ভূগোলের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভূগোলের ইতিহাস বলতে বোঝানো হয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শিদের দ্বারা সংগঠিত বা পরিবর্তিত ভূগোলের বিভিন্ন ইতিহাসের একটি কালিকপঞ্জিকে। সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত নানাবিধ উন্নয়নের ফলশ্রুতিতে ভূগোল বর্তমানে একটি স্বতন্ত্র ও সুশৃঙ্খল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 'ভূগোল' শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Geography', যা এসেছে গ্রীক ভাষার: γεωγραφία (ইংরেজিতে: Geographia) থেকে,[১] যার শাব্দিক অর্থ: "পৃথিবী সম্পর্কিত বর্ণনা বা আলোচনা"। গ্রিক জ্ঞানবেত্তা এরাতোস্থেনেস (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৬-১৯৪) ছিলেন "ভূগোল" শব্দটি ব্যবহার করা প্রথম ব্যক্তি। পূর্বে 'ভূগোল' শব্দটি জ্ঞানের অনেক শাখায় ব্যবহার করা হতো, যেমন: মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা (মানচিত্র তৈরি) বিষয়ক বর্ণনায় এর ব্যবহারের প্রচুর উদাহরণ দেখা যায়।

মিশরীয় যুগ[সম্পাদনা]

জ্ঞাত বিশ্বের, প্রাচীন মিশরীয়দের মতে নীলনদ ছিল পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল এবং বিশ্ব ছিল নদীকেন্দ্রিক। বিভিন্ন মরুদ্য়ান ও দেবদেবীর কেন্দ্রস্থল হিসেবেও বিবেচিত ছিল প্রাচীন এই মিশর (যেমন ‎‎সিওয়া‎‎, আমোনের জন্য)। দক্ষিণের কুশেটিক অঞ্চল ছিল জলপ্রপাতের জন্য সুপরিচিত।‎‎ পুন্ট‎‎ ছিল লোহিত সাগরের তীর বরাবর দক্ষিণে একটি অঞ্চল। বিভিন্ন এশীয়ান জনগোষ্ঠী যেমন: রেটেনু, কানন, কুই, হারানু, বা খাতি (‎‎হিটটিটস‎‎) ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে মিশরীয়দের ‎‎ব্যাবিলনিয়া‎‎ এবং ‎‎এলামের‎‎ সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। তৎকালীন সময়ে ভূমধ্যসাগরকে "গ্রেট গ্রিন" বলা হত এবং এটিকে মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত বিশ্বের একটি অংশ বলে মনে করা হত। ইউরোপ অজ্ঞাত ছিল, তথাপি ফিনিশিয়ান যুগে মিশরীয় বিশ্বদর্শনই প্রধান হয়ে উঠেছিল। এশিয়ার পশ্চিমে রাজ্যগুলোতে ‎‎কেফটিউ‎‎, সম্ভবত ‎‎ক্রীট‎‎ এবং মাইসিনে (দ্বীপপুঞ্জেময় ধারাবাহিকতার অংশ বলে মনে করা হয়, যা সাইপ্রাস, ক্রীট, সিসিলি এবং পরে সম্ভবত ‎‎সার্ডিনিয়া‎‎, ‎‎কর্সিকা‎‎ এবং বালারিক থেকে আফ্রিকার সাথে যুক্ত হয়েছিল)।

ব্যাবিলনিয় যুগ[সম্পাদনা]

পরিচিত বিশ্বের আদি মানচিত্রটি প্রাচীন ব্যাবিলনে খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দীতে অঙ্কন করা হয়েছিলো।[২] বিশ্বের প্রাচীন মানচিত্র হিসেবে সর্বত্র পরিচিত ইমাগো মুন্ডি (বাংলায় অর্থ: বিশ্বের ছবি) ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ব্যাবিলনিয়ানদের দ্বারা তৈরীকৃত।[৩] একার্ড আনগার দ্বারা পুনরাঙ্কিত এই মানচিত্রটিতে ব্যাবিলনকে দেখানো হয়েছে ইউফ্রেটিস নদীর তীর সংলগ্ন, আসিরীয়া, উরারতু[৪] এবং আরো বিভিন্ন শহর দ্বারা ঘিরে থাকা একটি অঞ্চল। এটি একটি "তেঁতো নদ" (ওসেনাস) দ্বারা বেষ্টিত ও একত্রে সাজানো সাতটি দ্বীপপুঞ্জ যা একটি সাত তারকা বিশিষ্ট গঠনাকৃতি ধারণ করেছে। মানচিত্রটির সাথে সংযুক্ত বর্ণনা মতে বেষ্টিত মহাসাগর অতিক্রম করলে সাতটি অঞ্চলে পাওয়া যাবে, যাদের মধ্য হতে পাঁচটির বিবরণ বর্তমানে পাওয়া যায়।[৫]

খ্রিষ্টের জন্মের ৯শত বছর পূর্বে তৈরীকৃত ব্যাবিলনিয়ানদের অঙ্কিত বিশ্বের প্রাচীন এই মানচিত্রটি বা ইমাগো মুন্ডি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এতে বিশ্বের কেন্দ্র থেকে ব্যাবিলনকে আধিক উত্তরে দেখানো হয়েছে; যদিও মানচিত্রটি দেখে এটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়না যে এই কেন্দ্রটি ঠিক কিসের অনুমিত প্রতিনিধিত্ব করছে।[২]

গ্রিক-রোমান যুগ[সম্পাদনা]

প্রাচীন গ্রিসে কবি হোমারকে ভূগোলের 'প্রতিষ্ঠাতা' হিসেবে দেখা হতো। তার ইলিয়াড এবং ওডিসি মহাকাব্য কেবল সাহিত্যই নয়, সেই সঙ্গে ভৌগোলিক তথ্যেরও এক সমৃদ্ধ ভান্ডার। হোমার এক বিশাল সমুদ্রের দ্বারা চতুর্দিক ঘিরে থাকা একটি বৃত্তাকার পৃথিবীর বর্ণনা দিয়েছেন। কাব্য দুটিতে দেয়া বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, খ্রিষ্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতেও গ্রিকদের পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ভূগোল সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ছিলো। কাব্য দুটিতে প্রচুর সংখ্যক জায়গার নাম এবং বর্ণনা দেয়া হয়েছে, কিন্তু এদের অনেকগুলোর জন্যই বাস্তবে ঠিক কোথায় স্থানটি অবস্থিত তা নিশ্চিত করে বলা হয়নি, যদি থাকেও, সেক্ষেত্র আসলে এটি নির্দেশনা হিসেবে দেয়া হয়েছে।

মিলেটাসের থেলিস ছিলেন জ্ঞাত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম দার্শনিক যিনি পৃথুবীর আকৃতি সম্পর্কে চিন্তা করেন। তিনি ধারণা করেন যে, পৃথিবী পানির উপর অবস্থিত এবং অন্যান্য সব কিছুই এটি থেকে উদ্ভূত। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা ও গাণিতের অসংখ্য সূত্র প্রদান করেন যা ভূগোলকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে শেখায় সহায়তা করেছে। তার উত্তরসূরি আনাক্সিমান্দ্রোস হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পরিচিত বিশ্বের জন্য একটি স্কেল মানচিত্র তৈরি করার চেষ্টা করেন এবং প্রাচীন গ্রীসে জেনোম (gnomon) ব্যবহার চালু করেন।

হেলেনিস্টিক যুগ[সম্পাদনা]

যদিও এই তত্ত্বগুলি অভিযাত্রীক প্রমাণের সাথে সাংঘর্ষিক, তবুও, ‎‎হ্যানো নেভিগেটর‎‎ নামক এক ব্যক্তি ‎‎সিয়েরা লিওনের‎‎ দক্ষিণে ভ্রমণ করেছিলেন এবং আফ্রিকার মিশরীয় ফারাও ‎‎নেচো ; হেরোডোটাস এবং অন্যান্যদের সাথে যুক্ত হয়ে ফিনিশিয়ান নাবিকদের দ্বারা আফ্রিকাকে পরিবেষ্টন করে প্রদক্ষিণ করেছিলেন।

ত্রুটি: কোন পাতার নাম দেয়া হয়নি (সাহায্য)।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. "Online Etymology Dictionary"। Etymonline.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১৭ 
  2. Kurt A. Raaflaub & Richard J. A. Talbert (২০০৯)। Geography and Ethnography: Perceptions of the World in Pre-Modern SocietiesJohn Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 147আইএসবিএন 1-4051-9146-5 
  3. Siebold, Jim Slide 103 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে via henry-davis.com – accessed 2008-02-04
  4. http://www.jstor.org/pss/1151277 IMAGO MVNDI, Vol.48 pp.209
  5. Finel, Irving (১৯৯৫)। "A join to the map of the world: A notable discover": 26–27 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • Hsu, Mei-ling. "The Qin Maps: A Clue to Later Chinese Cartographic Development," Imago Mundi (Volume 45, 1993): 90–100.
  • Martin, Geoffrey J. All Possible Worlds: A History of Geographical Ideas. New York: Oxford University Press, 2005.
  • Needham, Joseph (1986). Science and Civilization in China: Volume 3. Taipei: Caves Books, Ltd.
  • Needham, Joseph (1986). Science and Civilization in China: Volume 4, Part 3. Taipei: Caves Books, Ltd.
  • Harley, J.B. and David Woodward. eds. The History of Cartography series Chicago: University of Chicago Press, 1987

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]