ত্রিভুজ
ত্রিভুজ Triangle | |
---|---|
![]() একটি ত্রিভুজ | |
প্রান্ত এবং ছেদচিহ্ন | ৩ |
Schläfli symbol | {৩} (সমবাহু এর জন্য) |
ক্ষেত্রফল | বিভিন্ন পদ্ধতি; see below |
অভ্যন্তরীণ কোণ (degrees) | ৬০° (সমবাহু এর জন্য) |
সমতলীয় জ্যামিতির ভাষায় তিনটি সরলরেখা দ্বারা আবদ্ধ চিত্রকে ত্রিভুজ বলা হয়। এটি একটি বহুভুজ, যার তিনটি ছেদচিহ্ন ও তিনটি প্রান্ত থাকে। দ্বি-মাত্রিক তলে ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ° বা দুই সমকোণ। এক সময় কেবল ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতেই ত্রিভুজ নিয়ে আলোচনা করা হত। কিন্তু নিকোলাই লোবাচেভস্কি সহ অন্যান্য জ্যামিতি বিশেষজ্ঞদের অবদানের ফলে অসমতলীয় জ্যামিতিতেও বর্তমানে ত্রিভুজ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ধরনের তলে ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ নয়। অথচ ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মূল ভিত্তিই হচ্ছে এই ধারণাটি।
ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে, যেকোন তিনটি বিন্দু, যখন অ-সমলাইন, একটি অনন্য ত্রিভুজ এবং একই সাথে একটি অনন্য সমতল (অর্থাৎ একটি দ্বি-মাত্রিক ইউক্লিডীয় স্থান) নির্ধারণ করে। অন্য কথায়, সেই ত্রিভুজটি ধারণ করে শুধুমাত্র একটি সমতল রয়েছে এবং প্রতিটি ত্রিভুজই কোনো না কোনো সমতলে রয়েছে। যদি সমগ্র জ্যামিতিটি শুধুমাত্র ইউক্লিডীয় সমতল হয়, তবে একটি মাত্র সমতল থাকে এবং এতে সমস্ত ত্রিভুজ থাকে; যাইহোক, উচ্চ-মাত্রিক ইউক্লিডীয় স্থানগুলিতে, এটি আর সত্য নয়। এই নিবন্ধটি ইউক্লিডীয় জ্যামিতির ত্রিভুজ সম্পর্কে, এবং বিশেষ করে, ইউক্লিডীয় সমতল, অন্যথায় উল্লেখ করা ছাড়া।
প্রকারভেদ[সম্পাদনা]
বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে[সম্পাদনা]
বাহুর দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ত্রিভুজ তিন প্রকারের হতে পারে। যথা:–
- সমবাহু ত্রিভুজ - যার তিনটি বাহুরই দৈর্ঘ্য সমান। সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রে প্রতিটি কোণের মান ৬০° হয়।
- সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ - যার যে-কোন দুইটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের শীর্ষকোণ ৯০° হলে অপর সমান দুইটি বিপরীত কোণ ৪৫° করে হবে। সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণ দুটি সমান হয়।
- বিষমবাহু ত্রিভুজ - যার তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য তিন রকম। বিষমবাহু ত্রিভুজের তিনটি কোণ-ই পরস্পরের সঙ্গে অসমান হয়।
কোণের ভিত্তিতে[সম্পাদনা]
কোণের ভিত্তিতে ত্রিভুজ তিন প্রকার হতে পারে -
- সমকোণী ত্রিভুজ - যার যেকোন একটি কোণ ১ সমকোণ বা ৯০° এর সমান।
- সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ - যার তিনটি কোণই সূক্ষ্মকোণ।
- স্থূলকোণী ত্রিভুজ - যার যেকোন একটি কোণ স্থূলকোণ।
![]() |
![]() |
![]() |
সমবাহু | সমদ্বিবাহু | বিষমবাহু |
![]() |
![]() |
![]() |
সমকোণী | স্থূলকোণী | সূক্ষ্মকোণী |
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল পরিমাপ[সম্পাদনা]
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল পরিমাপের নানা পদ্ধতি আছে। নিম্নে এরকম কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করা হল।
জ্যামিতির মাধ্যমে[সম্পাদনা]
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল (Area) A পরিমাপের সূত্র হল:
যেখানে b হল ত্রিভুজের যে কোন একটি বাহুর দৈর্ঘ্য (ভূমি), h হল উচ্চতা, অর্থাৎ ভূমির বিপরীত শীর্ষবিন্দুর হতে ভূমির উপরে অঙ্কিত লম্ব। নিম্নের ছবিতে এটির ব্যাখ্যা ও উদাহরণ দেখান হলঃ

সূত্রটি কীভাবে এসেছে, তা ওপরের ছবি থেকে অনুধাবন করা সম্ভব। সবুজ বর্ণে চিহ্নিত ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার জন্য, প্রথমে ত্রিভুজের একটি প্রতিকৃতি (উপরে নীল বর্ণের ত্রিভুজটি) তৈরি করে, সেটিকে 180° ঘুরানো হয়েছে। এর পর ত্রিভুজটি দুটিকে যুক্ত করে একটি সামান্তরিক পাওয়া যায়। সামান্তরিকের কিছু অংশ কেটে অন্য পাশে যুক্ত করে একটি আয়তক্ষেত্র পাওয়া যাবে। যেহেতু এই আয়তক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল হল 'bh', ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল অবশ্যই তার অর্ধেক, অর্থাৎ \frac{1}{2}bh.
ভেক্টরের সাহায্যে[সম্পাদনা]
পূর্বের উদাহরণের মত করে সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল ভেক্টরের মাধ্যমের বের করে, তা থেকে ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করা সম্ভব। যদি AB ও AC যথাক্রমে A হতে B পর্যন্ত এবং A হতে C পর্যন্ত ভেক্টর হয়ে থাকে, তাহলে ABDC সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল হল |AB × AC|, অর্থাৎ AB ও AC ভেক্টর দুইটির ক্রস গুণনের সমান। |AB × AC| হল |h × AC| এর সমতূল্য, যেখানে h হল সামান্তরিকটির উচ্চতাসূচক ভেক্টর।
এই ফলাফল অনুযায়ী ত্রিভুজ ABC এর ক্ষেত্রফল হল সামান্তরিকটির অর্ধেক, অর্থাৎ S = ½|AB × AC|.
ত্রিকোণমিতির সাহায্যে[সম্পাদনা]
ত্রিভুজের উচ্চতা ত্রিকোণমিতির সাহায্যে সহজেই বের করা যায়। বাম পার্শ্বের ছবিতে, ত্রিভুজ ABC এর উচ্চতা
- h = a sin γ।
এই ফলাফল উপরে উল্লিখিত S = ½bh সূত্রে বসালে পাওয়া যায়, ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল হল,
- S = ½ab sin γ
স্থানাংকের মাধ্যমে[সম্পাদনা]
যদি A বিন্দুটির কার্তেসীয় স্থানাংক (0, 0) এবং B ও C এর স্থানাংক যথাক্রমে B = (xB, yB) ও C = (xC, yC) হয়ে থাকে, তাহলে ত্রিভুজটির ক্ষেত্রফল S হল এই বিন্দু তিনটির নির্ণায়কের অর্ধেক, অর্থাৎ
যেকোন তিন বিন্দুর জন্য সাধারণ ভাবে সূত্রটি হল:
ঘণজ্যামিতি, অর্থাৎ ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে, ত্রিভুজাকৃতির এলাকা {A = (xA, yA, zA), B = (xB, yB, zB) and C = (xC, yC, zC)} এর ক্ষেত্রফল হল তিনটি মূল সমতলে (i.e. x=0, y=0 and z=0) ত্রিভুজটির অভিক্ষেপের পিথাগোরীয় যোগফল, অর্থাৎ -
হিরনের সূত্র[সম্পাদনা]
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার জন্য হিরনের সূত্র হল:
যেখানে s = ½ (a + b + c) হচ্ছে অর্ধ-পরিসীমা, অর্থাৎ ত্রিভুজটির পরিসীমার অর্ধেক। কোন ত্রিভুজে পরিসীমা হল ঐ ত্রিভুজের তিন বাহুর দৈর্ঘ্যের যোগফল।
ত্রিভুজ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিন্দু ও রেখা[সম্পাদনা]
শীর্ষ[সম্পাদনা]
যে তিনটি বিন্দু জুড়ে ত্রিভুজ তৈরি হয়। প্রতিটি শীর্ষ এক জোড়া বাহুর সংযোগ স্থল।
বাহু[সম্পাদনা]
ত্রিভুজের পরিসীমা যে তিনটি রেখাংশ দ্বারা সমপূর্ণ হয়।অথবা ত্রিভুজের দুটি শীর্ষ বিন্দুর সংযোগ রেখাকে বাহু বলে।
মধ্যমা[সম্পাদনা]
ত্রিভুজের যেকোন শীর্ষ ও বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু সংযোগকারী রেখাংশ এক একটি মধ্যমা। ত্রিভুজের মধ্যমাত্রয় সমবিন্দুগামী।
ভরকেন্দ্র[সম্পাদনা]
যেখানে মধ্যমাত্রয় মিলিত হয় ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র (centroid) হল সেই বিন্দু
(ভরকেন্দ্র গামী যেকোন রেখার দুপাশের ক্ষেত্রফল (এবং সেই অনপাতে ভর) সমান।
ভরকেন্দ্র প্রতিটি মধ্যমাকে ১:২ অনুপাতে বিভক্ত করে।
সমবাহু ত্রিভুজের বাহুগুলোর মধ্যবিন্দু পর্যায়ক্রমে যোগ করলে যে ছয়টি ত্রিভুজ উৎপন্ন হয় তা - সমকোণী ত্রিভুজ
লম্বকেন্দ্র[সম্পাদনা]
ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষ থেকে বিপরীত বাহুগুলির উপর তিনটি লম্ব সমবিন্দুগামী, এবং বিন্দুটির নাম লম্বকেন্দ্র
পরিবৃত্ত[সম্পাদনা]
তিনটি শীর্ষবিন্দু যোগ করে যেমন একটিমাত্র ত্রিভুজ হয় তেমনি তিনটি বিন্দু (শীর্ষ)গামী বৃত্তও একটিই, এর নাম পরিবৃত্ত।
পরিকেন্দ্র[সম্পাদনা]
পরিবৃত্তের কেন্দ্র (যে বিন্দু ত্রিভুজের শীর্ষত্রয় থেকে সমদূরত্বে স্থিত)।
অসমতলীয় জ্যামিতিতে ত্রিভুজ[সম্পাদনা]
কেবলমাত্র সমতলীয় জ্যামিতিতে (ইউক্লিডিয় জ্যামিতি বা অধিবৃত্তীয় জ্যামিতি) ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০° বা দুই সমকোণ। অসমতলীয় বা অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতির উদাহরণঃ
- গোলকীয় (spherical geometry) বা বৃহত্তরভাবে রীমানীয় জ্যামিতি (উপবৃত্তীয় জ্যামিতি, elliptic geometry): তলীয় (গউসীয়) বক্রতা (Gaussian curvature) ধনাত্মক (+1) অর্থাৎ বক্রতা ব্যাসার্ধ সর্বদা তলের একটি পাশে থাকে। মহাকর্ষ খুব শক্তিশালী হলে মহাশূণ্য এ ধরনের জ্যামিতি অবলম্বন করে, যা আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে ব্যবহৃত। উপবৃত্তীয় জ্যামিতিতে (যেমন গোলকের উপর আঁকা) ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি > ১৮০°।
- পরাবৃত্তীয় জ্যামিতি (hyperbolic geometry) বা, জানোস বলিয়াই, নিকোলাই লোবাচেভস্কি ও গাউস এর জ্যামিতি: তলীয় (গউসীয়) বক্রতা ঋণাত্মক (-1) অর্থাৎ তলটিকে একভাবে লন্বচ্ছেদ করলে বক্রতা ব্যাসার্ধ (radius of curvature) তলের যে পাশে থাকে, তার আড়াআড়িভাবে লম্বচ্ছেদ করলে একই বিন্দুগামী বক্রতা ব্যাসার্ধ তখন তলের অন্য পাশে থাকে। পরাবৃত্তীয় জ্যামিতিতে ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি < ১৮০°।
লম্বিক ত্রিভুজ[সম্পাদনা]

একটি ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দুত্রয় থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্ব তিনটি বিপরীত বাহুগুলোকে যে তিনটি বিন্দুতে ছেদ করে সেই বিন্দুগুলো যে ত্রিভুজটি গঠন করে সেটিই প্রথম ত্রিভুজের লম্বিক ত্রিভুজ (orthic triangle)।
মধ্যবিন্দু ত্রিভুজ[সম্পাদনা]
কোন ত্রিভুজের তিনটি বাহুর মধ্যবিন্দু তিনটি যে ত্রিভুজটি গঠন করে তাকে প্রথম ত্রিভুজটির মধ্যবিন্দু ত্রিভুজ (medial triangle)বলা হয়।