এ কিউ এম ছিফাতুল্লাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এ কিউ এম ছিফাতুল্লাহ
জন্ম(১৯৩৭-১২-২৫)২৫ ডিসেম্বর ১৯৩৭
মৃত্যু২২ ডিসেম্বর ২০০৫(2005-12-22) (বয়স ৬৭)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ববাংলাদেশি
মাতৃশিক্ষায়তন
পেশালেখালিখি, শিক্ষকতা
প্রতিনিধিইসলাম প্রচার
পরিচিতির কারণলেখক, শিক্ষক, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সাংবাদিক
উল্লেখযোগ্য কর্ম
  • ইসলামী আইন ও রাষ্ট্র
  • আমাদের আযাদী সংগ্রাম ও জাতীয় আদর্শ
  • সীরাত রচনাবলী
  • ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং
  • মানবাধিকার ও ইসলাম
  • ইসলামী জীবন দর্শনে হজ্জ ও যাকাতের অবদান
  • ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা
  • কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন ও মাদরাসা শিক্ষা
আন্দোলনপাকিস্তান আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন
দাম্পত্য সঙ্গীজাহানারা বেগম
পিতা-মাতা
  • মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ (পিতা)

মাওলানা এ কিউ এম ছিফাতুল্লাহ (২৫ ডিসেম্বর ১৯৩৭ - ২২ ডিসেম্বর ২০০৫) বাংলাদেশি একজন ইসলামি পণ্ডিত, গবেষক, ভাষা আন্দোলন কর্মী, শিক্ষক, লেখক ও সম্পাদক ছিলেন।[১] তিনি প্রথম জীবনে কমিউনিস্ট আন্দোলন করলেও পরবর্তীতে ইসলামি আন্দোলনের প্রতি অনুরক্ত হন।[২] তিনি মাগুরা সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, খুলনা নেছারিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসাসহ বহু প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও উপপ্রধান ছিলেন। তিনি তার নিজ এলাকায় হাজেরা আলিয়া ক্যাডেট মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।

এছাড়াও তিনি পাকিস্তান আন্দোলন৫২ এর বাংলা ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেহাদ, দৈনিক সংগ্রাম, মাসিক আল ফুরকান, মাসিক চিন্তাভাবনাসহ আরো কিছু পত্রিকায় রিপোর্টার ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলা, উর্দু, আরবি, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ছিলেন।

জন্ম ও পরিচয়[সম্পাদনা]

ছিফাতুল্লাহ ১৯৩৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার সেন্দ্রা গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

ছিফাতুল্লাহ পরিবারের নিকট প্রাথমিক বর্ণমালা শিক্ষা সমাপ্ত করে ৫ বছর বয়সে পালিশারা হাই মাদরাসায় ভর্তি হন, এই মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এরপর স্থানীয় বেলচো কারিমাবাদ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি ১৯৫২ সালে এই মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেন। এরপর ১৯৫৪ সালে গাজীপুড়া কামিল মাদরাসা থেকে ফাজিল পাশ করেন। এরপর তিনি ছারছিনা আলিয়া মাদরাসার কামিল শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে তাকে রাজনৈতিক ছারছিনা আলিয়া মাদরাসা থেকে বহিস্কার করা হলেও ভাগ্যক্রমে তিনি কামিল পরীক্ষার সার্টিফিকেট লাভ করেন।

মাদ্রাসা পড়া শেষ হলে তিনি ১৯৯৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন, রাবি পাশ করার পরে ১৯৯৮ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে এমএ পাশ করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ছিফাতুল্লাহ ১৯৫৬ সালে মাগুরা সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরে তিনি এই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে চাঁদপুরের মাসিমপুর সিনিয়র মাদরাসায় হেড মাওলানার দায়িত্ব গ্রহণ করে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি চাঁদপুরের সোনাইমুড়ি সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত সাতক্ষীরার হামিদপুর আলিয়া মাদ্রাসা, কলারোয়ায় প্রধান মুহাদ্দিস হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ খুলনা নেছারিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এরপরে তিনি ২০০০ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত উত্তরার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মিসবাহুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসাবে শিক্ষকতা করেছেন।

রাজনৈতিক কর্ম[সম্পাদনা]

তিনি এই মাদ্রাসায় ৪র্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময় ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা পান, এবং এই আন্দোলনের কিছু কাজ-কর্ম শুরু করেন। তিনি মাত্র ১০ বছর বয়সে বয়েজ ন্যাশনাল গার্ড নামক কিশোরদের সংগঠনে যোগদান করেন। তিনি প্রায় প্রতিদিন এই সংগঠনের সাথে থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার পায়ে হেটে মিছিল পরিচালনা করতেন। তিনি বেলচো মাদরাসায় আলিম শ্রেণীতে পড়াকালীন তার প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান কর্তৃক কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগদান করতে প্রভাবিত হন। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলে স্লোগান দেওয়ার জন্য পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হন।

তিনি ১৯৫৪ সালে কামিল পড়ার সময় আবুল আলা মওদুদিমুসলমান আওর মওজুদাহসিয়াসী কাশমকাশ ১ম ও ২য় খণ্ড মওদুদির চিন্তার প্রতি আকর্ষিত হন। এবং ইসলামি আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হন। এরপরে ছারছিনা আলিয়ায় কামিল পড়ার সময় মাওলানা আবদুর রহিম, আবুল আলা মওদুদির সংস্পর্শে এসে ১৯৫৫ সালে ইসলামি আন্দোলনের মুত্তাফিক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি এই মাদ্রাসায় পড়াকালীন মুস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক শিহাবুদ্দিন, অধ্যাপক আখতার ফারুক, অধ্যাপক শামসুল হক, এ বি এম মুসলিম, মুরশিদ আলমসহ প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থীকে একত্রিত করে এই মাদ্রাসায় মুত্তাফিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এবং তিনিই এই সংগঠনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক কারণে তাকেসহ ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ছারছিনা আলিয়া মাদরাসা থেকে বহিস্কার করা হয়। তবে উক্ত মাসেই তার কামিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়, এইজন্য অধ্যক্ষ তাজ্জিমুল হোসাইনের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে বহিস্কার থাকা সত্ত্বেও তাকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়।

সাংবাদিকতা কর্ম[সম্পাদনা]

ছিফাতুল্লাহ অধ্যাপনার পাশাপাশি পত্রিকায় লেখালিখিতেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি বিভিন্ন খ্যাতনামা ও অখ্যাত পত্রিকায় লেখালিখি করতেন। তিনি দৈনিক ইত্তেহাদ, দৈনিক সংগ্রাম, সাপ্তাহিক জাহানেন ও দৈনিক সমাচার পত্রিকার প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও মাসিক আল ফুরকান, দৈনিক জনবার্তা, মাসিক চিন্তাভাবনা পত্রিকার রিপোর্টার ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রকাশিত গ্রন্থাবলী[সম্পাদনা]

ছিফাতুল্লাহ ইসলামি বিষয়াবলীর উপর প্রায় ৫০টির অধিক বই লিখেছেন। এসব বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইসমূহ:

  • ইসলামী আইন ও রাষ্ট্র
  • আমাদের আযাদী সংগ্রাম ও জাতীয় আদর্শ
  • বর্তমান বিশ্ব ও ইসলামী আইন
  • আধুনিক যুগ জিজ্ঞাসা ও ইসলাম
  • আমাদের শাসনতান্ত্রিক সংকট ও সমাধান
  • সীরাত রচনাবলী
  • ইসলামী সমাজ গঠনে মহিলাদের দ্বায়িত্ব
  • ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং
  • ইসলামী দর্শন
  • কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন ও আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতি
  • মানবাধিকার ও ইসলাম
  • ইসলামী জীবন দর্শনে হজ্জ ও যাকাতের অবদান
  • ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা
  • কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন ও মাদরাসা শিক্ষা
  • প্রবন্ধকার ইসলামী কোষ
  • কাদিয়ানী মতবাদ ও ইসলাম

এছাড়াও তিনি অন্য লেখকদের বই সম্পাদনা করেছেন, অন্য ভাষার লেখকদের বই ও নিবন্ধ অনুবাদ করেছেন।[৩] তার বইসমূহ বিভিন্ন গবেষণায় ব্যবহৃত হয়, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ছিফাতুল্লাহ ২০০৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত একটি প্রোগ্রামে বক্তৃতা করছিলেন। এই বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পরেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দুটি জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হাজেরা আলিয়া ক্যাডেট মাদ্রাসা মাঠ প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজার নামাজের পর স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুর সময় তার ৬ পুত্র ও ৩ কন্যা জীবিত ছিলো।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. আযাদ, মাওলানা এ এইচ এম আবুল কালাম। "শিক্ষাবিদ মাওলানা এ কিউ এম ছিফাতুল্লাহ"DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৯ 
  2. আবদুল কাদের, আহমদ; সম্পাদক, আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়াঅর্থনৈতিক উন্নয়নে যাকাত ব্যবস্থাপনার সুফল। ইসলাম হাউজ ডট কম। পৃষ্ঠা ৩। 
  3. "তাওহীদের ডাক - আধুনিক যুগের নতুন ফিৎনা,সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১২"www.tawheederdak.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৯