অগমকুয়া

স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৫′৫৩″ উত্তর ৮৫°১১′৪৮″ পূর্ব / ২৫.৫৯৮০৬° উত্তর ৮৫.১৯৬৬৭° পূর্ব / 25.59806; 85.19667
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অগমকুয়া
अगमकुआ
প্রত্নক্ষেত্র
অগমকুয়া
অগমকুয়া
অগমকুয়া বিহার-এ অবস্থিত
অগমকুয়া
অগমকুয়া
অগমকুয়া ভারত-এ অবস্থিত
অগমকুয়া
অগমকুয়া
পাটনার মানচিত্রে অগমকুয়ার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৫′৫৩″ উত্তর ৮৫°১১′৪৮″ পূর্ব / ২৫.৫৯৮০৬° উত্তর ৮৫.১৯৬৬৭° পূর্ব / 25.59806; 85.19667
দেশভারত
রাজ্যবিহার
শহরপাটনা
সরকার
 • শাসকপাটনা পৌরসংস্থা
ভাষা
 • সরকারিহিন্দি
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
পিন কোড৮০০০০৭

অগমকুয়া হল ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা শহরের একটি প্রাচীন কুয়ো ও প্রত্নক্ষেত্র। এটি মৌর্য সম্রাট অশোকের (খ্রিস্টপূর্ব ৩০৪-২৩২ অব্দ) সমসাময়িক। গোলাকার এই কুয়োটি ইঁটের তৈরি। এর উপরিভাগের উচ্চতা ১৩ মিটার (৪৩ ফু)। অবশিষ্ট ১৯ মিটার (৬২ ফু) কাঠের রিং দেখা যায়।

অগমকুয়া আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক নির্দিষ্ট একটি প্রত্নক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত। এই প্রত্নক্ষেত্রের পাশে একটি শীতলা মন্দির আছে। এখানে লোকদেবী শীতলার পূজা হয়।

অবস্থান[সম্পাদনা]

বিহারের রাজধানী পাটনা শহরের পূর্ব দিকে এবং গুলজারবাগ রেল স্টেশনের[১] উত্তর-পশ্চিম দিকে পাঁচ পাহাড়ির রাস্তার ধারে অগমকুয়া অবস্থিত।[২]

ইতিহাস ও কিংবদন্তি[সম্পাদনা]

১৮৯০-এর দশকে ব্রিটিশ আবিষ্কারক লরেন্স ওয়াডেল পাটলীপুত্র মহানগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করতে করতে সম্রাট অশোক নির্মিত অগমকুয়াটি আবিষ্কার করেন। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা লাভের আগে অশোক এখানে বৌদ্ধদের উপর নির্যাতন চালাতেন।[৩] এটি ছিল অশোকের নরক কুণ্ডগুলির অন্যতম।[৪] খ্রিস্টীয় ৫ম থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালে ভারতে আগত চীনা পর্যটকদের (খুব সম্ভবত ফা হিয়েনের) রচনায় অত্যাচারের উল্লেখ পাওয়া যায়।[১] কথিত আছে, এই কুয়োর ভিতর আগুন জ্বলত এবং সেই আগুনে অভিযুক্তকে ফেলে দেওয়া হত। অশোকের অষ্টম শিলালিপিতে এই কুয়োটিকে ‘অগ্নিময় কূপ’ বা ‘মর্ত্যস্থ নরক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৩] অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে, মৌর্য সিংহাসনে আরোহণ করার বাসনায় অশোক তার ৯৯ জন সৎ ভাইকে এই কুয়োয় ফেলে হত্যা করেছিলেন।[১]

কিংবদন্তি অনুসারে, এই কুয়োটির সঙ্গে পাতাল বা নরকের যোগসূত্র রয়েছে। একজন সন্ত একটি ভারি কাঠ এই কুয়ো থেকে পেয়েছিলেন। সবাই মনে করত, কাঠটি সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল। তারই ভিত্তিতে এই কিংবদন্তিটি প্রচলিত হয়। অন্য একটি ভৌগোলিক সূত্র থেকে অণুমিত হয় অগমকুয়া গঙ্গা নদীর সঙ্গে যুক্ত। [২][৫] [৬] একাধিক জৈন কিংবদন্তির সঙ্গে অগমকুয়া যুক্ত। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ কিংবদন্তিটি হল জৈন সন্ন্যাসী সুদর্শনের কাহিনি। চন্দ নামে এক রাজা তাকে এই কুয়োয় ফেলে দিলে তিনি জলের উপরিতলে ভাসতে থাকেন। দেখা যায়, তিনি একটি পদ্মফুলের উপর বসে আছেন।[১]

দর্শকরা অগমকুয়ায় মুদ্রা ফেলেন।[৭] মুদ্রা ফেলার রীতিটিকে আধুনিক কালেও মঙ্গলজনক মনে করা হয়। হিন্দুদের বিবাহ উৎসব সহ বিভিন্ন উৎসবে এই মুদ্রা ফেলা হয়।[১] কুয়োটিকে পবিত্র মনে করা হলেও এই কুয়োর জল ব্যবহার করা হয় না।[২] কুয়োটির ইতিহাসের সঙ্গে ‘উত্তাপ ও নরকের’ যোগ থাকায় গ্রীষ্মকালেই এই কুয়োয় ফুল ও মুদ্রা ফেলা হয়। মুঘল শাসনকালে মুঘল রাজকর্মচারীরাও এই কুয়োয় স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা ফেলতেন।[৮]

গঠন[সম্পাদনা]

অগমকুয়া ১০৫ ফুট (৩২ মি) গভীর। এটি গোলাকার। এর ব্যাস ৪.৫ মিটার (১৫ ফু)-এরও বেশি। কুয়োর উপরের ৪৪ ফুট (১৩ মি) ইষ্টকনির্মিত এবং নিচের ৬১ ফুট (১৯ মি) কাঠের রিং দিয়ে ঘেরা। কুয়োর উপরের অংশটি ছত্রাকে ঢাকা। এই উপরিভাগের আটটি খিলানযুক্ত জানালা আছে।[১] মুঘল সম্রাট আকবর কুয়োটি সংস্কার করান এবং এর উপর একটি ছাউনি নির্মাণ করিয়ে দেন।[৯] এই আট-জানালা যুক্ত গোলাকার ছাউনিটি সুন্দরভাবে নির্মিত হয়েছিল।[১০]

মাঠ[সম্পাদনা]

শীতলা দেবী মন্দির

অগমকুয়া ছাড়া এই প্রত্নক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় স্থাপত্য ও একটি মন্দির অবস্থিত। কুয়োর ঠিক পাশেই শীতলা দেবী মন্দিরটিতে হিন্দু দেবী শীতলার পূজা হয়। এই মন্দিরে সপ্তমাতৃকার মূর্তি আছে। বসন্ত রোগের হাত থেকে বাঁচতে হিন্দুরা এই মন্দিরে পূজা দিতে আসেন।[১][১১] হিন্দু মন্দিরে সচরাচর পুরুষেরা পৌরোহিত্য করলেও, এই মন্দিরের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল এর মহিলা পুরোহিত।[৮]

মৌর্যযুগের একটি যক্ষ মূর্তি মন্দিরের দরজার কাছে ছিল। ১৯৭৯০-৮০ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম এই মূর্তিটিকে দেখে এটির কথা উল্লেখ করেন।[১২] সেই মূর্তিটি এখন আর দেখা যায় না।[১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Agam Kuan"। Directorate of Archaeology, Government of Bihar, official website। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  2. "The Explorations and Excavations at Patna: Agamkuan, Khaaunia & Stone Trough"। National Informatics Centre। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  3. Vishnu 1993, পৃ. 173।
  4. Kapoor 2002, পৃ. 4741।
  5. Sinha 1999, পৃ. 34-35, 59।
  6. O’Brien, পৃ. 17।
  7. Sinha 1999, পৃ. 59।
  8. Sinha 1999, পৃ. 34-35।
  9. Allen 2012, পৃ. 141।
  10. "Brief description of important archaeological sites/monuments among protected ones:Agam Kuan, Patna"। Directorate of Archaeology, Government of Bihar। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  11. O'Malley 1924, পৃ. 193।
  12. British Library ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে "A. Cunningham (Alexander Cunningham) wrote (after his 1879-80 tour), 'When I saw the two statues in the New Indian Museum at Calcutta, I then remembered that a broken statue of a similar kind was still standing at Agam Kua, just outside the city of Patna, adorned with a new head and a pair of roughly marked breasts, so as to do duty for the great goddess Mata-Mai...The Agam Kua is a very large and very old brick well...The broken figure is said to have been found in this well, and it seems probable therefore that the two statues were also found either at or near the same place."

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]