতালি সাহিত্যে তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'সায় সাওহেদ'-এর জন্যে ২০০৯ সালে তিনি সাহিত্য অকাদেমী[১] পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০২০ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন[২][৩]

শৈশব এবং ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

দময়ন্তীর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বোবাইজোড়া গ্রামে রাজমল মাঝি এবং পুঙ্গি মাঝির ঘরে। সাঁওতালি ঐতিহ্য মেনে, দময়ন্তীর ডাকনাম রাখা হয়েছিল 'ধিগিজ', যা ছিল তাঁর দিদার নাম। বোবাইজোড়া গ্রামটি প্রধান জেলাশহর বারিপদা থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে। দময়ন্তীর শৈশবে তাঁর গ্রামে কোন প্রথাগত বিদ্যালয় ছিল না, কিন্তু কিছু সহৃদয় শিক্ষাব্রতীগণ সেখানে একটি আটচালাতে একটি পাঠশালা শুরু করেছিলেন। দময়ন্তীও অন্যদের সাথে সেই বিদ্যালয়েই পড়াশোনার শুরু করেন। পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ লক্ষ্য করে তাঁর নিঃসন্তান কাকা বুধন মাঝি এবং কাকিমা মণি মাঝি, যাঁরা দেউলি গ্রামে বসবাস করতেন, দময়ন্তীকে নিজেদের কাছে নিয়ে যান এবং সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। দেউলি বিদ্যালয়ে তিনি তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এবং গ্রাম থেকে ২ কিলোমিটার দূরে চান্ডিদা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে রায়রংপুর বিদ্যালয়ে, রায়রংপুর কন্যাশ্রমে থেকে তাঁর পড়াশোনা আরম্ভ হয়। ১৯৭৭ সালে সেখান থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এই সময়েই তাঁর কবিতা লেখার হাতেখড়ি। রায়রংপুর শহরে কোন মহাবিদ্যালয় না থাকায়, তিনি ভুবনেশ্বরে রমাদেবী মহিলা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ১৯৭৯ সালে আই এ এবং ১৯৮১ সালে ওড়িয়া সাহিত্যে সাম্মানিক সহ স্নাতক হন দময়ন্তী। ১৯৮৩ সালে ভুবনেশ্বরে উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ব বিশেষ বিষয় সহ স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৮৫ সালে সম্বলপুরে প্রথম চাকরিতে যোগ দেন তিনি। এরপর ১৯৮৭ সালে ওড়িশা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার মাধ্যমে বারিপদার মহারাজা পূর্ণচন্দ্র কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁর সাহিত্যিক জীবন বিকশিত হতে শুরু করে। ১৯৮৮ সালে, একজন সাহিত্যপ্রেমী ব্যাঙ্ক অফিসার, শ্রী গঙ্গাধর হাঁসদার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দময়ন্তী। ২০০৪ সালে পিএইচডি লাভ করেন তিনি। [১]

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

১৯৯০ সালে তাঁর প্রথম কবিতা "ওনোলিয়া" প্রকাশিত হয় 'ফাগুল কোয়েল' পত্রিকায়। পণ্ডিত রঘুনাথ মূর্মূর উপর আধারিত একটি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়। এই সময় তিনি সাঁওতালি এবং ওড়িয়া ভাষায় সাহিত্যকর্ম শুরু করেন। স্বামীর উৎসাহে ১৯৯৩ সালে তিনি ওড়িয়া সাহিত্যে এম ফিল সম্পূর্ণ করেন। এছাড়া তিনি তাঁর স্বামীর সাথে যৌথভাবে 'ভিগ সার' শিরোনামে একটি নাটক রচনা করেন। ১৯৯৪ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই 'জিভি ঝরনা' প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল সাঁওতালি ভাষায় রচিত প্রথম কোন মহিলা কবির কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের জন্যে তিনি 'সর্বভারতীয় সাঁওতাল লেখক সঙ্ঘ'-য়ের পক্ষ থেকে 'বর্ষসেরা লেখক' মনোনীত হন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রবন্ধ সংগ্রহ 'সাগেন সুনহেড' এবং আরো একটি কবিতার বই। ১৯৯৫ সালে তিনি বারিপদার মহাবিদ্যালয় থেকে ফুলবনির মহাবিদ্যালয়ে বদলি হয়ে যান। এই সময়েই তাঁর সাহিত্যিকজীবনের একটি বিপ্লব ঘটে যায়। ১৯৯৬ সালে ওড়িয়া ভাষায় পণ্ডিত রঘুনাথ মূর্মু শিরোনামে তাঁর বই প্রকাশিত হয়। ২০০৪ থেকে তিনি বহু কবিতা, প্রবন্ধ, সমালোচনা, ব্যাকরণ, সাঁওতালি ভাষার ইতিহাস ইত্যাদি রচনা করেছেন।

তিনি ২০১১ সালে প্রথম সাঁওতালি ভাষায় মহিলাদের পত্রিকা 'করম ডর' প্রকাশ করেন; যা এখনও প্রকাশিত হয়ে চলেছে।

রচিত বই[সম্পাদনা]

এখনো পর্যন্ত তিনি সাঁওতালি ভাষায় ১১টি এবং ওড়িয়া ভাষায় ৫টি বই রচনা করেছেন[১]

  • জিবি ঝরনা, ১৯৯৪, কবিতা
  • সাগেন সুনহেদ, ১৯৯৫, প্রবন্ধ
  • ও ওঠ ওগ ওই আর জুড়ি জিতা, ১৯৯৫, কবিতা
  • কুইন্ডি মিম, ২০০৪, শিশুদের কবিতা
  • গুরু গোমকেয়াগ জেনেল আর জানালাগ, ২০০৬, সমালোচনা
  • সায় সাহেদ, কবিতা, ২০০৬
  • সাঁওতালি সুনহেদ রেয়াগ নাগম, ২০০৭, সাঁওতালি ভাষার ইতিহাস
  • রনর তিপুলাগ, ২০০৮, সাঁওতালি ব্যকরণ
  • পার্সি সাওনটা সুনহেদ, ২০০৯, প্রবন্ধ
  • গিদ্রাভুলাও কাহিনী, ২০০৯, গল্প
  • রর সানেস, ২০১১, ভাষাতত্ব
  • রঘুনাথ মূর্মূ, ১৯৯৬, জীবনী
  • চল চম্পারুভঞ্জ দিশম, সাঁওতাল জনজাতির সাংস্কৃতিক পরম্পরা, ২০০৬
  • দামোদর ধারে ধারে সাঁওতাল সংস্কৃতির সূচীপত্র, ২০০৯
  • সমাজ ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপাথরে ময়ূরভঞ্জের সাঁওতাল, ২০১০
  • ঝুমরের কিছি গুমামরো ও অন্য প্রবন্ধ, ২০১২

সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Sahitya Akademi Meet The Author Damayanti Beshra" (পিডিএফ)Sahitya Akademi। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২০ 
  2. "Odisha's padma prides"। The New Indian Express। ২৬ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২০ 
  3. "Arun Jaitley, Sushma Swaraj, George Fernandes given Padma Vibhushan posthumously. Here's full list of Padma award recipients"The Economic Times। ২৬ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২০