ইউরোপে নারী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইউরোপীয় মহিলাদের বিকাশ এবং ইতিহাস ইউরোপের উন্নয়ন এবং ইতিহাসের সাথে মিলে যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জনসংখ্যার প্রায় ৫১.২% নারী, (২০১১ সালে জানুয়ারীর আদমশুমারি অনুযায়ী ইইউ এর জনসংখ্যার সংখ্যা ৫০২.১২২৫ মিলিয়ন)।

বর্তমান যুগে শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে, তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা ইউরোপীয় মহাদেশে বাস করে, অথবা সেখানে জন্মগ্রহণ করেছে, অথবা মহাদেশের আদি বাসিন্দা।

ইউরোপের নারীরা নিম্নোক্ত সার্বভৌম দেশে বসবাস করে:

ক্ষমতাবান নারী[সম্পাদনা]

ইউরোপে অনেক নারী দেশের নিম্ন কক্ষের সদস্য হয়। এখানে নারীর ভোটাধিকার প্রয়োগ ও সংসদ সদস্য হতে পরে। কোন কোন দেশে নারীরা প্রধানমন্ত্রীও হয়। ইংল্যান্ডের রানী ও জার্মানির চ্যন্সেলর এর নাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রথম এলিজাবেথ
প্রথম এলিজাবেথের "ডার্নলি পোর্ট্রেট"(আঃ ১৫৭৫)
ইংল্যান্ডের রাণী
রাজত্ব১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ –
২৪ মার্চ ১৬০৩
রাজ্যাভিষেক১৫ জানুয়ারি ১৫৫৯
পূর্বসূরিপ্রথম মেরিদ্বিতীয় ফিলিপ
উত্তরসূরিপ্রথম জেমস
জন্ম৭ সেপ্টেম্বর ১৫৩৩
প্লাসেন্টিয়া প্রাসাদ, গ্রিনিচ, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৪ মার্চ ১৬০৩(1603-03-24) (বয়স ৬৯)
রিচমন্ড প্রাসাদ, সারে, ইংল্যান্ড
সমাধি
ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবে
রাজবংশটিউডর বংশীয়
পিতারাজা ৮ম হেনরি
মাতাঅ্যান বোলিন
ধর্মঅ্যাংলিকান
স্বাক্ষরইউরোপে নারী স্বাক্ষর
দ্বিতীয় এলিজাবেথ
photograph of the Queen in her eighty-ninth year
২০১৫ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথ
রাজ্যাভিষেক২ জুন ১৯৫৩
লেডি থ্যাচার
Photograph
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমার্গারেট হিলটা রবার্টস
(১৯২৫-১০-১৩)১৩ অক্টোবর ১৯২৫
গ্রানথাম, লিংকরশ্যায়ার, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য
মৃত্যু৮ এপ্রিল ২০১৩(2013-04-08) (বয়স ৮৭)
ওয়েষ্টমিনস্টার, লন্ডন, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য
মৃত্যুর কারণপক্ষাঘাত
রাজনৈতিক দলকনজারভেটিভ পার্টি, যুক্তরাজ্য
দাম্পত্য সঙ্গীডেনিস থ্যাচার১৩ ডিসেম্বর ১৯৫১ (বি. ২০০৩)
সন্তানকার্ল থ্যাচার
মার্ক থ্যাচার
পিতামাতাআলফ্রেড রসার্টস এবং বিট্রিস
জীবিকারসায়নবিদ
আইনজীবী
রাজনীতীবিদ
স্বাক্ষর
ওয়েবসাইটFoundation
আঙ্গেলা মের্কেল
জার্মানির চ্যন্সেলর
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
নভেম্বর ২২, ২০০৫
রাষ্ট্রপতিইওয়াখিম গাউক
ক্রিষ্টিয়ান উলফ
ডেপুটিফিলিপ রোসলার
পূর্বসূরীগেরহার্ড শ্রোডার
পরিবেশ, প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং পারমাণবিক নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
নভেম্বর ১৭, ১৯৯৪ – অক্টোবর ২৬, ১৯৯৮
চ্যান্সেলরহেলমুট কোল
পূর্বসূরীক্লাউস টপফার
উত্তরসূরীইয়ুর্গেন ট্রিটিন
নারী এবং যুবক বিষয়ক মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
জানুয়ারী ১৮, ১৯৯১ – নভেম্বর ১৭, ১৯৯৪
চ্যান্সেলরহেলমুট কোল
পূর্বসূরীউরসুলা লের
উত্তরসূরীকলাউডিয়া নোল্ট
সংসদ সদস্য
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
ডিসেম্বর ২, ১৯৯০
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআঙ্গেলা ডোরোথিয়া কাসনার
(1954-07-17) ১৭ জুলাই ১৯৫৪ (বয়স ৬৯)
হ্যামবুর্গ, পশ্চিম জার্মানি
রাজনৈতিক দলক্রিসচিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (১৯৯০–বর্তমান)
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
ডেমোক্রেটিক এ্যাওকেনিং (১৯৮৯–১৯৯০)
দাম্পত্য সঙ্গীউলরিশ মের্কেল (১৯৭৭–১৯৮২)
ইওয়াখিম জাউয়ার (১৯৯৮–বর্তমান)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীইউনিভার্সিটি অফ লাইপজিগ
জীবিকাভৌত রসায়নবিদ
ধর্মলুথেরানবাদ
স্বাক্ষর

মধ্যযুগে ইউরোপে নারী[সম্পাদনা]

মধ্যযুগের ইউরোপে নারীর অবস্থান নির্ধারিত হয়েছিল বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে। আদমের পাঁজর থেকে তৈরি হওয়া ইভ নৈতিক ভাবে দুর্বল ছিলেন। ইভ পাপের প্রলোভনে ধরা দিয়েছিলেন, নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করেছিলেন। এইজন্য বাইবেল অনুসারে, নারী পুরুষের কর্তৃত্বাধীনে থাকবে বলে মনে করা হয়। একমাত্র কুমারী মাতা মেরী ছিলেন পরম পূজনীয় ও শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগের পরিবার ছিল পিতৃতান্ত্রিক। সমাজে সর্বত্রই পুরুষের শাসন ছিল। রাজতন্ত্র, শাসনতন্ত্র, অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রেই পুরুষের কর্তৃত্ব বিদ্যমান ছিল। তবে ক্রুসেডের সময় থেকে মহিলাদের অবস্থানের উন্নতি হয়েছিল। কারণ ইউরোপ যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়ার ফলে পরিবারগুলোতে পুরুষের নিয়ন্ত্রণ কমে যায়। মহিলাদের হাতে পরিবারগুলো দেখভালের দায়িত্ত্ব পড়েছিল। এমনকি তারা সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন। অভিজাত মহিলাদের তুলনায় নিম্নবর্গীয় মেয়েরা অপেক্ষাকৃত বেশি স্বাধীনতা ভোগ করত। কৃষক রমণীরা তার পুরুষ সহকর্মীদের সাহায্যের জন্য মাঠে যেত। গার্হস্থ্য জীবনযাপনের পাশাপাশি স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য ছিল স্বামীকে সাহায্য করা। মধ্য যুগে বহু চিত্রে মাকু হাতে বস্ত্রবয়নরত মহিলার ছবি আবিষ্কৃত হয়েছে।বিভিন্ন কুটির শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। হপস নামক এক ধরনের লতাগুল্ম থেকে বিয়ার তৈরীর কাজ মেয়েরাই করত। শহরবাসী মহিলারা চামড়া শিল্প, ধাতু শিল্প এমনকি দোকান চালানোর কাজে নিযুক্ত থাকতো। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় কৃষক রমণীর উপর সামন্তপ্রভূর কর্তৃত্ব বজায় থাকতো। মধ্যযুগের নারীদের বিবাহের বয়স ছিল খুবই কম। স্বামীহারা বিধবার অধিকাংশই সন্ন্যাসিনী হিসেবে মঠে আশ্রয় নিতেন। অনেকে মঠে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কয়েকজন শিক্ষিতা সন্ন্যাসিনী মঠ অধ্যক্ষ বা Abbesse হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। অনেক মহিলা ধাত্রী মায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও করেছিলেন।

আধুনিক যুগে নারী[সম্পাদনা]

ইউরোপে আধুনিক যুগের সূচনালগ্নে যে উদারনৈতিক, মানবতাবাদী ও যুক্তিবাদী এবং গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটেছিল তার পূর্ণতা পেয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। ১৭৮৯ সালে ফরাসির বৈপ্লবিক সরকার জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিল যে, ‘সকল মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মেছে এবং সকল মানুষের সমান অধিকার রয়েছে।’ ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইউরোপে নারীর অধিকার জাগ্রত হয়।[১] উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন আইনে নারীদের সম-অধিকার রক্ষিত হয়েছে। নারীরা যুগ যুগ ধরে গৃহস্থালীর কাজ, সন্তান জন্ম ও লালন পালন, সেবিকা, মা, স্ত্রী, প্রতিবেশী, বন্ধু ও শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। যুদ্ধকালীন সময়ে নারীদের দিয়ে শ্রম বাজারে এমন কাজও করানো হয়েছে যা পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা তাদের চাকরি হারায় এবং তাদের পুনরায় গৃহস্থালী ও সেবামূলক কাজে নিয়োজিত হয়।[২][৩][৪]

ইউরোপে নারীর প্রতি সহিংসতা[সম্পাদনা]

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশের ৪২ হাজার নারীর সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে ‘ইইউ এজেন্সি ফর ফান্ডামেন্টাল রাইটস’ (এফআরএ) প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে দেখা যায়, এসব দেশে প্রতি তিনজনে একজন নারী ১৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে কোনো না-কোনোভাবে ‘যৌন নিপীড়ন’-এর শিকার হয়েছে। আর প্রতি ২০ জনে একজন ধর্ষিত হন। প্রতি ১০ জনে একজন নারীর পিছু ধাওয়া করে তাঁকে উত্ত্যক্ত করেন সাবেক স্বামী বা প্রেমিক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বর্তমান বা সাবেক সঙ্গীর দ্বারা এমন সহিংসতার ঘটনার শিকরা হন নারীরা। আর সম্পর্ক থাকাকালেই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ২২ শতাংশ নারী। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩১ শতাংশ জানিয়েছেন, সঙ্গীর দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন তাঁরা। মাত্র ১৪ শতাংশ নারী সঙ্গীর দ্বারা ভয়াবহ নিপীড়নের কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। আর মাত্র ১৩ শতাংশ নারী সঙ্গী নন এমন কারও দ্বারা গুরুতর নিপীড়নের বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন। প্রতি ১০ জনে একজন নারী ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেনমার্কে, প্রায় ৫২ শতাংশ। এরপর রয়েছে যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, ৪৭ শতাংশ এবং সুইডেন ৪৬ শতাংশ। যুগ্মভাবে এ তালিকার শীর্ষ পঞ্চমে আছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে নারীর প্রতি এমন সহিংসতার হার ৪৪ শতাংশ। আর এ তালিকায় দেখা গেছে নারীর প্রতি সবচেয়ে কম সহিংসতা ঘটছে পোল্যান্ডে, ১৯ শতাংশ।[৫][৬]

মুসলিম নারীর অবস্থান[সম্পাদনা]

ইউরোপে বসবাসকারি মুসলিম নারীরা ইসলামি রীতি অনুযায়ী চলাফেরা করেন এবং একই সঙ্গে সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে সমঅধিকার চান, আর তাতেই তাদের জীবনে দেখা দিচ্ছে সমস্যা৷ সেখানে মাথা ঢেকে চলা এবং নেকাব ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয়। তবে একজন নারী, একজন মুসলিম এবং একজন ইউরোপীয়র মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে বহুমুখিতার স্বীকৃতি প্রয়োজন হয়৷ অনেক দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে হিজাব, বোরখা ও নেকাব নিষিদ্ধ করেছে এবং তারা এ পোশাককে সভ্যতা ও প্রগতির অন্তরায় ভাবে।[৭]

অর্থনৈতিক অঙ্গনে নারাী[সম্পাদনা]

ইউরোপের জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে নারীরা। দারিদ্রের ঝুঁকিতে থাকা পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ বেশি। তবুও অনেক নারী আছেন তারা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সমাজে নারীর অবস্থান | উপ-সম্পাদকীয় | The Daily Ittefaq"archive1.ittefaq.com.bd। ২০২১-০৯-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৩ 
  2. Schwarzkopf, Jutta "Women's History: Europe" in Boyd, Kelly ed. (১৯৯৯)। Encyclopedia of Historians and Historical Writing, vol 2। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 1316–18। 
  3. Karen Offen, Ruth Roach Pierson, and Jane Rendall, eds (1991). Writing Women's History: International Perspectives. covers 17 countries including Austria, Denmark, East Germany, Greece, the Netherlands, Norway, Spain, Sweden, Switzerland and Yugoslavia.
  4. Offen, Karen M. (2000). European feminisms, 1700-1950: a political history. Stanford University Press.
  5. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ইউরোপের দেশে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা"Prothomalo। ২০২১-০৯-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৩ 
  6. Welle (www.dw.com), Deutsche। "ইউরোপের নারীরাও নির্যাতনের শিকার | DW | 08.03.2014"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৩ 
  7. Welle (www.dw.com), Deutsche। "ইউরোপে মুসলিম নারীদের বহুমুখী অবস্থান | DW | 06.11.2010"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৩ 
  8. "পাশ্চাত্যে জীবন ব্যবস্থা (পর্ব-২০)"Parstoday। ২০২১-০৩-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৩