ড্যারেল হেয়ার
ব্যক্তিগত তথ্য | |
---|---|
পূর্ণ নাম | ড্যারেল ব্রুস হেয়ার |
জন্ম | মাডগি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া | ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৫২
আম্পায়ারিং তথ্য | |
টেস্ট আম্পায়ার | ৭৮ (১৯৯২–২০০৮) |
ওডিআই আম্পায়ার | ১৩৯ (১৯৯১–২০০৮) |
টি২০আই আম্পায়ার | ৬ (২০০৮–২০০৮) |
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | |
| |
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো, ২৯ জুলাই, ২০১৮ |
ড্যারেল ব্রুস হেয়ার (ইংরেজি: Darrell Hair; জন্ম: ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৫২) নিউ সাউথ ওয়েলসের মাডগি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ও সাবেক অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্রিকেট আম্পায়ার।[১]
স্বদেশী সাইমন টাওফেল ও নিউজিল্যান্ডীয় বিলি বাউডেনের সাথে একত্রে আইসিসি এলিট আম্পায়ার প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ২০০২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আম্পায়ার প্যানেলের সদস্য ছিলেন। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যকার টেস্টে উদ্ভূত ঘটনার প্রেক্ষিতে আইসিসি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তমাফিক টেস্ট খেলা পরিচালনা করা থেকে তাকে বিরত রাখা হয়।
১২ মার্চ, ২০০৮ তারিখে আইসিসি প্যানেলে তাকে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর মে ও জুন, ২০০৮ সালে যথাক্রমে ওল্ড ট্রাফোর্ড ও ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার খেলা পরিচালনা করেন।
স্থানীয় পর্যায়ে ড্যারেল হেয়ার তার খেলোয়াড়ী জীবন অরেঞ্জ ও মলং দলে শুরু করেন। পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে সিডনিতে চলে যান। সেখানে নিউ সাউথ ওয়েলসের মোসম্যান ও উত্তর সিডনিভিত্তিক ক্লাবগুলোর সদস্যরূপে সিডনি গ্রেড ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]জানুয়ারি, ১৯৯২ সালে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যকার খেলা পরিচালনার মাধ্যমে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক ঘটে তার। আইসিসি নীতিমালা অনুযায়ী ২০০২ সাল থেকে হেয়ারকে অস্ট্রেলিয়ার বাইরে টেস্ট খেলা পরিচালনা করতে হয়েছে ও অস্ট্রেলিয়ার কোন টেস্টে খেলা পরিচালনা করেননি। ২৬ থেকে ২৯ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার খেলাটি সর্বশেষবারের মতো নিজ দেশে টেস্ট পরিচালনা করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আম্পায়ার এডি নিকোলসকে সাথে নিয়ে খেলাটি পরিচালনা করেছিলেন।
১৯৯৫ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলঙ্কার মধ্যকার খেলায় মুত্তিয়া মুরালিধরনকে বল নিক্ষেপ করার কারণে তিন ওভারের মধ্যে সাতবার নো-বল ডাকেন।[২] গত ২২ টেস্টের মধ্যে এটিই মুত্তিয়া মুরালিধরনের প্রথম ঘটনা ছিল। পরবর্তীতে অবশ্য আইসিসি জানায় যে, আম্পায়ারদের কাছে দুই বছরের অধিককাল তার বোলিংয়ের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ বিরাজমান ছিল।[৩] টেস্টে মুরালিধরনের ন্যায় স্পিন বোলারের ক্ষেত্রে ৫ ডিগ্রি অধিক কনুই বাঁকানোর বিষয়টি ধরা পড়ে। কিন্তু তার কনুইয়ের গড়নের কারণে অপ্রত্যাশিত ভঙ্গিমা দৃশ্যতঃ এ ফলাফল এনে দিয়েছিল।[৪] পরবর্তীকালে পুণঃপুণ পর্যালোচনান্তে আইসিসি কর্তৃপক্ষ কনুই বাঁকানোর ক্ষেত্রে সকল বোলারের জন্য ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। ১৯৯৯ সালে মুরালিধরনের বোলিং ভঙ্গিমা জঘন্য প্রকৃতির ঘোষণা করায় আইসিসি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।[৫] পরবর্তীতে ড্যারেল হেয়ার বল নিক্ষেপ ঘটনার কারণে মৃত্যুর হুমকি পান। ফলশ্রুতিতে আইসিসি জানায় যে, ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার খেলাগুলো পরিচালনা করা থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা হবে।[৫]
বলে আঁচর কাটা বিতর্ক
[সম্পাদনা]ওভালে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যকার সিরিজের চতুর্থ টেস্টের চতুর্থ দিন অপর আম্পায়ার বিলি ডকট্রোভের সাথে সিদ্ধান্তক্রমে তিনি জানান যে, পাকিস্তান দল বলে আঁচর কাটার সাথে জড়িত। এর পরিবর্তে তারা ইংল্যান্ড দলকে জরিমানাস্বরূপ পাঁচ রান প্রদান করে ও বল পরিবর্তনের কথা জানান। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদস্বরূপ পাকিস্তান দল চাবিরতির পর মাঠে নামতে অস্বীকৃতিজ্ঞাপন করে।[৬] আম্পায়ারদ্বয় ৩০ মিনিট মাঠে অপেক্ষার পর উইকেট থেকে বেইল ফেলে দেন। তারা ইংল্যান্ডকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন। এ ঘটনার ২৫ মিনিট পর পাকিস্তান দল ফিল্ডিংয়ে নামলেও আম্পায়ারদ্বয় জানান যে, বেইল ফেলে দেয়ার ফলে খেলার সমাপ্তি ঘটেছে। টেস্টটি পরিত্যক্ত হয় ও ইংল্যান্ডকে বিজয়ীরূপে ঘোষণা করা হয়।[৭]
আইসিসি, ইসিবি ও পিসিবি পরবর্তীতে খেলার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত হয় যে, ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী ইংল্যান্ডকে বিজয়ীরূপে ঘোষণা করা হয়েছে।[৮] দলীয় অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হককে বলে ক্ষত সৃষ্টির অভিযোগে দোষী করা হয়।[৯][১০][১১] তবে, বলের কোথায় ক্ষতের আঁচর রয়েছে তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।[৯]
সাম্প্রতিককালে ছড়িয়ে পড়া বিতর্কের কারণে ড্যারেল হেয়ার আইসিসি বরাবরে ই-মেইল প্রেরণ করেন। এতে তিনি জানান যে, ভবিষ্যৎ আর্থিক সমস্যা সমাধানে অফেরৎযোগ্য $৫,০০,০০০ মার্কিন ডলার ব্যাংক একাউন্ট থেকে উঠানোর ব্যবস্থা করলে আইসিসি এলিট আম্পায়ার প্যানেল থেকে স্বীয় নাম প্রত্যাহার করে নেবেন।[১২] পরবর্তীতে অবশ্য এ প্রস্তাবনাটি প্রত্যাহার করে নেন ড্যারেল হেয়ার।[১৩] এ প্রসঙ্গক্রমে তিনি মন্তব্য করেন যে, তিনি কখনো অবসর গ্রহণের কথা বিবেচনায় আনেননি।[১৪]
দায়িত্ব প্রত্যাহার
[সম্পাদনা]আইসিসি ঘোষণা করে যে, নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে ২০০৬ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হেয়ারকে আম্পায়ারের দায়িত্ব প্রদান করা হবে না।[১৫] এরপর ৪ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে আইসিসি’র দুইদিনের সভায় সিদ্ধান্তমাফিক আন্তর্জাতিক খেলা পরিচালনা করা থেকে তাঁকে বিরত রাখা হয়।[১৬]
ফাঁস হয়ে পড়া আইসিসি প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, ওভাল ঘটনার পূর্বে সকল আম্পায়ারের মধ্যে দ্বিতীয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতায় তিনি এক নম্বর অবস্থানে ছিলেন।[১৭]
ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ সালে হেয়ার ঘোষণা করেন যে, মাঠে বর্ণবৈষম্য উসকানির অভিযোগে আইসিসি ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলির পাঁঠাতে পরিণত হলেও বিলি ডকট্রোভের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।[১৮] ৯ অক্টোবর, ২০০৭ তারিখে হেয়ার তাঁর বর্ণবৈষম্যবিষয়ক মামলা দাখিল করেন। আইসিসি জানায় যে, পরবর্তী ছয়মাসে উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। এরফলে শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ের খেলায় ফিরে আসতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও, এ ছয়মাসে দ্বিতীয়সারির আইসিসি সহযোগী দেশের খেলাগুলোয় অংশ নিতে পারবেন।
অবসর
[সম্পাদনা]১২ মার্চ, ২০০৮ তারিখে আইসিসি হেয়ারকে এলিট আম্পায়ারিং প্যানেলে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।[১৯] কোচের দায়িত্ব পালনকল্পে ২২ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে হেয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসি বরাবরে পদত্যাগপত্র জমা দেন।[২০]
২৩ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে অর্থ আত্মসাৎ ও চুরির করার অপরাধে হেয়ারের বিরুদ্ধে অরেঞ্জ লোকাল কোর্টে অভিযোগ আনা হয়। এতে জুয়ায় আসক্তির কারণে ৯০০৫.৭৫ অস্ট্রেলীয় ডলার চুরি করেছেন বলে জানানো হয়। পূর্বেকার অপরাধে সম্পৃক্ততার পাশাপাশি চুরিকৃত অর্থের কারণে ১৮ মাসের সাজা প্রদান করা হয়।[২১]
পরিসংখ্যান
[সম্পাদনা]প্রথম | শেষ | মোট | |
---|---|---|---|
টেস্ট | অস্ট্রেলিয়া ব ভারত, অ্যাডিলেড, জানুয়ারি, ১৯৯২ | ইংল্যান্ড ব নিউজিল্যান্ড, ট্রেন্ট ব্রিজ, জুন, ২০০৮ | ৭৮ |
ওডিআই | ভারত ব ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অ্যাডিলেড, ডিসেম্বর, ১৯৯১ | আয়ারল্যান্ড ব স্কটল্যান্ড, বেলফাস্ট, জুলাই, ২০০৭ | ১৩৯ |
টি২০আই | কেনিয়া ব নেদারল্যান্ডস, বেলফাস্ট, আগস্ট, ২০০৮ | আয়ারল্যান্ড ব নেদারল্যান্ডস, বেলফাস্ট, আগস্ট, ২০০৮ | ৬ |
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Darrell Hair"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Britten, Nick (২৭ আগস্ট ২০০৬)। "Hair is a man who stands his ground"। The Age। Melbourne।
- ↑ "The Sri Lankans in Australia, 1995-96"। Wisden Cricketers' Almanack। ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ – ESPNcricinfo-এর মাধ্যমে।
- ↑ Lloyd DG; Alderson J; Elliott BC (ডিসেম্বর ২০০০)। "An upper limb kinematic model for the examination of cricket bowling: a case study of Mutiah Muralitharan"। J Sports Sci.। 18: 975–82। ডিওআই:10.1080/026404100446775। পিএমআইডি 11138987।
- ↑ ক খ "Umpire 'received death threats'"। BBC News। British Broadcasting Corporation। ১২ মে ১৯৯৯।
- ↑ "Pakistan muzzled in tampering row"। BBC Sport। British Broadcasting Corporation। ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ "As the chaos unfolded"। ESPNcricinfo। ২০ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Test farce amid tampering fracas"। The Sydney Morning Herald। Reuters। ২১ আগস্ট ২০০৬।
- ↑ ক খ "Ranjan Mudagalle's decision in full"। ESPNcricinfo। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ "'Inzamam cleared of ball tampering'"। ESPNcricinfo। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬।
- ↑ "'Disrepute ban for skipper Inzamam'"। BBC Sport। British Broadcasting Corporation। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬।
- ↑ "Umpire offered to resign for cash"। BBC News। British Broadcasting Corporation। ২৫ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১০।
- ↑ "Full transcript of emails"। ESPNcricinfo। ২৫ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "Hair never considered retirement"। ESPNcricinfo। ১১ জানুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ "Hair out of Champions Trophy'"। DNA Sport। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬।
- ↑ Siddhartha Vaidyanathan (৪ নভেম্বর ২০০৬)। "Hair banned from officiating in internationals"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০০৬।
- ↑ "Hair praised by ICC immediately before being sacked"। ESPNcricinfo। ১৩ নভেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "Hair to sue cricket authorities"। BBC Sport। British Broadcasting Corporation। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭।
- ↑ "Hair restored as ICC elite umpire"। BBC News। British Broadcasting Corporation। ১৮ মার্চ ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০০৮।
- ↑ "Hair quits to focus on coaching"। ESPNcricinfo। ২২ আগস্ট ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Gardiner, Stephanie। "Hair admits to stealing cash"। The Sydney Morning Herald। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৭।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Hair, Darrell (1998) Decision Maker: An Umpire's Story Random House, Australia. আইএসবিএন ০-০৯-১৮৩৭৩১-৬
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে ড্যারেল হেয়ার (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে ড্যারেল হেয়ার (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- "ICC Umpires and Referees"। ২ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৮।