ফেরোমন ফাঁদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জমিতে সেক্স ফেরোমন এর ব্যবহার।

ফেরোমন ফাঁদ হচ্ছে একধরনের কীটপতঙ্গের দমন ফাঁদ যাতে ক্ষতিকর পোকামাকড়দের নিয়ন্ত্রণ করতে সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করা হয়। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করার জন্য স্ত্রী পোকা কর্তৃক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যা সেক্স ফেরোমন নামে পরিচিত।[১] কুমড়াজাতীয় ফসলে এ পদ্ধতির চমকপ্রদ কার্যকারিতার জন্য কৃষকদের মধ্যে এটি জাদুর ফাঁদ নামে পরিচিত।

কুমড়াজাতীয় সবজির মাছি পোকার সেক্স ফেরোমন টোপ[সম্পাদনা]

বিভিন্ন কুমড়াজাতীয় ফসল যেমন- মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, ঝিঙা, করলা, কাঁকরোল, চিচিঙা, উচ্ছে, ধুন্দল, তরমুজ, পটল, বাঙ্গি ইত্যাদি ফসলের মাছি পোকা দমনের জন্য উক্ত ফেরোমন টোপ অত্যন্ত কার্যকরী। উচ্চ ফাঁদ তৈরির জন্য একটি টোপ, একটি বারি ফাঁদ, তার, গুঁড়া সাবান, পানি, বাঁশের খুঁটি ইত্যাদি উপকরণ প্রয়োজন।[১]

তিন লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ও ২২ সেমি. লম্বা চার কোণাকৃতি বা গোলাকার একটি প্লাস্টিক পাত্র দিয়ে এই ফাঁদ তৈরি করা হয়। পাত্রটি উভয় পার্শ্বে ১০-১২ সেমি. উচ্চতা সম্পন্ন এবং নিচের দিকে ১০-১২ সেমি. পরিমাণ অংশ ত্রিভুজাকারে কেটে ফেলতে হবে। পাত্রের তলা হতে কাটা অংশের নিচের দিক কমপক্ষে ৪-৫ সেমি. উঁচু হওয়া বাঞ্ছনীয়। ফাঁদ পাতা অবস্থায় সব সময় পাত্রের তলা হতে উপরের দিকে কমপৰে ৩-৪ সেমি. পর্যন্ত সাবান মিশ্রিত পানি ভরে রাখতে হবে। প্লাস্টিক পাত্রের মুখ থেকে সেক্স ফেরোমন টোপটি একটি সরু তার দিয়ে এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যেন সেটি পানি থেকে মাত্র ২-৩ সেমি. ওপরে থাকে। সেই সেক্স ফেরোমনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি পোকা প্লাস্টিক পাত্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও সাবান পানিতে পড়ে আটকে যায় এবং পরে মারা পড়ে।[১]

কুমড়াজাতীয় সবজির ফেরোমন ফাঁদ[সম্পাদনা]

জমিতে প্রতি ১২-১৫ মিটার দূরে দূরে বর্গাকারে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। প্রতি ৩ শতাংশ জমির জন্য ১টি ফাঁদ ব্যবহার করা উচিত। একটি টোপ এক মৌসুমের জন্য প্রযোজ্য খেয়াল রাখতে হবে। যে পাত্রের তলায় রক্ষিত সাবান পানি যেন মিশ্রিত পানির কারণে শুকিয়ে না যায়। প্রতি ৪-৫ দিন অন্তর অন্তর ফাঁদের সাবান মিশ্রিত পানি পোকাসহ পরিষ্কার ও পরিবর্তন করতে হবে। ফেরোমন টোপগওলো অ্যালুমিনিয়াম প্যাকেটের মধ্যে রক্ষিত থাকে এবং এ অবস্থায় ১-২ বছর সংরক্ষণ করা যায়। তবে অ্যালমুনিয়াম প্যাকেট থেকে টোপগুলো বের করার সাথে সাথে মাঠে প্রয়োগ করতে হবে। বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার ফেরোমন টোপ বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে বেগুনের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। বর্তমানে সেক্স ফেরোমনভিত্তিক আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভবপর হচ্ছে।[১]

কুমড়াজাতীয় সবজির ৰেত্রে যখন ফুল আসে তখন এবং বেগুনের জমিতে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য চারা লাগানোর ১০-১৫ দিন থেকে ফেরোমোন ফাঁদ স্থাপন কতে হবে।

বেগুনের ফেরোমন ফাঁদ[সম্পাদনা]

জমির আইল থেকে ৫ মিটার ভেতরে প্রতি ১০ মিটার দূরে দূরে বর্গাকারে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। সাধারণত ২টি খুঁটি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে তার মাঝে টোপ বা লিউরসহ ফাঁদটি বসিয়ে রশি বা গুনা দিয়ে খুটির সাথে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। প্রতি ২.৫-৩ শতাংশ জমির জন্য ১টি ফাঁদ ব্যবহার করা উচিত। একটি টোপ ৪৫-৫০ দিনের জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ পুরো মৌসুমের জন্য ২টি টোপ ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে পাত্রের তলায় রক্ষিত সাবান পানি যেন কোন কারণে শুকিয়ে না যায়। প্রতি ৪-৫ দিন অন্তর অন্তর ফাঁদের সাবান মিশ্রিত পানি পোকাসহ পরিষ্কার ও পরিবর্তন করতে হবে। ফেরোমন টোপগুলো অ্যালমুনিয়াম প্যাকেটের মধ্যে রৰিত থাকে এবং এ অবস্থায় ১-২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তবে অ্যালমুনিয়াম প্যাকেট থেকে টোপগুলো বের করার সাথে সাথে মাঠে প্রয়োগ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই ফ্রিজ সংরক্ষণ করতে হবে।[১]

সুবিধা[সম্পাদনা]

বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। কম খরচে অধিক উৎপাদন করা সম্ভব।[২] সবজি উৎপাদনে কম শ্রম লাগবে। পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দাস, বিবেকানন্দ। "টক্সিকোলজি"। আধুনিক কীটতত্ব। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা 325। 
  2. "AGP - Integrated Pest Management"। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১২