অস্ট্রেলিয়ার জার্মান নিউ গিনি দখল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অস্ট্রেলিয়ার জার্মান নিউ গিনি দখল
মূল যুদ্ধ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় রণাঙ্গন

১৯১৪ সালে অস্ট্রেলীয় ফ্লিট সিম্পসন পোতাশ্রয়ে প্রবেশ করছে।
তারিখসেপ্টেম্বর - নভেম্বর ১৯১৪
অবস্থান
ফলাফল সফল অস্ট্রেলীয় দখল
বিবাদমান পক্ষ
 অস্ট্রেলিয়া

 জার্মান সাম্রাজ্য

সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
অস্ট্রেলিয়া উইলিয়াম হোমস
যুক্তরাজ্য জর্জ প্যাটি
কার্ল ফন ক্লেউইৎজ
রবার্ট ফন ব্লুমেন্থাল
শক্তি
২,০০০ ৫০০
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
৩৯ নিহত
১২ আহত
৮৫ নিহত
১৫ আহত

অস্ট্রেলিয়ার জার্মান নিউ গিনি দখল ছিল প্রশান্ত মহাসগরীয় উপনিবেশ জার্মান নিউ গিনির কর্তৃত্ব গ্রহণ করা, অস্ট্রেলীয় নৌ ও সামরিক অভিযান বাহিনী নামে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি অভিযাত্রী বাহিনী ১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বর - নভেম্বরে এটি দখল করে।

পটভূমি[সম্পাদনা]

জার্মান নিউ গিনি[সম্পাদনা]

জার্মান নিউ গিনি (জার্মান: ডয়চে-নেউগুয়েনিয়া) ১৮৮৪ সাল থেকে একটি জার্মান সাম্রাজ্যের আশ্রিত রাজ্য ছিল। জার্মান নিউ গিনি নিউ গিনির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অঞ্চল (জার্মান: কায়জার-উইলহেমসল্যান্ড) এবং বিসমার্ক দ্বীপপুঞ্জের নিকটবর্তী নিউ ব্রিটেন (জার্মান: নেও-পোমের্ন) এবং নিউ আয়ারল্যান্ড (জার্মান: নেও-মেকলেনবার্গ) নিয়ে গঠিত।[১] জার্মান সামোয়া বাদ দিয়ে অন্যান্য পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় জার্মান দ্বীপপুঞ্জের সাথে তারা জার্মান সাম্রাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগরীয় আশ্রিত রাজ্য গঠন করেছিল। এই আশ্রিত রাজ্যের মধ্যে জার্মান সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জ, পালাউ, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ (গুয়াম বাদে), মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এবং নাউরু অন্তর্ভুক্ত ছিল।[২] জার্মান সাম্রাজ্যের নিউ গিনিতে পলিজিট্রুপ্পি নামে একটি আধাসামরিক পুলিশ বাহিনী ছিল; সাধারণত শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং বিদ্রোহ দমন করার জন্য এই বাহিনী ব্যবহৃত হত। বিটা পাকায় পলিজিট্রুপ্পিতে প্রায় ৫০ জন জার্মান অফিসার, এনসিও এবং সংরক্ষিত সেনাদল এবং ২৪০ জন স্থানীয় পুলিশ সেনা ছিল। জার্মান পূর্ব এশীয় ক্রুজার স্কোয়াড্রন কর্তৃক ব্যবহারের জন্য রাবুলে প্রচুর কয়লা মজুদ করা হয়েছিল।

সামরিক পরিস্থিতি[সম্পাদনা]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর জার্মান পূর্ব এশিয়া স্কোয়াড্রন সাঁজোয়া ক্রুজার স্কারনহর্স্টজেনিসেনা এবং হালকা ক্রুজার নুরেনবার্গ, লিপজিগ, ড্রেসডেন এবং এমডেনের সমন্বয়ে ভাইস-অ্যাডমিরাল ম্যাক্সিমিলিয়ান ফন স্পি-র অধীনে প্রশান্ত মহাসাগরের উদ্দেশ্য যাত্রা করে। ব্রিটেন ইতোমধ্যে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়া সমস্ত জার্মান অন্তঃসামুদ্রিক তার কেটে ফেলেছিল। এই অঞ্চলে মিত্রশক্তির বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আক্রমণ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়াকে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত জার্মান বেতারকেন্দ্রসমূহ এবং কয়লা বোঝাই করার কেন্দ্রসমূহ ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করেছিল।

অস্ট্রেলিয়া দ্রুত প্রথম ব্যাটালিয়ন, এএনএমইএফ নামে পরিচিত সিডনিতে তালিকাভুক্ত ১,০০০ সদস্যের পদাতিক সেনার একটি ব্যাটালিয়ন এবং ৫০০ সংরক্ষিত নৌ-সেনাদল ও প্রাক্তন নাবিক যারা পদাতিক হিসাবে কাজ করবে তাদের নিয়ে অস্ট্রেলীয় নৌ ও সামরিক অভিযান বাহিনী (এএনএমইএফ) গঠন করেছিল।[৩] কুইন্সল্যান্ড ভিত্তিক কেনেডি রেজিমেন্ট থেকে মিলিশিয়ার আরও একটি ব্যাটালিয়নকে দ্রুত গ্যারিসন থার্সডে দ্বীপে প্রেরণ করা হয়েছিল, এই বাহিনীতেও ৫০০ স্বেচ্ছাসেবী ছিল।[৪] এএনএমইএফকে ছয় মাসের মধ্যে জার্মান সাম্রাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগরীয় আশ্রিত রাজ্যসমূহ দখল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল জার্মান পূর্ব এশিয়া স্কোয়াড্রনকে সহায়তাদানকারী বেতারকেন্দ্রসমূহ এবং কয়লা বোঝাই করার কেন্দ্রসমূহ দখল বা ধ্বংস করা।

ব্যাটলক্রুজার এইচএমএএস অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় শ্রেণির সুরক্ষিত ক্রুজার এইচএমএএস এনকাউন্টার, হালকা ক্রুজার এইচএমএএস মেলবোর্ন এবং সিডনি এবং ডেস্ট্রয়ার এইচএমএএস পাররামাত্তা, ইয়াত্রা এবং ওয়ারেগোর সমন্বয়ে গঠিত অস্ট্রেলিয়া স্কোয়াড্রন এই অঞ্চলটি প্রাথমিক নিরীক্ষণ শুরু করে। ভাইস অ্যাডমিরাল স্যার জর্জ প্যাটির নেতৃত্বে ডেস্ট্রয়ার ১২ আগস্ট ব্ল্যাঞ্চ উপসাগরে প্রবেশ করে। ১২ আগস্ট এইচএমএএস অস্ট্রেলিয়া সুমাত্রা এবং এইচএমএএস এনকাউন্টার সেন্ট জর্জেস প্রণালিতে টহল দেওয়ার সময় জাম্বেসিকে দখল করে। এইচএমএএস মেলবোর্ন ১৩ আগস্ট রোজেল দ্বীপ থেকে কয়লাবাহী জাহাজ অ্যালকোন্ডার কয়লা সংভৃত করে।

ডেস্ট্রয়ার রাতে জার্মান পূর্ব এশিয়া স্কোয়াড্রনকে অনুসন্ধান করতে সিম্পসন পোতাশ্রয় এবং মাতুপি পোতাশ্রয়ে প্রবেশ করে। রাবুলে অবস্থিত ডাকঘরের টেলিফোন এবং ২০ মাইল (৩২ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পূর্বে জার্মান গর্ভনটোরিয়াল রাজধানী হারবার্তশোহে (বর্তমানে কোকোপো) ধ্বংস করতে ডেস্ট্রয়ার থেকে অবতরণকারী দলসমূহকে উপকূলে পাঠানো হয়। বেতার কেন্দ্র শনাক্ত করতে অক্ষম অস্ট্রেলিয়ান যুদ্ধজাহাজগুলি প্রত্যাহারের আগে, বেতার কেন্দ্র চালিয়ে যেতে থাকলে নিকটবর্তী জনবসতিগুলিতে বোমাবর্ষণ করার হুমকি দেয়।[৫]

দখল[সম্পাদনা]

নিউ ব্রিটেন[সম্পাদনা]

বিটা প্যাকার যুদ্ধ[সম্পাদনা]

বিটা প্যাকার যুদ্ধ, ১৯১৪

১৯১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার জার্মান বেতার কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করার সময় বিটা প্যাকা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। জার্মান কর্মকর্তা এবং মেলানেশিয় পুলিশদের সমন্বয়ে গঠিত একটি মিশ্র বাহিনী শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং অস্ট্রেলিয়দের তাদের লক্ষ্য পথে লড়াই করতে বাধ্য করেছিল। একদিন লড়াইয়ের পর উভয় পক্ষই হতাহতের শিকার হয়, অগণিত অস্ট্রেলীয় বাহিনী অবশেষে বেতার কেন্দ্র দখল এবং ধ্বংস করতে সফল হয়।[৬]

তোমা অবরোধ[সম্পাদনা]

এএনএমইএফের সৈন্যরা তোমা ঘেরাও করলে ১৯১৪ সালের ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তোমা অবরোধের আওতায় আসে। অবশেষে তারা ভারি কামান থেকে গোলাবর্ষণ করার জন্য ১২-পাউন্ডের ফিল্ড খণ্ড নিয়ে আসার ফলে জার্মান গ্যারিসন আত্মসমর্পণের বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়।[৭]

নিউ গিনি[সম্পাদনা]

মাদাং[সম্পাদনা]

১৯১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কোন ধরনের বাধা ছাড়াই মাদাং দখল করা হয়।

ফলাফল[সম্পাদনা]

অসাধারণ গতিতে সংগঠিত এবং সমাপ্ত, অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক পরিচালিত প্রথম স্বতন্ত্র সামরিক অভিযান হিসাবে জার্মান নিউ গিনি দখল গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[৮]

প্রায় ২০ জন স্থানীয় পুলিশ সদস্য সহ জার্মান অফিসার লেফটেন্যান্ট হারমান দেৎ্জনার নিউ গিনির অভ্যন্তুরে ধরা পড়েন এবং পুরো যুদ্ধে বিরত থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির পর বিজয়ী মিত্ররা জার্মানির সমস্ত ঔপনিবেশিক সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। জার্মান নিউ গিনি অস্ট্রেলীয় প্রশাসনের অধীনে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ-এর তত্ত্বাবধানকারী অঞ্চল নিউ গিনি অঞ্চলে পরিনত হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. Churchill 1920, পৃ. 84।
  2. MacKenzie 1941, পৃ. 1–6।
  3. Grey 2008, পৃ. 87।
  4. MacKenzie 1941, পৃ. 23–25।
  5. MacKenzie 1941, পৃ. 38।
  6. Clark 2010, পৃ. 96–97।
  7. Odgers 1994, পৃ. 42।
  8. Parkin 2003, পৃ. 93–94।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]