অমরাবতী (পৌরাণিক শহর)
অমরাবতী (সংস্কৃত: अमरावती, অনুবাদ 'অমরদের শহর') হলো হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম অনুসারে ইন্দ্রের রাজ্য স্বর্গের রাজধানী।[১] পুরাণে এটিকে দেবপুর (দেবদের শহর) এবং পুষাভাসা (সূর্য কর্তৃক জলুস) বলা হয়।[২]
বিবরণ
[সম্পাদনা]হিন্দু পুরাণে, অমরাবতী ব্রহ্মার পুত্র, দেবতাদের স্থপতি বিশ্বকর্মা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। বিশ্বকর্মাকে কিন্তু কখনও কখনও কশ্যপের পুত্র হিসেবেও চিত্রিত করা হয়। অমরাবতীর কেন্দ্রে রয়েছে ইন্দ্রের (বৌদ্ধধর্মে শক্র) প্রাসাদ বৈজয়ন্ত। ইন্দ্রের স্বর্গ নন্দনকানন নামক স্বর্গীয় উদ্যান হলো সৎকর্মশীলদের আবাস। সেখানে ইচ্ছা পূরণকারী কল্পবৃক্ষের মতো দিব্য বৃক্ষ রয়েছে। তদুপরি গোলাপ বৃক্ষ , পদ্ম, গন্ধরাজ, মাধবীলতা, জুঁই ইত্যাদি মিষ্টি সুগন্ধি ফুলের বৃক্ষ রয়েছে। সুগন্ধি বাদামের নির্যাস প্রাসাদের পাশে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুগন্ধি বৃক্ষগুলো অপ্সরাদের অধীনে আছে। মৃদু মধুর সঙ্গীত এই দেশে গীত হয়। ইন্দ্রের প্রাসাদের পরিধি আটশো মাইল এবং উচ্চতা চল্লিশ মাইল।[৩]
অমরাবতীর অধিবাসীদের মধ্যে রয়েছে দেব, দানব, গন্ধর্ব, কিন্নর, উরগ ও রাক্ষস ইত্যাদি। যেসমস্ত সৌভাগ্যবান মনুষ্যগণ এই রাজ্যে উন্নীত হয়েছে তারাও দেবতাদের সমতুল্য হয়ে যান।[৪]
অমরাবতীর স্তম্ভগুলি হীরক দিয়ে গঠিত। এর আসবাবপত্র খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি। অমরাবতীর প্রাসাদগুলোও স্বর্ণনির্মিত। এখানে গোলাপী রঙের ফুলের সুগন্ধিবাহী মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। অমরাবতীর বাসিন্দারা সঙ্গীত, নৃত্য ও সব ধরনের উৎসব উপভোগ করেন। সমগ্র আবাসটি দেবত্বে পূর্ণ । অমরাবতীর শ্রোতা কক্ষে ত্রায়স্ত্রিংশ স্বর্গ এর স্বর্গীয় তেত্রিশ দেবতা, আটচল্লিশ হাজার ঋষি এবং প্রচুর পরিচারক রয়েছে। মহাভারতে, ইন্দ্রের অমরাবতীতে অপর একটি স্বর্গীয় সভা রয়েছে যা পুষ্কর-মালিনী নামে পরিচিত। ইন্দ্র স্বয়ং এটি তৈরি করেছিলেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[৫]
সাহিত্য
[সম্পাদনা]স্কন্দপুরাণ
[সম্পাদনা]স্কন্দপুরাণে অমরাবতী শহরের পরিবেশ বর্ণনা করা হয়েছে:[৬]
সেই মহাকালবনে অত্যন্ত মনোরম স্বর্গীয় উদ্যান নন্দনকানন বিদ্যমান রয়েছে। কামধেনু অভীষ্ট বরদানকারী গাভী হিসাবে বিখ্যাত। তিনি সর্বদা সেখানে মহাকাল মহেশ্বরের সেবা করেন। মনোহর বৃক্ষ পারিজাত তাঁকে সেবা করেন। সেই স্থানে চমৎকার মানস সরোবর বিন্দুসারস ও সর্বদা অম্লান নবীন পদ্মফুল দ্বারা শোভিত । এটি রাজহাঁস এবং সারস দ্বারা পরিপূর্ণ। এটি সুরগণ এবং সিদ্ধগণের বিচরণ ক্ষেত্র। মুক্তো এবং রত্ন সর্বত্র সেই স্থান জুড়ে বিস্তৃত এবং দীপ্তিশীল রত্নগুলি এই স্থানকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। এখানে নিধিসমূহ(মহাপদ্মনিধি) কল্হার ও কুমুদের সাথে জ্বলজ্বল করছে। ব্রহ্মাণ্ডে যেসমস্ত ঐশ্বরিক বস্তু বিদ্যমান তা জ্যোতির্ময় মহাকালবনে রয়েছে।।
— স্কন্দপুরাণ,আবন্ত্যখণ্ড অধ্যায় ৪৬
ব্রহ্মপুরাণ
[সম্পাদনা]ব্রহ্মপুরাণে, কৃষ্ণের দ্বারা নির্মিত দ্বারকা শহরটিকে অমরাবতীর মত বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বিশাল উদ্যান এবং বাইরের দেয়াল রয়েছে, শত শত হ্রদ এবং সেইসাথে শত শত পুরু প্রাচীর রয়েছে।[৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Roshen Dalal (২০১৪)। Hinduism: An Alphabetical Guide। Penguin Books। আইএসবিএন 9788184752779। Entry: "Indraloka"
- ↑ www.wisdomlib.org (২০০৯-০৪-১১)। "Amaravati, Amarāvati, Amarāvatī, Amaravatī: 27 definitions"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ Gopal, Madan (১৯৯০)। K.S. Gautam, সম্পাদক। India through the ages। Publication Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 66।
- ↑ www.wisdomlib.org (২০২০-১০-১৩)। "The Genesis of the Name Amarāvatī [Chapter 46]"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ Mahabharata Sabha Parva, Lokpala-khayana Parva, Section VII
- ↑ www.wisdomlib.org (২০২০-১০-১৩)। "The Genesis of the Name Amarāvatī [Chapter 46]"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
- ↑ www.wisdomlib.org (২০১৮-০৩-৩১)। "Mucukunda's Prayer [Chapter 88]"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২১।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- "The Mahabharata, Book 3: Vana Parva: Indralokagamana Parva: Section XLII"। Sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-৩০।
- "The Mahabharata, Book 3: Vana Parva: Indralokagamana Parva: Section XLIII"। Sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-৩০।