তাসলিমা আখতার
তাসলিমা আখতার | |
---|---|
জন্ম | ১৯৭৪ (বয়স ৪৯–৫০) |
জাতীয়তা | বাংলাদেশ |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | স্নাতক |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | আলোকচিত্রী |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | চূড়ান্ত আলিঙ্গন |
আদি নিবাস | ঢাকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | জোনায়েদ সাকি |
পুরস্কার | ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড (২০১৪) |
ওয়েবসাইট | taslimaakhter |
তাসলিমা আখতার (জন্ম ১৯৭৪ সালে) একজন বাংলাদেশি শ্রমিক ও নারী অধিকারকর্মী এবং আলোকচিত্রী।[১] ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর প্রামাণ্যচিত্র সংগ্রহকালে তিনি একজন নারী ও পুরুষের একে অন্যকে আলিঙ্গরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা একটি চিত্র ধারণ করেন, যা এই ঘটনার ভয়াবহতার প্রতীকী ছবি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়।[২]
জীবনী
[সম্পাদনা]তাসলিমা আখতার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।[৩] তার ডাকনাম লিমা। তিনি পাঠশালা থেকে আলোকচিত্রে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ও জনপ্রশাসনে মাস্টার্স ও এম.ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন।[৪] বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের একজন সদস্য ছিলেন ও পরবর্তীতে তিনি সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হন।[৪] ২০০৬-০৮ বাংলাদেশী রাজনৈতিক সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি তার আলোকচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেন।[৪] ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ডের সময় যারা এ ঘটনার প্রামাণ্যচিত্র ধারণ করেছিলেন, তাসলিমা তাদের মধ্যে অন্যতম।[৪] তিনি বাংলাদেশের বেশ কিছু শহরে ও ভারতের নন্দীগ্রামে কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেন। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি ২০১০ সালে ম্যাগনাম ফাউন্ডেশনের বৃত্তি লাভ করেন।[৪] তার তোলা আলোকচিত্র বিশ্বের বেশ কিছু দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।[৪]
তাসলিমা বর্তমানে পাঠশালার আলোকচিত্র সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।[৫] তিনি নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিপ্লবী নারী সংহতি ও বামপন্থী দল গণসংহতি আন্দোলনের একজন কর্মী। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান হিসেবেও কাজ করছেন।[৫]
শেষ আলিঙ্গন
[সম্পাদনা]২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর পাঠশালা থেকে আখতার ও অন্যান্য আলোকচিত্রশিল্পীরা উদ্ধার কাজের পাশাপাশি[৫] মৃত ব্যক্তিদের জীবনী নথিভুক্ত করার চেষ্টা করে করছিলেন।[৪] পরবর্তীতে ঐ গল্পগুলো চব্বিশ এপ্রিল: হাজার প্রাণের চিৎকার শিরোনামের একটি বইয়ে প্রকাশ পায়।[৫] প্রকাশনাটি তাসলিমার গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়নের কাজ সম্পর্কিত ছিল।[৪] এই প্রক্রিয়ার সময়, তাসলিমা ভবনটি ধসে মারা যাওয়া একজন পুরুষ ও মহিলাকে চিত্রিত করেছিলেন, যারা একে অপরের সাথে আলিঙ্গনরত অবস্থায় ছিল।[৬] আখতার অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ছবিটির ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেননি।[৭][৮] এই আলোকচিত্রটি "অনন্ত আলিঙ্গন",[৬] হাজার স্বপ্নের মৃত্যু,[৯] শেষ আলিঙ্গন[১০] হিসেবে পরিচিতি পায়। ছবিটি ঘটনার ভয়াবহতার প্রতীক হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় ও বহু পুরস্কার লাভ করে। ভবন ধসের ঘটনায় ১১৩১ জন মৃত্যুবরণ করে।[৬] আলোকচিত্রটি অনলাইনেও যথেষ্ট সমালোচনা ও আলোচিত হয়, যার ফলে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো উচ্চমান মজুরী ও সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার চাপে পড়ে।[৬] আখতার বলেন, ‘আলোকচিত্রটি তার বিবেককে তাকে প্রায় সময় তাড়িয়ে বেড়ায়’।[৬][৭]
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]তাসলিমা আখতার ব্যক্তিগত জীবনে গণসংহতি আন্দোলন নামের একটি বামপন্থী সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[১১] তার পিতা ছিলেন অটোমোবাইল ও টেক্সটাইল ব্যবসায়ী সামসুল হুদা । তার মাতার নাম বেগম জীবুন্নেছা।
পুরস্কার
[সম্পাদনা]- জুলিয়া মার্গারেট ক্যামেরন পুরস্কারে দ্য লাইফ অ্যান্ড স্ট্রাগলস অব গার্মেন্ট ওয়ার্কারস (২০১০)-এর ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফির জন্য তৃতীয় পুরস্কার।[৩]
- টাইম ম্যাগাজিনে চূড়ান্ত আলিঙ্গন (২০১৩) ছবিটি ২০১৩ সালের দ্য ইয়ার ইন পিকচার্স শিরোনামে আলোচিত ১০টি ছবির মধ্যে প্রথম স্থান।[৩][৮]
- পঞ্চম ডালি আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন, চীন (২০১৩)-এ শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রী পুরস্কার [৩]
- ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড (২০১৪)[১২]
- বিশ্ব আলোকচিত্র সাংবাদিতকতা প্রতিযোগিতা ২০১-এ স্পট নিউজ বিভাগে একক আলোকচিত্র ক্যাটাগরিতে তৃতীয় পুরস্কার। [১৩]
- লিড একাডেমি পুরস্কার[১৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "পোশাকযোদ্ধার জীবন"। প্রথম আলো। ২০১৮-০৫-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯।
- ↑ "তাঁর ক্যামেরার মন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ "তাসলিমা আখতার" (ইংরেজি ভাষায়)। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ হোসেন, আনিকা (২৩ আগস্ট ২০১৪)। "ফটোগ্রাফি মাধ্যমে অ্যাক্টিভিজম/সক্রিয়তাবাদ"। dailystar.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ Prashad, Vijay (১২ অক্টোবর ২০১৫)। "Workers' yarns"। Himal magazine।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Roy, Sourav (৩১ মে ২০১৩)। "Why the 'Eternal Embrace' Photograph From Bangladesh Haunts Its Photographer the Most"। Huffington Post। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ "Haunting Dhaka disaster picture: A last embrace after clothes factor collapse that killed 950"। Mirror.co.uk। ১০ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ Kira Pollack, "TIME Picks the Top 10 Photos of 2013" Time (magazine), Accessed 16 November 2016
- ↑ "Photography Oxford festival 2014"। The Guardian। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Rana Plaza images win World Press Photo"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "জোনায়েদ সাকির ফেসবুক ও ইমেইল হ্যাক!"। দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯।
- ↑ "চোখের আলোয় দেখা"। সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯।
- ↑ "2014 Photo Contest"। World Press Photo। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ "আলোকচিত্রী ত্রয়ী"। বণিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯।