বিষয়বস্তুতে চলুন

তাসলিমা আখতার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তাসলিমা আখতার
উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাসলিমা আখতার (মে ২০১৯)।
জন্ম১৯৭৪ (বয়স ৪৯–৫০)
জাতীয়তা বাংলাদেশ
নাগরিকত্ববাংলাদেশী
শিক্ষাস্নাতক
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাআলোকচিত্রী
উল্লেখযোগ্য কর্ম
চূড়ান্ত আলিঙ্গন
আদি নিবাসঢাকা
দাম্পত্য সঙ্গীজোনায়েদ সাকি
পুরস্কারওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড (২০১৪)
ওয়েবসাইটtaslimaakhter.com

তাসলিমা আখতার (জন্ম ১৯৭৪ সালে) একজন বাংলাদেশি শ্রমিক ও নারী অধিকারকর্মী এবং আলোকচিত্রী[] ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর প্রামাণ্যচিত্র সংগ্রহকালে তিনি একজন নারী ও পুরুষের একে অন্যকে আলিঙ্গরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা একটি চিত্র ধারণ করেন, যা এই ঘটনার ভয়াবহতার প্রতীকী ছবি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়।[]

জীবনী

[সম্পাদনা]

তাসলিমা আখতার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।[] তার ডাকনাম লিমা। তিনি পাঠশালা থেকে আলোকচিত্রে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ও জনপ্রশাসনে মাস্টার্স ও এম.ফিল ডিগ্রী অর্জন করেন।[] বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের একজন সদস্য ছিলেন ও পরবর্তীতে তিনি সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হন।[] ২০০৬-০৮ বাংলাদেশী রাজনৈতিক সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি তার আলোকচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেন।[] ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ডের সময় যারা এ ঘটনার প্রামাণ্যচিত্র ধারণ করেছিলেন, তাসলিমা তাদের মধ্যে অন্যতম।[] তিনি বাংলাদেশের বেশ কিছু শহরে ও ভারতের নন্দীগ্রামে কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেন। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি ২০১০ সালে ম্যাগনাম ফাউন্ডেশনের বৃত্তি লাভ করেন।[] তার তোলা আলোকচিত্র বিশ্বের বেশ কিছু দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।[]

তাসলিমা বর্তমানে পাঠশালার আলোকচিত্র সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।[] তিনি নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিপ্লবী নারী সংহতি ও বামপন্থী দল গণসংহতি আন্দোলনের একজন কর্মী। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান হিসেবেও কাজ করছেন।[]

শেষ আলিঙ্গন

[সম্পাদনা]

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর পাঠশালা থেকে আখতার ও অন্যান্য আলোকচিত্রশিল্পীরা উদ্ধার কাজের পাশাপাশি[] মৃত ব্যক্তিদের জীবনী নথিভুক্ত করার চেষ্টা করে করছিলেন।[] পরবর্তীতে ঐ গল্পগুলো চব্বিশ এপ্রিল: হাজার প্রাণের চিৎকার শিরোনামের একটি বইয়ে প্রকাশ পায়।[] প্রকাশনাটি তাসলিমার গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়নের কাজ সম্পর্কিত ছিল।[] এই প্রক্রিয়ার সময়, তাসলিমা ভবনটি ধসে মারা যাওয়া একজন পুরুষ ও মহিলাকে চিত্রিত করেছিলেন, যারা একে অপরের সাথে আলিঙ্গনরত অবস্থায় ছিল।[] আখতার অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ছবিটির ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেননি।[][] এই আলোকচিত্রটি "অনন্ত আলিঙ্গন",[] হাজার স্বপ্নের মৃত্যু,[] শেষ আলিঙ্গন[১০] হিসেবে পরিচিতি পায়। ছবিটি ঘটনার ভয়াবহতার প্রতীক হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় ও বহু পুরস্কার লাভ করে। ভবন ধসের ঘটনায় ১১৩১ জন মৃত্যুবরণ করে।[] আলোকচিত্রটি অনলাইনেও যথেষ্ট সমালোচনা ও আলোচিত হয়, যার ফলে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো উচ্চমান মজুরী ও সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার চাপে পড়ে।[] আখতার বলেন, ‘আলোকচিত্রটি তার বিবেককে তাকে প্রায় সময় তাড়িয়ে বেড়ায়’।[][]

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

তাসলিমা আখতার ব্যক্তিগত জীবনে গণসংহতি আন্দোলন নামের একটি বামপন্থী সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[১১] তার পিতা ছিলেন অটোমোবাইল ও টেক্সটাইল ব্যবসায়ী সামসুল হুদা । তার মাতার নাম বেগম জীবুন্নেছা।

পুরস্কার

[সম্পাদনা]
  • জুলিয়া মার্গারেট ক্যামেরন পুরস্কারে দ্য লাইফ অ্যান্ড স্ট্রাগলস অব গার্মেন্ট ওয়ার্কারস (২০১০)-এর ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফির জন্য তৃতীয় পুরস্কার।[]
  • টাইম ম্যাগাজিনে চূড়ান্ত আলিঙ্গন (২০১৩) ছবিটি ২০১৩ সালের দ্য ইয়ার ইন পিকচার্স শিরোনামে আলোচিত ১০টি ছবির মধ্যে প্রথম স্থান।[][]
  • পঞ্চম ডালি আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন, চীন (২০১৩)-এ শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রী পুরস্কার []
  • ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড (২০১৪)[১২]
  • বিশ্ব আলোকচিত্র সাংবাদিতকতা প্রতিযোগিতা ২০১-এ স্পট নিউজ বিভাগে একক আলোকচিত্র ক্যাটাগরিতে তৃতীয় পুরস্কার। [১৩]
  • লিড একাডেমি পুরস্কার[১৪]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "পোশাকযোদ্ধার জীবন"প্রথম আলো। ২০১৮-০৫-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯ 
  2. "তাঁর ক্যামেরার মন"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯ 
  3. "তাসলিমা আখতার" (ইংরেজি ভাষায়)। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬ 
  4. হোসেন, আনিকা (২৩ আগস্ট ২০১৪)। "ফটোগ্রাফি মাধ্যমে অ্যাক্টিভিজম/সক্রিয়তাবাদ"dailystar.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬ 
  5. Prashad, Vijay (১২ অক্টোবর ২০১৫)। "Workers' yarns"Himal magazine 
  6. Roy, Sourav (৩১ মে ২০১৩)। "Why the 'Eternal Embrace' Photograph From Bangladesh Haunts Its Photographer the Most"Huffington Post। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬ 
  7. "Haunting Dhaka disaster picture: A last embrace after clothes factor collapse that killed 950"Mirror.co.uk। ১০ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬ 
  8. Kira Pollack, "TIME Picks the Top 10 Photos of 2013" Time (magazine), Accessed 16 November 2016
  9. "Photography Oxford festival 2014"The Guardian। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬ 
  10. "Rana Plaza images win World Press Photo"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। 
  11. "জোনায়েদ সাকির ফেসবুক ও ইমেইল হ্যাক!"দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯ 
  12. "চোখের আলোয় দেখা"সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯ 
  13. "2014 Photo Contest"World Press Photo। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৬ 
  14. "আলোকচিত্রী ত্রয়ী"বণিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৯