বিষয়বস্তুতে চলুন

পটল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পটল
Trichosanthes dioica
পটল
গাছে পটল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Cucurbitales
পরিবার: Cucurbitaceae
গণ: Trichosanthes
প্রজাতি: T. dioica
দ্বিপদী নাম
Trichosanthes dioica
Roxb.
পাকা পটলের বীজ।
পটল ও পটলবিক্রেতা, হুগলী

পটল (ইংরেজি: pointed gourd, parwal/parval হিন্দি থেকে) এক ধরনের সবজি। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Trichosanthes dioica। এটি ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং বাংলাদেশে ভাল জন্মায়। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন এ ও সি আছে। এছাড়া এতে স্বল্প পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, তামা, পটাশিয়াম, গন্ধক ও ক্লোরিন আছে।

পটল কিছুটা শসা ও ক্ষীরা গোত্রের উদ্ভিদ। এটি খেতেও উপাদেয়। পটল স্যুপ, তরকারি, ভাজা এমনকি মিষ্টান্ন প্রস্তুতিতেও ব্যবহৃত হয়। পটল দিয়ে নানা রকমের খাবার তৈরি করা হয়।

পটলের উৎপাদন মাত্রা ভালো। ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। ৩ থেকে ৪ দিন পরপর পটল তোলা যায়। তরকারি হিসেবে পটলের বেশ চাহিদা আছে। পটলের শ্রমিক খরচ কম। পটল লম্বায় ৫-১৫ সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্বল্পোষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভাল জন্মায়। পটলের তরকারি বেশ উপকারী।

পটল চাষ পদ্ধতি

[সম্পাদনা]

পটল একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি সারা বছরই কমবেশি পাওয়া যায়। পটল উৎপাদনের জন্য সব জেলাই মোটামুটি উপযোগী। আয়-ব্যয়ের বিবেচনায় এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। হেক্টর প্রতি প্রায় এক-সোয়া লাখ টাকা লাভ হয়। পটল সহজে হজমযোগ্য এবং হৃদরোগীদের জন্য উপকারী একটি সবজি। জাতভেদে পটলের ফলন প্রতি হেক্টরে চার টন থেকে ১৫ টন পাওয়া যায়।কৃষি তথ্য ও পরামর্শ পেজের পাঠকদের জন্য পটল চাষাবাদ পদ্ধতি আলোচনা করা হল ।

বিভিন্ন অঞ্চলে পটলের বিভিন্ন জাত দেখা যায়। জাতের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন প্রকার পটল লক্ষ করা যায়। যেমন লম্বা ও চিকন, খাটো ও মোটা, গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ। ডোরা কাটা ও ডোরা কাটা বিহীন, পুরুত্বক থেকে হালকা ত্বক। ফরিদপুর অঞ্চলে কানাই বাঁশি নামে একটি উন্নত জাতের পটল পাওয়া যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট দু’টি পটোলের জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি পটোল-১, বারি পটোল-২ যার ফল হেক্টর প্রতি ৩০-৩৮ টন।

বংশবিস্তার

[সম্পাদনা]

এটি কাণ্ড এবং টিউবারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। শাখা কলমের ক্ষেত্রে পরিপক্ব কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাণ্ড মরে গেলেও শিকড় জীবিত থাকে। ফলে এই শিকড় থেকেই আবার গাছ জন্মে। রোপণের আগে পটলের শিকড় গজিয়ে নিলে বেশি ভালো হয়।

জলবায়ু ও মাটি

[সম্পাদনা]

পটলের জন্য উষ ও আর্দ্র জলবায়ু দরকার। এ জন্য খরিপ মৌসুমে পটল ভালো হয়। উঁচু, মাঝারি উঁচু, বন্যা মুক্ত ও সুষ্ঠু জল নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ মাটি পটলের জন্য উত্তম। বেলে মাটিতেও পটল জন্মে, তবে ফলন কম হয়।

রোপণ সময়

[সম্পাদনা]

অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পটল রোপণের উপযুক্ত সময়। পটল চাষের কথা চিন্তা করলে অক্টোবর মাসের আগেই জমি তৈরি করতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকলে শাখা কলম শুকিয়ে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে পলিব্যাগে শাখা কলম লাগানোর মাধ্যমে চারা গজিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এতে তীব্র শীত পড়ার আগেই গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধি হয়। ফলে মোট জীবনকাল বেশি হলে আগাম ফলন পাওয়া যায় এবং যার বাজার মূল্য তুলনামূলক অনেক বেশি পাওয়া যায়। কারণ এগুলো ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বাজারে চলে আসে। ডিসেম্বর মাসেও পটল পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিব্যাগে চারা তৈরি করে অবশ্যই আগস্ট মাসে তা জমিতে লাগাতে হবে। অন্য দিকে খরিপ মৌসুমের জন্য যেগুলো ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লাগানো হয় সেটা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জীবনকাল তুলনামূলক কম হয়। এদের ফলন তুলনামূলক বেশি হয়।

পুষ্টি তথ্য

[সম্পাদনা]

পটল (ফল) সবজির পুষ্টি তথ্য:

ক্যালরি ৩ড়,  সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম, মোট ফ্যাট ০ গ্রাম,  পটাশিয়াম ০ গ্রা পরিপূর্ণ ০ গ্রাম, মোট carbs ৩ গ্রাম, Polyunsaturated ০ গ্রাম,  খাদ্যতালিকাগত ফাইবার ৪ গ্রাম, Monounsaturated ০ গ্রাম, চিনি ০ গ্রাম, ট্রান্স ০ গ্রাম,  প্রোটিন ৩ গ্রাম, কলেস্টেরল ০ গ্রা, একটি ৮০ভাগ,  ক্যালসিয়াম ২ভাগ,  ভিটামিন সি ২০ভাগ,  আয়রন ৪ভাগ।

উপকারিতা

[সম্পাদনা]

তাজা পটল হজমশক্তি বাড়ায়। কাশি, জ্বর, রক্তদুষ্টি ভাল করে । হার্টের শক্তি বৃদ্ধি, পিত্তজ্বর, কৃমি সারায় এবং শরীর ঠান্ডা রাখে। তাছাড়াও --- পটলের অগণিত স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা অনেকেই জানেন না। এই সবজিটি একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২ ও ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আয়ুর্বেদে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা হয়। পটলের স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয় নিম্নরূপ;

১। হজমের উন্নতি ঘটায়: এই সবুজ রঙের সবজিটিতে ভালো পরিমাণে ফাইবার থাকে যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা সমাধানে এবং লিভারের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানেও সাহায্য করে।

২। কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে: পটলের বীজ এমন একটি স্বাস্থ্যকর বীজ যা কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এবং মল নির্গমনে সাহায্য করে।

৩। ওজন কমাতে সাহায্য করে: পটলে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। তাই ওজন কমানোর জন্য নিশ্চিন্তে পটলের তরকারি খেতে পারেন। এটি পেট ভরা রাখতে ও ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।

৪। রক্তকে পরিশোধিত করে: পটলের আরেকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা হচ্ছে এটি রক্তকে পরিশোধিত করে। এর ফলে ত্বকের যত্নেও এই সবুজ সবজিটি ভালো কাজ করে।

৫। কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার কমায়: পটলের ছোট গোলাকার বীজগুলো কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগারের মাত্রা প্রাকৃতিকভাবে কমাতে সাহায্য করে।

৬। ফ্লু নিরাময়ে সাহায্য করে: আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ঠান্ডা, জ্বর ও গলা ব্যথা কমাতে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয় পটল।

৭। ত্বকের জন্য উপকারী: পটলে ভিটামিন এ ও সি থাকে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বলে ত্বকের জন্য উপকারী। ফ্রি র‍্যাডিকেলের বিস্তার রোধ করে বয়সের ছাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে পটল।

ঔষধি গুণাগুণ

[সম্পাদনা]

পটল ও ধনেপাতা থেঁতলে পানিতে বা জলে ভিজিয়ে রাখুন। এই মিশ্রণটিকে ৩ ভাগ করে এর সাথে মধু মিশিয়ে ৩ বারে পান করুন। এতে হজমের সমস্যা দূর হবে। পটলের রস মাথায় লাগালে মাথা ব্যথা কমে।পটলের পাতার রস দ্রুত ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে এবং টাকের সমস্যা সমাধানেও কাজে লাগে। পটলের তরকারি খেলে ত্বকের সমস্যা দূর হয়। নেপালে অসুস্থদের পটলের স্যুপ খাওয়ানো হয়। আমাদের দেশে পটল ভাজি, পটলের দোলমা, মাছ বা মাংসের সাথে বা অন্য সবজির সাথে রান্না করা হয়। দক্ষিণ এশিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে আলুর সাথে রান্না করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় পটল বৈচিত্রময় রান্নায় ব্যবহার করা হয় যেমন- স্টার ফ্রাই, নারিকেল দুধে অথবা ভাপে সিদ্ধ করে রান্না করা হয়। এটি এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া যায়। সাধারণত গ্রীষ্মের সময় পাওয়া যায় এই সবজিটি।

গুণাগুণ

[সম্পাদনা]
  • পটল হজমশক্তি বাড়ায়।
  • কাশি, জ্বর, রক্তদুষ্টি কমায়।
  • কৃমি সারায় এবং শরীর ঠান্ডা রাখে।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।

পটলের রান্না

[সম্পাদনা]

১।পটলের দোলমা

২।পটলের ডালনা

৩।আলু পটল

৪।দই পটল

৫।পটল পোস্ত

৬।পটল সরষে

৭।পটল চিংড়ি

পটল ভাজা

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]