বিষয়বস্তুতে চলুন

আবু সাঈদ (আন্দোলনকর্মী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আবু সাঈদ (শহীদ) থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আবু সাঈদ
মৃত্যুর কিছু মুহূর্ত আগে তোলা আবু সাঈদের ছবিটিকে কোটা আন্দোলনের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এভাবে বুক চিতিয়ে পুলিশের দিকে দাঁড়িয়ে থাকাকালে পুলিশ তার দিকে রাবার বুলেট ছুড়লে তিনি ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ও হাসপাতালে নেওয়ার আগেই রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করেন।
জন্ম২০০১
মৃত্যু১৬ জুলাই ২০২৪
রংপুর
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
মাতৃশিক্ষায়তনবেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
পেশাছাত্র
পরিচিতির কারণ২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহীদ
আন্দোলন২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন

আবু সাঈদ (২০০১ - ১৬ জুলাই ২০২৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয়কর্মী। তিনি এই আন্দোলনের রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন।[১] ১৬ জুলাই আন্দোলন চলাকালে একজন পুলিশ সদস্যের গুলিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩] কোটা আন্দোলনকারীরা তাকে আন্দোলনের প্রথম শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছে।[৪]

ব্যক্তিগত জীবন

আবু সাঈদ ২০০১ সালে রংপুরের জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মকবুল হোসেন এবং মাতার নাম মনোয়ারা বেগম। আবু সাঈদের ছয় ভাই ও তিন বোন ছিলো, নয় ভাই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। তিনি স্থানীয় জাফর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপরে স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জি‌পিএ-৫ পে‌য়ে এসএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি ২০১৮ সালে রংপুর সরকা‌রি কলে‌জ থেকে জি‌পিএ-৫ পেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরে তিনি ২০২০ সালে বেগম রো‌কেয়া‌ বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে ইং‌রে‌জি বিভাগে ভ‌র্তি হন।[৫] তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।[৬]

২০২৪-এর আন্দোলন

আবু সাঈদ ছিলেন ২০২৪ সালের বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন কর্মী। ২০১৩, ২০১৮ সালের পর ২০২৪ সালের ৬ জুন আবারো কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হয়। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসাবে এই আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রংপুর অঞ্চলে কোটা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি আন্দোলনকে বেগবান করতে ১৫ জুলাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে উল্লেখ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন:[৭]

১৬ জুলাই দুপুর ১২টা থেকেই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে কোটা আন্দোলনকর্মীরা বিক্ষোভ করছিলো। আবু সাঈদ এই আন্দোলনের সম্মুখ ভাগেই অবস্থান করছিলো সবসময়।

মৃত্যু

১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদের সবাই স্থান ত্যাগ করলেও আবু সাঈদ স্থান ত্যাগ করেনা। সে হাতে একটি লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। পুলিশ এই অবস্থায় তার উপরে গুলি ছুড়ে। সংঘর্ষ শুরু হলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আবু সাঈদ। অন্যরা একটু পেছনে ছিলেন। আবু সাঈদের ঠিক সামনে অবস্থান ছিল পুলিশের। পুলিশের অবস্থানের জায়গাটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। উল্টো দিক থেকে রাবার বুলেট ছুড়ছিলেন পুলিশের সদস্যরা। তারপরও অবস্থান থেকে সরেননি আবু সাঈদ, দাঁড়িয়েই ছিলেন, তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি। তিনি সেই লাঠি দিয়ে রাবার বুলেট ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। একপর্যায়ে শরীরে একের পর রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।[২][৩]

প্রতিক্রিয়া

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ছেলেটার কাছে যেহেতু প্রাণঘাতী কোনও অস্ত্র ছিল না, কাজেই পুলিশের সহিংস হওয়ার কোনও দরকার ছিল না, কিন্তু পুলিশ সেটি না করে গুলি ছুড়লো। নিরীহ মানুষের উপর এমন আক্রমণ মোটেও মেনে নেওয়া যায় না।”[৮] ১৭ জুলাই ভারতীয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ফেসবুকে আবু সাঈদের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেন, “আজ, অস্থির লাগছে। আমিও তো সন্তানের জননী। আশা করবো বাংলাদেশ শান্ত হবে।”[৯]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

কোটা আন্দোলনকে কবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী তার নামে প্রজন্মের বীর আবু সাঈদ নামে একটা কবিতা লিখেন।[১০] আন্দোলন কর্মীরা রংপুর পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‌‘আবু সাঈদ চত্বর’ দিয়েছেন।[১১] সেই সাথে শিক্ষার্থীরা রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুলগেটের নাম “শহীদ আবু সাঈদ গেইট’’ নামকরণ করেন।[১২]

তথ্যসূত্র

  1. সংবাদদাতা, নিজস্ব; দিনাজপুর (২০২৪-০৭-১৬)। "পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, রংপুরে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত"ডেইলি স্টার। ২০২৪-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৭ 
  2. "রংপুরে যেভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন আন্দোলনকারী আবু সাঈদ"প্রথম আলো। ১৬ জুলাই ২০২৪। ১৬ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০২৪ 
  3. "স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার, স্যার!"প্রথম আলো। ১৭ জুলাই ২০২৪। ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪ 
  4. "'যতদিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন' মৃত্যুর আগে আবু সাইদের বার্তা"দৈনিক যুগান্তর। ১৭ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪ 
  5. "আদরের ছোট ছেলে সাঈদের মৃত্যুতে পাগলপ্রায় মা, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন"দ্য ডেইলি স্টার বাংলা। ১৬ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪ 
  6. "বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন, জানাজায় মানুষের ঢল"banglanews24.com। ১৭ জুলাই ২০২৪। ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪ 
  7. "'যতদিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন' মৃত্যুর আগে আবু সাইদের বার্তা"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪ 
  8. "রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি, ঠিক কী ঘটেছিল?"বিবিসি বাংলা। ১৭ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪ 
  9. "আবু সাঈদের ছবি পোস্ট করে ভারতের অভিনেত্রী স্বস্তিকা লিখলেন, 'অস্থির লাগছে'"প্রথম আলো। ১৮ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০২৪ 
  10. ফরায়জী, শহীদুল্লাহ। "প্রজন্মের বীর আবু সাঈদ"মানবজমিন। ২০২৪-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৭ 
  11. "রংপুর পার্ক মোড়ের নাম ‌'আবু সাঈদ চত্বর' দিলেন শিক্ষার্থীরা"সময় টিভি। ১৭ জুলাই ২০২৪। 
  12. "বেরোবিতে নিহত আবু সাঈদের নামে চত্বর ও গেট উদ্বোধন"নয়া শতাব্দী। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৭