সৈয়দ আহমদ উল্লাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী থেকে পুনর্নির্দেশিত)
গাউসুল আযম
শায়খ

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর মাজার, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
অন্য নামগাউছুল আজম[টীকা ১]
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
আহমদ উল্লাহ

আনু. (১৮২৬-০১-১৪)১৪ জানুয়ারি ১৮২৬
মৃত্যু২৩ জানুয়ারি ১৯০৬(1906-01-23) (বয়স ৮০)
মৃত্যুর কারণবার্ধক্য
সমাধিস্থলমাইজভান্ডার, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
ধর্মইসলাম
দাম্পত্য সঙ্গী
  • সৈয়দা আলফুন্নেসা
  • সৈয়দা লুৎফুন্নেসা
সন্তান
  • সৈয়দা বদিউন্নেছা বিবি
  • সৈয়দ ফয়জুল হক
  • সৈয়দা আনোয়ারুন্নেছা
পিতামাতা
  • সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভান্ডারী (পিতা)
  • সৈয়দা খায়রুন্নেছা (মাতা)
যুগআধুনিক যুগ
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
তরিকাকাদেরী
মাইজভান্ডারী
অন্য নামগাউছুল আজম[টীকা ১]
আত্মীয়গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী
দেলোয়ার হোসেন মাইজভাণ্ডারী
এর প্রতিষ্ঠাতাতরিকা-এ-মাইজভান্ডারী
মুসলিম নেতা
ভিত্তিকমাইজভান্ডার দরবার শরীফ
উত্তরসূরীগোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী
সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন মাইজভান্ডারী

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী বা শায়খ আহমদ উল্লাহ (১৪ জানুয়ারি ১৮২৬ — ২৩ জানুয়ারি ১৯০৬) হলেন একজন সুফি সাধক ও মাইজভান্ডারী তরীকার[১] প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী নামেই বহুল পরিচিত। তার অনুসারীগণ যে সকল প্রচার-প্রকাশনা বাংলা, আরবি, উর্দু এবং ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় ছাপিয়ে আসছে, তাতে তার নাম গাউছুল আজম হযরত মৌলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী কেবলা ক্বাবা কাদ্দাছাল্লাহু ছিরহুল আজিজ / (কঃ) লিখতে দেখা যায়। এছাড়া তার অনুসারীগণ তাঁকে গাউছুল আজম, হযরত কেবলা, বড় মৌলানা, খাতেমুল অলদ, শাঁই-এ-লিল্লাহ্ প্রভৃতি উপনামেও ডেকে থাকে।[২][৩][৪][৫][৬]

বংশ[সম্পাদনা]

আহমদ উল্লাহর পূর্বপুরুষগণ ছিলেন সৈয়দ এবং মূলত মদিনা থেকে বাগদাদদিল্লি হয়ে মধ্যযুগীয় বাংলার পূর্ববর্তী রাজধানী গৌড়ে চলে আসেন। তার প্র-প্রপিতামহ সৈয়দ হামিদ উদ্দিন ছিলেন গৌড়ের নিযুক্ত ইমাম ও কাজী, কিন্তু শহরে হঠাৎ মহামারীর কারণে হামিদ পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ায় চলে আসেন।[৭] হামিদের ছেলে সৈয়দ আবদুল কাদেরকে আধুনিক দিনের ফটিকছড়ির আজিমনগরের ইমাম করা হয়েছিল। তার দুই পুত্র ছিল; সৈয়দ আতাউল্লাহ ও সৈয়দ তৈয়ব উল্লাহ। শেষের জনের তিন পুত্র ছিল; সৈয়দ আহমদ, সৈয়দ মতিউল্লাহ ও সৈয়দ আবদুল করিম। তন্মধ্যে দ্বিতীয়জন হলেন সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর পিতা।

জন্ম[সম্পাদনা]

আহমদ উল্লাহ ১৮২৬ সালে ১৪ জানুয়ারী (১ম মাঘ, ১২৩৩ বাংলা সন) চট্টগ্রাম শহর হতে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে তৎকালীন প্রত্যন্ত মাইজভান্ডার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। [৮] তার পিতার নাম সৈয়দ মতিউল্লাহ মাইজভান্ডারী ও মাতার নাম সৈয়দা খায়রুন্নেছা।[৯] তার পারিবারিক নাম ছিল সৈয়দ আহমদ উল্লাহ।

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

আহমদ উল্লাহ গ্রামের মক্তবের পড়ালেখা শেষ করার পর ১২৬০ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১২৬৮ হিজরীতে পাশ করেন। সেখানেই তিনি তৎকালীন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা সমাপন করে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রিত অতিথি বা বক্তা হিসাবে ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণার কাজে লিপ্ত ছিলেন।[১০]তিনি সৈয়দ আবু শাহমা মুহাম্মদ সালেহ কাদেরী লাহোরীর কাছ থেকে অধ্যয়ন করার পাশাপাশি আবু শাহমার বড় ভাই দিলওয়ার আলী পাকবাজ লাহোরীর কাছ থেকেও অধ্যয়ন করেন।[১১]

আনুগত্যের শপথ[সম্পাদনা]

তিনি সৈয়দ আবু শাহমা মুহাম্মদ সালেহ কাদেরী লাহোরীর কাছে কাদেরিয়া তরিকায় আনুগত্যের শপথ (বায়াত) নেন এবং তার নিকট থেকে খেলাফতপ্রাপ্ত হন।[১২]

কর্ম জীবন[সম্পাদনা]

তিনি শিক্ষা জীবন শেষে করে হিজরী ১২৬৯ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতের যশোর অঞ্চলের বিচার বিভাগীয় কাজী পদে যোগদান করেন এবং একই সঙ্গে মুন্সেফী অধ্যয়ন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১২৭০ হিজরীতে কাজী পদে ইস্তফা দিয়ে তিনি কলিকাতায় মুন্সী বু আলী মাদ্রাসায় প্রধান মোদাররেছ হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে মুন্সেফী পরীক্ষায় ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে ছিলেন।

আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী হাদিস, তাফসির, ফিকহ, মানতিক, হিকমত, বালাগত, উছুল, আকায়েদ, ফিলছফা, ফারায়েজ সহ যাবতীয় বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। আরবী, উর্দু, বাংলাফারসি ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। তৎকালীন সময়ে ওয়ায়েজ এবং বক্তা হিসাবে তার খ্যাতি ছিল। অল্প কিছু দিন পরই তিনি আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে আত্ম নিয়োগ করেন। তখন হতে তিনি বাকি জীবন একজন সুফি সাধক হিসাবে অতিবাহিত করেন।[১৩]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১২৭৬ হিজরীতে ৩২ বছর বয়সে আজিম নগর নিবাসী মুন্সী সৈয়দ আফাজ উদ্দিন আহমদের কন্যা সৈয়দা আলফুন্নেছা বিবির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্ত বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার স্ত্রী মারা যান। সেই বছরই তিনি পুনরায় সৈয়দা লুৎফুন্নেছা বিবিকে বিয়ে করেন। ১২৭৮ হিজরী সালে তার প্রথম মেয়ে সৈয়দা বদিউন্নেছা বিবি জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু মেয়েটি চার বছর বয়সে মারা যায়। এরপর তার আরোও একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করে অল্প দিনের মধ্যে মারা যান। অতঃপর ১২৮২ হিজরীতে দ্বিতীয় পুত্র সৈয়দ ফয়জুল হক এবং ১২৮৯ হিজরী সালে দ্বিতীয় কন্যা সৈয়দা আনোয়ারুন্নেছা জন্মগ্রহণ করেন। তার দ্বিতীয় পুত্রও পিতার পুর্বে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ১৩২৩ হিজরী ২৭ জিলক্বদ, ১০ মাঘ ১৩১৩ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৯০৬ সালের ২৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে মাইজভান্ডারে সমাহিত করা হয়।[১২] প্রতি বছর মাঘ তার মৃত্যু দিবস উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপী ওরস অনুষ্ঠিত হয়। এতে বহু মানুষের সমাগম ঘটে।

তরিকা-এ-মাইজভান্ডারিয়া[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন রিভিউ ট্রাইব্যুনাল (এমআরটি) এবং রিফিউজি রিভিউ ট্রাইব্যুনাল (আরআরটি) দ্বারা তৈরি একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মাইজভান্ডারিয়া সুফি তরিকার আজ দশ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. গাউছুল আজম অর্থ সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা। কারো কারো মতে আল্লাহই সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা এবং শুধুমাত্র তিনি কাউকে অলৌকিকভাবে সাহায্য করতে পারেন। অন্যদের মতে আল্লাহ কাউকে কাউকে তার মত সাহায্য করার ক্ষমতা দিয়েছেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বাংলা সংবাদ মাধ্যম: দৈনিক আজাদী, শিরোনাম: গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর ওরছ আজ থেকে। প্রকাশকাল: জানুয়ারী ২১, ২০১৪ খৃঃ, পেছনের পৃষ্ঠা, তৃতীয় কলাম" 
  2. ফার্সী গ্রন্থ: আয়নায়ে বারী, লেখক: আব্দুল গণি কাঞ্চনপুরী, বইয়ে দেয়া তারিখ মোতাবেক লেখা শেষ হয়: ১৪ই জমাদিউস্ সানি, ১৩৩০ হিঃ (১৯০৯/১০ইঃ), ২য় প্রকাশকাল: ৩০শে আগস্ট, ২০০৭
  3. বাংলা গীতিকাব্য গ্রন্থ: ওফাত নামা, লেখক: আমিনুল হক হারবাঙ্গিরী, প্রকাশকাল: ১৯০৭, বর্তমানে মূল কপি কেবল মাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত রয়েছে।
  4. আরবী ও ফার্সী ভাষায় সমন্বিত গ্রন্থ: তোহফাতুল আখইয়ার ফী দাফ-ই-শারারাতিল আশরার, ১ম প্রকাশকাল: ১৩১৩ বঙ্গাব্দ, ১৯০৭ খৃষ্টাব্দ, লেখক: আমিনুল হক ফরহাদাবাদী, বঙ্গানুবাদ: সৈয়দ ফয়জুল ইসলাম ফরহাদাবাদী।
  5. "গবেষণা গ্রন্থ: এ ছুফি মুভমেন্ট ইন বাংলাদেশ: মাইজভান্ডারী তরীকা এন্ড ইটস্ ফলোয়ার্স (A Sufi Movement in Bangladesh: Maizbhanderi tariqa and its followers), লেখক: পিটার জে. র্ব্যাটচ্চি (Peter J. Bertocci), ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটি, মিশিগান, ইউএসএ"। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৪ 
  6. নিয়মিত প্রকাশনা: নকশার সন্ধানে, চতুর্থ সংখ্যা, প্রকাশকাল: ৫ জুন ২০০১ খৃঃ, শিরোনাম: গাউছুল আজম শব্দের তাৎপর্য ও ব্যবহার, লেখক: সৈয়দ আহমদুল হক, সভাপতি, আল্লামা রুমি সোসাইটি
  7. Harder, Hans (২০১১), Sufism and Saint Veneration in Contemporary Bangladesh: The Maijbhandaris of Chittagong, Routledge, পৃষ্ঠা 15–22, আইএসবিএন 978-1-136-83189-8 
  8. মাইজভান্ডারী তরীকার দর্শন বিশ্লেষণাত্বক তাত্ত্বিক বাংলা গ্রন্থ: বেলায়তে মোতলাকা, লেখক: সৈয়দ দেলোয়ার হোসাইন মাইজভান্ডারী, ৩য় সংস্করণ: ১৯৭৪।
  9. "মাইজভান্ডার মঈনিয়া"। ২৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৪ 
  10. "ইংরেজি গবেষণা গ্রন্থ: Sufism and Saint Veneration in Contemporary Bangladesh: The Maijbhandaris of Chittagong (Routledge Advances in South Asian Studies), লেখক: হেনস্ হার্ডার, হাইডেল বার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানি (Hans Harder, Head of Department of Modern South Asian Languages and Literatures, Heidelberg University)" 
  11. Huda, Muhammad Shehabul (১৯৮৫)। The Saints And Shrines Of Chittagong (গবেষণাপত্র)। Chittagong: University of Chittagong 
  12. মওলানা, মুহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া। হযরত গাউছুল আজম শাহছুফী মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) মাইজভাণ্ডারীর জীবনী ও কেরামত। গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল, মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম: মাইজভাণ্ডারী প্রকাশনী। 
  13. মাইজভান্ডারী তরীকার ইতিহাস নির্ভর তাত্ত্বিক বাংলা গ্রন্থ: এলাকার রেনেসাঁর যুগের একটি দিক, লেখক: সৈয়দ দেলোয়ার হোসাইন মাইজভান্ডারী, প্রকাশকাল: ১৯৭৪।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]