আর্দশির প্রাসাদ
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান | |
---|---|
অবস্থান | ফর্স প্রদেশ, ইরান |
মানদণ্ড | সাংস্কৃতিক: ii, iii, iv |
সূত্র | 893 |
তালিকাভুক্তকরণ | ১৯৯৭ (২১তম সভা) |
স্থানাঙ্ক | ২৮°৫৩′৫৩″ উত্তর ৫২°৩২′২২″ পূর্ব / ২৮.৮৯৮০৯১° উত্তর ৫২.৫৩৯৩১৪° পূর্ব |
অর্দাশির পাপাকানের প্রাসাদ (ফার্সি: کاخ اردشير پاپکان) হল ইরানের ফিরুজাবাদ (পেরোজ), ফর্স প্রদেশে অবস্থিত একটি সাসানীয় প্রাসাদ-দুর্গ যা পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত। এটি সাসানীয় সাম্রাজ্যের রাজা প্রথম আর্দশির কর্তৃক ২২৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত।[১] পারস্যের প্রাচীন শহর গোর থেকে ২ কিমি (১ মা) উত্তরে, এবং কালেহ দোখতার (আক্ষরিক অর্থ "কুমারীর প্রাসাদ") থেকে প্রায় ৫ কিমি (৩ মা) দক্ষিণে অবস্থিত প্রাসাদটি আরদেশির-ই-বাবাকান প্রাসাদ, আরদেশীর বাবাকানের প্রাসাদ, কাসর-এ আরদাশির-ই বাবাকান ও আটাশ-কাদেহ ফিরুজাবাদ নামেও পরিচিত।[২] প্রাসাদটি যেখানে অবস্থিত সেই প্রাচীন শহরটির নামকরণ করা হয় "পেরোজ" (আক্ষরিক অর্থে বিজয়ী), পরে আরদাশির শেষ পার্থিয়ান রাজা আরদাভানকে উৎখাত করে সাসানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পেরোজকে আরব বিজয়ের পর থেকে ফিরোজ বলা হয় এবং নামটি এখনও প্রচলিত রয়েছে। আধুনিক শহর ফিরুজাবাদ তাই পারস্য ইতিহাসে তাৎপর্যপূর্ণ স্থান নিয়েছে।
বর্ণনা
[সম্পাদনা]ইরানি-মুসলিম ঐতিহাসিক, ইবনে ইস্তাখরি, স্থানটিকে সাসানীয় রাজবংশের সময় নির্মিত একটি অগ্নি মন্দির হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য পণ্ডিত, ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকরা স্থানটিকে পার্থিয়ান যুগের শেষের দিকে বা সাসানীয় যুগের প্রথম দিকে আর্দেশির দ্বারা নির্মিত প্রাসাদ বলে প্রতিবেদন করেছেন।
কাঠামোটি প্রস্থে ১০৪ মি (৩৪১ ফু) এবং দৈর্ঘ্যে ৫৫ মি (১৮০ ফু)। ইওয়ানটি ১৮ মি (৫৯ ফু) উঁচু, যদিও এটি বর্তমানে আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কাঠামোটিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে, অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে যা এটিকে তার পূর্বসূরি দেজ দোখতারের নিকটবর্তী দুর্গের চেয়ে কিছুটা অধিক বিস্তৃত এবং আরও মহৎ করে তুলেছে। যদিও, মনে হয় যে প্রতিরক্ষা উদ্দেশ্যে একটি সুরক্ষিত কাঠামোর চেয়ে কম্পাউন্ডটি প্রথম আর্দাশিরের রাজকীয় ভাবমুর্তি প্রদর্শনের জন্য নকশা করা হয়েছিল। এই কারণেই সম্ভবত কাঠামোটিকে "দুর্গ" না বলে একটি "প্রাসাদ" হিসাবে উল্লেখ করা যৌক্তিক, যদিও এর ঘেরে বিশাল দেয়াল রয়েছে (গালেহ দোখতারের চেয়ে দ্বিগুণ পুরু), এবং এটি একটি অন্তর্ভুক্ত কাঠামো। স্থাপত্য নকশা থেকে, মনে হয় প্রাসাদটি একটি সামাজিক জমায়েতের স্থান ছিল যেখানে অতিথিদের রাজকীয় সিংহাসনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো।[১]
এই প্রাসাদের সম্পর্কে বিশেষ আকর্ষণীয় বিষয় হল, এর স্থাপত্য নকশা ঠিক পার্থিয়ান বা এমনকি সাসানীয় শ্রেণীর মধ্যে পড়ে না; বরং নকশাটি ফর্সের স্থপতিদের জন্য একটি অনন্য নকশা।[১]
প্রাসাদটি একটি মনোরম পুকুরের পাশে নির্মিত হয়েছিল যা একটি প্রাকৃতিক ঝরনা দ্বারা বেষ্টিত ছিল, সম্ভবত এটি পারস্যের জল এবং বৃদ্ধির দেবী, অনাহিতার সাথে সম্পর্কিত। বসন্ত কালে একটি রাজকীয় বাগান প্রতিপালিত হয়েছে বলে মনে করা হয়, একইভাবে সাইরাস তার বাগান (বুস্তান) পাসারগাডে তৈরি করেছিলেন। পুকুরটি দুপাশে হেলানো ছিল, রাজদরবারের অতিথিরা সন্ধ্যা উপভোগ করার জন্য যা ছিল পাকা শানের মেঝে দিয়ে ঘেরা।
কাঠামোটি স্থানীয় শিলা এবং মর্টার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং ভিতরের অংশে প্লাস্টারওয়ার্ক ছিল। এর অভ্যন্তরীণ নকশার শৈলী পার্সেপোলিসের তাছারা প্রাসাদের সাথে তুলনীয়।[১]
আধুনিক যুগে
[সম্পাদনা]ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ, জেন ডিউলাফয় তার স্বামী মার্সেল-অগাস্ট ডিউলাফয়ের সাথে স্থানটি পরিদর্শন করেন এবং লা পার্সে, লা চ্যাল্ডি এট লা সুসিয়ান গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেন।[৩]
১৯৩৪ সালের ফেব্রুয়ারিত, রবার্ট বায়রন সেখানে ছিলেন এবং দ্য রোড টু অক্সিয়ানা বইইয়ে এ-সম্পর্কে লিখেছেন। বায়রন প্রাসাদটিকে স্কুইঞ্চের আদিরূপ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিবেচনা করেছিলেন। তার মতে, সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকা এবং তাজমহলের মতো ভবনগুলি স্কুইঞ্চ এবং পেন্ডেন্টিভ ধারণা ব্যতিত নির্মাণ সম্ভব হতো না।[৪]
১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ফিরোজাবাদ এবং এর আশেপাশের অর্দাশির প্রাসাদ এবং অন্যান্য স্থানগুলিকে অস্থায়ীভাবে তালিকাভুক্ত করে।[৫]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ "Palace of Ardashir Shiraz, Iran"। তাসনিম নিউজ এজেন্সি। ২১ মার্চ ২০১৮। ৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০২২।
- ↑ "Palace of Ardashir-e Babakan - Ancient Palace in Firooz Abad"। itto.org (ইংরেজি ভাষায়)। Iran Tourism and Touring Organization। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০২২।
- ↑ ডিউলাফয়, জেন (১৮৮৭)। "২৬"। La Perse, la Chaldée et la Susiane। ২০১৩-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-১৯।
- ↑ বায়রন, রবার্ট (২০০৭) [১৯৩৭]। The Road to Oxiana। পেঙ্গুইন অ্যাডাল্ট। পৃষ্ঠা ১৬৬–১৭০। আইএসবিএন 9780141442099। ওএল 25995729M। ওসিএলসি 124948278।
- ↑ "Firuzabad Ensemble - UNESCO World Heritage Centre"। ইউনেস্কো। ১১ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১২।