ম্যাক্স ওয়েবার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মাক্স ভেবার থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ম্যাক্স ওয়েবার
জন্ম
ম্যাক্সিমিলিয়ান কার্ল এমিল ভেবার

(১৮৬৪-০৪-২১)২১ এপ্রিল ১৮৬৪
মৃত্যু১৪ জুন ১৯২০(1920-06-14) (বয়স ৫৬) (নিউমোনিয়া)
জাতীয়তাজার্মান
মাতৃশিক্ষায়তনবার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণভেবারীয় আমলাতন্ত্র, Disenchantment, Ideal type, Iron cage, Life chances, Methodological individualism, Monopoly on violence, Protestant work ethic, Rationalisation, Social action, Three-component theory of stratification, Tripartite classification of authority, Verstehen
পিতা-মাতামাক্স ভেবার সিনিয়র.

ম্যাক্সিমিলিয়ান কার্ল এমিল মাক্স ভেবার (ভুলক্রমে সচরাচর উচ্চারিত ম্যাক্স ওয়েবার) (২১ এপ্রিল ১৮৬৪ - ১৪ জুন ১৯২০) ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের একজন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি সামাজিক তত্ত্ব, সামাজিক গবেষণা ও সর্বোপরি সমাজতত্ত্ব বিষয়টিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছেন।[১] আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের স্থপতি হিসেবে এমিল ডুর্খাইমকার্ল মার্ক্সের সাথে তার নামও গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়।[২][৩][৪] আমলাতন্ত্র ধারণাটি প্রথম তিনিই সংজ্ঞায়িত করেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

ম্যাক্সিমিলিয়ান কার্ল এমিল ভেবার 1864 সালের 21 এপ্রিল এরফুর্ট, স্যাক্সনি প্রদেশ, প্রুশিয়া,-এ জন্মগ্রহণ করেছিলেন[৫] কিন্তু তার পরিবার 1869 সালে বার্লিনে চলে আসে। [৬] ম্যাক্স ভেবার সিনিয়র এবং তার স্ত্রী হেলেন ফ্যালেনস্টাইনের আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড়।[৭]

তার ভাই আলফ্রেড এবং কার্লের সাথে ম্যাক্স ভেবারের একটি গ্রুপ ফটোগ্রাফ

শিক্ষা[সম্পাদনা]

1882 সালে, ওয়েবার আইনের ছাত্র হিসাবে ইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়-এ ভর্তি হন, পরে বার্লিনের ফ্রেডরিখ উইলহেম ইউনিভার্সিটি এবং তারপর গটিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়-এ চলে যান।[৮] পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি জুনিয়র আইনজীবী[৯] ও প্রভাষক[১০] হিসেবে কাজ করেছেন। ১৮৮৬ সালে, ওয়েবার ব্রিটিশ এবং মার্কিন আইনি ব্যবস্থায় বার অ্যাসোসিয়েশন পরীক্ষার সাথে সমতুল্য় রেফারেন্ডারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮০ এর দশকের শেষের দিকে, ওয়েবার তার আইন এবং ইতিহাসের অধ্যয়ন চালিয়ে যান।[৯] পারিবারিকভাবে পরিচিত লেভিন গোল্ডস্মিডের তত্ত্বাবধানে, ওয়েবার ১৮৮৯ সালে আইনী ইতিহাসের উপর 'Development of the Principle of Joint Liability and a Separate Fund of the General Partnership out of the Household Communities and Commercial Associations in Italian Cities' নামে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ আইনের ডক্টরেট অর্জন করেন। পরবর্তীতে কাজটি আরো দীর্ঘ করে তিনি On the History of Commercial Partnerships in the Middle Ages, Based on Southern European Documents নামে একই বছর প্রকাশ করেন।[১১] দুই বছর পর, পরিসংখ্যানবিদ আগস্ট মেইটজেন এর সাথে কাজ করে, ওয়েবার তার Roman Agrarian History and Its Significance for Public and Private Law নামে একটি পোস্ট-ডক্টরাল থিসিস প্রকাশ করেন।[১২] এইভাবে একটি প্রাইভেটডোজেন্ট হওয়ার পর, ওয়েবার ফ্রেডরিখ উইলহেম ইউনিভার্সিটির একটি অনুষদে যোগদান করেন, বক্তব্য দেন, গবেষণা শুরু করেন করেন এবং সরকারি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন।[১৩]

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ওয়েবারের বছরগুলোর মধ্যে ছিল সামরিক চাকরির বেশ কিছু সময়কাল, যার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় চলেছিল অক্টোবর ১৮৮৩ থেকে ১৮৮৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এই সময়ে, তিনি স্ট্রাসবার্গ-এ ছিলেন এবং তার ইতিহাসবিদ মামা [হারম্যান বাউমগার্টেন]] এর কিছু ক্লাসে অংশ নেন।[১৪] ওয়েবার বাউমগার্টেনের সাথে বন্ধুত্ব করেন এবং তিনি ওয়েবারের ক্রমবর্ধমান উদারতাবাদ এবং জার্মান রাজনীতিতে অটো ভন বিসমার্কের আধিপত্যের সমালোচনাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন[১৫]

বিয়ে[সম্পাদনা]

ম্যাক্স ওয়েবার এবং তার স্ত্রী মারিয়ান ১৮৯৪ সালে

১৮৮৭ সাল থেকে হারমান বাউমগার্টেনের মেয়ে এমি বামগার্টেনের সাথেম্যাক্স এর ওয়েবারের সাথে সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় পাঁচ বছর পরে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়।[১৬] পরবর্তীতে, তিনি ১৮৯২ সালে তার দূরবর্তী কাজিন মারিয়েন স্নিটগারের সাথে একটি সম্পর্কে জড়িয়ে যান এবং এক বছর পরে তাকে বিয়ে করেন। মারিয়ান একজন নারীবাদী কর্মী এবং লেখক ছিলেন ।[১৭] তিনি ওয়েবারের মৃত্যুর পর বই হিসাবে তার জার্নাল নিবন্ধগুলি সংগ্রহ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।[১৮] তাদের কোন সন্তান ছিল না।[১০]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

কর্মসূচনা[সম্পাদনা]

গবেষণামূলক প্রবন্ধগুলো সমাপ্তির পরের বছরগুলিতে, ওয়েবার সমসাময়িক সামাজিক নীতিতে আগ্রহী হন। ১৮৮৮ সালে, তিনি সোসাইটি ফর সোশ্যাল পলিসি (Verein für Socialpolitik)[১৯] তে যোগ দেন যা ছিল একটি ঐতিহাসিক স্কুল ও জার্মান অর্থনীতিবিদদের একটি নতুন পেশাদার সমিতি, যারা মনে করতো অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে বিভিন্ন যুগে উদ্ভব হওয়া নানান সামাজিক সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা এবং এটি সম্ভব বড় আকারের পরিসংখ্যানগত অধ্যয়নের মধ্য় দিয়ে। তিনি বামপন্থী ইভানজেলিকাল সোশ্যাল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে রাজনীতিতেও নিজেকে যুক্ত করেন।[২০] ১৮৯০ সালে, ভেরিন নামক একটি প্রতিষ্ঠান একটি গবেষণা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করে যার নাম ছিল "পোলিশ প্রশ্ন" বা ostflucht। এটি মূলত পূর্ব জার্মানিতে পোলিশ খামার শ্রমিকদের আগমনের কারণ দেখার জন্য তৈরি করা হয়।[৫] ওয়েবারকে গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের একটি বড় অংশ লিখেছিলেন,[২১] যা যথেষ্ট দেশজুড়ে মনোযোগ এবং বিতর্ক তৈরি করেছিল, যা একজন সমাজ বিজ্ঞানী হিসাবে ওয়েবারের খ্যাতির সূচনা করে।

১৮৯৩ থেকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত, ওয়েবার ছিলেন Alldeutscher Verband (প্যান-জার্মান অ্যাসোসিয়েশন) নামক একটি সংগঠন এর সদস্য ছিলেন, যেটি পোলিশ শ্রমিকদের আগমনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়; পোলিশদের জার্মানীকরণ এবং অনুরূপ জাতীয়তাবাদী নীতির জন্য ওয়েবারের সমর্থনের মাত্রা নিয়ে এখনও আধুনিক পণ্ডিতদের বিতর্ক রয়েছে[২২]। তার কিছু কাজে, বিশেষ করে ১৮৯৫ সালে প্রদত্ত "দ্য নেশন স্টেট অ্যান্ড ইকোনমিক পলিসি" বিষয়ে তিনি উত্তেজক বক্তব্য দেন, পোলিশ অভিবাসনের সমালোচনা করেন এবং জাঙ্কার শ্রেণীকে তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য স্লাভিক অভিবাসনকে স্থায়ী করে বলে তাদের দায়ী করেন।[২৩]

ওয়েবার এবং তার স্ত্রী, মারিয়ান, ১৮৯৪ সালে ফ্রেইবার্গে চলে আসেন, যেখানে ওয়েবারকে আলবার্ট-লুডউইগস বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন,[২৪] ১৮৯৬ সালে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি একই পদে চাকরি নেন।[২৪] সেখানে, ওয়েবার তথাকথিত "ওয়েবার সার্কেল"-এর একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন, যা তার স্ত্রী মারিয়েন, সেইসাথে জর্জ জেলিনেক, আর্নস্ট ট্রয়েল্টস, ওয়ার্নার সোমবার্ট এবং রবার্ট মিশেলসহ অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল।[৫] ওয়েবার ভেরিন এবং ইভানজেলিকাল সোশ্যাল কংগ্রেসেও সক্রিয় ছিলেন। সেই সময়কালে তার গবেষণা ছিল অর্থনীতি এবং আইনি ইতিহাসের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।[২৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Max Weber." Encyclopædia Britannica. 2009. Encyclopædia Britannica Online. 20 April 2009. Britannica.com
  2. Kim, Sung Ho (২৪ আগস্ট ২০০৭)। "Max Weber"। Stanford Encyclopaedia of Philosophy। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  3. Max Weber; Hans Heinrich Gerth; Bryan S. Turner (৭ মার্চ ১৯৯১)। From Max Weber: essays in sociology। Psychology Press। পৃষ্ঠা 1। আইএসবিএন 978-0-415-06056-1। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১১ 
  4. Radkau, Joachim and Patrick Ca miller. (2009). Max Weber: A Biography. Trans. Patrick Ca miller. Polity Press. (আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৪৫৬-৪১৪৭-৮)
  5. Kim 2022
  6. Kaesler 1988, পৃ. 2–3।
  7. Kaelber 2003, p. 38; Radkau 2009, p. 11.
  8. Calhoun 2002, p. 165; Bendix 1977, pp. 1–2.
  9. Calhoun 2002, পৃ. 165।
  10. Allan 2005, পৃ. 146।
  11. Kaelber 2003, পৃ. 33।
  12. Bendix 1977, pp. 1–2; Kaelber 2003, p. 41.
  13. Lachmann 2007, পৃ. 143।
  14. Kaelber 2003, পৃ. 30।
  15. Mommsen & Steinberg 1990, pp. 2–9; Kaelber 2003, p. 36.
  16. Radkau 2009, pp. 39–40, 562; Kaelber 2003, pp. 36–38.
  17. Kim 2022; Lengermann & Niebrugge-Brantley 1998, p. 193.
  18. Roth 1993, p. 95; Honigsheim & Sica 2003, p. 86.
  19. Poggi 2006, পৃ. 5।
  20. Mommsen 1992, পৃ. 19।
  21. Kim 2022; Poggi 2006, p. 5.
  22. Mommsen & Steinberg 1990, pp. 54–56; Hobsbawm 1987, p. 152.
  23. Radkau 2009, পৃ. 125–128।
  24. Bendix 1977, pp. 1–2; Lachmann 2007, p. 143.
  25. Calhoun 2002, পৃ. 166।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তার রচনাবলীর লিঙ্ক:

তার কাজের বিশ্লেষণ:

অন্যান্য বিশ্বকোষীয় নিবন্ধ: