তড়িৎ বিভব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তড়িৎ বিভব
সাধারণ প্রতীক
V, φ
এসআই এককভোল্ট
অন্যান্য একক
স্ট্যাটভোল্ট
এসআই মৌলিক এককেV = কেজি মি−১ সে−৩
সংকীর্ণ এবং ব্যাপক বৈশিষ্ট্য?হ্যাঁ
মাত্রাভর দৈর্ঘ্য সময়−৩ I−১

তড়িৎ বিভব (একে তড়িৎ বিভব ক্ষেত্র, বিভব বা স্থিরতড়িৎ বিভব বলা হয়) হল কোনও ত্বরণ না ঘটিয়ে ক্ষেত্রের অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট বিন্দুতে একটি অন্য বিন্দু থেকে একক আধানকে স্থানান্তরিত করার জন্য যে কাজ করতে হয় তার পরিমাণ। সাধারণত, এই অন্য বিন্দুটি হল ভূমি বা অসীমে কোন বিন্দু, যদিও যে কোনও বিন্দু ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে করা যাক, তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে বিভব V । সুতরাং, অসীম দূরত্ব থেকে ধনাত্মক আধানকে ওই বিন্দুতে আনতে কৃত কার্য = W । অতএব অসীম দূরত্ব থেকে q পরিমাণ আধানকে ওই বিন্দুতে আনতে কৃত কার্য,

        W = V×q
 অর্থাৎ, সম্পাদিত কার্য = বিভব × আধান

এই কার্যই আধানকে তড়িৎ স্থিতিশক্তি রূপে সঞ্চিত থাকে। অতএব, তড়িৎ স্থিতিশক্তি = বিভব × আধান কোন পরিবাহীকে তড়িতাহিত করার পর অর্জিত যে ক্ষমতার সাহায্যে ঐ পরিবাহী অন্য বস্তুকে তড়িৎ প্রদান করতে কিংবা অন্য বস্তু থেকে তড়িৎ গ্রহণ করতে পারে সেই ক্ষমতাকে তার তড়িৎ বিভব বলে। সুতরাং তড়িৎ বিভব হচ্ছে আহিত পরিবাহকের তড়িৎ অবস্থা, এবং বিভবের উপরেই নির্ভর করে ঐ পরিবাহকটিকে অন্য পরিবাহকের সাথে সংযুক্ত করলে তা আধান দেবে না নেবে। দুটি পরিবাহকের মধ্যে আধানের প্রবাহ ঐ পরিবাহকদুটিতে আধানের পরিমাণের উপরে নির্ভর করে না, বরং তা নির্ভর করে পরিবাহক দুটির বিভবের উপরে। আবার তাপমাত্রার সাথে তুলনা করে বলা যায়, কোন বস্তুর পৃষ্ঠতলের একক ক্ষেত্রফলে যে পরিমাণ অস্থিতিশীল ধনাত্বক বা ঋনাত্বক চার্জ বা শূন্য চার্জ উপস্থিত থাকে তাকে ঐ সম্পূর্ণ বস্তুর তড়িৎ বিভব বা চার্জমাত্রা বা আধানমাত্রা বলে। অর্থাৎ বিভব হল কোন বস্তুর চার্জের ঘনত্ব।

                                                                                       কোন বস্তু অপর বস্তু থেকে তড়িৎ গ্রহণ করবে না প্রদান করবে তা নির্ভর করে ঐ বস্তু দুটির বিভব পার্থক্যের উপরে। মূলতঃ এই বিভব পার্থক্যই হলো এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে অথবা কোন পরিবাহীর দুটি বিন্দুর মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের মূল চালিকাশক্তি। একটি আদর্শ মাল্টিমিটার দ্বারা তড়িৎ পার্থক্য সরাসরি পরিমাপ করা যায়।                               
তড়িৎ পার্থক্য পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত ডিজিটাল মাল্টিমিটার।
                                                                                           চিরায়ত স্থির তড়িৎ বিজ্ঞান অনুসারে, স্থিরতড়িৎ ক্ষেত্র একটি সদিক রাশি (ভেক্টর পরিমাপ), যাকে স্থিরতড়িৎ বিভবের নতিমাত্রা বা নতির পরিমাণ দিয়ে প্রকাশ করা হয়, যা একটি স্কেলার পরিমাপ এবং যাকে V বা  φ  দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।[১] যে কোনও স্থানে একটি আধানযুক্ত কণার তড়িৎ বিভব শক্তিকে (জুল দ্বারা মাপা হয়) সেই কণার আধান (কুলম্ব দ্বারা মাপা হয়) দিয়ে ভাগ করলে এর মান পাওয়া যায়। যে ভাগফল পাওয়া যায়,  সেটি ঐ বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য। সংক্ষেপে, তড়িৎ বিভব হল প্রতি একক আধানে তড়িৎ বিভব শক্তি।                                    
                                                                                            এই মানটি স্থির (সময়-অপরিবর্তিত) বা গতিশীল (সময়ের সাথে পরিবর্তিত) তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গণনা করা যায় এবং এর একক জুল প্রতি কুলম্ব (J C−1), বা ভোল্ট (V)। অসীমের তড়িৎ বিভবকে শূন্য বলে ধরে নেওয়া হয়।                     
                                                                                            চিরায়ত তড়িচ্চুম্বকত্ব অনুসারে, সময়-পরিবর্তিত ক্ষেত্রে কাজ করার সময়, তড়িৎ ক্ষেত্রটি কেবলমাত্র অদিক বিভব পদে প্রকাশ করা যায় না। পরিবর্তে, তড়িৎ ক্ষেত্রটি অদিক তড়িৎ বিভব এবং চৌম্বকীয় সদিক বিভব উভয় ভাবেই প্রকাশ করা যেতে পারে।[২] তড়িৎ বিভব এবং চৌম্বকীয় সদিক বিভব একসাথে একটি ৪ ভেক্টর গঠন করে, যাতে দুটি ধরনের বিভব লরেন্টজ রূপান্তরের অধীনে মিশ্রিত হয়।                                                                    
                                                                                        ব্যবহারিকভাবে, তড়িৎ বিভব সর্বদা কোন স্থানের ধারাবাহিক অপেক্ষক; অন্যথায়, এর বিশেষ অন্তরজ (স্পেশাল ডেরিভেটিভ) অসীম মাত্রার একটি ক্ষেত্র উৎপাদন করবে, যা কার্যত অসম্ভব। এমনকি একটি আদর্শ বিন্দু আধানের  বিভব রয়েছে, যা উৎস ব্যতীত সর্বত্র অবিচ্ছিন্ন। একটি আদর্শ পৃষ্ঠের আধান জুড়ে তড়িৎ ক্ষেত্রটি ধারাবাহিক নয়, কিন্তু এটি কোনও পর্যায়ে অসীম নয়। অতএব, তড়িৎ বিভবটি একটি আদর্শ পৃষ্ঠের আধান জুড়ে ধারাবাহিক। একটি আদর্শ রৈখিক আধানের  বিভব রয়েছে, যা রৈখিক আধান ব্যতীত সর্বত্র অবিচ্ছিন্ন।

ভূমিকা[সম্পাদনা]

চিরায়ত বলবিদ্যা বল, শক্তি, বিভব, ইত্যাদির মতো ধারণাগুলি অন্বেষণ করে।[৩] বল এবং স্থিতি শক্তি সরাসরি সম্পর্কিত। যেকোন বস্তুতে কার্যকারী মোট বল, বস্তুতে ত্বরণ ঘটায়। যেহেতু যে অভিমুখে বল ত্বরান্বিত করে, বস্তু সেই অভিমুখে যায়, এর স্থিতিশক্তি হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পাহাড়ের শীর্ষে একটি কামানবলের মহাকর্ষীয় স্থিতি শক্তি পাহাড়ের পদমূলের চেয়ে বেশি। এটি যত নিচের দিকে নামে, তত এর স্থিতি শক্তি হ্রাস পায়, স্থিতি শক্তি পরিবর্তিত হয়ে যায় গতি শক্তিতে।

নির্দিষ্ট বল ক্ষেত্রের স্থিতি শক্তি নির্ধারণ করা সম্ভব যাতে সেই ক্ষেত্রের কোনও বস্তুর স্থিতি শক্তি কেবলমাত্র ক্ষেত্রের সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থানের উপর নির্ভর করে। এই জাতীয় দুটি ক্ষেত্র হ'ল মহাকর্ষ ক্ষেত্র এবং একটি তড়িৎ ক্ষেত্র (সময়ের সাথে পরিবর্তিত চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের অভাবে)। এই জাতীয় ক্ষেত্রগুলি অবশ্যই বস্তুর অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণে (যেমন, ভর বা আধান) এবং বস্তুর অবস্থানের কারণে বস্তুগুলিকে প্রভাবিত করে।

বস্তুগুলির বৈদ্যুতিক আধান থাকতে পারে এবং একটি তড়িৎ ক্ষেত্র, আধানযুক্ত বস্তুর উপর শক্তি প্রয়োগ করে। যদি আধানযুক্ত বস্তুর ধনাত্মক আধান থাকে বলটি সেই বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্র ভেক্টরের দিকে হবে, যখন আধান ঋণাত্মক হয় তখন বলটি বিপরীত দিকে কাজ করে। বলের মান পাওয়া যায় আধানের পরিমাণকে তড়িৎ ক্ষেত্র ভেক্টরের মান দিয়ে গুণ করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Goldstein, Herbert (জুন ১৯৫৯)। Classical Mechanics। United States: Addison-Wesley। পৃষ্ঠা 383। আইএসবিএন 0201025108 
  2. Griffiths, David J.। Introduction to Electrodynamics। Pearson Prentice Hall। পৃষ্ঠা 416–417। আইএসবিএন 978-81-203-1601-0 
  3. Young, Hugh A.; Freedman, Roger D. (২০১২)। Sears and Zemansky's University Physics with Modern Physics (13th সংস্করণ)। Boston: Addison-Wesley। পৃষ্ঠা 754 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]