তুগরল তুগান খান
তুগরল তুগান খান | |
---|---|
বিহারের গভর্নর | |
কাজের মেয়াদ ১২৩২ – ১২৪৬ | |
সার্বভৌম শাসক | শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ, রুকনউদ্দিন ফিরোজ |
পূর্বসূরী | মালিক সাইফুদ্দীন আইবেক |
বাংলার গভর্নর (লখনৌতি) | |
কাজের মেয়াদ ১২৩৬ – ১২৪৬ | |
সার্বভৌম শাসক | সুলতানা রাজিয়া |
পূর্বসূরী | মালিক সাইফুদ্দীন আইবেক, আউর খান আইবেক (দখলদার) |
উত্তরসূরী | তুগলক তামার খান |
তুগরল তুগান খান (ফার্সি: طغرل طوغان خان), দিল্লি সালতানাতের মামলুক রাজবংশের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১২৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিহারের এবং ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার (লখনৌতি) গভর্নর ছিলেন।[১]
জীবনী
[সম্পাদনা]তুগান খান খিতান বংশোদ্ভূত তুর্কি ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন দিল্লির সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের ক্রীতদাস। নিজ কর্মদক্ষতায় তিনি সুলতানের আস্থাভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। সর্বপ্রথম সুলতান তাকে বদায়ুনের শাসনভার দেন। পরবর্তীতে ১২৩২ সালে সুলতান তাকে বিহারের গভর্নর হিসেবে প্রেরণ করেন। একই সাথে মালিক সাইফুদ্দীন আইবেককে লখনৌতির (বাংলা) দায়িত্ব দেন।
ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর, মালিক সাইফুদ্দীন আইবেককে আউর খান আইবেক নামে তারই একজন বিদ্রোহী সভাসদ ১২৩৬ সালের এপ্রিল মাসে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করে বাংলার ক্ষমতা দখল করে। [২] কিন্তু বিহারের তৎকালীন শাসনকর্তা তুগরল তুগান খান আউর খানের এই ক্ষমতা দখল মেনে নেননি। তাই তিনি লখনৌতিতে আক্রমণ করেন এবং আউর খান আইবেক তার আক্রমণে পরাজিত এবং নিহত হয়। অতঃপর তিনি লখনৌতির (বাংলা) শাসনভার নিজের হাতে তুলে নিয়ে একই সাথে বাংলা ও বিহারের শাসকে পরিণত হন। [৩]
তারপর তিনি দিল্লির তৎকালীন শাসক সুলতানা রাজিয়ার নিকট বাংলার শাসক হিসেবে স্বীকৃতি পান। একই ধারাবাহিকতায় দিল্লির সিংহাসনে কোন নতুন সুলতান বসলেই তিনি তার জন্য নানা উপহার-উপঢৌকন পাঠিয়ে তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে তিনি দিল্লির সুলতানের সমর্থন আদায় করে নিতেন।[১]
বাংলার ক্ষমতা দখলের পর তিনি তার রাজ্যের পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আধিপত্য বিস্তারের চিন্তা না করে উত্তর ভারতের উত্তর ভারতের রাজ্য বিস্তারে ব্রতী হন। তাই তিনি তিনি ১২৪২ সালের সেপ্টেম্বরে ত্রিহুতে (উত্তর বিহার) সফল অভিযান পরিচালনা করে তা জয় করেন। কিছুদিন পরেই তিনি আরো পশ্চিম দিকে অগ্রসর হন। দিল্লি সালতানাত দিল্লি সালতানাতের ক্ষমতা দখল নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলে তিনি আরও সাহসের সাথে অগ্রসর হয়ে কারা (বর্তমান এলাহাবাদ) পর্যন্ত অগ্রসর হন। তিনি এলাহবাদে থাকতেই সুলতান আলাউদ্দিন মাসুদ শাহ দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তুগান খানের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে ১২৪৩ সালে উড়িষ্যার হিন্দু রাজা তৃতীয় অনঙ্গভীমের পুত্র প্রথম নরসিংহদেব দক্ষিণবঙ্গ আক্রমণ করে। তাই তুগান খান কারাতে সুলতানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং তাঁর নিকট নিকট মূল্যবান উপহার-উপঢৌকন সহ একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেন। অন্যদিকে তিনি ঐতিহাসিক মিনহাজকে নিয়ে জুন মাসে তার রাজধানী লখনৌতিতে ফিরে আসেন।
অতঃপর তিনি সুলতানের অনুমোদনক্রমে ১২৪৪ সালের এপ্রিলে উড়িষ্যা আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে তিনি ওড়িয়া সেনাবাহিনীকে লখনৌতিতে পরাজিত করেন এবং তাদেরকে তাড়া করে উড়িষ্যার অভ্যন্তরে ঢুকে কাটা সিন দুর্গ অধিকার করেন। কিন্তু মুসলিম সেনাবাহিনী যখন উড়িষ্যার অভ্যন্তরে এই বিজয় উদ্যাপন করছিল, তখন ওড়িয়া সেনারা পিছন দিক থেকে আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করে। ওড়িয়া সেনাবাহিনী বাংলার রাজধানী লখনৌতির সমস্ত পথ ধরে মুসলমানদের তাড়া করে এবং শহরটি অবরোধ করে। তারা কার্যত লখনৌতি দখল করে এর শাসনকর্তা কে হত্যা করে।
এই পরিস্থিতিতে তিনি পশ্চাদপসরণ করে সাহাযের জন্য দিল্লির সুলতানের নিকট প্রতিনিধি পাঠান। সুলতান মাসুদ শাহ তাতে সাড়া দিয়ে কারা-মানিকপুরের (বর্তমান এলাহাবাদ) গভর্নর মালিক কারা কাশ খান ও অওধের শাসক মালিক তামার খানকে সম্মিলিত বাহিনী সহ তুগান খানকে সাহায্য করার নির্দেশ দেন। কিন্তু দিল্লি সালতানাতের অনুমোদনক্রমে আসা অতিরিক্ত সৈন্যবাহিনীর ভয়ে ওড়িয়া বাহিনী পালিয়ে যায়।
উড়িষ্যা বাহিনীকে পরাজিত করার পর অযোধ্যার শাসক মালিক নিজেই লখনৌতির শাসনভার হস্তগত করার জন্য তুগরল তুগান খানকে চাপ দিতে থাকেন। তুগান খান তা মেনে না নিলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরপর কয়েকটি যুদ্ধে তুগরল তুগান খান পরাজিত হন। আর তামার খান লখনৌতি শহরে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। তারপর আরো কয়েকটি ছোটখাটো সংঘর্ষের পর তামার খান ও তুগান খানের মধ্যে ঐতিহাসিক মিনহাজের মধ্যস্থতায় সমঝোতা চুক্তি হয়।
এই চুক্তি অনুসারে তামার খান, তুগান খানের কাছ থেকে লখনৌতি ও বিহারের শাসনভার অধিকার করেন; এবং এর বিনিময় তুগান খানকে বিনা বাধায় তার লোকলস্কর এবং ধন সম্পদ নিয়ে লখনৌতি ত্যাগ করার সুযোগ দেন।
১২৪৫ সালের জুলাই মাসে তুগান খান দিল্লি পৌঁছে সুলতান মাসুদ শাহ-এর নিকট অভিযোগ করেন। কিন্তু তখন তিনি সিংহাসনের দুর্বলতার কারণে তোমার খানের এই নীতিবহির্ভূত ঔদ্ধত্য প্রতিহত করার ক্ষমতা তার ছিল না।
দিল্লি সালতানাতের পরবর্তী সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ তাকে অযোধ্যার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। যদিও ১২৭১ সালে তিনি লখনৌতির সহ-শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন।[৪]
পূর্বসূরী আউর খান আইবেক |
বাংলার মামলুক গভর্নর ১২৩৬ – ১২৪৬ |
উত্তরসূরী তুগলক তামার খান |
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ হোসেন, এম. দেলওয়ার। "তুগরল তুগান খান"। bn.banglapedia.org। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-৩০।
- ↑ আহমদ, এ.বি.এম শামসুদ্দীন। "মালিক সাইফুদ্দীন আইবক"। bn.banglapedia.org। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-৩০।
- ↑ আক্তার, নাসরীন । "আউর খান আইবক"। bn.banglapedia.org। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৩।
- ↑ Rajadhyaksha, P. L. Kessler and Abhijit। "Kingdoms of South Asia - Indian Kingdom of Bengal"। www.historyfiles.co.uk (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২৭।