খোনসু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খোনসু
বাজপাখি-রূপী চন্দ্রচাকতি ও অর্ধচন্দ্রশোভিত খোনসু
চিত্রলিপি
Aa1
N35
M23G43
প্রধান অর্চনাকেন্দ্র centerথিবস
প্রতীকচন্দ্রচাকতি, মাথার পাশের চুল, বাজপাখি, রাখালের ছড়ি ও কস্তানি, ওয়াস-রাজদণ্ড
মাতাপিতাআমুনমুত

খোনসু (মিশরীয়: ḫnsw; বানানান্তরে চোনসু, খেনসু, খোনস, চোনস বা খোনশু; কিবতীয়: Ϣⲟⲛⲥ, প্রতিবর্ণী. Shons) হলেন এক প্রাচীন মিশরীয় চন্দ্রদেবতা। তাঁর নামের অর্থ 'পর্যটনকারী', এই নামার্থেই সম্ভবত তিনি আকাশে চন্দ্রের রাত্রিকালীন সঞ্চরণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। থোথের সঙ্গে তিনিও সময়ের অতিক্রমণকে চিহ্নিত করেন। মিশরীয় পুরাণকথায় সকল জীবের মধ্যে নতিন জীবনের সৃষ্টির কাজে খোনসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অর্জন করেন। থিবসে তিনি তাঁর মা মুত ও বাবা আমুনের সঙ্গে একটি পারিবারিক ত্রয়ী (থিবীয় ত্রয়ী) গঠন করেছেন।

পুরাণকথা[সম্পাদনা]

খোনসু নামের আক্ষরিক অর্থ "পর্যটনকারী" এবং সেই কারণেই এই নামটি রাতের আকাশ অতিক্রমণকারী চন্দ্রের (মিশরীয় ভাষায় ইয়াহ নামে পরিচিত ছিল) ধারণাটির প্রতিফলনকারী। তাঁকে "আলিঙ্গনকারী", "পথিকৃত", "রক্ষাকর্তা" ও "আরোগ্যদাতা" উপাধিগুলির দ্বারাও উল্লিখিত করা হত। রাত্রিকালীন আলোর দেবতা হিসেবে খোনসুকে আবাহন করা হয় বন্য পশুর থেকে রক্ষা এবং আরোগ্যে সহায়তার জন্য। কথিত ছিল, খোনসু যখন অর্ধচন্দ্রকে উজ্জ্বল করেন, তখন নারী গর্ভধারণ করে, গবাদিপশুও গর্ভধারণ করে এবং সকল নাসিকা ও সকল ওষ্ঠাধর শুদ্ধ বাতাসে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

প্রাচীন মিশরীয় চন্দ্রদেবতা খোনসু বাজপাখির রূপে এবং মস্তকে চন্দ্রচাকতি সহ (বাঁদিকের ছবি) অথবা মানবশিশুর আকারে (ডানদিকের ছবি) চিত্রিত হতেন।

প্রাচীন মিশরীয় শিল্পকলায় খোনসুকে সাধারণত মমির আকারে এবং শৈশবের চিহ্ন হিসেবে মাথার পাশের চুল, বা মেনাত কণ্ঠহার বা রাখালের ছড়ি ও কস্তানি সহ প্রদর্শিত হতেন। হোরাসশু-র মতো অন্যান্য শিশুদেবতার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তাঁকে মাঝে মাঝে দেখানো হত হোরাসের মতো ইগল বা বাজপাখির মস্তকবিশিষ্ট রূপে। এই হোরাসের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন রক্ষাকর্তা ও আরোগ্যদাতা দেবতা হিসেবেও। খোনসুর মাথায় দেখা যেত চন্দ্রচাকতি ও অর্ধচন্দ্র।[১] টেমপ্লেট:Ancient Egyptian religion পিরামিড লিপিশবাধার লিপিগুলিতে খোনসুর ভয়ংকর গুণাবলির কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু নতুন রাজ্যের আগে তিনি প্রাধান্য অর্জন করেননি। নতুন রাজ্যেই তাঁকে "মহৎ দেবতাদের মধ্যে মহত্তম দেবতা" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উনবিংশ রাজবংশের রাজত্বকালে কারনাকে মন্দির চত্বর নির্মাণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন খোনসুই।[১] কারনাকে খোনসুর মন্দির অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। এই মন্দিরের একটি দেওয়ালে সৃষ্টিপুরাণের চিত্রণে খোনসুকে এমন এক মহাসর্প রূপে দেখানো হয়েছে যিনি জগতের সৃষ্টিকার্যে ব্রহ্মাণ্ডকে গর্ভবতী করেছিলেন।[২]

আরোগ্যদাতা হিসেবে খোনসুর সুনাম মিশরের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্রেন্টেশ ফলকের লিপিতে বর্ণিত হয়েছে, কীভাবে খোনসুর একটি চিত্র উপস্থিত হওয়া মাত্র বেখতেনের এক রাজকুমারী মুহুর্তে আরোগ্যলাভ করেছিলেন।[৩] রাজা চতুর্থ টলেমি একবার আরোগ্যলাভ করার নিজেকে "রাজার রক্ষাকর্তা ও সকল অশুভ আত্মাকে দূরকারী খোনসুর প্রিয়পাত্র" বলে উল্লেখ করেছিলেন।

খোনসুর কাল্টগুলি গড়ে উঠেছিল মেমফিস, হিবিসএদফুতে[১]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে[সম্পাদনা]

প্রেয়ার টু খোনসু (১৯০৫), স্তেফান বাকালোইকজ অঙ্কিত। এই আধুনিক চিত্রটিতে দেখানো হয়েছে পুরোহিতেরা খোনসু ও চন্দ্রকে পূজা করছেন।

মার্ভেল কমিকসে খোনসু একটি চরিত্র রূপে প্রদর্শিত হয়েছেন, যেখানে তাঁর নামের বানানটি খোনশু (ইংরেজি: Khonshu)। এই কমিকসে মুন নাইট চরিত্রটি হলেন খোনশুর অবতার এবং তিনি পরিচিত "খোনশুর মুষ্টি" হিসেবে।[৪] খোনশু তাঁকে তাঁর নাম গ্রহণ করে অমঙ্গলের অলৌকিক শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। কিন্তু তা ধীরে ধীরে মুন নাইটকে ধীরে ধীরে পাগল করে দিয়েছিল। মুন নাইটের শক্তি, সহ্যক্ষমতা ও প্রতিবর্তী ক্রিয়াগুলি চন্দ্রকলার উপর নির্ভর করে।[৫] দ্বিতীয় খণ্ডে দেখা যায়, মুন নাইটকে খোনশুর কাল্ট কর্তৃক বিশেষ অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া হচ্ছে।[৬] এছাড়াপ মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের (এমসিইউ) টেলিভিশন ধারাবাহিকের মুন নাইট-এও খোনশু চরিত্রটিকে দেখা যায়। এই চরিত্রে কণ্ঠদান করেছিলেন এফ. মারি আব্রাহাম[৭] কমিক সংস্করণেও তিনি বিশেষভাবে পরিচিত।

নাইট ইন দ্য মিউজিয়াম চলচ্চিত্র ধারাবাহিকেও একাধিকবার খোনসুর নাম উল্লিখিত হয়েছে নাইট ইন দ্য মিউজিয়াম: সিক্রেট অফ দ্য টুম ছবির আখমেনরাহ্‌-এর ফলকের গোপন কাহিনি বর্ণনার প্রেক্ষিতে। এই কাহিনিতে দেখা যায় যে, সোনার ফলকটি খোনসুর মন্দিরের মহাপুরোহিত কর্তৃক নির্মিত। ট্যাবলেটটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল খোনসুর রশ্মিকে ফলকের মধ্যে টেনে এনে প্রতি রাতের শক্তিকে পুনর্জীবিত করে তোলা। রাত্রিকালে জাদুঘরে প্রদর্শিত সকল বস্তুকে জীবন্ত করে তোলার ক্ষমতা এই ফলকটির মধ্যেই ছিল। কিন্তু ফলকটিকে সুদীর্ঘকাল খোনসুর আলোর থেকে দূরে রাখলে সকল প্রদর্শিত বস্তুর মধ্যে জীবনের মৃত্যু ঘটে।

গ্যালারি[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Redford, Donald B., সম্পাদক (২০০৩)। The Oxford Guide: Essential Guide to Egyptian Mythology। Berkley। পৃষ্ঠা 186–187। আইএসবিএন 0-425-19096-X 
  2. Pinch, Geraldine (২০০২)। Handbook of Egyptian MythologyABC-CLIO। পৃষ্ঠা 156আইএসবিএন 1-57607-242-8 
  3. This incident is mentioned in the opening of chapter one of Bolesław Prus' 1895 historical novel Pharaoh.
  4. Moon Knight #1. Marvel Comics.
  5. Marvel Spotlight #28. Marvel Comics.
  6. "Moon Knight: Fist of Khonshu #1 – Night of the JackalMarvel। ১ জুন ১৯৮৫। 
  7. Leston, Ryan (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। "Moon Knight Adds F. Murray Abraham as Khonshu"IGN। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]