আন্দালুস

স্থানাঙ্ক: ৩৭° উত্তর ৪° পশ্চিম / ৩৭° উত্তর ৪° পশ্চিম / 37; -4
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আল আন্দালুস থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আন্দালুস

আন্দালুস(আরবি: الأنْدَلُس, trans. al-ʼAndalus; স্পেনীয়: al-Ándalus; পর্তুগিজ: al-Ândalus; কাতালান: al-Àndalus;Berber: Andalus or Wandalus) মুসলিম স্পেন বা ইসলামি ইবেরিয়া দ্বারা মধ্যযুগে মুসলিম শাসিত ইবেরিয়ান উপদ্বীপ বোঝানো হয়। বর্তমানে এটি স্পেনপর্তুগালের অংশ।[১] সংক্ষিপ্তকালের জন্য ফ্রান্সের দক্ষিণের সেপ্টিমেনিয়া অঞ্চল এর অংশ ছিল এবং এটি পশ্চিম ইউরোপ ও ইতালিকে সংযুক্ত করেছিল।[২][৩] পুরো ইবেরিয়ান উপদ্বীপকে বোঝানো হলেও রিকনকোয়েস্টা অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এর সীমানা পরিবর্তন হয়েছে। ৭১১ থেকে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত এর আয়ুষ্কাল ধরা হয়।[৪][৫][৬]

উমাইয়াদের হিস্পানিয়া বিজয়ের পর আন্দালুসকে পাঁচটি প্রশাসনিক ইউনিটে ভাগ করা হয়। এগুলো মোটামুটি আধুনিক আন্দালুসিয়া, গেলিসিয়াপর্তুগাল, কাস্টিললিওন, আরাগণ, বার্সেলোনা কাউন্টি ও সেপ্টিমেনিয়া নিয়ে গঠিত ছিল।[৭] রাজনৈতিক পরিচিতির দিক থেকে এটি যথাক্রমে উমাইয়া খিলাফতের প্রদেশ (৭১১-৭৫০), কর্ডোবা আমিরাত (৭৫০-৯২৯), কর্ডোবা খিলাফত (৯২৯-১০৩১) ও কর্ডো‌বা খিলাফতের তাইফা রাজ্য হিসেবে ছিল। এসকল শাসনের সময় মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় লক্ষ্য করা যায়। খ্রিষ্টানইহুদিরা জিজিয়া দেয়ার বিনিময়ে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত।[৮] করডোবা খিলাফতের সময় আন্দালুস জ্ঞানের আলোকে পরিণত হয় এবং কর্ডো‌বা ইউরোপসহ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। জাবির ইবনে আফলা, আবু ইশাক ইবরাহিম আল জারকালি, আবুল কাসিম আল জাহরাউয়ি, ও ইবনে জুহরদের ত্রিকোণমিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, শল্যচিকিৎসা, ওষুধ ও অন্যান্য নানা বিষয় সংক্রান্ত গবেষণার ফলে ইসলামি ও পশ্চিমা সমাজ অগ্রগতি অর্জন করে।[৯][১০] আন্দালুস ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের প্রধান শিক্ষাকেন্দ্রের অন্যতম পরিগণিত হত এবং তা মুসলিম ও খ্রিষ্টান বিশ্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক আদানপ্রদানের স্থল হয়ে উঠে।

ইতিহাসের অধিকাংশ সময়জুড়ে আন্দালুসের সাথে উত্তরের খ্রিষ্টান রাজ্যগুলোর বিরোধ চলেছিল। উমাইয়া খিলাফতের পতনের পর আন্দালুস কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে যার মধ্যে গ্রানাডা আমিরাত উল্লেখযোগ্য। খ্রিষ্টান কাস্টিলিয়ানদের হামলা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আলমোরাভি সাম্রাজ্য হস্তক্ষেপ করে খ্রিষ্টান হামলা প্রতিহত করে, দুর্বল আন্দালুসিয়ান মুসলিম রাজাদের সরিয়ে আন্দালুসকে সরাসরি বার্বার শাসনের আওতায় আনা হয়। পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে আন্দালুস মারাকেশ ভিত্তিক বার্বার মুসলিম সাম্রাজ্য আলমোরাভিআলমোহাদের প্রদেশে পরিণত হয়।

শেষপর্যন্ত উত্তরের খ্রিষ্টান রাজ্যগুলো তাদের মুসলিম প্রতিবেশী রাজ্যগুলোকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়। ১০৮৫ সালে ষষ্ঠ অলফেনসো টলেডো দখল করেন। এরপর মুসলিমদের ধীরে ধীরে পতনের সূচনা হয়। ১২৩৬ সালে করডোবার পতনের পর গ্রানাডা আমিরাত বর্তমান স্পেনের একমাত্র মুসলিম অঞ্চল হিসেবে টিকে ছিল। ১২৪৯ পর্তুগিজ রিকনকোয়েস্টা শুরু হয় এবং পর্তুগালের তৃতীয় অলফেনসো আলগারভ জয় করেন। ১২৩৮ সালে গ্রানাডা আমিরাত কাস্টিল রাজ্যের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। অবশেষে ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি[১১] আমির দ্বাদশ মুহাম্মদ কাস্টিলের রাণী প্রথম ইসাবেলার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ইসাবেলা ও তার স্বামী দ্বিতীয় ফার্ডিনেন্ড একত্রে "ক্যাথলিক সম্রাট" বলা হত। আত্মসমর্পণের পর আন্দালুসের রাজনৈতিক পরিচিতির অবসান ঘটে। এ অঞ্চলে ইসলামি সংস্কৃতির চিহ্ন এখনও বিদ্যমান রয়েছে।[১২]

নাম[সম্পাদনা]

টোপোনিয়ম আল-আন্দালুস প্রথম আইবেরিয়ার নতুন মুসলিম সরকার কর্তৃক ৭১৬ সালে তৈরি মুদ্রার শিলালিপি দ্বারা সত্যায়িত হয়।[১৩] এই মুদ্রাগুলি, যাকে দিনার বলা হয়, ল্যাটিন এবং আরবি উভয় ভাষায় খোদাই করা হয়েছিল।[১৪][১৫] "আল-আন্দালুস" নামের ব্যুৎপত্তি ঐতিহ্যগতভাবে ভান্ডালদের নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে (স্প্যানিশ ভাষায় ভান্ডালোস); যাইহোক, ১৯৮০-এর দশক থেকে প্রস্তাবগুলি এই ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করেছে।[১৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Gómez-Rivas, Camilo (২০১৪-১১-২০)। Law and the Islamization of Morocco under the Almoravids: The Fatwās of Ibn Rushd al-Jadd to the Far Maghrib (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা ১। আইএসবিএন 978-90-04-27984-1 
  2. Versteegh, Kees (১৯৯০-০১-০১)। "The Arab Presence in France and Switzerland in the 10Th Century"Arabica (ইংরেজি ভাষায়)। 37 (3): 359–388। আইএসএসএন 1570-0585জেস্টোর 4057147ডিওআই:10.1163/157005890X00041 
  3. Wenner, Manfred W. (আগস্ট ১৯৮০)। "The Arab/Muslim Presence in Medieval Central Europe"International Journal of Middle East Studies (ইংরেজি ভাষায়)। 12 (1): 59–79। আইএসএসএন 1471-6380জেস্টোর 163627ডিওআই:10.1017/S0020743800027136 
  4. "Para los autores árabes medievales, el término Al-Andalus designa la totalidad de las zonas conquistadas — siquiera temporalmente — por tropas arabo-musulmanas en territorios actualmente pertenecientes a Portugal, España y Francia" ("For medieval Arab authors, al-Andalus designated all the conquered areas — even temporarily —by Arab-Muslim troops in territories now belonging to Portugal, Spain and France"), José Ángel García de Cortázar, V Semana de Estudios Medievales: Nájera, 1 al 5 de agosto de 1994, Gobierno de La Rioja, Instituto de Estudios Riojanos, 1995, p.52.
  5. Eloy Benito Ruano (২০০২)। Tópicos y realidades de la Edad Media। Real Academia de la Historia। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 978-84-95983-06-0 
  6. "Andalus, al-" Oxford Dictionary of Islam. John L. Esposito, Ed. Oxford University Press. 2003. Oxford Reference Online. Oxford University Press. Accessed 12 June 2006.
  7. Joseph F. O'Callaghan, A History of Medieval Spain, Cornell University Press, 1983, p.142
  8. Lewis, Bernard. The Jews of Islam. PrincetMeyrick, Fredrick. The Doctrine of the Church of England on the Holy Communion.on, NJ: Princeton University Press, 1984.pg. 14.
  9. Covington, Richard (২০০৭)। Arndt, Robert, সম্পাদক। "Rediscovering Arabic Science"Saudi Aramco World। Aramco Services Company। 58 (3): 2–16। 
  10. Zaimeche, Salah (আগস্ট ২০০২)। "Agriculture in Muslim civilisation : A Green Revolution in Pre-Modern Times"। Muslim Heritage। ৭ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  11. Pigna, Felipe (২০১৮-০২-০৬)। "La Reconquista española"El Historiador (স্পেনীয় ভাষায়)। ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  12. "The Moors in Andalucia – 8th to 15th Centuries"। Andalucia Com SL। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৫ 
  13. Panzram, Sabine; Callegarin, Laurent (২০১৮-১১-২২)। Entre civitas y madina: El mundo de las ciudades en la península ibérica y en el norte de África (siglos IV-IX) (স্পেনীয় ভাষায়)। Casa de Velázquez। পৃষ্ঠা ১৪৫। আইএসবিএন 978-84-9096-227-5 
  14. N.Y.), Metropolitan Museum of Art (New York; Alhambra, Patronato de la (১৯৯২)। Al-Andalus: The Art of Islamic Spain (ইংরেজি ভাষায়)। Metropolitan Museum of Art। পৃষ্ঠা ৩৮৪। আইএসবিএন 978-0-87099-636-8 
  15. Glick, Thomas F. (২০০৫)। Islamic And Christian Spain in the Early Middle Ages (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা ২১। আইএসবিএন 978-90-04-14771-3 
  16. País, Ediciones El (২০১৬-০৯-২৫)। "De dónde vienen los nombres de las Comunidades Autónomas españolas"Verne (স্পেনীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৬ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]