বাসমতী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাদামী বাসমতি চাল

বাসমতী (ইংরেজি: Basmati, হিন্দি: बासमती, পাঞ্জাবি: ਬਾਸਮਤੀ, তামিল: பாஸ்மதி কন্নড়: ಭಾಸ್ಮತಿ,ওড়িয়া: ବାସୁମତୀ, উর্দু: باسمتی‎‎, তেলুগু: బాస్మతి) চালের একটি বিশেষ প্রকরণ। লম্বা দানাদার এ চাল ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে উৎপন্ন হয়। সুগন্ধ ও সুস্বাদের জন্য এ চাল বিখ্যাত। সংস্কৃত শব্দ বাসমতী মানে সুগন্ধযুক্ত। সাদা বাসমতী চাল ছাড়াও বাদামী ধরনের বিশেষ বাসমতী চাল পাওয়া যায়।

ইতিহাস ও ব্যুত্পত্তি[সম্পাদনা]

"বাসমতী" শব্দটি হিন্দি/উর্দু ভাষার শব্দ बासमती باسمتی bāsmatī, থেকে এসেছে, যার আক্ষরিক অর্থ "সুগন্ধি"[১] (সংস্কৃতঃ बासमती, bāsamatī)। বাসমতী চাল শত শত বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে চাষ করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। বাসমতী চালের চাষের উল্লেখ করার সবচেয়ে পুরনো প্রচলন হল হের রঞ্জন (১৭৬৬ খ্রিষ্টাব্দ)।[২][৩]

সাংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে, এটি বিভিন্ন ভারতীয় / নেপালি / শ্রীলঙ্কা / ভুটানের খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, তবে এটি ফার্সি, আরবীও, পাকিস্তানি, বাংলাদেশী ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশের রান্নার সাথে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ভারতপাকিস্তান এই ধরনের চালের একচেটিয়া উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক।[৪]

প্রকরণ[সম্পাদনা]

বিভিন্ন প্রকরণের বাসমতী চালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: পাঞ্জাব, কের্নাল বাসমতী, ডেরাদুন, সফিদন, হরিয়ানা, কস্তুরি, বাসমতী ১৯৮, বাসমতী ২১৭[৫] আরও কিছু বিভিন্ন গন্ধের চালকে এ ধরনের চাল বলে বাজারে পাওয়া যায়।[৬][৭]

বাংলাদেশে বাসমতী চাল

উৎপাদন এবং চাষ[সম্পাদনা]

বিশ্বে বাসমতী চাল উৎপাদনের ৭০ শতাংশের বেশি ভারতে উৎপাদিত হয়।[৮] এর একটি ছোট অংশ জৈবিক কৃষি পদ্ধতিতে উৎপাদিত হচ্ছে। খেতি বিরাসত মিশন-এর মতো সংগঠনগুলি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে বাসমতী চালের উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।[৯][১০]

ভারতে[সম্পাদনা]

ভারতে বাসমতী চাষের কৃষি জমি পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারসহ বেশ কিছু রাজ্যগুলিতে রয়েছে। জুলাই ২০১১ সাল থেকে জুন ২০১২ সালের ফসল বছরের জন্য ভারতের মোট বাসমতী চালের উৎপাদন হয়েছিল ৫ মিলিয়ন টন।[১১] হরিয়ানা হল ভারতে প্রধান বাসমতী চাল উৎপাদন রাজ্য, যা ভারতে উৎপাদিত মোট বাসমতী চালের ৬০ শতাংশেরও বেশি উৎপাদন করে।

নেপালে[সম্পাদনা]

নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকা এবং তরাই অঞ্চলে প্রধানত বাসমতী চাল উৎপাদিত হয়। বাসমতী চালের স্বতন্ত্র নেপালি জাতগুলি বিশ্বব্যাপী রপ্তানি করা নিষিদ্ধ ছিল, যদিও এই নিষেধাজ্ঞা খুব শীঘ্রই প্রত্যাহার করা হতে পারে।[১২]

পাকিস্তানে[সম্পাদনা]

পাকিস্তানে মোট বাসমতী চালের উৎপাদনের ৯৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় পাঞ্জাব প্রদেশে, যেখানে ২০১০ সালে বাসমতী চালের মোট উৎপাদন ছিল ২.৪৭ মিলিয়ন টন।[১৩][১৪]

সুবাস এবং গন্ধ[সম্পাদনা]

বাসমতী চাল একটি সুগন্ধ যৌগ ২-অ্যাসিটাল-১-পাইরেলিনয়ের সুষম সংমিশ্রণ দ্বারা সৃষ্ট, যাতে একটি পণ্ডন-এর মত (পান্ডনস আম্যারলফোলিয়াস পাতার) গন্ধ আছে।[১৫] এই সুগন্ধযুক্ত রাসায়নিক যৌগের প্রাকৃতিকভাবে প্রায় ০.০৯ পিপিএম-এর একটি স্তর ধারণ করে, যা অ-বাসমতী চাষের তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি হয়, যা বাসমতীকে তার স্বতন্ত্র সুবাস এবং স্বাদ দেয়।[১৬] এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে অনুমোদিত একটি স্বাদযুক্ত এজেন্ট এবং সুবাসের জন্য বেকারি পণ্যে ব্যবহৃত হয়।[১৭]

বাসমতী প্রশংসাপত্র[সম্পাদনা]

বাসমতী চিহ্ন হল ডিএনএ-আঙ্গুলের ছাপ ভিত্তিক, যা বাসমতী রপ্তানি উন্নয়ন সংস্থা বা বাসমতি এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (বিএডএফ) এর পরীক্ষাগার দ্বারা সার্টিফিকেশন করা হয়।[১৮]

স্বত্ত্বযুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৯৭ সালে রাইসটেক নামের মার্কিন প্রতিষ্ঠান টেক্সাসে বাসমিত চালের মার্কিন প্যাটেন্ট নং ৫,৬৬৩,৪৮৪ গ্রহণ করে। রাইসটেকের স্বত্তাধিকারি হলেন লাইটেস্টটেনসটেইনের যুবরাজ। ভারত সরকার এ প্যাটেন্টের প্রতিবাদ জানায়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হস্তক্ষেপে এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়।[১৯] প্যাটেন্ট তুলে নেয়া হয়।"[২০] তারপরেও কোম্পানি কিছু চাল প্রকরনের জন্য প্যাটেন্ট মর্যাদা লাভ করে।[২১]

গ্লাইএসএমিক সূচক[সম্পাদনা]

কানাডিয়ান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন-এর মতে, বাসমতী চালের একটি "মাঝারি" গ্লাইসমিক সূচক (৫৬ থেকে ৬৯ এর মধ্যে) রয়েছে, এটি একটি গ্লাইসমিক সূচক ৮৯ এর সাথে নিয়মিত সাদা চালের বিপীরত কাজ করে, যার ফলে ডায়াবেটিসের জন্য এটি আরও উপযুক্ত হয় যা অন্যান্য শস্য ও পণ্যগুলি তথা সাদা আটা বা ময়দার তুলনায় অধিকতর উপযোগি।[২২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Oxford English Dictionary, s.v. basmati.
  2. VP Singh (২০০০)। Aromatic RicesInternational Rice Research Institute। পৃষ্ঠা 135–36। আইএসবিএন 978-81-204-1420-4 
  3. Daniel F. Robinson (২০১০)। Confronting Biopiracy: Challenges, Cases and International Debates। Earthscan। পৃষ্ঠা 47। আইএসবিএন 978-1-84977-471-0 
  4. "Rice Sales From India to Reach Record as Iran Boosts Reserve"bloomberg.com। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৬ 
  5. "foodstandards.gov.uk" (পিডিএফ)। ৩১ মে ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১২ 
  6. `Sugandh' set to take on Thai Jasmine rice ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ মে ২০০৯ তারিখে. The Hindu. Monday, October 13, 2003.
  7. Two new aromatic rice for North-western plains ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুন ২০০৮ তারিখে. The Hindu. Thursday, October 2, 2003.
  8. India, Press Trust of (৩ এপ্রিল ২০১৬)। "Basmati rice industry may revive in next harvest 2016-17: Icra"। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৮ – Business Standard-এর মাধ্যমে। 
  9. "De prijs van basmati: witte rijst met een donkere rand - National Geographic Nederland/België"National Geographic Nederland/België। ১৪ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৮ 
  10. "The Price of Basmati - Journalism Grants"journalismgrants.org। ২৭ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৮ 
  11. "India's to export record basmati rice in 2012/13 | Reuters"In.reuters.com। জুলাই ৬, ২০১২। ২০ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৮ 
  12. "Traders call for easing ban on Basmati exports"Kathmandu Post। ১২ জুলাই ২০১৬। ১৩ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৮ 
  13. Rice export: ‘Pakistan has potential of $4b but barely touches $1b’. The Express Tribune. February 8, 2012.
  14. Global market: Pakistani basmati may slip down the pecking order. The Express Tribune. July 19, 2012.
  15. S. Wongpornchai; T. Sriseadka; S. Choonvisase (২০০৩)। "Identification and quantitation of the rice aroma compound, 2-acetyl-1-pyrroline, in bread flowers (Vallaris glabra Ktze)"। J. Agric. Food Chem.51 (2): 457–462। ডিওআই:10.1021/jf025856xপিএমআইডি 12517110 
  16. Big money in "speciality rices" Food and Agriculture Organization, United Nations (2002)
  17. Fenaroli's Handbook of Flavor Ingredients, Sixth Edition, George A. Burdock (2009), CRC Press, আইএসবিএন ৯৭৮-১৪২০০৯০৭৭২, p. 36
  18. "BASMATI EXPORT DEVELOPMENT FOUNDATION"apeda.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৮ 
  19. Basmati Case Study
  20. "Bid for patent for basmati rice hits a hurdle" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে, The Hindu, November 5, 2006
  21. "India-U.S. Fight on Basmati Rice Is Mostly Settled", The New York Times, August 25, 2001
  22. "Canadian Diabetes Associate - The Glycemic Index" (পিডিএফ)। ৩১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]