জি৮
আট দেশের গ্রুপ |
---|
|
জি৮ তথা গ্রুপ অব এইট বিশ্বের আটটি শিল্পোন্নত দেশের একটি অর্থনৈতিক বলয়। এর পূর্বসূরী যথাক্রমে জি৬ (গ্রুপ অব সিক্স) এবং জি৭ (গ্রুপ অব সেভেন)। ফ্রান্সের উদ্যোগে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বের ৬টি দেশ যথা ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে আন্তজার্তিক অর্থনৈতিক বলয় জি৬ গঠিত হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে এই বলয়ে কানাডার যোগদানের মধ্য দিয়ে এটি জি৭-এ পরিণত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া যোগ দিলে এটি জি৮-এর বর্তমান রূপ লাভ করে। জি৮-এ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব আছে, কিন্তু এটি জি৮ এর সদস্য নয়। প্রতি বছর জি৮ রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্রপ্রধানেরা বার্ষিক সম্মেলনে মিলিত হন। একইভাবে তাদের অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরিবেশমন্ত্রীগণও বার্ষিক সম্মেলনে একত্রিত হন। ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানি, জাপান, ইতালি ও কানাডা - এই ক্রমানুসারে জি৮ এর সম্মেলনস্থল এবং সভাপতিত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে। সভাপতি-রাষ্ট্র সম্মেলনের কর্মসূচী ও মন্ত্রীসভার বৈঠকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীকালে ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য পাঁচটি উন্নয়নশীল দেশকে “আউটরিচ ফাইভ” বা “প্লাস ফাইভ” নামে জি৮ এ অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। এই পাঁচটি দেশ হচ্ছে ব্রাজিল, গণচীন, ভারত, মেক্সিকো ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দেশগুলো জি৮ এর সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে থাকে, যাকে সাধারণত জি৮+৫ বলা হয়।
২০১৪ সালের ক্রিমিয়া সংকটে রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার কারণে ২০১৪ এর ২৪ মে রাশিয়াকে জি৮ থেকে বাদ দেয়া হয়। এখন তাই এই জোটটি জি৭ নামে পরিচিত।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের জ্বালানি তেল সঙ্কটের পর থেকে বিশ্বের শিল্পায়িত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর একটি অর্থনৈতিক বলয় গঠনের ধারণা আসে। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউসের লাইব্রেরিতে বেশ কয়েকটি সভা হয়, যা "লাইব্রেরি গ্রুপ" নামে পরিচিতি লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, সাবেক পশ্চিম জার্মানি ও ফ্রান্সের উচ্চপদস্থ অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল এটি। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভ্যালেরি জিস্কার্ড পশ্চিম জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরকার প্রধানদের শ্যাতে দ্য রেম্বইলেটে আমন্ত্রণ জানান। সেখানেই ৬ রাষ্ট্রপ্রধান জি৬ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একমত হন। পরবর্তীতে জার্মানির চ্যান্সেলর হেলমুর্ট শিমগট ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের উদ্যোগে কানাডাকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে যুক্তরাজ্যের আমন্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জি৭-এর সকল সম্মেলনে যোগ দেয়। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জি৭ এর সম্মেলনে ইইউ’র প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে নেপলসে জি৭-এর সম্মেলনের পর রাশিয়ান কর্মকর্তাগণ আলাদাভাবে জি৭-এর নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পর জি৭ পরিচিতি পায় পি৮ (পলিটিক্যাল৮) বা জি৭+১ নামে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমন্ত্রণে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া জি৭-এ যোগ দেয় ও জি৭ পরিণত হয় জি৮-এ।
গঠন ও কার্যক্রম
[সম্পাদনা]কাঠামোগত দিক দিয়ে জাতিসংঘ কিংবা বিশ্ব ব্যাংক প্রভৃতি আন্তজার্তিক সংস্থার ন্যায় জি৮-এর কোনরূপ প্রশাসনিক কাঠামো নেই। এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোন স্থায়ী সচিবালয় কিংবা কার্যালয় নেই। এর নেতৃত্ব চক্রাকারে প্রতি বছর সদস্য দেশগুলোর প্রধানের হাতে অর্পিত হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে এ নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়। মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক এবং সরকার প্রধানদের বৈঠক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব সভাপতি-রাষ্ট্র পালন করে। ইউরোপিও কমিশনের প্রেসিডেন্টও সম্মেলনে অংশ নেন। মন্ত্রীসভার বৈঠকে বিভিন্ন রকমের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সমস্যা ও বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য, আইনের প্রয়োগ, শ্রম, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, জ্বালানী, পরিবেশ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিচার ব্যবস্থা, সন্ত্রাস ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অন্যতম।
সর্বশেষ নেতৃবৃন্দ
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Russia Is Ousted From Group of 8 by U.S. and Allies"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-২৫।