প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য রণাঙ্গন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মধ্য প্রাচ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রঙ্গমঞ্চ
মূল যুদ্ধ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
গ্যালিপোলি অভিযান, ফেব্রুয়ারি – এপ্রিল ১৯১৫
গ্যালিপোলি অভিযান, এপ্রিল ১৯১৫।
তারিখ৩০ অক্টোবর ১৯১৪ - ৩০ অক্টোবর ১৯১৮
(৪ বছর)
অবস্থান
ফলাফল

মিত্রশক্তি জয়ি

অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিভাজন
বিবাদমান পক্ষ

মিত্র শক্তি:
 যুক্ত রাজ্য

 রাশিয়া (১৯১৭ পর্যন্ত)

 ফ্রান্স

টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Democratic Republic of Armenia আর্মেনিয়া (1918)
Hejaz
 ইতালি
Nejd and Hasa
আসির
অক্ষ শক্তি:
 Ottoman Empire
 German Empire
 Austria-Hungary[১][২]
Clients:
জাবাল শামার
সেনুসি (১৯১৫ থেকে)
আজারবাইজান (১৯১৮)
জর্জিয়া (রাষ্ট্র) জর্জিয়ান (1918)
শক্তি
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ২,৫৫০,০০০[৩]
রুশ সাম্রাজ্য ১,০০০,০০০[৪]
তৃতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্র বিভিন্ন ১০০,০০০[৪]
টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Democratic Republic of Armenia বিভিন্ন ১০০,০০০[৪]
ইতালির রাজত্ব (১৮৬১–১৯৪৬) ৭০,০০০[৩]

৩০,০০০ (১৯১৬)[৫]
৫০,০০০+ (১৯১৮)[৬]
২,০০০[ক]
সর্বমোট: ৩,৬২০,০০০+
উসমানীয় সাম্রাজ্য
2,800,000 (মোট বাধ্যতামূলকভাবে সৈন্যদলে নিযুক্ত)[৭]
৮০০,০০০ (peak)[৭][৮]
৩২৩,০০০ ( যুদ্ধবিরতি চলাকালীন)[৯]
জার্মান সাম্রাজ্য
6,500 (1916)
২০,০০০ (১৯১৮)[৭]
২০,০০০ (১৯১৮)[খ]
১০,০০০ (১৯১৫)[১০]
: ৯,০০০ (১৯১৮)[১১]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
~১,২৫০,০০০
Breakdown
  • Casualties by country
    • ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ১,০০৫,০০০
    • রুশ সাম্রাজ্য ১৪০,০০০+
    • তৃতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্র ৪৭,০০০+
    • ইতালির রাজত্ব (১৮৬১–১৯৪৬) ১১,০০০+
১,৫৬০,০০০[১২]
৭৭১,৮৪৪ নিহত/নিখোঁজ
৬৯৫,৩৭৫ আহত
১৪৫,১০৪ যুদ্ধবন্দী
৫,০০০,০০০ বেসামরিক মানুষ নিহত[১৩] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের উসমানীয়দের হতাহতের তালিকায় উসমানীয়দের হতাহতের সংখ্যা তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

মধ্য প্রাচ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রঙ্গমঞ্চ অনুষ্ঠিত হয় ২৯ অক্টোবর ১৯১৪ থেকে ৩০ অক্টোবর ১৯১৮ পর্যন্ত। একদিকে ছিল অক্ষ শক্তির সহযোগীতায় উসমানীয় (অটোম্যান) সাম্রাজ্য  (কুর্দি এবং কিছু আরব উপজাতি সহ) এবং অন্যদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য (ইহুদী, গ্রীক, আসিরিয় এবং  সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন ভারতীয়দের সাথে নিয়ে), রাশিয়ান (আর্মেনীয়দের সহায়তায়) এবং মিত্রশক্তির ফরাসিরা। পাঁচটি প্রধান সামরিক অভিযান হলো: সিনাই এবং প্যালেস্টাইন অভিযান, মেসোপটেমিয়ায় অভিযান, ককেশাস অভিযান, পারস্য অভিযান এবং গ্যালিপোলি অভিযান। বেশ কয়েকটি ছোটখাটো অভিযানও ছিল: যেমন, সেনুসি অভিযান, আরব অভিযান, এবং দক্ষিণ আরব অভিযান

উভয় পক্ষই এ অঞ্চলের স্থানীয় অসমমিতিক বাহিনী (asymmetrical forces) ব্যবহার করে। জোটের পক্ষে আরব বিপ্লবে অংশ নেওয়া আরবরা এবং আর্মেনীয় গণহত্যার সময় আর্মেনীয় প্রতিরোধে অংশ নেওয়া আর্মেনিয়ান মিলিশিয়ারা অংশগ্রহণ করে; আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবক দলের সাথে আর্মেনিয়ান মিলিশিয়ারা ১৯১৮ সালে প্রথম আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্রের আর্মেনিয়ান সেনাবাহিনী গঠন করে। এছাড়া আসিরিয়া গণহত্যার পরে আসিরিয়ারা মিত্রবাহিনীতে যোগ দেয়, আসিরিয়ার স্বাধীনতার যুদ্ধকে উস্কে দেয়।[১৪] তুর্কি উসমানীয়দের প্রতি কুর্দি (১৯১৫ অবধি), তুর্কমান, সিরকাসিয়ান, চেচেন এবং বেশ কয়েকটি ইরানি, আরব এবং বারবার গ্রুপের সমর্থন ছিল। রঙ্গমঞ্চটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমস্ত রঙ্গমঞ্চের বৃহত্তম অঞ্চল জুড়েছিল।

এরজিঙ্কের যুদ্ধবিরতি চুক্তির (৫ ডিসেম্বর ১৯১৭) পর রঙ্গমঞ্চ থেকে রাশিয়ার প্রস্থান ঘটে, এরপর ব্রেস্ট-লিটোভস্ক চুক্তির (৩ মার্চ ১৯১৮) চুক্তির অধীনে বিপ্লবী রাশিয়ান সরকার যুদ্ধ থেকে সরে আসে। আর্মেনিয়রা ট্র্যাবজন শান্তি সম্মেলনে (১৪ ই মার্চ ১৯১৮) যোগদান করে এবং ১৯১৮ সালের ৪ জুন বাতুম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উসমানীয়রা ১৯১৮ সালের ৩০ অক্টোবর মিত্রদের সাথে মুদর্স যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, ১৯২০ সালের ১০ আগস্ট স্যাভ্রেসের চুক্তি এবং পরে ২৪ জুলাই ১৯২৩ সালে লুসান চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

উসমানীয় এবং অক্ষ শক্তি[সম্পাদনা]

উসমানীয় সাম্রাজ্য ১৯১৪ সালের ২ আগস্ট স্বাক্ষরিত গোপনীয় চুক্তির মাধ্যমে উসমানীয়-জার্মান জোট গঠন করে অক্ষ শক্তিতে যোগদান করে।[১৫] ককেসাসে উসমানীয় সাম্রাজ্যের মূল লক্ষ্য ছিল রুশ-তুর্কি যুদ্ধের (১৮৭৭– ১৮৭৮) সময় হারানো এলাকা বিশেষকরে আর্তভিন, আর্দাহান, কার্স এবং বাতুম বন্দর পুনরুদ্ধার করা। এই অঞ্চলে উসমানীয়দের সাফল্য রাশিয়ানদের পোলিশ এবং গ্যালিসিয়ান রণক্ষেত্র থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য করবে।[১৬]

এই কারণে জার্মান পরামর্শদাতারা উসমানীয় সেনাবাহিনীর  এই অভিযানকে সমর্থন করে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, উসমানীয়দের বরং বলা ভাল জার্মানির কৌশলগত লক্ষ্য ছিল ক্যাস্পিয়ান সাগরের চারপাশে হাইড্রোকার্বন সংস্থানগুলিতে রাশিয়ান সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া।[১৭]

জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে প্রাচ্যের জন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এ্যাংলো-রাশিয়ান মৈত্রী ভেঙে ফেলার জন্য সংস্থাটি পারস্য থেকে মিশর[১৮] এবং আফগানিস্তানে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও ধ্বংসাত্মক মিশনে জড়িত ছিল।[১৯] উসমানীয় যুদ্ধ মন্ত্রী এনভার পাশা দাবি করেন যে পারস্যের মূল শহরগুলিতে যদি রাশিয়ানরা পরাজিত হয় তবে এটি আজারবাইজান, পাশাপাশি মধ্য প্রাচ্যের বাকী অংশ এবং ককেশাসের পথ উন্মুক্ত করবে।

এনভার মনে মনে পরিকল্পনা করেন যে,  যদি এই দেশগুলিকে পশ্চিমা প্রভাব থেকে সরিয়ে নেওয়া যায় তাহলে এই নতুন প্রতিষ্ঠিত তুর্কি রাজ্যগুলির মধ্যে একটি সহযোগিতা গড়ে তুলবেন। এনভারের প্রকল্পটি ইউরোপীয় স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক, যা বেশ কয়েকটি মূল সাম্রাজ্যিক শক্তির মধ্যে বিবাদের কারণ হিসাবে কাজ করেছে। উসমানীয়রা সুয়েজ খাল দিয়ে ভারত ও প্রাচ্যের সাথে ব্রিটেনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেয়। জার্মানরা অক্ষশক্তির জন্য খালটি দখল করতে বা কমপক্ষে মিত্রবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করার প্রত্যাশা করেছিল।

মিত্রশক্তি[সম্পাদনা]

ব্রিটেন[সম্পাদনা]

ব্রিটিশরা আশঙ্কা করছিল যে উসমানীয়রা মধ্য প্রাচ্যের (এবং পরবর্তীকালে ক্যাস্পিয়ানের) তেলক্ষেত্রগুলিতে আক্রমণ ও দখল করতে পারে।[১৭] ব্রিটিশ রাজকীয় নৌ-বাহিনী দক্ষিণ পারস্যের পেট্রোলিয়াম মজুদখানার তেলের উপর নির্ভরশীল, সেখানে ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত ইঙ্গ-পারসিক তেল কোম্পানির একচেটিয়া প্রবেশাধিকার ছিল।[১৭]

অক্সফোর্ডের ইতিহাসবিদ (এবং কনজারভেটিভ এমপি) জে.এ.আর. ম্যারিয়টের নিকটপ্রাচ্য এবং বালকান রঙ্গমঞ্চের জন্য কৌশল নিয়ে ব্রিটিশদের বিতর্কের সংক্ষিপ্তসার হলো:

এই রঙ্গমঞ্চের যুদ্ধ অনেকগুলি সমস্যা উপস্থিত করে এবং অনেক প্রশ্নের পরামর্শ দেয়। সময় মতো বল প্রয়োগের মাধ্যমে তুরস্ককে গ্রেট ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সাথে তাঁর প্রাচীন সংযোগের সাথে বেধে রাখা যেতে পারত; আরও বিজ্ঞ কূটনীতির মাধ্যমে বুলগেরিয়ার বৈরিতা এড়ানো যেত এবং গ্রিসের সাথে সহযোগিতা নিশ্চিত করা যেত; মিত্র শক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের দ্বারা সার্বিয়া এবং মন্টিনিগ্রো থেকে নির্মম আঘাতটি  নিবৃত্ত করা যেত; দার্দানেলস অভিযানটি কেবলমাত্র মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে বা তাত্ক্ষণিক বিবেচনায় ত্রুটিপূর্ণ ছিল কিনা; রোমানিয়া দেরিতে আসছে কিনা, বা খুব শীঘ্রই এগিয়ে আসছে কিনা এবং ভুল দিকে যাচ্ছে কিনা।[২০]

রাশিয়া[সম্পাদনা]

রাশিয়ানরা পূর্ব রনাঙ্গনের ককেসাস রনাঙ্গনকে গৌণ হিসাবে বিবেচনা করতো। রুশ-তুর্কি যুদ্ধ (১৮৭৭– ১৮৭৮) ও বাতুম বন্দর যুদ্ধের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে কেড়ে নেওয়া কারসকে পুনরুদ্ধার করার উদ্দেশ্যে উসমানীয়রা ককেসাসে অভিযান চালাতে পারে মনে করে ভয় করতেছিল।[২১]

১৯১৫ সালের মার্চ মাসে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই সাজনোভ ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জর্জ বুচানান এবং ফরাসী রাষ্ট্রদূত মরিস প্যালোলোগের সাথে সাক্ষাত করেন, তিনি যুদ্ধপরবর্তীতে উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল, বসফরাস এবং দার্দানেলিস প্রণালী, মারমারা সাগর, এনোস-মিডিয়া লাইন পর্যন্ত দক্ষিণ থ্রেস পাশাপাশি বসফরাসের মধ্যবর্তী আনাতোলিয়ার কৃষ্ণ সাগর উপকূলের কিছু অংশ, সাকারিয়া নদী এবং ইজমিত উপসাগরের নিকটে একটি নির্ধারিত বিন্দু পর্যন্ত এলাকায় স্থায়ী উপনিবেশ স্থাপনের দাবি করেন। রাশিয়ান সাম্রাজ্য সরকার উত্তর আনাতোলিয়া এবং ইস্তাম্বুলের মুসলিম অধিবাসীদের অধিক বিশ্বাসযোগ্য কোসাকদের দ্বারা প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা করে।[২১]

আরমেনীয়[সম্পাদনা]

আর্মেনিয় জাতীয় মুক্তি আন্দোলন আর্মেনিয়ান পার্বত্য অঞ্চলে একটি আর্মেনিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতেছিল। আর্মেনিয়ান বিপ্লবী ফেডারেশন যুদ্ধের পরে এটি অর্জন করে, ১৯১৮ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রথম আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৫ সালের প্রথম দিকে, পশ্চিম আর্মেনিয়া প্রশাসন এবং পরবর্তীকালে আর্মেনিয়া পার্বত্য প্রজাতন্ত্র ছিল আর্মেনীয়-নিয়ন্ত্রিত সত্তা, আর্মেনিয়ানদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয়-ক্যাস্পিয়ান স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সত্তার কোনওটিই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

আরব[সম্পাদনা]

হেজাজ রাজতন্তের প্রধান রাজা হুসেন মুখ্য নায়ক ছিলেন। এখন যাকে আরব বিদ্রোহ বলে তিনি তার নেতৃত্ব দেন, এর মূল লক্ষ্য ছিল স্ব-শাসন এবং অঞ্চলটির উপর উসমানীয় নিয়ন্ত্রণের অবসান।

যুদ্ধক্ষেত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন: ককেসাস অভিযান, সিনাই এবং প্যালেস্টাইন অভিযান, গ্যালিপোলি অভিযান, মেসোপটেমিয়া অভিযান, পারস্য অভিযান এবং আরব বিদ্রোহ

উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং মিত্রপক্ষের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ককেশাস অভিযানের অন্তর্ভুক্ত, পরবর্তীতে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, মধ্য ক্যাস্পিয়ান একনায়কতন্ত্র এবং  সহ মধ্য প্রাচ্যের রঙ্গমঞ্চের  অংশ হিসাবে বা বিকল্প হিসাবে যুক্তরাজ্য এতে যোগ দেয়, এর আরেক নাম হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ককেশাস অভিযানের অংশ। ককেশাস অভিযানটি ককেশাস থেকে পূর্ব এশিয়া মাইনর হয়ে ট্র্যাবজন, বিতলিস, মুশ এবং ভ্যান পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। রাশিয়ান নৌবাহিনী কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের ফলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের ভূমিতে যুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

১৯১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রুশ বিপ্লবের পরে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে বিভক্ত রাশিয়ান ককেসাস আর্মি সদ্য প্রতিষ্ঠিত আর্মেনিয়ান রাজ্যের বাহিনী দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, এতে পূর্ববর্তী আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবক দল এবং আর্মেনীয় অনিয়মিত বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯১৮ সালের মধ্যে এই অঞ্চলটি কেন্দ্রীয় ক্যাস্পিয়ান একনায়কতন্ত্র, আর্মেনিয়া পার্বত্য প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা এবং ডানস্টারফোর্স নামে একটি মিত্র বাহিনীকেও দেখেছিল যারা মেসোপটেমিয়ান এবং পশ্চিম রণাঙ্গন থেকে আসা বাছাই-করা সেনাদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল।

জার্মানদের ককেশাস অভিযানের পরে বাটোমিতে উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং জার্মান সাম্রাজ্য একে অপরের সাথে লড়াই করে যার মূল লক্ষ্য ছিল তেলের সরবরাহ নিরাপদ করা। ১৯১৮ সালের ৩ মার্চ ব্রেস্ট-লিটোভস্কের চুক্তির মধ্য দিয়ে উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং রাশিয়ার মধ্যকার লড়ায়ের সমাপ্তি ঘটে এবং ১৯১৮ সালের ৪ জুন উসমানীয় সাম্রাজ্য আর্মেনিয়ার সাথে বাতুম চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তবে ১৯১৮ সালের ৩০ অক্টোবর মুদ্রোস যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত উসমানীয় সাম্রাজ্য সাথে কেন্দ্রীয় ক্যাস্পিয়ান একনায়কতন্ত্র, আর্মেনিয়া পার্বত্য প্রজাতন্ত্র এবং ডানস্টারফোর্স থেকে আসা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাহিনীর সাথে সংঘর্ষ চলতে থাকে।

পূর্ব ইউরোপীয় রণক্ষেত্রে উসমানীয়রা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন: বালকান অভিযান (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ) এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রোমানিয়া

রোমানিয়ায় বালকান অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য ১৯১৬ সালে পূর্ব ইউরোপীয় রণাঙ্গনে ৯০,০০০ এরও বেশি ওসমানীয় সেনা পাঠানো হয়। অক্ষশক্তি এই ইউনিটগুলিকে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অভিযানে সহায়তা করার জন্য বলে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এই সৈন্যবিন্যাসটি ভুল ছিল, কারণ  রাশিয়ার সেনাবাহিনীর মারাত্মক ইরজারিয়াম আক্রমণের বিরুদ্ধে উসমানীয় অঞ্চলকে রক্ষার জন্য এই বাহিনীটিকে আরও ভালভাবে মোতায়েন করা যেতে পারে।

পূর্ব ইউরোপীয় রণাঙ্গনে সৈন্যদের স্থানান্তরকরণ শুরু হয়েছিল এনভারের মাধ্যমে। এটি মূলত জার্মান চিফ অফ স্টাফ এরিচ ফন ফ্যালকেনহেইন প্রত্যাখ্যান করেন, তবে তার উত্তরসূরি পল ফন হিনডেনবার্গ এতে সম্মতি জানান, যদিও রিজার্ভেশনসহ। পূর্ব রণাঙ্গনে অক্ষ শক্তির সৈন্য সংখ্যা কম থাকায় ব্রুসিলভ আক্রমণ হওয়ার পরে সিদ্ধান্তটি পৌঁছেছিল।

১৯১৬ সালের প্রথম দিকে সৈন্যবিন্যাসের সময় এনভার গ্যালিসিয়ায় পঞ্চদশ আর্মি কোর, রোমানিয়ায় ষষ্ঠ আর্মি কোর এবং বিংশতিতম আর্মি কোর এবং ১৭৭তম পদাতিক রেজিমেন্টকে ম্যাসেডোনিয়ায় প্রেরণ করেন। ষষ্ঠ কোর রোমানিয়ান সেনাবাহিনীর পতনের জন্য রোমানিয়ান অভিযানে অংশ নিয়েছিল এবং বিশেষত তীব্র শীতে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার দক্ষতার জন্য তারা মূল্যবান ছিল। পঞ্চদশ কোর গ্যালিসিয়ায় রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে খুব ভাল লড়াইয়ের জন্য পরিচিতি পায়,[২২] প্রায়শই তারা রুশদের উপর হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের হতাহত করে।[২৩]

সৈন্যবাহিনী[সম্পাদনা]

আরও দেখুন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মধ্য প্রাচ্যের রণাঙ্গনের সেনাপতিদের তালিকা

অক্ষ শক্তি (উসমানীয় সাম্রাজ্য)[সম্পাদনা]

উসমানীয় সাম্রাজ্যের যুদ্ধমন্ত্রী ইসমাইল এনভার
১৯১৬ সালে জেরুজালেমে অস্ট্রিয়ান সেনারা জিয়ন পর্বতমালার দিকে যাত্রা করে

১৯০৮ সালের ৩ জুলাই তরুণ তুর্কি বিপ্লব এবং দ্বিতীয় সাংবিধানিক যুগের প্রতিষ্ঠার পরে (তুর্কি: ইকিঙ্কি মেসরুটিয়েট দেবরি) একটি বড়ধরনের সামরিক সংস্কার শুরু হয়। সেনা সদর দফতর আধুনিকীকরণ করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র কয়েক বছর আগে উসমানীয় সাম্রাজ্য তুরস্কো-ইতালিয়ান যুদ্ধ এবং বালকান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, ফলে সেনাবাহিনীর আরও পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরী ছিল।

শুরু থেকেই উসমানীয় সেনাবাহিনী নিজেদের তৈরি বেশ কয়েকটি সমস্যার মুখোমুখি হয়। প্রথমত সাম্রাজ্যের ভিতরে ভাগের ফলে উসমানীয় সেনাবাহিনীর আকার মারাত্মকভাবে ছোট হয়ে পড়ে: অমুসলিমদের সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল, এবং ইতিমধ্যে বিশ্বাসযোগ্য জাতিগত তুর্কিরা সাম্রাজ্যের অপেক্ষাকৃত ছোট জাতীগোষ্ঠিতে পরিনত হয়েছে, ২২ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে জাতিগত তুর্কি ছিল ১২ মিলিয়ন, অবশিষ্ট ১০ মিলিয়ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠির আনুগত্য ছিল পরিবর্তনশীল এবং সামরিক বাহিনীতে ব্যবহারের জন্য বিশ্বাসযোগ্যহীন। জিডিপি, অবকাঠামো এবং শিল্প শক্তিতে অন্যান্য শক্তির তুলনায় উসমানীয়রা খুব দুর্বল ছিল। তুলনা করলে দেখা যায়, সাম্রাজ্যে রেলপথের পরিমান মাত্র ৫,৭৫৯ কিলোমিটার, যেখানে পাঁচ ভাগের এক ভাগ আয়তনের ফ্রান্সের ৫১,০০০ কিলোমিটার রেলপথ ছিল। উসমানীয়দের কয়লা উৎপাদন ছিল সামন্য (১৯১৪ সালে উৎপাদন ছিল ৮২০,০০০ টন, যেখানে ফ্রান্সের ছিল ৪০,০০০,০০০ টন এবং ব্রিটেনের ২৯২,০০০,০০০ টন), যখন ইস্পাত উৎপাদন ছিল অবিদ্যমান।[২৪] সাম্রাজ্যে একটিমাত্র কামান ও ছোট অস্ত্র তৈরির কারখানা ছিল, একটি শেল (কামানের গোলা) এবং বুলেট উৎপাদ কারখান এবং একটি বারূদ কারখানা, এগুলির সবই কনস্ট্যান্টিনোপল শহরতলিতে অবস্থিত ছিল। উসমানীয়দের অর্থনীতি উল, তুলা এবং চামড়ার মতো পণ্যের উপর ভিত্তি করে প্রায় সম্পূর্ণরূপে কৃষি নির্ভর ছিল।[২৫]

এই সময়, সাম্রাজ্য তার বাহিনীকে আর্মিতে ভাগ করে দেয়। প্রতিটি আর্মি সদর দফতরে একটি চিফ অফ স্টাফ, একটি অপারেশন বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগ, যুদ্ধ বিদ্যা বিভাগ এবং একটি কর্মী বিভাগ থাকে। উসমানীয় সামরিক বিভাগের দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্য হিসাবে সরবরাহ, চিকিৎসা এবং পশুচিকিৎসা সেবা আর্মির অন্তর্ভুক্ত ছিল। যুদ্ধের আগে তুর্কি জেনারেল স্টাফ অনুমান করেছিলেন যে একই সময় ১০,০০০,০০০ লোককে একত্রিত করা সম্ভব এবং এর মধ্যে ৫০০,০০০ লোককে ভ্রাম্যমাণ যুদ্ধে আর্মি হিসাবে পাওয়া যাবে, বাকিদেরকে গ্যারিসন, উপকূলীয় প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ও পরিবহনে জন্য কাজে লাগানো যাবে। ভ্রাম্যমাণ আর্মির জন্য প্রায় ৯০০ ফিল্ড গান সহজলভ্য ছিল, যার ২৮০ টি যুদ্ধে ব্যবহারের চেয়ে কম মানের ছিল, যদিও ছোট কামানের (howitzers) সরবরাহ সাধারণত পর্যাপ্ত পরিমানে ছিল।[২৬] অ্যাড্রিয়ানপল, এরজুরুম, বসফরাস, দারদানেলিস এবং কাতালকা জুড়ে উপকূলীয় এবং দুর্গ গ্যারিসনে অতিরিক্ত ৯০০ টি স্থায়ী বা আধাস্থায়ী বিন্যাস করা ছিল। গোলাবারুদের পরিমান কম ছিল; প্রতিটি কামানের জন্য প্রায় ৫৮৮ টি শেল (কামানের গোলা) সহজলভ্য ছিল।[২৭] অধিকন্তু, সেনাবাহিনী ধারণা করে যে এটির অবস্থান শক্তিশালী করতে আরও কয়েক হাজার মেশিনগান প্রয়োজন; সাধারণত ১৫ লাখ রাইফেল মজুদের ক্ষমতা ছিল, সেনাবাহিনীর আরও ২ লাখ রাইফেল প্রয়োজন ছিল।

১৯১৪ সালে, সাম্রাজ্য যুদ্ধে যোগদানের আগে, আর্মি তাদের বাহিনীকে চারটি কোর এবং  বিভাগে বিভক্ত করে, প্রতিটি বিভাগে তিনটি পদাতিক রেজিমেন্ট এবং একটি আর্টিলারি রেজিমেন্ট ছিল। প্রধান ইউনিটগুলি ছিল: পনেরোটি বিভাগ নিয়ে প্রথম আর্মি; ৪ টি বিভাগ এবং তিনটি পদাতিক রেজিমেন্ট এবং একটি আর্টিলারি ব্রিগেড সহ একটি স্বাধীন পদাতিক বিভাগ নিয়ে দ্বিতীয় আর্মি; নয়টি বিভাগ, চারটি স্বতন্ত্র পদাতিক রেজিমেন্ট এবং চারটি স্বাধীন অশ্বারোহী রেজিমেন্ট (উপজাতি ইউনিট) নিয়ে তৃতীয় আর্মি; এবং চারটি বিভাগ নিয়ে চতুর্থ আর্মি

১৯১৪ সালের আগস্টে ৩৬ টি পদাতিক ডিভিশন সংগঠিত করা হয়, চৌদ্দটি ঘষেমেজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং মূলত নতুন বিভাগ ছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বিভাগগুলির মধ্যে আটটিতে বড় ধরনণর পুন:শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। যুদ্ধের সময় আরও আর্মি প্রতিষ্ঠা করা হয়; ১৯১৫ সালে পঞ্চম আর্মিষষ্ঠ আর্মি, ১৯১৭ সালে সপ্তম আর্মিঅষ্টম আর্মি এবং ১৯১৮ সালে কুভা-ই-ইঞ্জিবাতিয়ে এবং ইসলামি আর্মি, যার মাত্র একটি কোর ছিল।

১৯১৮ সালের মধ্যে মূল আর্মি এত খারাপভাবে হ্রাস পায় যে সাম্রাজ্যকে নতুন ইউনিট স্থাপন করতে বাধ্য হতে হয়, যার ফলে নতুন আর্মিগুলোকে সংগঠিত করতে হয়। এগুলি ছিল পূর্বাঞ্চলীয় আর্মি গ্রুপ এবং ইলদিরিম আর্মি গ্রুপ। তবে, যুদ্ধের চার বছরে আর্মির সংখ্যা বাড়তে থাকলেও সাম্রাজ্যের জনশক্তি ও সরবরাহের সংস্থান হ্রাস পাচ্ছিল, ফলে ১৯১৮ সালের সেনাবাহিনী ১৯১৪ সালের সেনাবাহিনীর চেয়ে ছোট ছিল। উসমানীয় আর্মি যুদ্ধের শেষ অবধি আংশিক কার্যকর ছিল।

বেশিরভাগ সামরিক সরঞ্জাম জার্মানি বা অস্ট্রিয়ায় নির্মিত এবং জার্মান ও অস্ট্রিয়ান ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হত। জার্মানি বেশিরভাগ সামরিক পরামর্শদাতাদেরও সরবরাহ করেছিল; একটি বিশেষজ্ঞ সৈন্য বাহিনী (এশিয়া কোর) ১৯১৭ সালে প্রেরণ করা হয় এবং ১৯১৮ সালে যুদ্ধে শক্তি বৃদ্ধির জন্য দুটি রেজিমেন্ট পাঠানো হয়। ১৯১৮ সালের গোড়ার দিকে ককেশাস অভিযানের সময় জার্মান ককেসাস অভিযানটি সাবেক রাশিয়ান ট্রান্সককেশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মূল লক্ষ্য ছিল জার্মানির জন্য তেল সরবরাহ নিরাপদ করা এবং বর্ধনশীল জার্মানপন্থী জর্জিয়া গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে স্থিতিশীল করা। নতুন প্রজাতন্ত্রটি উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং জার্মানিকে সংঘাতের মধ্যে নিয়ে আসে, যুদ্ধের শেষের মাসগুলিতে তাদের মধ্যে সরকারীভাবে বদানুবাদ হয়।

সৈন্য সংগ্রহ[সম্পাদনা]

আরও দেখুন: উসমানীয় সাম্রাজ্যের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ

টাইবেরিয়াসের নিকটে উসমানীয় সামরিক নিয়োগ

১৯১৪ সালের ১২ মে উসমানীয় সাম্রাজ্য নতুন নিয়োগ আইন চালু করে। এতে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের বয়স ২০ থেকে কমিয়ে ১৮ করা হয় এবং "রেডিফ" বা সংরক্ষিত পদ্ধতি বাতিল করা হয়। পদাতিক বাহিনীর জন্য দুই বছর, সেনাবাহিনীর অন্যান্য শাখার জন্য তিন বছর এবং নৌবাহিনীর জন্য পাঁচ বছর সক্রিয়ভাবে দায়িত্বপালন কাল নির্ধারণ করা হয়। যুদ্ধের সময় এই পদক্ষেপগুলি মূলত তাত্ত্বিক ভাবেই ছিল।

ঐতিহ্যবাহী উসমানীয় বাহিনী সাম্রাজ্যের মুসলিম স্বেচ্ছাসেবীদের উপর নির্ভরশীল ছিল। তদ্ব্যতীত, উসমানীয় সমাজের বেশ কয়েকটি গ্রুপ এবং ব্যক্তিরা বিশ্বযুদ্ধের সময় সক্রিয় ভাবে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করে, এরমধ্যে প্রধান উদাহরণ হলো "মৌলভি তরিকা" এবং "কাদিরি"।

এছাড়াও ককেশিয়ান এবং রুমেলিয়ান তুর্কদের দ্বারা গঠিত ইউনিট ছিল, যারা মেসোপটেমিয়া এবং প্যালেস্টাইনের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। অটোমান বাহিনীর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবীরা কেবল তুর্কি গোষ্ঠীরই ছিল না; সুয়েজ খাল দখল করার জন্য এবং মেসোপটেমিয়ায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভিযানে কিছু সংখ্যক আরব এবং বেদুইন স্বেচ্ছাসেবকও অংশগ্রহণ করে। অপ্রশিক্ষিত এবং মূলত ভাড়াটে মনোভাবের কারণে সুসংগঠিত সেনাবাহিনী আরব এবং বেদুইন স্বেচ্ছাসেবীদের অবিশ্বস্ত মনে করতো। তুমুল লড়াইয়ের ফলে উসমানীয় স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থায়ও চাপ পড়ে।

মিত্রদেশসমূহ[সম্পাদনা]

বাগদাদে অস্ট্রেলিয়ান সেনা, ১৯১৭

যুদ্ধের আগে রাশিয়ার রাশিয়ান ককেসাস আর্মি ছিল, তবে ট্যানেনবার্গ এবং মাসুরিয়ান লেকের যুদ্ধে পরাজয়ের পরে প্রায় অর্ধেক অংশই প্রুশিয়ান ফ্রন্টে পুনঃমোতায়েন করা হয় এবং এরপর এই রণক্ষেত্রে মাত্র ৬০০,০০০ সৈন্য মোতায়েন ছিল। ১৯১৪ সালের গ্রীষ্মে, আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীগুলো রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে অধিশয়িত করা হয়। প্রায় ২০,০০০ আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবক ১৯১৪ সালের প্রথম দিকে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুতি নেয়।[২৮] এই স্বেচ্ছাসেবক দলগুলোর আকার যুদ্ধের সময় বৃদ্ধি পায়, ১৯১৯ সালে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে এক চিঠিতে বোঘোস নুবার জানান যে তাদের সংখ্যা ১৫০,০০০।[২৯]

দক্ষিণ পূর্ব আনাতোলিয়া, উত্তর মেসোপটেমিয়া এবং  উত্তর পশ্চিম পারস্যের আসিরিয়রা আঘা পেট্রোস এবং মালিক খোশবার নেতৃত্বে রাশিয়ান এবং ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধে অংশ নেয়।[১৪]

১৯১৪ সালে পারস্যের দক্ষিণাঞ্চলে কিছু ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাদল মোগায়েন ছিল। এই দলগুলির ভিন্নমতাবলন্বী উপজাতিদের সাথে মোকাবেলা করার ব্যাপক অভিজ্ঞতা ছিল। পরবর্তীকালে ব্রিটিশরা ভূমধ্যসাগরীয় অভিযান বাহিনী, ব্রিটিশ দারাদানেলিস আর্মি, মিশরীয় অভিযান বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে এবং ১৯১৭ সালে তারা লিওনেল ডানস্টারভিলের অধীনে উসমানীয় ও জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে ককেসাসে যুদ্ধের জন্য এক হাজারেরও কম অস্ট্রেলিয়ান, ব্রিটিশ, কানাডিয়ান এবং নিউজিল্যান্ডের সৈন্য নিয়ে ডানস্টারফোর্স প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৯১৬ সালে হিজাজে আরব বিদ্রোহ শুরু হয়। প্রায় ৫,০০০ নিয়মিত সৈন্য (বেশিরভাগ আরব বংশোদ্ভূত সাবেক যুদ্ধবন্দি) বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে ছিল। আমির ফয়সাল এবং ব্রিটিশ উপদেষ্টাদের নির্দেশনার অধিনে অনিয়মিত উপজাতি যোদ্ধাও ছিল। উপদেষ্টাদের মধ্যে টি.ই. লরেন্স সর্বাধিক পরিচিত।

মেসোপটেমিয়ায় মার্চে ব্রিটিশ সেনাদের যাত্রা, ১৯১৭

ফ্রান্স তার বৃহত্তর ফরাসী বিদেশী সৈন্যদলের অংশ হিসাবে এই রণাঙ্গনে ফরাসি আর্মেনিয়ান বাহিনী প্রেরণ করে। সাইকস-পিকট চুক্তি শর্তমোতাবেক ফরাসি প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরিস্তিদ্‌ ব্রিয়োঁকে সৈন্য সরবরাহ করতে হয়, চুক্তিটি এখনও গোপনীয়।[৩০] আর্মেনিয়ান জাতীয় পরিষদের নেতা বোগোস নুবার স্যার মার্ক সাইকস এবং জর্জেস-পাইকট সাথে সাক্ষাত করেন।

মিশরীয় অভিযান বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল এডমন্ড অ্যালেনবি মূল চুক্তিটি বাড়িয়েছিলেন। ফিলিস্তিনসিরিয়ায় আর্মেনিয়ান সেনারা লড়াই করে। এর বহু স্বেচ্ছাসেবককে পরবর্তীতে তাদের নিজ নিজ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য সৈন্যদল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই যুদ্ধ চলাকালীন আর্মেনিয় জাতীয় মুক্তি আন্দোলন আর্মেনিয়ান ফেদায়ে (আর্মেনিয়ান: Ֆէտայի) সংগঠনের আদেশ দেয়। এগুলিকে সাধারণত আর্মেনিয় মিলিশিয়া বলে উল্লেখ করা হত। ১৯১৭ সালে দাসনাকরা জেনারেল তোভমাস নাজারব্যাকিয়ানের নেতৃত্বে একটি আর্মেনিয় সেনাদল প্রতিষ্ঠা করে যা আর্মেনিয়ার প্রথম প্রজাতন্ত্রের ঘোষণার সাথে সাথে এই নতুন আর্মেনিয়ান রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কেন্দ্রে পরিনত হয়। নাজারবাকিয়ান প্রথম সেনাপ্রধান হন।

সৈন্য সংগ্রহ[সম্পাদনা]

আর্মেনিয়ানদের একটি দল আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবক ইউনিটের জন্য রাশিয়ান নিয়োগে সাড়া দিচ্ছে

যুদ্ধের আগে রাশিয়া ককেসাস অভিযানের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী দল প্রতিষ্ঠা করে। ১৯১৪ সালের গরমে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে এন্ড্রানিক ওজানিয়ানের নেতৃত্বে আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু রাশিয়ান আর্মেনিয় বাহিনী ইতোমধ্যে ইউরোপীয় রণাঙ্গনে প্রেরণ করা হয়, এই বাহিনীটি আর্মেনীয়দের কাছ থেকে অনন্যভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা রাশিয়ার বিষয় ছিল না এবং সেবার জন্য বাধ্য ছিল না। আর্মেনিয়ান ইউনিটগুলি সাফল্যের জন্য সামান্য পরিমান কৃতিত্বও রাশিয়ান বাহিনীর কাছ থেকে পায়নি।[৩১]

আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবীরা ছোট, ঝটিকা আক্রমণ এবং আধা-গেরিলা যুদ্ধের সাথে ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল।[৩২] তারা স্কাউট হিসাবে ভাল কাজ করে, তবে অসংখ্য পূর্ব পরিকল্পিত যুদ্ধেও অংশ নেয়।[৩২]

১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়ার দ্বিতীয় নিকোলাস ককেসাস অভিযানটি পরিদর্শন করেন। আর্মেনিয়ান চার্চের প্রধান এবং তিফলিসের আর্মেনিয়ান ন্যাশনাল ব্যুরোর সভাপতি আলেকজান্ডার খতিসিয়ানকে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেন:

সকল দেশ থেকে আর্মেনীয়রা গৌরবময় রাশিয়ান সেনার পদে প্রবেশের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর বিজয়ের জন্য তারা তাদের রক্ত দিতে প্রস্তুত...দারদানেলস এবং বসফরাসের উপর অবাধে রাশিয়ান পতাকা উড়াতে। [...] তুর্কি জোয়ালের অধীনে থাকা জনগণ [আর্মেনিয়ান] স্বাধীনতা লাভ করুক। খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের জন্য ভোগা তুরস্কের আর্মেনিয়ান জনগণকে একটি নতুন মুক্ত জীবনের জন্য পুনরভু্যদয় হওয়া উচিত ....[৩৩]

— রাশিয়ার দ্বিতীয় নিকোলাস

অসমীয় বাহিনী[সম্পাদনা]

মধ্য প্রাচ্যের রঙ্গমঞ্চে প্রচলিত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বাহিনীগুলি কেবল নিয়মিত সেনা দলই ছিল না, বরং অনিয়মিত বাহিনীও ছিল যা আজকে "অসমজ্ঞ্জস লড়াই" নামে পরিচিত।

জনশ্রুতি বিপরীতে, টি. ই. লরেন্স বা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বাইরে থেকে মধ্য প্রাচ্যে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের অভিযানের ধারণা তৈরি করেছিল: ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের আরব দফতর আরব বিদ্রোহ তৈরি করেছিল। আরব ব্যুরো দীর্ঘদিন ধরেই অনুভব করেছিল যে বহিঃশক্তি প্রয়োগ করে, বিচ্ছিন্নতাকামী উপজাতীদের সমর্থন করে এবং সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীভূত উসমানীয় সরকারের আঞ্চলিক  হুমকিদাতাদের অভিযানে প্ররোচিত এবং অর্থায়ন করে দুর্দান্ত ফল লাভ করা সম্ভব। মিত্র বাহিনীর চেয়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই জাতীয় অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের হুমকি মোকাবেলা করতে উসমানীয় কর্তৃপক্ষকে অনেক বেশি সম্পদ ব্যয় করতে হয়েছে।

জার্মানি যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগে প্রাচ্যের জন্য নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে। এটি ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের পাশাপাশি পারস্য এবং মিশরের মুখাপেক্ষী রাষ্ট্রগুলিতে ধ্বংসাত্মক এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন প্রচার এবং টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করে। জার্মান কূটনীতিক উইলহেল্ম ওয়াসমুসের নেতৃত্বে পারস্য উপসাগরে ব্রিটিশদের জন্য সমস্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে পারস্যে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়,[১৯] তিনি "জার্মানির লরেন্স অফ আরাবিয়া" বা "পারস্যের ওয়াসমুস" নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।

কালপঞ্জি[সম্পাদনা]

প্রারম্ভ[সম্পাদনা]

উসমানীয় সাম্রাজ্য ১৯১৪ সালের ২ আগস্ট একটি গোপন উসমানীয়-জার্মান জোট তৈরি করে, এরপর বুলগেরিয়ার সাথে আরও একটি চুক্তি হয়। উসমানীয় যুদ্ধ মন্ত্রণালয় দুটি বড় পরিকল্পনা তৈরি করে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের জার্মান সামরিক মিশনের সদস্য ব্রনসার্ট ভন শেহেলেনডর্ফ যিনি উসমানীয় জেনারেল স্টাফের সহকারী অধিনায়ক নিযুক্ত হন, তিনি ১৯১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করেন, যাতে চতুর্থ আর্মি মিশরে আক্রমণ চালাবে এবং তৃতীয় আর্মি পূর্ব আনাতোলিয়ায় রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাবে।

উসমানীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে শেহেলেনডর্ফের পরিকল্পনা নিয়ে দ্বিমত ছিল। সর্বাধিক দ্বিমতটি ছিল শেহেলেনডর্ফ যুদ্ধের যে পরিকল্পনাটি করেছেন তা উসমানীয় সাম্রাজ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় না রেখে জার্মানিকে উপকৃত করবে। হাফিজ হাক্কি পাশা একটি বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন, যা আরও আগ্রাসী ছিল এবং রাশিয়ায় মনোনিবেশ করে। এটি কৃষ্ণ সাগরের পূর্ব উপকূলে সমুদ্রপথে বাহিনীকে পরিচালনা করার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, যেখানে তারা রাশিয়ার ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাড়াবে। হাফিজ হক্কি পাশার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় কারণ উসমানীয় সেনাবাহিনীর সম্পদের অভাব ছিল। শেহেলেনডর্ফের "প্রাথমিক অভিযান পরিকল্পনা" তাই বিকল্প হিসেবে গৃহীত হয়।

শেহেলেনডর্ফের পরিকল্পনার ফলস্বরূপ, তুর্কিদের বেশিরভাগ লড়াই উসমানীয় অঞ্চলে হয়, এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি সাম্রাজ্যের লোকেরাই আক্রান্ত হয়। পরবর্তী মতামতটি ছিল এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাব ছিল, তবে শেহেলেনডর্ফ সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালভাবে পরিচালনা করেন এবং পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে সুযোগ দেন। শেহেলেনডর্ফ বাহিনীর উন্নয়ন এবং তাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে আরও ভালভাবে সৈন্য সমাবেশের পরিকল্পনা তৈরি করেন। উসমানীয় যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষণাগারে ১৯১৪ সালের ৭ই অক্টোবর তারিখে স্কেলেনডর্ফের রচিত যুদ্ধ পরিকল্পনার নথিপত্র আছে, যার মধ্যে বুলগেরিয়ান সেনাবাহিনীকে উসমানীয় সমর্থন, রোমানিয়ার বিরুদ্ধে একটি গোপন অভিযান এবং জার্মান নৌবাহিনীর সহায়তায় ওডেসাক্রিমিয়ায় উসমানীয় সেনা অবতরণ সম্পর্কিত বিবরণ আছে।

ফিলিস্তিন অভিযানের সময় তুরস্কের অভিযানের উপর জার্মান প্রভাব এতই ছিল যে ইলদিরিম আর্মির বেশিরভাগ স্টাফ পোস্ট জার্মান অফিসারদের হাতে ছিল। এমনকি সদর দফতরে জার্মান ভাষায় যোগাযোগ হতো। ফিলিস্তিনে চূড়ান্ত পরাজয় এবং ইল্ডিরিম আর্মি দলের অবশিষ্টাংশের নেতৃত্বের জন্য মোস্তফা কামালকে নিয়োগ দিয়ে এই পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটে।

১৯১৪ সালের জুলাইয়ে এরজুরুমে আর্মেনিয়ান কংগ্রেসে ঐক্য ও প্রগতি কমিটি (সিইউপি) এবং তুর্কি আর্মেনিয়দের মধ্যে আলোচনা হয়। কংগ্রেসের জনসমক্ষে সিদ্ধান্ত ছিল "বৈধ উপায়ে, শান্তিপূর্ণভাবে আর্মেনিয়ার দাবিকে বাস্তবায়নের  জন্য সুস্পষ্টভাবে পরিচালিত হবে"।[৩৪] এরিকসন দাবি করেন যে সিইউপি আর্মেনিয়ার বিদ্রোহের জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করে।[৩৫] এবং এই বৈঠকের পরে সিইপি অঞ্চলটিকে উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার বিস্তারিত পরিকল্পনা সহ শক্তিশালী আর্মেনিয়ান–রাশিয়ান লিঙ্কগুলির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল।[৩৫]

১৯১৪ সালের ২৯ শে অক্টোবর জার্মান যুদ্ধজাহাজ এসএমএস গোয়েবেন এবং হালকা রণতরী এসএমএস ব্রেসলাউকে তুর্কি সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে উসমানীয় নৌবাহিনীতে স্থানান্তরিত হয় এবং রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরের বন্দর ওডেশায়  সাগর বন্দরকে গুলা নিক্ষেপ করলে মিত্রবাহিনীর সাথে উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটে।

১৯১৪[সম্পাদনা]

নভেম্বর[সম্পাদনা]

ওডেসার গুলির পরে রাশিয়া ১৯১৪ সালের ২ নভেম্বর উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করে। ব্রিটিশ নৌবাহিনী দারদানেলিসে ৩ নভেম্বর আক্রমণ করে। ৫ নভেম্বর ব্রিটেন ও ফ্রান্স যুদ্ধের ঘোষণা দেয়।[৩৬]

প্রথম লর্ড অব দ্য অ্যাডমিরাল্টি উইনস্টন চার্চিল লেফটেন্যান্ট টি. ই. লরেন্স প্রস্তুতকৃত উসমানীয় সৈন্যবাহিনীর শক্তি সম্পর্কে ভ্রান্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে,উসমানীয়দের রাজধানীর উপর নৌ হামলার জন্য তার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে সেনাবাহিনীর একটি ছোট দলকে নিয়মিত কাজে লাগিয়ে রাজকীয় নৌবাহিনীর প্রচুর পরিমাণে বাতিলকৃত যুদ্ধজাহাজকে কার্যকর যেতে পারে। যুদ্ধ জাহাজগুলিকে ১৯১৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

একই সময়ে উসমানীয় চতুর্থ আর্মি সুয়েজ খালের দখল নেওয়ার জন্য উসমানীয় নৌ মন্ত্রী দেজেমাল পাশার নির্দেশে ২০.০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী প্রস্তুত করা হয়। জার্মান মিত্রদের আহ্বানে যুদ্ধ মন্ত্রী এনভার পাশা সুয়েজের উপর হামলার পরামর্শ দেন। উসমানীয় চতুর্থ আর্মির প্রধান প্রধান ছিলেন বাভেরিয়ান কর্নেল ক্রেস ভন ক্রেসেনস্টেইন, তিনি আক্রমণটি পরিচালনা করেন এবং মরুভূমি পেরিয়ে সেনাবাহিনীর জন্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেন।

১ নভেম্বর বার্গম্যান আক্রমণের মাধ্যমে ককেসাস অভিযানের প্রথম সশস্ত্র সংঘর্ষ সংগঠিত হয়। রাশিয়ানরা প্রথমে সীমান্ত পেরিয়ে দোগুবিয়াজিত এবং কপ্রুকোই দখল করার পরিকল্পনা করে।[৩৭] তাদের ডান পার্শ্ব  প্রথম রাশিয়ান কোর সরিকামিশ থেকে কপ্রুকোইর দিকে এগিয়ে চলে। বাম পার্শ্ব  চতুর্থ রাশিয়ান কোর জারভেন থেকে পাসিনলার সমভূমির দিকে এগিয়ে চলে। উসমানীয় তৃতীয় আর্মির কমান্ডার হাসান ইজেত তীব্র শীতের মধ্যে আক্রমণের পক্ষে ছিলেন না, তবে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থায় থাকার এবং সঠিক সময়ে পাল্টা আক্রমণ চালানোর তার পরিকল্পনাটি যুদ্ধমন্ত্রী এনভার পাশা বাতিল করে দেন।

৬ নভেম্বর একটি ব্রিটিশ নৌবাহিনী ফাও-র পুরানো দুর্গে বোমা বর্ষণ করে। রাজনৈতিক কর্মকর্তা স্যার পার্সি কক্সের সাথে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর্থার ব্যারেটের নেতৃত্বে ষষ্ঠ (পুুনে) বিভাগের সমন্বিত ব্রিটিশ ভারতীয় আক্রমণকারি ফোর্স ডি (আইইএফ ডি) ফাও-এ অবতরনের সময়  সহ ৩৫০ উসমানীয় সেনা এবং চারটি কামান বাধা দেয়। ২২ নভেম্বর সুফি পাশার নেতৃত্বে ইরাক অঞ্চলের কমান্ডের ২৯০০ আরব সেনার একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ব্রিটিশরা বসরা শহর দখল করে। সুফি পাশা এবং ১,২০০ জনকে বন্দী করা হয়। খলিল পাশার সামগ্রিক কমান্ডে মূল উসমানীয় সেনাবাহিনী বাগদাদের উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার (২৭০ মাইল) অবস্থান করছিল। ব্রিটিশদের বিতাড়িত করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা দুর্বল ছিল।

৭ নভেম্বর কুর্দি আদিবাসী রেজিমেন্ট সমর্থনে একাদশ কোর এবং সমস্ত অশ্বারোহী ইউনিটের অংশগ্রহণে উসমানীয় তৃতীয় আর্মি ককেসাস আক্রমণ শুরু করে। ১২ নভেম্বর নাগাদ অহমেত ফেভজি পাশার নবম কোর অশ্বারোহি বাহিনী সমর্থিত বাম পাশের একাদশ কোরের সাথে মিলে শক্তিশালী হয়ে রাশিয়ানদের পিছু হটাতে  শুরু করে। আক্রমণের দক্ষিণ ভাগে রাশিয়ানরা সফল হয়, সেখানে আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবীরা কার্যকর ছিল এবং তারা কারাকোস এবং দগুবিয়াজিত দখল করে।[৩৮] নভেম্বরের শেষদিকে রাশিয়ানরা এরজুরুম-সারিকামিশ অক্ষ বরাবর তুর্কি অঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার (১৬ মাইল) বিস্তৃত এলাকার দখল নেয়।

কুয়েতের শাসক শেখ মুবারক আল-সাবাহ উসমানী বাহিনীকে এ অঞ্চল থেকে তাড়ানোর জন্য উম্মে কাসর, সাফওয়ান, বুবিয়ান এবং বসরাতে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকার কুয়েতকে "ব্রিটিশ আশ্রয়ে স্বাধীন সরকার" হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।[৩৯] মুবারকের আক্রমণটির সঠিক আকার এবং প্রকৃতি সম্পর্কে কোনও প্রতিবেদন নেই, যদিও অটোমান বাহিনী কয়েক সপ্তাহ পরে এই অবস্থানগুলি থেকে পিছু হটেছিল।[৪০] মোবারক কুয়েতের পতাকায় থাকা উসমানীয় প্রতীকটি সরিয়ে নিয়ে তা আরবী লিপিতে লেখা "কুয়েত" দিয়ে প্রতিস্থাপন করেন।[৪০] মুবারকের অংশগ্রহণ, পাশাপাশি বাগদাদ রেলপথের কাজ শেষ করতে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার পূর্বের কার্যকারিতা  পারস্য উপসাগরে উসমানীয় এবং জার্মানির শক্তিবৃদ্ধি থেকে রক্ষা করতে ব্রিটিশদেরকে সহায়তা করেছিল।[৪১]

ডিসেম্বর[সম্পাদনা]

ডিসেম্বর মাসে সারিকামিশের যুদ্ধের শীর্ষ পর্যায়ে জেনারেল মাইশ্লেভস্কি এনভারের আক্রমণাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য পারস্য অভিযান থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। আর্মেনিয়ান জেনারেল নাজরবেকফের নেতৃত্বে রাশিয়ান সেনাদের কেবল একটি ব্রিগেড এবং আর্মেনিয়ান স্বেচ্ছাসেবীদের একটি ব্যাটালিয়ন সালমাস্ত এবং উর্মিয়া জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। উসমানীয় বাহিনীর প্রধান দলটি পারস্যে অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এমন সময় একটি ছোট রাশিয়ান গোষ্ঠী পারস্য সীমান্ত অতিক্রম করে। ভ্যান-পার্সিয়া পর্বতমালার দিকে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার পরে, ভেন জেন্ডারমারি বিভাগ, মেজর ফেরিডের নেতৃত্বে একটি ছোট সুসজ্জিত আধাসামরিক বাহিনী, পারস্যে রাশিয়ানদের তাড়া করে।

১৪ ডিসেম্বর ভ্যান জেন্ডারমারি বিভাগ পারস্য অভিযানে কোতুর শহর দখল করে। পরে এটি খয়ের দিকে এগিয়ে যায়। কাজিম বে’র ৫ম অভিযাত্রী বাহিনী এবং হালিল বে’র প্রথম অভিযান বাহিনীর কোতুরে প্রতিষ্ঠিত আক্রমণ এলাকা থেকে তাবরিজ অভিমুখে যাওয়ার জন্য এই প্যাসেজটি উন্মুক্ত রাখার কথা ছিল। যাইহোক, সরিকামিশের যুদ্ধ উসমানীয় বাহিনীকে হতাশ করে এবং এই অভিযাত্রী বাহিনীকে অন্য কোথাও প্রয়োজন ছিল।

২৯ ডিসেম্বর উসমানীয় তৃতীয় আর্মি কার্স-এর দিকে অগ্রসর হওয়ার আদেশ পায়। এনভার পাশা তৃতীয় আর্মির কমান্ড গ্রহণ করেন এবং তার বাহিনীকে রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে সরিকামিশের যুদ্ধ শুরু করার আদেশ দেন। তৃতীয় আর্মির অগ্রযাত্রার মুখোমুখি হয়ে গভর্নর ভরনৎসভ রাশিয়ান ককেশাস আর্মিকে কার্সে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছিলেন। জেনারেল নিকোলাই ইউদেনিচ ভরনৎসভের আদেশটিকে উপেক্ষা করেন।

১৯১৫[সম্পাদনা]

জানুয়ারি-মার্চ[সম্পাদনা]

১৯১৫ সালের জানুয়ারী, রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে ককেশাসের গিরিপথে উসমানীয়দের নিযুক্ত কুর্দিশ অশ্বারোহীরা।

২ জানুয়ারী, সলেমান আসকারি বে ইরাক অঞ্চলের কমান্ড গ্রহণ করেন। মেসোপটেমিয়া অভিযানের গুরুত্বকে অবমূল্যায়নের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এনভার পাশা। গ্যালিপোলিতে আক্রমণ নিকটবর্তী হওয়ায় অটোমান সেনাবাহিনীর এই অঞ্চলে যাওয়ার জন্য অন্য কোনও সংস্থান ছিল না। ‍সুলেমান আসকারি বে আরব শেখদের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সংগঠিত করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

৩ জানুয়ারী, কুরনার যুদ্ধে, অটোমান বাহিনী বসরা শহরটি আবার দখল করার চেষ্টা করে। তারা ফোরাত নদীর উপর রাজকীয় নৌ জাহাজ থেকে আগুনের গোলার কবলে পড়ে, তখন ব্রিটিশ সেনারা ফোরাত নদী পার হতে পেরেছিল। বসরার বাধ অতিক্রম করা খুব শক্ত ছিল বলে উসমানীয়রা আল-কুরনাহ শহরকে সমর্পণ করে এবং কুতে ফিরে যায়।

৬ জানুয়ারী তৃতীয় আর্মি সদর দফতর আগুনের কবলে পড়ে। হাফিজ হাক্কি পাশা সারিকামিশের যুদ্ধে পুরোপুরি পশ্চাদপসরণের নির্দেশ দেন। সেনাবাহিনীর মাত্র ১০% তার শুরুর অবস্থানে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। এনভার সেনাবাহিনীর কমান্ড ছেড়ে দেন। এই সংঘর্ষ চলাকালীন সংকটময় সময়ে আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদ উসমানীয় অভিযানকে চ্যালেঞ্জ জানায়: "এই বিলম্ব রাশিয়ান ককেশাস সেনাবাহিনীকে সারিকামিশের আশেপাশে পর্যাপ্ত শক্তি কেন্দ্রীভূত করতে সহয়তা করে"।[৪২]

ব্রিটিশ ও ফ্রান্স রাশিয়াকে পশ্চিম ফ্রন্টের চাপ থেকে তাদের উদ্ধার করতে বলে, তবে রাশিয়ার তার বাহিনীকে সংগঠিত করার জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল। কৃষ্ণ সাগরের অপারেশনগুলি তাদের বাহিনীকে পুনরায় পুনঃগঠন করার সুযোগ দেয়; গ্যালিপলি অভিযানের কারণে রাশিয়ান এবং অন্যান্য ফ্রন্ট থেকে অনেক উসমানীয় বাহিনীকে সরিয়ে আনতে হয়।[৩৭] ১৯১৫ সালের মার্চ মাসে উসমানীয় তৃতীয় আর্মি প্রথম ও দ্বিতীয় আর্মির  বিভাগ থেকে সৈন্য দ্বারা শক্তিবৃদ্ধি করে।

১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ সহ একটি শক্তিশালী অ্যাংলো-ফরাসী নৌবহর দারদানেলিসের আশেপাশের উপকূলে আর্টিলারি অবস্থানগুলিতে বোমা বর্ষণ করে। অ্যাডমিরাল স্যাকভিল কারডেন ৪ মার্চ চার্চিলকে একটি তারবার্তা পাঠিয়ে বলেন যে, বহরটি চৌদ্দ দিনের মধ্যে কনস্ট্যান্টিনোপলে পৌঁছানোর আশা করছে।[৪৩] ১৮ মার্চ প্রথম বড়ধরনের আক্রমণ শুরু হয়। ১৮ টি যুদ্ধজাহাজ এবং ক্রুজার, একটি ক্রুজারের ‍বিন্যাস এবং ডেস্ট্রয়ারের সমন্বয়ে নৌবহরটি দারদানেলের সরুতম স্থানটিকে (যেখানে প্রণালী মাত্র এক মাইল প্রশস্ত) লক্ষ্য করে এগিয়ে যায় ।

ফরাসী যুদ্ধজাহাজ বু্উভেট রহস্যজনকভাবে বিস্ফোরিত হয়, যার ফলে এটি তার পুরো নাবিকদলকে সাথে নিয়ে ডুবে যায়। বেসামরিক লোকদের দ্বারা পরিচালিত এবং অটোমান বন্দুক থেকে অবিচ্ছিন্ন গোলার মুখে পড়ে মাইন অপসারনকারীরা মাইনফিল্ডগুলিকে বেশিরভাগ অক্ষত রেখেই পিছিয়ে আসে। যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস ইরেসিস্টেবল এবং যুদ্ধপোত এইচএমএস ইনফ্লেক্সিবল উভয়ই মাইন থেকে গুরুতর ক্ষতির সম্মুখিন হয়, যদিও টর্পেডো এর জন্য দায়ি কিনা তা নিয়ে যুদ্ধের সময় বিভ্রান্তি ছিল। ইরেসিস্টেবলকে উদ্ধারের জন্য প্রেরণ করা এইচএমএস ওসেন যুদ্ধজাহজটি নিজেই মাইনের কবলে পড়ে এবং উভয় জাহাজই শেষ পর্যন্ত ডুবে যায়। ফরাসী যুদ্ধজাহাজ সুফ্রেন এবং গেলুইসও খুব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই ক্ষয়ক্ষতি মিত্রবাহিনীকে কেবলমাত্র নৌ শক্তি দ্বারা প্রণালীতে আঘাত হানার জন্য পরবর্তী কোনও প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেয়।

ফেব্রুয়ারিতে জেনারেল ইউদেনিচকে আলেকজান্ডার জখারেভিচ মেশলায়েভস্কির স্থলে রাশিয়ান ককেশাস আর্মির কমান্ড হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি অটোমান তৃতীয় আর্মির কমান্ডার হাফিজ হাক্কি পাশা টাইফাসের কারণে মারা যান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুত কামিল পাশা। কামিল হতাশ তৃতীয় আর্মিকে যথাযথভাবে স্থাপনের কাজে হাত দেন।

উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রথম সুয়েজ অভিযানে মিশরে সুয়েজ খাল দখল করার চেষ্টা করে এবং তারা সম্প্রতি মিশরের সিংহাসনচু্যত দ্বিতীয় আব্বাসকে সমর্থন করে তবে উভয় লক্ষ্যতেই ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হয়।

এপ্রিল-জুন[সম্পাদনা]

মেসোপটেমিয়া অভিযানে তাদের অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পরে ব্রিটিশ কমান্ড আরও আক্রমণাত্মক অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯১৫ সালের এপ্রিলে জেনারেল স্যার জন নিক্সনকে কমান্ড নিতে পাঠানো হয়। তিনি মেজর জেনারেল চার্লস ভেরে ফেরের টাউনশ্যান্ডকে কুত বা এমনকি সম্ভব হলে বাগদাদে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। বাগদাদের সম্ভাব্য পতন ঠেকানোর জন্য এনভর পাশা চিন্তিত হয়ে জার্মান জেনারেল কলমার ফ্রেইহার ফন ডার গল্টজকে কমান্ড গ্রহণের জন্য পাঠান।

১২ এপ্রিল, সুলেমান আসকারি খুব সকালে ৩,৮০০ সৈন্য নিয়ে ব্রিটিশ শিবির শাইবা আক্রমণ করেন। মূলত আরব শেখদের দ্বারা সরবরাহিত এই বাহিনী কিছুই অর্জন করতে পারেনি। সলেমান আসকারি আহত হন। হতাশ ও বিষন্ন হয়ে তিনি নিজেকে বাগদাদের হাসপাতালে নিক্ষেপ করেন।

২০ এপ্রিল ভ্যান অবরোধের সূচনা হয়। ২৪ এপ্রিল তারিখে তালাত পাশা ২৪ শে এপ্রিল আদেশটি জারি করেন (আর্মেনিয়ানদের কাছে লাল রবিবার হিসাবে পরিচিত) এতে বলা হয়েছে যে এই অঞ্চলে আর্মেনীয়রা রাশিয়ানদের নেতৃত্বে ছিল এবং অটোমান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে।

মিত্ররা পরের দিন দারদানেলিসের ইউরোপীয় দিকের গ্যালিপলি উপদ্বীপে তাদের উভচর আক্রমণ শুরু করে। সেনাবাহিনী অবতরণ করতে সক্ষম হয়, কিন্তু কয়েক মাস যুদ্ধের পরেও অটোমান বাহিনীকে তাদের স্থানচ্যুত করতে পারেনি যার ফলে আনুমানিক ১৩১,০০০ সৈন্য মারা যায় এবং ২৬২,০০০ জন আহত হয়। শেষ পর্যন্ত তারা ‍নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। এই অভিযানটি অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড যুগে যুগে ধরে পালন করে আসছে, তারা ২৫ এপ্রিলকে এনজ্যাক দিবস (ANZAC Day) হিসাবে পালন করে। কামাল আতাতুর্ক, যিনি পরে আধুনিক তুরস্কের প্রথম নেতা হয়েছিলেন, তিনি গ্যালিপলিতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসাবে নিজেকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রমাণ করেন।

৬ মে জেনারেল ইউদেনিচ উসমানীয় অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করেন। এই আক্রমনে এক পক্ষ তার আর্মেনিয়ান প্রতিরক্ষকারীদের উদ্ধার করতে লেক ভ্যানের দিকে এগিয়ে যায়। ফেদায়েই শহরটিকে রাশিয়ানদের হাতে তুলে দেন। ২১ শে মে জেনারেল ইউদেনিচ শহর এবং এর দুর্গের চাবিগুলি গ্রহণ করেন এবং আরাম মানুকিয়ানের গভর্নর হিসাবে আর্মেনিয়ান অস্থায়ী সরকারকে কার্যালয়ে নিশ্চিত করেন। ভ্যান সুরক্ষিত করে, গ্রীষ্মের বাকি সময়ের জন্য আরও পশ্চিমে যুদ্ধ স্থানান্তরিত করেন।[১৬]

৬ মে, আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ ধরনের হয়ে যাওয়ার পরে রাশিয়ান দ্বিতীয় শাখাটি টার্টাম উপত্যকা দিয়ে এরজুরুমের দিকে অগ্রসর হয়। উসমানীয়দের ২৯ তম এবং ৩০ তম বিভাগ এই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। এক্স কোর রুশ বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করে। দক্ষিণ রণাঙ্গনে উসমানীয়রা উত্তরের মতো সফল ছিল না।

ইতোমধ্যে ১১ ই মে মানজিকার্ট শহরের পতন ঘটে। অটোমানদের সরবরাহের লাইনগুলি কেটে নেওয়া হচ্ছিল, কারণ আর্মেনিয়ান বাহিনী লাইনগুলির পিছনে অতিরিক্ত হামলা করতেছিল। ভ্যান লেকের দক্ষিণের অঞ্চলটি অত্যন্ত দুর্বল ছিল। মে মাসে, উসমানীয়দের মাত্র ৫০,০০০ সৈন্য এবং ১৩০ টি আর্টিলারি নিয়ে ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মাইল) এর উপর একটি লাইন রক্ষা করতে হয়। তারা রাশিয়ানদের কাছে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

২৭ শে মে, রাশিয়ার ব্যাপক আক্রমণ চলাকালে অটোমান সংসদে তেহসির আইন পাস হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাত পাশা ওসমানীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলি থেকে সমস্ত আর্মেনিয়ানদের জোর করে নির্বাসনের নির্দেশ দেন।

১৯ জুন, রাশিয়ানরা ভ্যান লেকের উত্তর-পশ্চিম দিকে আরও আক্রমণাত্মক হামলা চালায়। ওগানভস্কির নেতৃত্বে তারা মালাজগ্রিতের পশ্চিমে পাহাড়ে চলে যায়, তবে উসমানীয় বাহিনীর আকারকে ছোটো করে দেখেন। মানজিকার্টের যুদ্ধে তারা একটি বিশাল অটোমান বাহিনী দ্বারা অবাক হয়েছিল। তারা জানত না যে উসম্নীয় নবম কোর, ১৭ তম এবং ২৮ তম বিভাগের সাথে মিলে মুস এর দিকে এগিয়ে গেছে।

১ম এবং ৫ম অভিযাত্রী বাহিনী রাশিয়ার আক্রমণাত্মক বাহিনীর দক্ষিণে অবস্থান নেয় এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুলকেরিম পাশার নেতৃত্বে একটি "রাইট উইং গ্রুপ" প্রতিষ্ঠা করে। এই দলটি তৃতীয় আর্মি থেকে স্বতন্ত্র ছিল এবং আবদুলকেরিম পাশা সরাসরি এনভার পাশার নিকট প্রতিবেদন পেশ করেতেন।

জুলাই-সেপ্টেম্বর[সম্পাদনা]

২৪ সেপ্টেম্বর জেনারেল ইউদেনিচ এই অঞ্চলে সমস্ত রাশিয়ান বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার নিযুক্ত হন। এই রণাঙ্গনটি অক্টোবর থেকে বছরের শেষ অবধি শান্ত ছিল। ইউদেনিচ এই সময়টিকে পুনর্গঠনের কাজে ব্যবহার করেন। ১৯১৬ সালের মধ্যে রণাঙ্গনে রাশিয়ান বাহিনীর ২০০,০০০ জন সৈন্য এবং ৩৮০ টি আর্টিলারি হয়ে উঠে।

অন্যদিকের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই আলাদা; উসমানীয় হাই কমান্ড এই সময়কালে লোকসানগুলি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। গ্যালিপলির যুদ্ধে সমস্ত প্রাপ্ত সম্পদ এবং জনশক্তি ব্যবহার করা হয়। নবম, দশম এবং একাদশ কোর আরও শক্তিশালী করা যায়নি এবং ১ম এবং ৫ম আক্রমনকারী বাহিনী মেসোপটেমিয়ায় মোতায়েন করা হয়। এনভার পাশা ককেশাসে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে এবং সম্ভবত অন্যান্য ফ্রন্টের ভয়াবহ পরিস্থিতি বুজতে পারার পর সিদ্ধান্ত নেন যে ককেসাসের রণাঙ্গনটি গুরত্বপূর্ণ।

অক্টোবর-ডিসেম্বর[সম্পাদনা]

নদীর তীরে ব্রিটিশদের দ্রুত অগ্রগতিতে কিছু আরব উপজাতির যুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা বদলেছিল। ব্রিটিশদের উপরে উপরের হাত রয়েছে বুঝতে পেরে তাদের অনেকেই ব্রিটিশদের সহিত যোগ দেয়। তারা অটোমান সামরিক হাসপাতালে হামলা চালায় এবং আমারাতে সৈন্যদের গণহত্যা করে।

২২ নভেম্বর টাউনশ্যান্ড এবং ভন ডের গল্টজ ক্লেসিফনে যুদ্ধ করে। যুদ্ধটি মীমাংসাহীন থাকে, কারণ অটোমান এবং ব্রিটিশ উভয়ই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটে। টাউনশ্যান্ড কুত-আল-আমারাতে থামেন ও অবস্থান মজবুত করেন এবং ৭ই ডিসেম্বর তার বাহিনী নিয়ে কুত অবরোধ শুরু করেন। ভন ডের গল্টজ কুতের আশেপাশে অটোমান বাহিনীকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান তৈরিতে সহায়তা করেন এবং টাউনশ্যান্ডকে উদ্ধারের যে কোন প্রচেষ্টা রোধ করতে নদীর তীরে নতুন দুর্গ স্থাপন করেন। জেনারেল আইলমার অবরোধটি ভেঙে দেওয়ার জন্য তিনবার প্রচেষ্টা নেন, তবে প্রতিটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯১৬ সালের ২৯ এপ্রিল টাউনশ্যান্ড তার পুরো বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ করে।[৪৪]

ডিসেম্বর মাসে ব্রিটিশ সরকার তার গোপন এজেন্ট ক্যাপ্টেন উইলিয়াম শেকসপিয়ারের মাধ্যমে ইবনে সৌদের সাথে শখ্যতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়, তবে জারাবের যুদ্ধে শেকসপিয়ারের মৃত্যুর পরে এটি পরিত্যাগ করা হয়। পরিবর্তে ব্রিটিশরা ইবনে সৌদের প্রতিদ্বন্দ্বী হেজাজের নেতা শরীফ হুসেন বিন আলী, যার সাথে সৌদরা প্রায় নিয়মিত যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তাকে সমর্থন করে। লর্ড কিচনার এই লড়াইয়ে সহায়তার জন্য মক্কার শরীফ হুসেন বিন আলীকেও আহ্বান করেন; বিনিময়ে হুসেইন রাজনৈতিক স্বীকৃতি চান। হেনরি ম্যাকমাহন চিঠি বিনিময়ের সময় তাকে আশ্বাস দেন যে যুদ্ধের পরে কুয়েত, এডেন এবং সিরিয়ার উপকূলে সাম্রাজ্যবাদী সম্পত্তি ও স্বার্থ বাদে মিশর ও পারস্যের মধ্যবর্তী অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে সমর্পন করে যুদ্ধে সহায়তার জন্য পুরস্কৃত করা হবে। ব্রিটেন দারিন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যা হাউস অফ সৌদের জমিগুলিকে একটি ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করে। ইবনে সৌদ আবারও ইবনে রশিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অঙ্গীকার করেন, যিনি উসমানীয়দের মিত্র ছিলেন এবং তার বিনিময়ে তাকে মাসিক বৃত্তি দেওয়া হয়।

১৯১৬[সম্পাদনা]

মেসোপটেমিয়া অভিযানে তুর্কি সাধারণ কর্মী, ১৯১৬

১৯১৬ সালে কূটনীতি এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের নতুন নেতাদের (তিন পাশা) প্রতি অপছন্দের সংমিশ্রণ মক্কার শরীফ হুসেন বিন আলীকে বিদ্রোহ শুরু করার জন্য প্রনোদিত করে। তিনি এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব তার দুই পুত্র: ফয়সালআবদুল্লাহকে দেন, যদিও যুদ্ধের পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা মূলত লরেন্স অব এরাবিয়ার কাজ ছিল।

উত্তর-পূর্ব তুরস্কে রাশিয়ার আক্রমণ কোপরুকয়ের যুদ্ধে একটি জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং ফেব্রুয়ারিতে এরজুরুম এবং এপ্রিল মাসে ট্র্যাবজনকে দখলের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সীমায় পৌছে। এরজিংকের যুদ্ধের মাধ্যমে অটোমান তৃতীয় আর্মি আর আক্রমণাত্মক যাত্রা শুরু করতে সক্ষম ছিল না এবং এটি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রাকেও থামিয়ে দিতে পারে নি।

সুয়েজ খাল ধ্বংস বা দখলের উদ্দেশ্য নিয়ে অটোমান বাহিনী সিনাইজুড়ে দ্বিতীয় আক্রমণ চালায়। এটি এবং পূর্বের আক্রমণ (১৯১৫) উভয়ই ব্যর্থ হয়, যদিও মহাযুদ্ধের মানদণ্ডে খুব ব্যয়বহুল ছিল না। এরপরে ব্রিটিশরা আক্রমণাত্মক হয়ে পূর্ব ফিলিস্তিনে আক্রমণ করে। তবে, ১৯১৭ সালে গাজার উসমানীয় দুর্গটি দখলের দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা ব্রিটিশ কমান্ডে ব্যাপক পরিবর্তন আনে এবং জেনারেল অ্যালেনবির আগমনসহ ব্যপক সেন্য সমাগম ঘটে।

১৯১৭[সম্পাদনা]

জেরুজালেম যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোলন্দাজ বাহিনী, ১৯১৭

১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বাহিনী পুনর্গঠিত হয় এবং বাগদাদ দখল করে। ১৬ ডিসেম্বর এরজিনকান যুদ্ধবিরতি (এরজিনকান ক্লিজ-ফায়ার চুক্তি) স্বাক্ষরিত হয় যা সরকারীভাবে অটোমান সাম্রাজ্য এবং রাশিয়ানদের মধ্যে শত্রুতার অবসান ঘটিয়েছে। বিশেষ ট্রান্সককেশিয়ান কমিটিও এই চুক্তিকে সমর্থন করে।

সিনাই ও প্যালেস্টাইন অভিযান বিদ্রোহের সাফল্যের দ্বারা প্রাধান্য পেয়েছিল, যা জেনারেল অ্যালেনবির অভিযানকে ব্যাপক সহায়তা করে। ১৯১৭ সালের শেষদিকে অ্যালেনবির মিশরীয় অভিযান বাহিনী অটোম্যান প্রতিরক্ষা ভেঙে গাজা দখল করে এবং তারপরে ক্রিসমাসের ঠিক আগে জেরুসালেম দখল করে নেয়। যুদ্ধের ক্ষেত্রে কৌশলগত দিক থেকে কম গুরুত্বারোপ হলেও ১৯৪৮ সালে ইস্রায়েলের একটি পৃথক জাতি হিসাবে তৈরির জন্য এর ফলটি মূল ভূমিকা পালন করে।

১৯১৮[সম্পাদনা]

মৃত সাগরের তীরে উসমানীয়দের পরিখা, ১৯১৮

মিত্রবাহিনীর সুপ্রিম ওয়ার কাউন্সিল বিশ্বাস করে যে ফিলিস্তিন এবং মেসোপটেমিয়ায় অভিযান চালিয়ে যুদ্ধে ক্লান্ত উসমানীয় সাম্রাজ্যকে পরাজিত করা যেতে পারে,[৪৫] তবে ফ্রান্সে জার্মান বসন্তকালীন আক্রমণ প্রত্যাশিত মিত্রবাহিনীর আক্রমণকে বিলম্ব করে।[৪৫] জেনারেল অ্যালনবিকে ভারত থেকে আগত সম্পূর্ণ নতুন বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়।[৪৫]

টি. ই. লরেন্স এবং তার আরব যোদ্ধারা সরবরাহের লাইনে বহু আঘাত হানিয়া দ্রুত পলায়ন (hit-and-run) হামলা চালায় এবং ফিলিস্তিন, জর্দান এবং সিরিয়ায় কয়েক হাজার সৈন্যকে গ্যারিসনে আবদ্ধ করে।[৪৬]

৩ মার্চ গ্র্যান্ড উজির তালাত পাশা রাশিয়ান এসএফএসআরের সাথে ব্রেস্ট-লিটোভস্ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন যার মধ্যে বলা হয় যে বলশেভিক রাশিয়া বাতুম, কারস এবং আরদাহানকে অটোমান সাম্রাজ্যের কাছে ফেরৎ দিবে। ট্র্যাবজন শান্তি সম্মেলনটি উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং ট্রান্সককেসিয়ান ডায়েটের (ট্রান্সককেসিয়ান সেজম) প্রতিনিধি এবং সরকারের মধ্যে মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। ব্রেস্ট-লিটোভস্ক চুক্তি আর্মেনীয় এবং জর্জিয় অঞ্চলগুলিকে একত্রিত করে।[৪৭]

আর্মেনিয়ার প্রথম প্রজাতন্ত্রটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করে।[৪৭] ১৯১৮ সালের মে মাসের গোড়ার দিকে অটোমান সেনাবাহিনী আর্মেনিয়ান জাতীয় কাউন্সিলের আর্মেনিয়ান কোরের মুখোমুখি হয়, এরপর শীঘ্রই আর্মেনিয়ার প্রথম প্রজাতন্ত্র ঘোষণা দেওয়া হয়। উসমানীয় সেনাবাহিনী ট্র্যাবজন, এরজুরুম, কারস, ভ্যান এবং বাতুম দখল করে নেয়। এই লড়ায়ের ফলে সরদারপাত যুদ্ধ, কারা কিলিসের যুদ্ধ (১৯১৮) এবং বাশ আবরণ যুদ্ধ হয়।[৪৮]

যদিও আর্মেনিয়ানরা সরদারপাত যুদ্ধে উসমানীয়দের পরাজিত করতে সক্ষম হয়, প্রথম আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্রের সাথে লড়াইটি ১৯১৮ সালের জুন মাসে বাতুম চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। ১৯১৮ সালের গ্রীষ্ম জুড়ে এন্ড্রনিক ওজানিয়ানের নেতৃত্বে পার্বত্য নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনীয়রা অটোমান তৃতীয় আর্মিকে প্রতিহত করে এবং পার্বত্য আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।[৪৮] ১৪,০০০ সেনার সমন্বয়ে গঠিত ইসলামিক সেনাবাহিনী জর্জিয়া এড়িয়ে বাকু অভিমুখে যাত্রা করে এবং ১৯১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাকুর যুদ্ধে ১,০০০ অস্ট্রেলিয়ান, ব্রিটিশ, কানাডিয়ান এবং নিউজিল্যান্ডের সৈন্যদের তাড়িয়ে দেয়।[৪৯]

১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জেনারেল এলেনবির নেতৃত্বে ইহুদি সৈন্যবাহিনীকে সাথে নিয়ে মগিদ্দোর যুদ্ধ শুরু করেন[৫০] এবং উসমানীয় সেনাদের পুরোপুরি পশ্চাদপসরণে বাধ্য করেন।[৫১]

যুদ্ধের ফলাফল[সম্পাদনা]

১৯১৮ সালের ৩০ অক্টোবর উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং ত্রিপক্ষীয় মিত্র জোটের মধ্যে লেমনোস দ্বীপের মুদ্রোস বন্দরে এইচএমএস আগামেমনন জাহাজে মুদ্রোস যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সক্রিয় যুদ্ধ ক্ষেত্রগুলোতে উসমানীয় অভিযান স্থগিত করা হয়।

সামরিক দখল[সম্পাদনা]

The Allied occupation of Istanbul

১৯১৮ সালের ১৩ নভেম্বর উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল (বর্তমানে ইস্তাম্বুল) দখলের পর ফরাসী সেনারা উপস্থিত হয়, তার পরের দিন ব্রিটিশ সেনারা আসে। দখলটির দুটি পর্যায় ছিল: ১৯১৮ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে ২০ শে মার্চ, ১৯২০ পর্যন্ত ডি ফ্যাক্টো পর্যায় এবং ডি ফ্যাক্টো থেকে লুসান চুক্তি পর্যন্ত ডি জুরি পর্যায়। ইস্তাম্বুল দখল ও ইজমির দখল তুর্কি জাতীয় আন্দোলন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে এবং যা তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে।[৫২]

শান্তি চুক্তি[সম্পাদনা]

আরও দেখুন: অটোমান সাম্রাজ্যের বিভাজন

১৮ ই জানুয়ারী ১৯১৯ সালে প্যারিস শান্তি সম্মেলন দিয়ে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। লন্ডন সম্মেলনে এই আলোচনা অব্যাহত ছিল, তবে ১৯২০ সালের এপ্রিলে সান রেমো সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরই এই চুক্তিটি নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে। ফ্রান্স, ইতালি এবং গ্রেট ব্রিটেন ১৯১৫ সালের প্রথম দিকে গোপনে উসমানীয় সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করে। ১৯২০ সালের ১০ আগস্ট তুর্কি সরকারের প্রতিনিধিরা শেভরেস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, কিন্তু চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য তুর্কি সংসদে প্রেরণ করা হয়নি, কারণ ব্রিটিশ কর্তৃক ১৮ মার্চ ১৯২০ তারিখে সংসদ বাতিল হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, চুক্তিটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের দ্বারা কখনই অনুমোদিত হয়নি।[৫৩][৫৪] তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেভরেস চুক্তি বাতিল হয়ে যায় এবং পক্ষগুলি ১৯২৩ সালে লুসান-এর প্রতিস্থাপন চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং অনুমোদন দেয়।

খেলাফতের বিলোপ[সম্পাদনা]

১৯২৪ সালের ৩ শে মার্চ মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক শেষ খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মেজিদকে পদচ্যুত করলে উসমানীয় খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটে।

হতাহতের সংখ্যা[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের উসমানীয়দের হতাহতের সংখ্যা

মিত্রবাহিনীর নিহত, আহত, বন্দী বা নিখোঁজের ১,০০০,০০০ থেকে ১,৫০০,০০০ জনের মধ্যে বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে গ্যালিপোলিতে ৩০৩,০০০ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং ফরাসী হতাহত,[৫৫] সিনাই-ফিলিস্তিনে ৬০১,০০০ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হতাহতের ঘটনা,[৫৬] ককেশাসে কমপক্ষে ১৪০,০০০ রাশিয়ান নিহত এবং মেসোপটেমিয়ায় ২৫৬,০০০ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের লোকের প্রাণহানি ঘটে।[৫৭] পাশাপাশি পার্সিয়ায় অতিরিক্ত রুশো-ব্রিটিশ হতাহতের ঘটনা। ব্রিটিশদের বেশিরভাগ হতাহত হয়েছিল যুদ্ধের বাইরে; ফিল্ড মার্শাল লর্ড কার্ভারের হিসেবে যুদ্ধে উসমানীয়দের দ্বারা মোট ব্রিটিশ হতাহতের সংখ্যা ২৬৪,০০০ ধরা হয়।[৫৮] এগুলি ছাড়াও একমাত্র ১৯১৫ সালের প্রথমার্ধে উসমানীয়-সমর্থিত সেনুসি উপজাতিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইটালিয়ানদের হাতে ১১,০০০ এরও বেশি হতাহত হয় এবং সেনুসিদের নিজেদের হিসেবেই অজানা সংখ্যক হতাহত হয়।[৫৯]

উসমানীয়দের হতাহতের হিসেবে ব্যপক গড়মিল আছে, উসমানীয় আমলাতন্ত্র এবং সরকার ভেঙ্গে যাওয়ায় ১,৫৬৫,০০০ জন যুদ্ধের শেষে হিসাববিহীন হয়ে পড়ে।[৬০] ১৯২২ সালে প্রকাশিত উসমানীয় সরকারী দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩২৫,০০০ নিহত (৫০,০০০ নিহত, ৩৫,০০০ আহত হয়ে মারা যায়, ২৪০,০০০ রোগে মারা যায়), ৪০০,০০০ আহত এবং অজ্ঞাত সংখ্যা বন্দী ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অধিদফতরও একই সংখ্যক নিহত ও আহতের হিসাব দেয় এবং অনুমান করা হয় যে যুদ্ধের শেষের আগে ২৫০,০০০ উসমানীয় সৈন্য নিখোঁজ হয় বা বন্দী হয়, মোট ৯৭৫,০০০ জন হতাহত হয়।[৬১] আমেরিকান ইতিহাসবিদ এডওয়ার্ড জে. ইরিকসন, উসমানীয় আর্কাইভস-এ অপ্রকাশিত পৃথক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের ভিত্তিতে উসমানীয় সামরিক হতাহতের সংখ্যা ১,৬৮০,৭০১: ৭৭১,৮৪৪ নিহত / নিখোঁজ (আহত ১৭৫,২২০ নিহত, ৬৮,৩৭৮ আহত হয়ে মারা গেছে, ৬১,৪৮৭ নিখোঁজ, এবং ৪৬৬,৭৫৯ জন রোগের কারণে মারা গেছেন), ৬৯৫,৩৭৫ জন আহত (আহতদরে মধ্যে যারা নিহত হয়েছে তাদের সহ মোট ৭৬৩,৭৫৩ জন আহত হয়েছে এবং ৩০৩,১৫০ প্রকৃতপক্ষে রেকর্ডে তালিকাভুক্ত; লেখক ধরে নেন এগুলি কেবল গুরুতর আহত, এবং বাকিদের অনুমান করে) এবং ১৪৫,১০৪ জন যুদ্ধবন্দী। মৃত্যুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মৃত্যুর খুব উচ্চ অনুপাতের জন্য উসমানীয় চিকিৎসা সেবা ভেঙে যাওয়া দায়ী, যার ফলস্বরূপ যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে রণাঙ্গন থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরে সাধারণত চিকিৎসা করা হত উসমানীয় সেনাবাহিনীতে প্রায়শই সেটা মারাত্মক হয়ে পড়ে।[৬২] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যারা রোগে মারা যায় তাদের মধ্যে ৩,৫১৫,৪৭১ জন উসমানীয় সেনাবাহিনীর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।[৬৩]

এই প্রেক্ষাপটে রোগের তাৎপর্যটি ব্রিটিশদের এই রণাঙ্গনে রোগ/জখম (হিমস্পর্শ, ট্রেঞ্চ ফুট ইত্যাদি) থেকে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা তুলনা করে সর্বোত্তম চিত্রটি পাওয়া যায়। ফ্রান্স এবং ফ্ল্যান্ডার্সে ২,৬৯০,০৫৪ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সেনা নিহত, আহত, আহত হয়ে মারা যায়, নিখোঁজ বা বন্দী হয়, যখন "বিনা যুদ্ধে-আহত" হওয়ার কারণে ৩,৫২৮,৪৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, প্রতি ১টি যুদ্ধে হতাহতের জন্য ১.৩ এনবিসি-র হার ছিল। মেসোপটেমিয়ায় ৮২,২০৭ জন সেনা মারা গিয়েছিল, আহত হয়েছিল, আহত হয়ে মারা যায়, নিখোঁজ হয়েছিল, বা ধরা পড়েছিল এবং অসুস্থতা বা আঘাতের জন্য ৮২০,৪১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, যখন সিনাই ও প্যালেস্টাইন অভিযানে ৫১,৪৫১ জন যুদ্ধে হতাহত হয়েছেন (ভারতীয়দের গণনায় ধরা হয়নি) এবং ৫০৩,৩৭৭ জন যুদ্ধের বাইরে আহত হয়ে  হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই, প্রতি ১টি যুদ্ধের জন্য হতাহতের জন্য হার আনুমানিক ১০ এনবিসি। অধিকন্তু, তালিকাভুক্ত সংখ্যা অনুসারে মেসোপটেমিয়া এবং সিনাই-ফিলিস্তিন অভিযানে কেবল পশ্চিমাঞ্চলীয় ফ্রন্টের যুদ্ধে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল (১৩৬,৬৫৮ বনাম ২,৬৯০,০৫৪), তাদের মধ্যে ৭০% রোগের জন্য মৃত্যুর (২২,৬৯৩+ বনাম ৩২,০৯৮) ঘটনা ছিল।[৬৪]

বেসামরিক নাগরিকসহ মোট উসমানীয় হতাহতের পরিমাণ জনসংখ্যার প্রায় ২৫% হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে, ২১ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫ মিলিয়নের মৃত্যু ঘটে। ১৯১৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উসমানীয় সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ২০,৯৭৫,৩৪৫ জন। এর মধ্যে ১৫,০৪৪,৮৬৬ জন ছিল মুসলিম গোষ্ঠির থেকে, ১৮৭,০৭৩ ইহুদি গোষ্ঠি থেকে, ১৮৬,১৫২ টি কোন গোষ্ঠির সাথে সম্পর্কিত ছিল না বা যে কোন গোষ্ঠির এবং বাকীগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল অন্যন্য গোষ্ঠির ছিল।[৬৫] তুর্কি অধ্যাপক কামার কাসিম বলেছেন যে সংখ্যার প্রকৃত পরিমাণ ছিল জনসংখ্যার ২৬.৯% (পশ্চিমা সূত্রের বিবরণে ২৫% এর তুলনায় ১.৯% বেশি), প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া সমস্ত দেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ অনুপাত।[৬৬] ১.৯% বৃদ্ধি এই সংখ্যাটিতে অতিরিক্ত ৩৯৯,০০০ বেসামরিক লোকের প্রতিনিধিত্ব করে।

পরে শত্রুর কাছে হেরে যাওয়াগুলো গণনা না করে, উসমানীয়রা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ১৩১৪ টি কামান আটক করেছিল (বেশিরভাগ ৮৭ মিমি থেকে ১২২ মিমি এর মধ্যে ছিল)। এর বেশিরভাগ ছিল রাশিয়ান, তবে এর মধ্যে কিছু রোমানিয়ান, জার্মান এবং জাপানের তৈরি ছিল। আটক কামানগুলি যুদ্ধের শেষের দিকে সামগ্রিকভাবে অটোমান আর্টিলারি শক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল।[৬৭]

ঘটনা পঞ্জি[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Timeline of campaigns during WWI of the Ottoman Empire

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

General:

টীকা[সম্পাদনা]

  1. In the Battle of Jarrab, the only major battle that the Emirate of Nejd and Hasa participated in during World War I
  2. Total number in the combined Turkish-Azerbaijani Islamic Army of the Caucasus

পাদটিকা[সম্পাদনা]

  1. "Austro-Hungarian Army in the Ottoman Empire 1914–1918"। ১৮ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৯ 
  2. Jung, Peter (২০০৩)। Austro-Hungarian Forces in World War I। Oxford: Osprey। পৃষ্ঠা 47আইএসবিএন 1841765945 
  3. Fleet, Kate; Faroqhi, Suraiya; Kasaba, Reşat (২০০৬)। The Cambridge History of Turkey: Turkey in the Modern World। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 94। আইএসবিএন 0521620961 
  4. Erickson, Edward J. (২০০৭)। Ottoman Army Effectiveness in World War I: a comparative study। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 154আইএসবিএন 0-415-77099-8 
  5. Murphy, p. 26.
  6. Mehmet Bahadir Dördüncü, Mecca-Medina: the Yıldız albums of Sultan Abdülhamid II, Tughra Books, 2006, আইএসবিএন ১-৫৯৭৮৪-০৫৪-৮, page 29. Number refers only to those laying siege to Medina by the time it surrendered and does not account for Arab insurgents elsewhere.
  7. Broadberry, S. N.; Harrison, Mark (২০০৫)। The Economics Of World War I। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 117। আইএসবিএন 0521852129 
  8. Gerd Krumeich: Enzyklopädie Erster Weltkrieg, UTB, 2008, আইএসবিএন ৩৮২৫২৮৩৯৬৮, page 761 (জার্মান).
  9. A Brief History of the Late Ottoman Empire, M. Sükrü Hanioglu, page 181, 2010
  10. Macmunn & Falls 1996, p. 411
  11. Kostiner, Joseph (১৯৯৩)। The Making of Saudi Arabia, 1916–1936: From Chieftaincy to Monarchical State। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 28। আইএসবিএন 0195360702 
  12. Ordered to Die: A History of the Ottoman Army in the First World War By Huseyin (FRW) Kivrikoglu, Edward J. Erickson, Greenwood Publishing Group, 2001, আইএসবিএন ০৩১৩৩১৫১৬৭, page 211. Listed below are total Ottoman casualties; they include some 50,000 losses in eastern Europe of which 25,000 were in Galicia, 20,000 in Romania, and a few thousand in Macedonia (p. 142).
  13. James L.Gelvin "The Israel-Palestine Conflict: One Hundred Years of War " Publisher: Cambridge University Press আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২১-৬১৮০৪-৫ Page 77
  14. Naayem, Shall This Nation Die?, p. 281
  15. The Treaty of Alliance Between Germany and Turkey Library of Congress Web Archives আর্কাইভকৃত ১৬ নভেম্বর ২০০১ তারিখে 2 August 1914
  16. Hinterhoff, Marshall Cavendish Illustrated Encyclopedia, pp.499–503
  17. The Encyclopedia Americana, 1920, v.28, p.403
  18. Richard James Popplewell. Intelligence and Imperial Defence: British Intelligence and the Defence of the Indian Empire, 1904–1924 Psychology Press, 1995 আইএসবিএন ০৭১৪৬৪৫৮০X p 176
  19. Popplewell, Richard J (১৯৯৫), Intelligence and Imperial Defence: British Intelligence and the Defence of the Indian Empire 1904–1924, Routledge, আইএসবিএন 0-7146-4580-X, ২৬ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  20. J. A. R. Marriott, Modern England: 1885–1945 (4th ed. 1948) p.365
  21. R. G. Hovannisian. Armenia on the Road to Independence, 1918, University of California Press, Berkeley and Los Angeles, 1967, pg. 59
  22. Erickson 2001, page 119
  23. Erickson 2001, page 140
  24. Erickson 2001, p. 15-16
  25. Erickson 2001, p. 17
  26. Erickson 2001, p. 7
  27. Erickson 2001, p. 8
  28. The Washington Post, November 12, 1914. "Armenians Join Russians" the extended information is at the image detail)
  29. Joan George "Merchants in Exile: The Armenians of Manchester, England, 1835–1935", p.184
  30. Stanley Elphinstone Kerr. The Lions of Marash: personal experiences with American Near East Relief, 1919–1922 p. 30
  31. The Hugh Chisholm, 1920, Encyclopædia Britannica, Encyclopædia Britannica, Company ltd., twelfth edition p.198.
  32. Avetoon Pesak Hacobian, 1917, Armenia and the War, p.77
  33. (Shaw 1977, পৃ. 314–315)
  34. Richard G. Hovannisian, The Armenian People from Ancient to Modern Times, p. 244
  35. (Erickson 2001, পৃ. 97)
  36. Historical dictionary of the Ottoman Empire, p.Ixvi. Selçuk Akşin Somel, 2003
  37. A. F. Pollard, "A Short History Of The Great War" chapter VI: The first winter of the war.
  38. (Erickson 2001, পৃ. 54)
  39. Slot 2005, পৃ. 406
  40. Slot 2005, পৃ. 407
  41. Slot 2005, পৃ. 409
  42. (Pasdermadjian 1918, পৃ. 22)
  43. Fromkin, 135.
  44. Peter Mansfield, The British Empire magazine, Time-Life Books, vol 75, p. 2078
  45. A Global Chronology of Conflict, Vol. 4, ed. Spencer Tucker, (ABC-CLIO, 2011), 1669.
  46. Neil Faulkner, Lawrence of Arabia's War: The Arabs, the British and the Remaking of the , (Yale University Press, 2016), 188.
  47. Hovannisian, Richard (১৯৯৭)। The Armenian people from Ancient to Modern Times। New York: St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 292–293। আইএসবিএন 0312101686 
  48. Mark Malkasian, Gha-Ra-Bagh: The emergence of the national democratic movement in Armenia, page 22
  49. A Global Chronology of Conflict, Vol. 4, ed. Spencer Tucker, (ABC-CLIO, 2011), 1658.
  50. Martin Watts, The Jewish Legion during the First World War, (Springer, 2004), 182.
  51. Ernest Tucker, The Middle East in Modern World History, (Routledge, 2016), 138.
  52. Mustafa Kemal Pasha's speech on his arrival in Ankara in November 1919
  53. Sunga, Lyal S. (১৯৯২-০১-০১)। Individual Responsibility in International Law for Serious Human Rights Violations। Martinus Nijhoff Publishers। আইএসবিএন 0-7923-1453-0 
  54. Bernhardsson, Magnus (২০০৫-১২-২০)। Reclaiming a Plundered Past: archaeology and nation building in modern Iraq। University of Texas Press। আইএসবিএন 0-292-70947-1 
  55. Erickson 2001a, p. 94.
  56. Hart, Peter. "The Great War: A Combat History of the First World War". Oxford University Press, 2013. Page 409.
  57. Tucker, Spencer. "World War 1: The Definitive Encyclopedia and Document Collection". ABC-CLIO, Oct 28, 2014. Page 1079.
  58. Edward J. Erickson. "Ottoman Army Effectiveness in World War I: A Comparative Study". Routledge, 2007. Page 166.
  59. Del Boca, Angelo: Gli italiani in Libia, vol. 1: Tripoli bel suol d’amore 1860–1922, Milan 2010 (1st ed. 1986), p. 298. Refers, among other things, to 5,600 dead, a few thousand wounded and about 2,000 prisoners just for the period January–July 1915.
  60. Mehmet Beşikçi Ottoman mobilization of manpower in the First World War: Leiden; Boston: Brill, 2012. আইএসবিএন ৯০-০৪-২২৫২০-X pp. 113–114.
  61. Military Casualties-World War-Estimated," Statistics Branch, GS, War Department, 25 February 1924; cited in World War I: People, Politics, and Power, published by Britannica Educational Publishing (2010) Page 219.
  62. Ordered to Die: A History of the Ottoman Army in the First World War, by Huseyin (FRW) Kivrikoglu, Edward J. Erickson, Page 211.
  63. Erickson 2001, p. 240
  64. T. J. Mitchell and G.M. Smith. "Medical Services: Casualties and Medical Statistics of the Great War." From the "Official History of the Great War". Page 15.
  65. Stanford Jay Shaw, Ezel Kural Shaw, "History of the Ottoman Empire and Modern Turkey", Cambridge University page 239-241
  66. Kamer Kasim, Ermeni Arastirmalari, Sayı 16–17, 2005, page 205.
  67. Erickson 2001, p. 234

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]


টেমপ্লেট:Ottoman Forces during World War I